আত্মহত্যা |
---|
বাংলাদেশে আত্মহত্যা অপ্রাকৃত মৃত্যুর একটি সাধারণ কারণ এবং দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক সমস্যা । প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী আত্মহত্যার কারণে যেসকল লোকেদের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায় তাদের মধ্যে ০.০৬% বাংলাদেশী । [১]
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১১ সালে বাংলাদেশের মানুষের আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ১৯,৬৯৭ জন। [১] পুলিশ সদর দফতরের মতে, ২০১৩ সালে বাংলাদেশে ১১,০৯৯ জন আত্মহত্যা করেছে [২] । শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢাকা) - এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০ সালে বাংলাদেশের প্রায় ৬,৫০০,০০ জন মানুষ আত্মহত্যা প্রবণ হয়েছিল। প্রতিবছর ১,০০,০০০ জনে ১২৮.০৮ জন আত্মহত্যা করে। মেডিকেল কলেজের ডাঃ এ এইচ এম ফিরোজ ও ডাঃ এস এম নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি দল চুয়াডাঙ্গা জেলার মোমিনপুর ইউনিয়নে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল ২০১০ পর্যন্ত এই সমীক্ষা চালিয়েছিলো। তবে এটি লক্ষ করা গেছে যে উপর্যুক্ত হারগুলি কেবলমাত্র একটি ইউনিয়নে পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতেই ধরে নেওয়া হয়েছিল যা সারা দেশে মোট আত্মহত্যার হারের পক্ষে ভাল প্রতিফলক নয় । কারণ গত কয়েক বছরের চেঁয়ে ঐ বছর মোট আত্মহত্যার হার প্রতিবেদনে উল্লিখিত তুলনায় অনেক কম ছিল। [৩]
দ্য ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০২ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৭৩,৩৮৯ জন আত্মহত্যা করেছে। এই ৭৩,৩৮৯ জন ব্যক্তির মধ্যে, ৩১,৮৫৭ জন নিজেকে ফাঁসি দিয়ে এবং ৪১,৫৩২ জন বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছিল। [৪] বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থা দেখায় যে জানুয়ারী ২০১১ থেকে আগস্ট ২০১১ পর্যন্ত ২৫৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছে এবং তাদের মধ্যে ১৫৮ জন মহিলা এবং বাকী ছিলেন পুরুষ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আত্মহত্যা প্রবণতার ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। বাংলাদেশে প্রতি বছর কমপক্ষে ১৩ হাজার থেকে ৬৪ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। দেশে আত্মহত্যায় মৃত্যুহার প্রতি লাখ মানুষে কমপক্ষে ৭ দশমিক ৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৬ জন। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। ওই আট মাসে আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৯৪ শতাংশ স্কুলগামী শিক্ষার্থী।[৫]
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০১০ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ সালে যে ১০০,০০০ জন মানুষের মধ্যে ১২৮.০৮ জন আত্মহত্যা করেছিলেন তাদের মধ্যে আবার ৮৯% মহিলা ছিলেন এবং তাদের বেশিরভাগই অবিবাহিত ছিলেন। [৩] বাংলাদেশী মহিলা সংগঠন জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির পরিসংখ্যান দেখায় যে, ২০০৬ থেকে ২০১০ পর্যন্ত ৪০ জন ছাত্রী লাঞ্ছনার শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছিল। ২০০১ থেকে ২০১০ পর্যন্ত শারীরিক ও ঘরোয়া সহিংসতার কারণে ৪,৭৪৭ জন মহিলা ও মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। [৪]
বিবিসি নিউজে প্রকাশিত ল্যানসেটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি, কারণ তাদের সমাজে নিকৃষ্টতম অবস্থান। আরেকটি কারণ হলো নিরক্ষরতার উচ্চ হার এবং পুরুষদের উপর তাদের অর্থনৈতিক নির্ভরতা। [৬]
২০০৭ সালে, ময়মনসিংহে ৯ সংখ্যা বিশিষ্ট একটি পরিবার নিজেদের একটি ট্রেনে চাপিয়ে গণহত্যা করে। [৭] তাদের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা ডায়েরি অনুসারে, তারা আদম ও হাওয়ার মতো জীবনযাপনের জন্য একটি শুদ্ধ জীবন চেয়েছিলো এবং তারা যেকোনো ধর্মের দাসত্ব থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করতে চেয়েছিলো। [৮]
বাংলাদেশের আত্মহত্যার সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি ফাঁসি নেওয়া । এই পদ্ধতিতে লিগচার উপাদান বা দড়ি ছাড়া অন্য কোনও ব্যয় জড়িত নেই এবং এই কারণেই এটি পছন্দসই পদ্ধতি। [৯] আবার বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করা বাংলাদেশে আরো একটি সাধারণ পদ্ধতি। তবে শহরাঞ্চলে মানুষ আত্মহত্যা করার জন্য অন্যান্য পদ্ধতি অনুসরণ করে যেমন বারবিট্রেট্রেট ট্যাবলেটগুলির অত্যধিক মাত্রায় বা অন্য উপায়ে।