এই নিবন্ধটির রচনা সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। কারণ ব্যাকরণ, রচনাশৈলী, বানান বা বর্ণনাভঙ্গিগত সমস্যা রয়েছে। (মে ২০২৪) |
বাংলা সাহিত্য | |
---|---|
বাংলা সাহিত্য (বিষয়শ্রেণী তালিকা) বাংলা ভাষা | |
সাহিত্যের ইতিহাস | |
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস | |
বাঙালি সাহিত্যিকদের তালিকা | |
কালানুক্রমিক তালিকা - বর্ণানুক্রমিক তালিকা | |
বাঙালি সাহিত্যিক | |
লেখক - ঔপন্যাসিক - কবি | |
সাহিত্যধারা | |
প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় চর্যাপদ - মঙ্গলকাব্য - বৈষ্ণব পদাবলি ও সাহিত্য - নাথসাহিত্য - অনুবাদ সাহিত্য -ইসলামী সাহিত্য - শাক্তপদাবলি - বাউল গান আধুনিক সাহিত্য উপন্যাস - কবিতা - নাটক - ছোটোগল্প - প্রবন্ধ - শিশুসাহিত্য - কল্পবিজ্ঞান | |
প্রতিষ্ঠান ও পুরস্কার | |
ভাষা শিক্ষায়ন সাহিত্য পুরস্কার | |
সম্পর্কিত প্রবেশদ্বার সাহিত্য প্রবেশদ্বার বঙ্গ প্রবেশদ্বার | |
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস হাজার বছরের অধিককালেরও পুরানো। এই দীর্ঘ ইতিহাসের পেছনে গভীর ও ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আছ সংস্কৃত সাহিত্য, ইসলামি সাহিত্য ও ইংরেজি সাহিত্য। তাছাড়া বিশ্বের অন্যান্য সাহিত্যের প্রভাব এসেছে ইংরেজি সাহিত্যের মাধ্যমে। এ প্রভাবের সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন সময়ে বিচিত্র রূপে । বাংলা সাহিত্যের স্বকীয় মূর্তি লাভের শুভ মুহূর্তে সংস্কৃতের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব যেমন প্রবল ছিল তেমনি পরবর্তীকালে এ সাহিত্যের বিকাশে আরবি ফারসি ইংরেজি সাহিত্যের ভূমিকাও বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার। ভূদেব চৌধুরীর মতে, সংস্কৃত সাহিত্যের শ্রেণি- সীমায়ত গগনচুম্বী শিল্পসমৃদ্ধির পাশে প্রাকৃত এবং তজ্জাত বাংলা সাহিত্য ভারতীয় সর্বজনীন সমষ্টিধর্মিতার ঐতিহ্যকে বহন করে জাত ও বর্ধিত হয়েছে। অন্য পক্ষে ইংরেজি সাহিত্যের স্পর্ধিত বিভেদমূলকভাকে যৌবনোচিত শক্তিতে অতিক্রম করে এই বাংলা সাহিত্যই আবার মিলনমূলক সামাজিক আদর্শের অভিমুখী হয়েছে। অথচ বারেবারেই 'দেবভাষা' ও তৎকালীন রাজভাষার স্বী-কৃত।' সেই সঙ্গে মধ্যযুগের বাংলা ফারসি সাহিত্যের প্রভাব স্বীকার করে নেওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে অভিনবত্ব। প্রভাব প্রকাশ পেয়েছে নানা আঙ্গিকে । বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এভাবেই হাজার বছরের নিরবচ্ছিন্ন সাধনায় কে করে নিয়েছে আয়ত্ত এবং উঠেছে বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধ ইতিহাস। বাঙালির জাতীয় জীবনধারা বরাবর একই খাতে প্রবহমান ছিল না। যুগে যুগে এদেশে সংস্কৃতি ও বাঙালিত্ব ক্রমবিবর্তিত হয়েছে। বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রেও আন্তর ভাব ও বহিরঙ্গ অবয়বে পরিবর্তন এসেছে। জীবনের মূলীভূত ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজনীতিবিষয়ক নানা প্রভাবের অভিঘাতেই বিবর্তনে বৈচিত্র্যের সৃষ্টি হয়েছে। এই বৈচিত্র্য যখন স্বাতন্ত্রে রূপ নিয়ে বিশেষ বিশেষ সময়ের সীমানায় চিহ্নিত হয় তখনই বিশেষ যুগের পরিচয় ধরা পড়ে। বাংলা সাহিত্যের যুগবিভাগের পেছনে সময়ের বৈচিত্র্য কাজ করেছে। বাংলা সাহিত্যের অতীত ইতিহাস সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্যের অবর্তমানে বাংলা ভাষার উদ্ভবকাল সম্পর্কে সুস্পষ্ট আলোকপাত করা সম্ভবপর নয়। তাই এ ব্যাপারে নানা মুনির নানা মতের সমাবেশ ঘটেছে। বাংলা ভাষার পূর্ববর্তী রূপ অপভ্রংশ থেকে কোন মুহূর্তে এ ভাষা স্বপরিচয়ে চিহ্নিত হয়েছে তা সঠিকভাবে নির্ণয় করা বিতর্কমূলক হলেও সবাই বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন হিসেবে চর্যাপদকেই স্বীকার করেন। তাই বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস চর্যাপদ থেকে শুরু। কিন্তু চর্যাপদের প্রথম রচনার কাল সম্পর্কেও পণ্ডিতেরা ঐকমত্যে পৌঁছান নি।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র মতানুসারে চর্যাপদের ৬৫০ থেকে ১২০০ সালের মধ্যে। অপর পক্ষে ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ৯৫০ থেকে ১২০০ সাল পর্যন্ত চর্যাপদের কাল নির্ণয় করেছেন। এ দুটি প্রধান মত ছাড়াও ভিন্ন মতের অস্তিত্ব বিদ্যমান । তবে বাংলা সাহিত্যের উৎপত্তিকাল সম্পর্কে মতানৈক্য থাকলেও এর পরবর্তী বিকাশের সমৃদ্ধ ইতিহাস নিয়ে বিভ্রান্তির কোন অবকাশ নেই। চর্যাপদের রচনাকালের শেষ সীমা অতিক্রম করলেই মধ্যযুগের সমৃদ্ধ সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায় । এ যুগের যথার্থ পরিচয়ও ক্রমশ প্রকাশমান। যথোপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে এবং ব্যাপক অনুসন্ধানের অবর্তমানে মধ্যযুগের অনেক সাহিত্য নিদর্শনের বিলুপ্তি ঘটেছে। হাতের লেখার ধরন পরিবর্তিত হওয়ায় পুরানো সাহিত্যসৃষ্টির পাঠোদ্ধার অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব বিবেচিত হয়েছে। ফলে মধ্যযুগের লেখকদের পূর্ণাঙ্গ আলোচনা সম্ভব হয়েছে এমন আশা করাও অনুচিত। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সংগ্রহশালায় যে বিপুল পরিমাণ হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি সংগৃহীত আছে তার বেশির ভাগেরই পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয় নি। অথচ এগুলোর সবই মধ্যযুগের সাহিত্য ও অন্যান্য বিষয়ের নিদর্শন। এসবের পাঠোদ্ধার সম্ভব হলে হয়ত মধ্যযুগের সাহিত্যের আরও বিস্তৃত পরিচয় লাভ সহজ হয়ে উঠত। আবার মধ্যযুগের মুসলমান কবির প্রতিও উপেক্ষা প্রদর্শনের ফলে তাঁদের সঠিক মূল্যায়ন সম্ভব হয় নি। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে এই ত্রুটি সংশোধনের যে উদ্যোগ চলছে তার ফলে মধ্যযুগ সম্পর্কে তথ্যের আবিষ্কার হচ্ছে। এতে মধ্যযুগের সমৃদ্ধি সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হয়ে উঠে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগও যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। এই মধ্যযুগে মুসলমান কবিগণের অবদানও যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আধুনিক যুগের সাহিত্যনিদর্শন সহজেই জাতির জন্য উদ্দীপনার সঞ্চার করে। এর বৈচিত্র্য, উৎকর্ষ ও সম্ভাবনা বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে বাংলা সাহিত্যের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে, মধ্যযুগের মাধ্যমে আধুনিক যুগে পৌঁছে বাংলা সাহিত্যের একটি পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস প্রত্যক্ষ করা যায়। আধুনিক যুগের উদ্ভবের পরও অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়েছে। সাহিত্য সৃষ্টির প্রাচুর্য ও বৈচিত্র্য এসেছে এ যুগে সর্বাধিক। সমসাময়িক বা বর্তমান কালের সৃষ্টিসম্ভার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে দেখা দিচ্ছে। সমৃদ্ধি, বৈচিত্র্য ও উৎকর্ষের দিক থেকে আধুনিক যুগ অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
বাংলা সাহিত্যের প্রথম নিদর্শন চর্যাপদের সূচনা থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকে সাধারণভাবে প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক – এই তিন যুগে ভাগ করা হয়েছে। প্রাচীন যুগ ৬৫০ থেকে ১২০০ সাল পর্যন্ত, মধ্যযুগ ১২০০ থেকে ১৮০০ সাল পর্যন্ত এবং আধুনিক যুগ ১৮০০ সাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত বিস্তৃত। কারও কারও মতে ১২০০ থেকে ১৩৫০ সাল পর্যন্ত এই দেড় শ বছর 'অন্ধকার যুগ। আধুনিক যুগকে দু ভাগে ভাগ করা যায় : ১৮০০ থেকে ১৮৬০ সাল পর্যন্ত আধুনিক যুগের প্রথম পর্যায় এবং ১৮৬০ থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায়।সাহিত্যে প্রাচীন যুগ বা আদি যুগের নিদর্শন চর্যাপদ। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী কর্তৃক নেপালের রাজগ্রন্থশালা থেকে ১৯০৭ সালে আবিষ্কৃত এবং বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সাহায্যে ১৯১৬ সালে প্রকাশিত 'হাজার বছরের পুরাণ বাংলা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা' নামক গ্রন্থের চব্বিশ জন বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যের রচিত চর্যাচর্যবিনিশ্চয়ের সাতচল্লিশটি গান চর্যাপদ নামে পরিচিত। চর্যাপদে বৌদ্ধধর্মের গূঢ় সাধনপ্রণালী ও দর্শনতত্ত্ব নানা প্রকার রূপকের মাধ্যমে আভাসে ইঙ্গিতে ব্যক্ত হয়েছে। প্রাচীন বাংলা ভাষায় রচিত এ পদগুলোর যেমন সাহিত্যিক মূল্য বিদ্যমান, তেমনি প্রাচীন বাঙালি সমাজের চিত্রও এতে সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত। ধর্মনির্ভর, আধ্যাত্মিক ও আত্মগত ভাবানুভূতিপ্রধান বিষয়বস্তু অবলম্বনে আদি যুগের বাংলা সাহিত্য তৎকালীন সম্প্রদায়গত বিভেদ বিচ্ছেদ উপেক্ষা করে একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত রূপ নিয়েছিল।
মধ্যযুগ ১২০০ থেকে ১৮০০ সাল পর্যন্ত সম্প্রসারিত। অনেকে ১২০০ থেকে ১৩৫০ সাল পর্যন্ত সময়টুকুকে যুগসন্ধি বা অন্ধকার যুগ বলে অভিহিত করে থাকেন। এ সময়ে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে বলে তেমন প্রমাণ মিলে না। ১২০৪ সালে তুর্কি বীর ইখতিয়ারউদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খিলজি বাংলাদেশ অধিকার করেন। পরবর্তী দেড় শ বছর রাজনৈতিক আলোড়নের জন্য কোন সাহিত্যসৃষ্টি সম্ভব হয় নি বলে অনেকের ধারণা। তাই এই দেড় শ বছরকেই অন্ধকার যুগ বলা হয়েছে। তবে যে সব নিদর্শন পাওয়া গেছে তাতে এ দাবির সত্যতা স্বীকৃত হয় না। বাংলা সাহিত্যবর্জিত এ যুগের জন্য তুর্কিবিজয় ও তার ধ্বংসলীলাকে দায়ী এখনে করা বিভ্রান্তিকর। এ দেশের মানুষের চিরন্তন জীবন যাপন ব্যবস্থা, এখানকার আবহাওয়া, মহামারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বর্তমান থেকে এ অপবাদের অসারতা দুর্ঘটনার জন্য এ সময়ের কোন সাহিত্য 'অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা হয়ত সম্ভব হয় নি। তাছাড়া এ সময়ে বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য অন্যান্য সাহিত্যসৃষ্টির নিদর্শন করছে। এ সময়ে 'প্রাকৃত পৈঙ্গল' সংকলিত হয়েছে, 'শূন্যপুরাণ' ও তার 'কলিমা বা 'নিরঞ্জনের রুষ্মা,' 'ডাক' বা 'খনার বচন', 'সেক শুভোদয়ায়' ধৃত পীরমাহাত্ম্যজ্ঞাপক বাংলা আর্যা অথবা 'ভাটিয়ালী রাগেণ গীয়তে নির্দেশক বাংলা গানের বা মন্ত্রের কথা সে আমলের সাহিত্য নিদর্শন হিসেবে উল্লেখযোগ্য। এ সব কারণে অন্ধকার যুগের অস্তিত্ব স্বীকার না করে ১২০০ সাল থেকেই বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের সূত্রপাত মনে করা উচিত মধ্যযুগের প্রথম নিদর্শন বড়ু চণ্ডীদাসের 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্য। আনুমানিক চৌদ্দ শতকের শেষার্ধে বা পনের শতকের প্রথমার্ধে কবি বড় চণ্ডীদাস রাধাকৃষ্ণের প্রেমকাহিনি অবলম্বনে এ কাব্য রচনা করেন। এ সময়ে মৈথিলি কবি বিদ্যাপতি ব্রজবুলি ভাষায় রাধাকৃষ্ণের প্রেমবিষয়ক পদ রচনা করেছিলেন।
মধ্যযুগের প্রথম মুসলমান কবি শাহ মুহম্মদ সগীর পঞ্চদশ শতকে প্রণয়োপাখ্যান জাতীয় কাব্য 'ইউসুফ-জোলেখা' রচনা করেন।
মধ্যযুগের অন্যতম বিশিষ্ট নিদর্শন অনুবাদ সাহিত্য। পনের শতকের শেষার্ধে সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের পৃষ্ঠপোষকতায় তার সভাকবি কৃত্তিবাস কর্তৃক সংস্কৃত রামায়ণের বঙ্গানুবাদের মাধ্যমে এ ধারার সূত্রপাত এবং মহাভারতের ভাগবতের অনুবাদের মাধ্যমে তা সম্প্রসারিত হয়। মালাধর বসুর 'শ্রীকৃষ্ণ বিজয়', কাশীরাম দাসের 'মহাভারত' এ পর্যায়ের বিশিষ্ট গ্রন্থ । তবে সুলতান হোসেন শাহের সেনাপতি পরাগল খাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় কবীন্দ্র পরমেশ্বর প্রথম মহাভারত অনুবাদ করেন যা ''পরাগলী মহাভারত" নামে পরিচিত। পরাগল খাঁর ছেলে ছুটি খানের পৃষ্ঠপোষকতায় শ্রীকর নন্দী 'ছুটি খানি মহাভারত' রচনা করেন।
মধ্যযুগের বিরাট পরিসর জুড়ে মঙ্গলকাব্যের উদ্ভব ঘটেছিল। দেবদেবীর * এই কাব্যধারার সূত্রপাত হয় পনের শতকে।
বাংলা সাহিত্যের হাজার বছরের ইতিহাস প্রধানত তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত:[১][২]
যুগের নাম |
সময় পর্ব | প্রধান বৈশিষ্ট্য |
---|---|---|
প্রাচীন যুগ |
আনুমানিক ৬৫০ খ্রি.[ক] – ১২০০ খ্রি. |
|
মধ্য যুগ |
আনুমানিক ১২০০ খ্রি. – ১৮০০ খ্রি.[খ] | |
আধুনিক যুগ |
১৮০০ খ্রি. – বর্তমান |
|
চর্যাপদ বাংলা লিখিত সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন।[৩][৪] ধারণা করা হয় এটি খ্রিস্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে রচিত হয়েছিল। চর্যার প্রধান কবিগণ হলেন লুইপাদ, কাহ্নপাদ, ভুসুকুপাদ, শবরপাদ প্রমুখ। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থশালা থেকে চর্যার একটি খণ্ডিত পুঁথি উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে চর্যাপদের সঙ্গে বাংলা ভাষার অনস্বীকার্য যোগসূত্র বৈজ্ঞানিক যুক্তিসহ প্রতিষ্ঠিত করেন।
১২০৪ সালে গৌড়ে তুর্কি আক্রমণের সময় থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়কালকে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ বলা হয়। তবে ১২০১ থেকে ১৩৫০ সাল পর্যন্ত সময়কে বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ বলা হয়।[৫] সম্ভবত এ যুগে মুসলমান ও তুর্কি আক্রমণের কারণে কবি সাহিত্যিকগণ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে থাকতেন। মনে করা হয়, তাঁরা এ কারণে উল্লেখযোগ্য কোন সাহিত্য রচনা করতে পারেননি ।[৬] এই সময়ের সাহিত্য মূলত ধর্মীয় বিষয় নির্ভর ছিল। প্রথমদিকের সমস্ত রচনাই ছিল পদ্যমূলক; গদ্যমূলক রচনা চালু হয় অনেক পরে। তুলোট কাগজে লেখা পুঁথির মাধ্যমে সাহিত্যচর্চা চলত।
অনেক ভাষাবিদ অন্ধকার যুগকে স্বীকার করেন না। এসময় ডাক ও খনার বচন এবং রমী পণ্ডিতের বর্ণনামূলক কবিতা সুপর্ণা। [৭]
বৈষ্ণব সাহিত্য: বৈঞ্চব মতকে কেন্দ্র করে রচিত হয় বৈষ্ণব সাহিত্য। পঞ্চদশ শতকে শ্রী চৈতন্য দেবের ভাব বিপ্লবকে কেন্দ্র করে গোটা বাংলা সাহিত্যে বৈষ্ণব সাহিত্যের জন্ম হয়। বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক শ্রী চৈতন্য দেব কোন পুস্তক লিখে যাননি অথচ তাঁকে ঘিরেই জন্ম হয় এই সাহিত্যের। বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্যর সূচনা ঘটে চর্তুদশ শতকে বিদ্যাপতি ও চন্ডীদাস-এর সময়ে তবে ষোড়শ শতকে এই সাহিত্যের বিকাশ হয়। বৈষ্ণব পদাবলির প্রধান অবলম্বন রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা।
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কবিতাগুলোর একটি হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপি উদ্ধার করা হয় ১৯০৯ সালে। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর শহরের নিকটবর্তী কাকিল্যা গ্রামের জনৈক দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ এটি আবিষ্কার করেন। বড়ুচণ্ডীদাস নামের মধ্যযুগের এক কবি এটি রচনা করেন। চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দেয়, আবার শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে বাংলা ভাষাকে একটি নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হয়েছে। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় শ্রীকৃষ্ণকীর্তন সম্পর্কে বলেছেন যে, "শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে যে বাংলা ব্যাকরণ ব্যবহার করা হয়েছে, তা অনেক ক্ষেত্রেই বর্তমানের নতুন বাংলা সম্পর্কে ধারণা দেয়।"
মৈথিলী ভাষায় লেখা বিদ্যাপতি পদাবলি বাংলা কবিতায় বিশেষ প্রভাব রেখেছিল। বিদ্যাপতি পঞ্চদশ শতকের মৈথিল কবি। বঙ্গদেশে তাঁর প্রচলিত পদাবলির ভাষা ব্রজবুলি। অনেক বাঙালি কবি এই ভাষায় কবিতা রচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ভানুসিংহের পদাবলীতে' এই ভাষার ব্যবহার দেখা যায় |
রাধা এবং কৃষ্ণের প্রেমের কাহিনীগুলো চণ্ডীদাসের লেখা পদাবলিতে বর্ণনা করা হয়েছে। "বাদু", "দেভিজা", "দিনা" ইত্যাদি বিভিন্ন নামে এবং কখনো কখনো নাম ছাড়া এই পদাবলিগুলো পাওয়া গেছে।
একটি সম্পূর্ণ মঙ্গলকাব্যের ৫ টি অংশ থাকে। মঙ্গলকাব্য রচনা করা হয়েছিল মূলত মনসা এবং চণ্ডী এর পূজার স্তুতি বর্ণনা করার জন্য। মঙ্গলকাব্য বাংলা সাহিত্যের দুটি শাখায় বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছে। সেগুলো হল:
মনসামঙ্গল কাব্যের আদি কবি কানাহরি দত্ত।
চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের প্রধান চরিত্র কালকেতু।
১৭৬০ সালে ভারতচন্দ্রের মৃত্যুর সাথে সাথে মধ্যযুগের সমাপ্তি হয়।
যুগসন্ধিক্ষণ মানে দুই যুগের মিলন। ১৭৬১-১৮৬০ সাল পর্যন্ত সময়কালকে যুগসন্ধিক্ষণ বলে। এই সময়ে মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগের সংমিশ্রণ বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। এ সময়ের সাহিত্যিক কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত। তাকে স্ববিরোধী কবিও বলা হয়। প্রথম দিকে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লিখলেও শেষ দিকে ইংরেজদের প্রশংসা করেছেন।
এই নিবন্ধটির বর্ণনা ভঙ্গি উইকিপিডিয়ার বিশ্বকোষীয় বর্ণনা ভঙ্গি প্রতিফলিত করেনি। এই ব্যাপারে নির্দিষ্ট আলোচনা আলাপ পাতায় পাওয়া যেতে পারে। নির্দেশনা পেতে সঠিক নিবন্ধ লেখার নির্দেশনা দেখুন। |
১৮০১ খ্রিস্টাব্দ থেকে বর্তমান সময়কালকে বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ বলা হয়। এই যুগকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়:-
বাংলা সাহিত্যের গল্প, উপন্যাস, নাটক ও প্রবন্ধ ইত্যাদি আধুনিক যুগের সৃষ্টি। পদ্য ও ছড়া বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম রূপবন্ধ। তবে আধুনিক কবিতার প্রবর্তন হয়েছে বিংশ শতকের গোড়ার দিকে। এই উনিশ শতকেরই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮-১৮৯৪) ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ঔপন্যাসিক; যিনি বাংলা সাহিত্যের খাতকে বিকশিত করেছিলেন খুব শক্তিশালীভাবে। এরপর বাংলা সাহিত্যে ধ্রুবতারার মতো উন্মেষ ঘটে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,কাজী নজরুল ইসলাম,শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর মতো গুণী সাহিত্যিকদের। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা অবশিষ্ট নেই যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পদচারণা বিরল। প্রথম এশীয় হিসেবে ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন তার বিখ্যাত গীতাঞ্জলি কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ Gitanjali;Song offerings এর জন্য। ব্রিটিশ উপনিবেশিক সময়কালে বেনিয়া শাসনের বিপরীতে যে দৃপ্ত কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হয়েছিলো কাজী নজরুল ইসলামের লেখনীতে তা আজ অব্দি আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়। বাংলা কথাসাহিত্যের আরেক কিংবদন্তি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখে গেছেন বহু উপন্যাস যার ফলশ্রুতিতে বিশ্বব্যাপী বাঙালিদের কাছে জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক হিসেবে তিনি সমাদৃত। আলাদা করে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাসঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম উচ্চারণ করতেই হয়। পথের পাঁচালী, পদ্মা নদীর মাঝি তাদের ই কালজয়ী সৃষ্টি। বাংলার রূপ-লাবণ্য,ঐশ্বর্যে বিমোহিত হয়ে কবি জীবনানন্দ দাশ রচনা করেছেন এমনি কত কাব্য যা আমাদেরকে বাংলার রুপে বারবার প্রেমে পড়তে বাধ্য করে। পল্লিকবি খ্যাত জসিমউদ্দিন গ্রাম বাংলার পটভূমিতে রচনা করেছেন রাখালী,বালুচর,হাসু,নক্সী কাঁথার মাঠ,সোজন বাদিয়ার ঘাট সহ আরো অনেক কাব্য। বাংলার আরেক জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ যিনি বর্তমান প্রজন্মের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়।তিনি লেখালেখি ছাড়াও নাট্য প্রযোজক হিসেবেও সুনাম কুড়িয়েছেন। হিমু চরিত্রটি তার কালজয়ী সৃষ্টি।