বাংলাদেশ পৃথিবীর অষ্টম জনবহুল রাষ্ট্র এবং দশম ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ। এখানে শহরাঞ্চলে ২০১০-১৫ সালের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৩%। [১] এই বর্ধিত জনসংখ্যার সঙ্গে প্রতিনিয়ত সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যাও বেড়ে চলছে, বিশেষত বড় শহরগুলোতে। সম্প্রতি ইউএনএফপিএ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা বিশ্বের অন্যতম প্রধান দূষিত নগরী এবং শহুরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এর একটি বড় সমস্যা। [২]
বর্তমানে (২০১২) বাংলাদেশে বর্জ্য সৃষ্টির পরিমাণ প্রতি বছরে প্রায় ২২.৪ মিলিয়ন টন অথবা মাথাপিছু ১৫০ কিলোগ্রাম। [৩] বাংলাদেশে বর্জ্য উৎপাদনের হার বেড়েই চলছে, এভাবে ২০২৫ সালে দৈনিক প্রায় ৪৭০৬৪ টন বর্জ্য উৎপন্ন হবে। তখন বর্জ্য উৎপাদনের হার বেড়ে বছরে মাথাপিছু ২২০ কিলোগ্রাম হবে। বিশাল জনসংখ্যার অধিকাংশেরই সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণের সুবিধা নেই, ফলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিশৃঙ্খলা বাড়তে পারে। [৪] বাংলাদেশে বড় শহর যেমন ঢাকায় বর্জ্য সংগ্রহ করার হার মাত্র ৩৭%। যেসব বর্জ্য সংগ্রহ করা হয় না, সেগুলো অশোধিত অবস্থায় পরিবেশে মুক্ত হয় এবং এতে স্থানীয়ভাবে মারাত্মক পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটতে পারে। [৫]
বর্জ্য এবং বিশেষত শহরাঞ্চলীয় শিল্পবর্জ্য ঠিকমত ব্যবস্থাপনার অভাবে যেসব সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে সেগুলোর মধ্যে ম্যালেরিয়া, শ্বাসকষ্ট ও বিবিধ পানিবাহিত রোগের বিস্তার প্রধান। জৈবরাসায়নিক বর্জ্য বা হাসপাতালের বর্জ্য বাংলাদেশের জন্য খুবই বিপজ্জনক। জৈবরাসায়নিক বর্জ্যের মধ্যে ২০% বর্জ্য অতিমাত্রায় সংক্রামক এবং এগুলো সরাসরি পয়ঃনিষ্কাশন প্রণালী বা নালায় অবমুক্ত করা হয়। [৬] এ ধরনের দুর্বল ব্যবস্থাপনা এলাকাবাসীর স্বাস্থ্যে সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখে। অধিকাংশ শিশুমৃত্যুর ঘটনায় এই সংক্রমণই দায়ী। [৭] কঠিন বর্জ্যসমূহ নিষ্কাশন নালার পথরোধ করে এবং সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এছাড়া পথেঘাটে আবর্জনার স্তূপ হতে দুর্গন্ধ ও মশার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। [৭]
বর্তমানে বাংলাদেশে, বিশেষত শহরাঞ্চলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সি (JICA) ঢাকার কঠিন বর্জ্য ব্যাবস্থাপনার জন্য একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। [৮] সোশিয়াল বিজনেস এন্টারপ্রাইজ ওয়েস্ট কনসার্ন, বাসাবাড়ি পর্যায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করছে। ইউনিসেফ সিটি কর্পোরেশন ও শহরাঞ্চলে বর্জ্য পুনর্ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করেছে। [৮] এতদসত্ত্বেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মানোন্নয়নে, বিশেষত শিল্পকারখানার বর্জ্য ও হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এসব উদ্যোগ নিতান্তই অপ্রতুল।