বহুকোষী জীব সময়গত পরিসীমা: | |
---|---|
এই ছবিতে, একটি স্বাভাবিক প্রকৃতির (wild-type) Caenorhabditis elegans কে রঞ্জিত করা হয়েছে কোষের নিউক্লিয়াসকে উজ্জ্বল করার জন্য । | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস |
বহুকোষী জীব এক এর অধিক কোষ নিয়ে গঠিত যা এককোষী জীবের বিপরীত।[১]
প্রায় সকল প্রজাতির প্রাণী, স্থলজ উদ্ভিদ এবং অধিকাংশ ছত্রাক ও অনেক শৈবাল বহুকোষী হয়ে থাকে, পক্ষান্তরে ''Dictyostelium'' (ডিকটায়োস্টেলিয়াম) গণের স্লাইম মোল্ড এবং সামাজিক অ্যামিবার মত কিছু জীব আংশিক এককোষী এবং আংশিক বহুকোষী হতে পারে।
বিভিন্ন উপায়ে বহুকোষী জীব সৃষ্টি হতে পারে, যেমন - কোষ বিভাজন অথবা অনেকগুলো কোষ একত্রীকরণের মাধ্যমে।[২] অনেকগুলো একইরকম আলাদা জীব একসাথে যুক্ত হয়ে কলোনি সৃষ্টি করার মাধ্যমে কলোনিয়াল জীবের সৃষ্টি হয়। কিন্তু প্রকৃত বহুকোষী জীব থেকে কলোনিয়াল প্রোটিস্টকে পৃথক করা কঠিন হওয়ায় বলা যায় ধারণা দুইটি স্পষ্ট নয়, তাই কলোনিয়াল প্রোটিস্টকে “মালটিসেলুলার (বহুকোষী)” থেকে “প্লিউরিসেলুলার” বলাটাই বেশি সঙ্গত। [৩][৪]
ইউক্যারিয়ট (আদিকোষীয়) জীব এবং কিছু প্রোক্যারিয়ট (প্রকৃতকোষীয়) জীব যেমন- সায়ানোব্যাকটেরিয়া, মাইক্সোব্যাকটেরিয়া, অ্যাকটিনোমাইসিটিস, ম্যাগনেটোগ্লোবাস মালটিসেলুলাসিস বা মিথেনোসারসিনা প্রভৃতির মধ্যে বিশেষভাবে কমপক্ষে ৪৬ বার বহুকোষীয়তা [৫][৬] বিকশিত হয়। যদিও জটিল বহুকোষী জীবেরা ছয়টি ইউক্যারিওটিক শেণীতে বিভক্ত: প্রাণী, ছত্রাক, বাদামী শৈবাল, লাল শৈবাল, সবুজ শৈবাল এবং স্থলজ উদ্ভিদ। [৭] এটা (বহুকোষীয়তা) ক্লোরোপ্লাসটিডাতে (সবুজ শৈবাল এবং স্থলজ উদ্ভিদ) বারবার, প্রাণীতে একবার বা দুইবার, বাদামী শৈবালে একবার, ছত্রাকে (সাইট্রিড, অ্যাসকোমাইসিটিস এবং ব্যাসিডিওমাইসিটিস) [৮] তিনবার এবং স্লাইম মোল্ডে বেশ কিছুবার বিকশিত হয়। [৯] বহুকোষীয়তার প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায় সায়ানোব্যাকটেরিয়ার মত জীবে যা ৩ - ৩.৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে বসবার করত। [৫] প্রকৃত বহুকোষী জীবে প্রজননের জন্যে জনন কোষ (উদাহরণ- শুক্রাণু বা ডিম্বাণু) থেকে সম্পূর্ণ জীব পুনরায় সৃষ্টি হওয়ার সমস্যার অবশ্যই সমাধান করতে হবে এবং এই সমাধান সম্পর্কে বিবর্তনিক ক্রমবর্ধমান জীববিজ্ঞানে আলোচনা করা হয়। বহুকোষী প্রাণীর শরীরে বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় কোষের প্রকারভেদ দেখা যায় (১০০ - ১৫০ টি বিভিন্ন রকম কোষের প্রকারভেদ) যা উদ্ভিদ এবং ছত্রাকের ১০ - ২০ টির (কোষের প্রকারভেদ) তুলনায় বেশি। [১০]
কিছু শ্রেণীতে বহুকোষীয়তার ক্ষয়প্রাপ্তি ঘটে থাকে। [১১] ছত্রাক প্রধানত বহুকোষী হয়ে থাকে, যদিও বিচ্যুত আদিম জাতের একটা বড় অংশ এককোষী (উদাহরণ- মাইক্রোপোরিডিয়া) ছিল এবং ছত্রাকের (উদাহরণ- স্যাকারোমাইকোটিনা, ক্রিপটোকক্কাস এবং অন্যান্য ইস্ট) এককোষীয়তায় বহুসংখ্যক পরিবর্তন এসেছে। [১২][১৩] এটা কিছু লাল শৈবালের (উদাহরণ- পরফাইরিডিয়াম) ক্ষেত্রেও ঘটে থাকে যদিও এটা সম্ভব যে তারা আদিমকালে এককোষী ছিলো। [১৪] কিছু সবুজ শৈবালের (কলেরা ভলগারিস এবং কিছু আলভোফাইকি) বহুকোষীয়তার ক্ষয়প্রাপ্তির সম্ভাবনাকেও বিবেচনায় আনা হয়। [১৫][১৬] সাধারণত অন্যান্য শ্রেণী যেমন- পরজীবীর কোষ অথবা কোষের ধরনে (উদাহরণ- বহুকোষী জীব মাইক্সোজোয়ান যাদেরকে প্রাথমিকভাবে এককোষী মনে করা হত কিন্তু তারা সর্বোচ্চ মাত্রায় বহুকোষীয়তার হ্রাসপ্রাপ্ত নিডারিয়া পর্বের প্রাণী) বহুকোষীয়তার হ্রাসপ্রাপ্তির ঘটনা ঘটে থাকে। [১৭]
বহুকোষী জীব, বিশেষকরে দীর্ঘজীবী প্রাণীরা ক্যান্সারের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়, যখন এদের কোষ সাধারণ ক্রমবৃদ্ধি কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। এই প্রক্রিয়ার সময় টিস্যু বা কলার অঙ্গসাংস্থানিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা হয়। অনেক সময় প্রাণীতে (মেটাজোয়ান) বহুকোষীয়তার ক্ষয়প্রাপ্তিকেই ক্যান্সার হিসেবে বর্ণনা করা হয়। [১৮] অন্যান্য বহুকোষী জীব [১৯][২০] এমনকি প্রোটোজোয়াতে [২১] ক্যান্সারের অস্তিত্বের সম্ভাব্যতা নিয়ে একটা বিতর্ক আছে। উদাহরণস্বরূপ- উদ্ভিদের গলকে (gall) টিউমার [২২] হিসেবে চিহ্নিত করা হয় কিন্তু কিছু বিজ্ঞানী বিতর্ক করে থাকেন যে উদ্ভিদে ক্যান্সার সৃষ্টি হয় না। [২৩]
ওয়েসম্যানিস্ট নামক বহুকোষী জীবে উদ্ভূত বিশুদ্ধ দেহকোষের সারি এবং জননকোষের সারির মধ্যে পৃথকীকরণ ঘটে। কিন্তু ওয়েসম্যানিস্টের ক্রমবিকাশ তুলনামূলকভাবে বিরল (উদাহরণ- মেরুদণ্ডী প্রাণী, আর্থ্রোপোডা পর্বের প্রাণী এবং ভলভক্স) হয়ে থাকে এবং প্রজাতির বৃহৎ অংশ হিসেবে তাদের দেহকোষীয় এমব্রায়োজেনেসিস বা ভ্রূণের গঠন এবং বৃদ্ধির (উদাহরণ- স্থলজ উদ্ভিদ, অধিকাংশ শৈবাল এবং অনেক অমেরুদণ্ডী প্রাণী) ক্ষমতা আছে। [২৪][২৫]
বহুকোষীয়তার ব্যুৎপত্তির একটি তত্ত্ব হল কিছু নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্নকারী কোষগুচ্ছ একত্রিত হয়ে স্লাগের মত বস্তু সৃষ্টি করে যা গ্রেক্স নামে পরিচিত এবং এটা বহুকোষী একক হিসেবে চলাচল করে। এটা অত্যাবশ্যকীয়ভাবে স্লাইম মোল্ডে হয়ে থাকে। আরেকটি তত্ত্ব হল আদিম কোষগুলো নিউক্লিয়াসের বিভাজনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে এবং এরপর কোয়েনোসাইটে পরিণত হয়েছে। এরপর প্রতিটি নিউক্লিয়াসের (এবং কোষীয় ফাঁক সৃষ্টি হয় এবং কোষীয় অঙ্গাণুগুলি এই ফাঁক দখল করে নেয়) চতুর্দিকে একটা ঝিল্লির সৃষ্টি হয় এবং ফলস্বরূপ একটা জীবে (ড্রসোফিলাতে এই কৌশল লক্ষ্য করা হয়) সংযুক্ত কোষগুলোর দল সৃষ্টি হয়। তৃতীয় তত্ত্বটি হল একটি এককোষী জীব বিভাজিত হয়, অপত্য কোষগুলি পৃথক হতে ব্যর্থ হয় এবং ফলস্বরূপ জীবটিতে অভিন্ন কোষগুলির ঘনসন্নিবেশন ঘটে যা পরবর্তীতে বিশেষায়িত টিস্যু বা কলায় বিকশিত হতে পারে। উদ্ভিদ ও প্রাণীর ভ্রূণ এবং কিছু কলোনিয়াল কোয়ানোফ্লাজেল্যাটে এই ঘটনা ঘটে। [২৬][২৭]
কারণ প্রথমদিকের বহুকোষী জীবগুলি খুব সাধারণ এবং নরম হওয়ার কারণে তাদের হাড়, খোলস বা অন্যান্য শক্ত শারীরিক অংশের অভাব ছিল এবং এজন্যে তাদের জীবাশ্মের কোন প্রমাণ নেই। [২৮] এর একটি ব্যতিক্রম হল ডেমোস্পঞ্জ যা প্রাচীন প্রস্তর শিলায় রাসায়নিক পদার্থের কিছু চিহ্ন রেখে গেছে। বহুকোষী জীবের প্রাথমিক জীবাশ্মগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল কনটেস্টেড গ্রিপানিয়া স্পাইরালিস এবং গ্যাবোনে (গ্যাবোনিয়োটা) প্রাপ্ত প্যালিওপ্রোটেরোজোয়িক যুগের জীবাশ্ম গ্রুপ বি এর ফ্র্যান্সেভিলেন জীবাশ্ম যা ব্ল্যাক শেলে গঠিত হয়েছিলো। [২৯] বহুকোষী বৈশিষ্ট্যের প্রমাণ হিসেবে ৬০০ মিলিয়ন বছরের পুরনো মাইক্রোজীবাশ্ম ডোওশানটুও এর গঠন পাওয়া গেছে। [৩০]
বর্তমান সময় পর্যন্ত ফাইলোজেনেটিক পুনর্গঠন শারীরসংস্থানিক (নির্দিষ্টভাবে ভ্রূণতাত্ত্বিক) সাদৃশ্যের মধ্যে দিয়ে সম্পন্ন হয়। এটা পুরোপুরি সত্য নয় যে প্রাণী এবং উদ্ভিদের মত জীবন্ত বহুকোষী জীব ৫০০ মিলিয়ন বছরেরও বেশি সময় আগে তাদের এককোষী পূর্বপুরুষ হতে অপসারিত হয়ে ছিল। এভাবে সময়ের সাথে সাথে একমুখী এবং বহুমুখী বিবর্তনের সৃষ্টি হয় যা আধুনিক এবং বিলুপ্ত পূর্বপুরুষ প্রজাতির সাদৃশ্য এবং ভিন্নতাকে তুলে ধরে। আধুনিক ফাইলোজেনেটিক্স অ্যালোএনজাইম, স্যাটেলাইট ডিএনএ এবং অন্যান্য আণবিক মার্কারের মত কিছু সূক্ষ কৌশল ব্যবহার করে যা দূরবর্তী সম্পর্কের বংশের ভাগকভাগিকৃত বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা করে।
বহুকোষীয়তার বিবর্তন বিভিন্ন উপায়ে ঘটতে পারে, এরমধ্যে কয়েকটা উপায় নিচে বর্ণনা করা হল:
এই তত্ত্ব ধারণা দেয় যে প্রথম বহুকোষী জীব বিভিন্ন প্রজাতির এককোষী জীবের মিথোজীবিত্বের (সহযোগিতা) মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল যাদের প্রত্যেকেরই বিভিন্ন রকম ভূমিকা রয়েছে। সময়ের বিবর্তনে এই জীবগুলো একে অপরের প্রতি এতোটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে যে স্বাধীনভাবে আর টিকে থাকতে পারে না, এর ফলশ্রুতিতে তারা তাদের জিনোমগুলিকে একটা বহুকোষী জীবের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেয়। [৩১] প্রতিটি সম্পর্কিত জীব নতুন সৃষ্ট প্রজাতির পৃথকীকৃত কোষগুলোর মধ্যে অবস্থান করে বিচ্ছিন্ন বংশধরে পরিনত হয়।
এরকম তীব্র পরস্পর নির্ভরশীল মিথোজীবিতা বিভিন্ন প্রজাতি যেমন ক্লাউন মাছ এবং সামুদ্রিক রিটেরি অ্যানিমোনের সম্পর্কের মধ্যে প্রায়ই দেখা যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে একটি প্রজাতির টিকে থাকা চরমভাবে আশঙ্কনীয় হতে পারে যদি অপর একটি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু এই তত্ত্বে একটি সমস্যা আছে যার কারণ এখনো জানা যায়নি এবং সেটা হল কীভাবে নির্দিষ্ট প্রজাতি সৃষ্টির জন্যে একটি প্রজাতির ডিএনএ একক জিনোমে প্রবেশ করে। যদিও এরকম মিথোজীবিতা সাধারণত তাত্ত্বিক কিন্তু এটা বিরলভাবে ঘটতেও পারে, (প্রাণী এবং উদ্ভিদকোষের মাইটোকণ্ড্রিয়া এবং ক্লোরোপ্লাস্টের মিথোজীবিতা - যা আন্তঃমিথোজীবিতা নামে পরিচিত) তখন আন্তঃমিথোজীবী প্রজাতির জিনোম বাহক প্রজাতিতে মাইটোসিসের সময় পৃথকভাবে প্রতিলিপি সৃষ্টিকারী ডিএনএ এর মাধ্যমে স্বাতন্ত্র্য উপাদান পুনর্জন করে। উদাহরণস্বরূপ- দুই বা তিনটি মিথোজীবী জীব যৌগিক লিচেন (শৈবাল) গঠন করে যদিও এরা টিকে থাকার জন্যে একে অপরের উপর নির্ভর করে তবুও সংখ্যায় অধিক হওয়ার জন্যে পৃথকভাবে বংশবৃদ্ধি করে এবং পরিবর্তিত হয়।
এই তত্ত্ব বিবৃত করে যে বহু নিউক্লিয়াসযুক্ত একটি এককোষী জীবের প্রতিটি নিউক্লিয়াসের চারপাশে আন্তঃঝিল্লিয় প্রাচীর সৃষ্টি হতে পারে। [৩২] অনেক প্রোটিস্ট যেমন সিলিয়েট বা স্লাইম মোল্ড যাদের কয়েকটা নিউক্লিয়াস থাকে তারা এই তত্ত্বকে সমর্থন করে প্রতিষ্ঠা করে। যদিও শুধুমাত্র বহু নিউক্লিয়াসের উপস্থিতিই এই তত্ত্বকে সমর্থন করার জন্যে যথেষ্ট নয়। সিলিয়েটের বহু সংখ্যক নিউক্লিয়াস বিসদৃশ এবং এদের পৃথক পৃথক কাজ রয়েছে। ম্যাক্রোনিউক্লিয়াসগুলি জীবের প্রয়োজন মেটায় যেখানে মাইক্রোনিউক্লিয়াসগুলি জেনেটিক (বংশগতিয়) উপাদান আদান-প্রদানের মাধ্যমে যৌন প্রজনন ঘটায়। পৃথক অ্যামিবার মত কোষ থেকে সৃষ্ট স্লাইম মোল্ড সিনসিশিয়া কিছু বহুকোষী জীবের সিনসিশিয়া কোষের থেকে ভিন্নধর্মী নয়। গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্যে এই তত্ত্বটির প্রমাণযোগ্য উদাহরণ এবং পূর্বে বিদ্যমান সিনসিশিয়াম থেকে বহুকোষী জীব সৃষ্টির পদ্ধতি প্রদর্শন প্রয়োজন।
১৮৭৪ সালে হ্যাকেলের কলোনিয়াল তত্ত্ব প্রস্তাব করে যে, একই প্রজাতির অনেকগুলি জীবের মিথোজীবিতা (এটা মিথোজীবিতা তত্ত্বের থেকে ভিন্নতর যা বিভিন্ন প্রজাতির মিথোজীবিতাকে নির্দেশ করে) বহুকোষী জীবের সৃষ্টি করে। স্থলজ কোষগুলি আলাদা হয়ে পুনরায় জোড়া লাগার (উদাহরণ- কোষীয় স্লাইম মোল্ড) মাধ্যমে বহুকোষীয়তা ঘটে এবং এর পরিমাণ অল্প, অপরদিকে অধিকাংশ বহুকোষীতা প্রাণীতে (যারা জলজ পরিবেশে উদ্ভূত হয়) কোষ বিভাজনের সময় পৃথক হতে ব্যর্থ হওয়ার ফলস্বরূপ ঘটে। [৩৩] পরবর্তী কলোনি সৃষ্টির পদ্ধতি অসম্পূর্ণ সাইটোকাইনেসিসের মত সহজ হতে পারে, যদিও বহুকোষীতাকে সাধারণত কোষীয় পৃথকীকরণের সাথে সংযুক্ত বলে বিবেচনা করা হয়। [৩৪]
কলোনিয়াল তত্ত্বের উপকারিতা হল এটা ১৬ টি প্রোটোকটিস্টান পর্বের প্রাণীদের মধ্যে স্বাধীনভাবে ঘটতে দেখা গেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় খাদ্য স্বল্পতার সময় অ্যামিবা ডিকটায়োস্টেলিয়াম অনেকগুলো একসাথে হয়ে কলোনি সৃষ্টি করে এবং নতুন জায়গায় স্থানান্তরিত হয়। কিছু অ্যামিবা পরস্পরের থেকে কিছুটা পৃথক হয়ে যায়। প্রোটিস্টার মধ্যে কলোনিয়াল সংগঠনের অন্যান্য উদাহরণ হল Volvocaceae পরিবারের ইউডোরিনা এবং ভলভক্স, পরের জীবটি ৫০০-৫০০০০ কোষ (প্রজাতির উপর নির্ভরশীল) নিয়ে গঠিত যার মধ্যে কিছু অংশ প্রজননে অংশ নেয়। [৩৫] উদাহরণস্বরূপ, একটি প্রজাতিতে ২৫-৩৫ টি কোষ প্রজননে অংশগ্রহণ করে এবং এর মধ্যে ৮ টি অযৌন জনন প্রক্রিয়ায় এবং ১৫-২৫ টি যৌন জনন প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। কিন্তু প্রকৃত বহুকোষী জীব থেকে কলোনিয়াল প্রোটিস্টকে পৃথক করা কঠিন হওয়ায় বলা যায় ধারণা দুইটি স্পষ্ট নয়, তাই কলোনিয়াল প্রোটিস্টকে “মালটিসেলুলার (বহুকোষী)” থেকে “প্লিউরিসেলুলার” বলাটাই বেশি সঙ্গত। [৩]
কিছু বিজ্ঞানী ধারণা করেন যে মেটাজোয়াতে বহুকোষীয়তার ব্যুৎপত্তি সময়গত হতে স্থানসংক্রান্ত কোষীয় পৃথকীকরণের কারণের চেয়ে বরং ক্রমান্বয়ে বিবর্তনের মাধ্যমে কোষীয় পৃথকীকরণ অধিক পরিমাণে ঘটে যা হ্যাকেলের Gastraea তত্ত্বকে সমর্থন করে। [৩৬]
প্রায় ৮০০ মিলিয়ন বছর পূর্বে,[৩৭] একটি একক অণুতে সূক্ষ্ম জেনেটিক পরিবর্তন ঘটেছিল যা গুয়ানাইলেট কাইনেজ প্রোটিন-ইন্টারঅ্যাকশন ডোমেইন (জিকে-পিআইডি) নামে পরিচিত ছিল এবং এটি কোন জীবকে এককোষী জীব হতে বহুকোষী জীবের একটি কোষ গঠন করতে সাহায্য করেছিল। [৩৮]
ভাইরাস থেকে গৃহীত জিনগুলি অতি সম্প্রতি শনাক্ত করা হয়েছে যা বহুকোষী প্রাণীর টিস্যু ও অঙ্গের পৃথকীকরণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং যৌন প্রজনন যেমন- ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর একীভূত হওয়াতেও ভূমিকা পালন করতে পারে। এই একীভূত কোষগুলো মেটাজোয়ান ঝিল্লির সাথে এমনভাবে সংযুক্ত থাকে যে এরা অমরা (প্লাসেন্টা) এবং মস্তিষ্ক ও শরীরের পৃথকীকরণ ঝিল্লিতে রাসায়নিক পদার্থ অতিক্রম করতে বাধা দেয়।দুই ধরনের ভাইরাসের উপাদান শনাক্ত করা হয়েছে। প্রথমটি হল সিনসিশিন (syncytin) যা ভাইরাস থেকে এসেছে। দ্বিতীয়টি হল ইএফএফ১ যা ২০০৭ সালে শনাক্ত করা হয়েছে এবং এটি এফএফ প্রোটিন পরিবারের একটি অংশ ও Caenorhabditis elegans এর ত্বকের গঠনে সাহায্য করে। প্যারিসে পাস্তুর ইন্সটিটিউটের ফেলিক্স রে ইএফএফ১ এর 3D গঠন উদ্ভাবন করেছেন [৩৯] এবং দেখিয়েছেন ভাইরাসের সংক্রমণের ক্ষেত্রে এটা এক কোষের সাথে অন্য কোষকে সংযুক্ত করতে কাজ করে। এটা সত্যি যে, সকল পরিচিত কোষ এবং একীভূতকরণের অণুগুলি ভাইরাস থেকে সৃষ্ট এবং বহুকোষীয়তাকে সক্রিয়কারী আন্তঃকোষীয় যোগাযোগ তন্ত্রের জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোষীয় একীভূত হওয়ার ক্ষমতা ব্যতীত কলোনি গঠিত হতে পারত কিন্তু স্পঞ্জের মত জটিল কিছুর গঠন সম্ভব হত না। [৪০]
বহুকোষীয়তা কোন জীবকে সাধারণত ব্যাপনের মাধ্যমে প্রাপ্ত আকারের সীমাকে অতিক্রম করতে সাহায্য করে: বর্ধিত আকারের একক কোষগুলির তল বনাম আয়তনের (surface-to-volume) অনুপাত কম থাকে বলে এদের জন্যে পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান শোষণ করে তা কোষের সর্বত্র পরিবহন করা যথেষ্ট কঠিন হয়ে থাকে। বহুকোষী জীবের কিছু সীমাবদ্ধতা ব্যতীত এইভাবে আকারে বৃদ্ধি পাওয়ার প্রতিযোগিতামূলক উপকারিতা রয়েছে। তারা এভাবে বাস করলে দীর্ঘ জীবনকাল লাভ করতে পারে পারে কিন্তু পৃথক কোষগুলি দ্রুত মারা যায়। বহুকোষীয়তা একই জীবের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার কোষের পৃথকীকরণের মাধ্যমেও নানা ধরনের জটিলতা বৃদ্ধি করতে পারে।