বাংলাদেশ প্রবেশদ্বার |
এই নিবন্ধটি মেয়াদোত্তীর্ণ। |
বাংলাদেশের সংবিধান স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর তারিখে বাংলাদেশ গণপরিষদে এই সংবিধান গৃহীত হয়, এবং একই বছরের ১৬ই ডিসেম্বর বা বাংলাদেশের বিজয় দিবসের প্রথম বার্ষিকী হতে এটি কার্যকর হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের মোট ১৭ বার সংশোধন করা হয়েছে। তবে এসব সংশোধনীর মধ্যে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পঞ্চম সংশোধনী, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সপ্তম সংশোধনী, খালেদা জিয়ার ত্রয়োদশ সংশোধনী ও শেখ হাসিনার ষোড়শ সংশোধনী সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক বাতিল করা হয়েছে। এই সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদ সদস্যদের মোট সংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হয় যা সংবিধানের ১৪২ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে।[১]
তবে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭খ তে বলা হয়ছে সংবিধানের ১৪২ নং অনুচ্ছেদে যাই থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদের বিধানবলী সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদের বিধানাবলী সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোন পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হবে।[২]
এই অংশটিতে কোনো উৎস বা তথ্যসূত্র উদ্ধৃত করা হয়নি। |
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৭টি সংশোধনী আনা হয়েছে। এ সময়কালে বসা ১০টি সংসদের মধ্যে সপ্তম সংসদ বাদে প্রতিটি সংসদেই সংবিধান সংশোধন হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদকালের সপ্তম সংসদে সংবিধানে কোনো সংশোধন হয়নি। অপরদিকে প্রথম সংসদের মেয়াদকালে সব থেকে বেশি ৪ বার সংবিধানে সংশোধনী আনা হয়েছে।
১৭টি সংশোধনীর মধ্যে সব থেকে বেশি ভোট পড়েছে ২০১৪ সালে আনা বিতর্কিত ষোড়শ সংশোধনীতে। ওই সময় ৩৫০টি ভোটের মধ্যে ৩২৭-০ ভোটে সংশোধন বিল পাস হয়। আর সংসদ নেতা হিসেবে শাহ আজিজুর রহমান, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও খালেদা জিয়া পৃথক পাঁচটি সংশোধনী বিল পাসের জন্য সংসদে তোলেন। বাকি বিলগুলো সংশ্লিষ্ট সংসদের আইনমন্ত্রীরাই উত্থাপন করেন।
সংবিধানের প্রথম সংশোধনী বিল পাস হয় ১৯৭৩ সালের ১৫ই জুলাই। সংবিধানের প্রথম সংশোধনীটি ছিল যুদ্ধাপরাধীসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পরে এই সংশোধনীর মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা হয়। তৎকালীন আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন। ২৫৪-০ ভোটে বিলটি পাস হয়। তিনজন ভোটার ওই সময় ভোটদানে বিরত থাকেন। পরে এটি ১৯৭৩ সালের ১৭ই জুলাই রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায়।
১৯৭৩ সালের ২০ই সেপ্টেম্বর সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী বিল পাস হয়। এতে সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদে (২৬, ৬৩, ৭২ ও ১৪২) সংশোধন আনা হয়। অভ্যন্তরীণ গোলযোগ বা বহিরাক্রমণে দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক জীবন বাধাগ্রস্ত হলে ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণার বিধান চালু করা হয় এই সংশোধনীর মাধ্যমে। আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর বিলটি সংসদে উত্থাপন করলে ২৬৭-০ ভোটে তা পাস হয়। সংসদের তৎকালীন বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সাংসদরা বিলটি পাসের সময় সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন। বিলটি পাসের দুইদিনের মাথায় ২২শে সেপ্টেম্বর এটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায়।
ভারত ও বাংলাদেশের সীমানা নির্ধারণী একটি চুক্তি বাস্তবায়ন করার জন্য ১৯৭৪ সালের ২৩ নভেম্বর এ সংশোধনী আনা হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন এবং চুক্তি অনুযায়ী ছিটমহল ও অপদখলীয় জমি বিনিময় বিধান প্রণয়ন করা হয়। আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর উত্থাপিত বিলটি ২৬১-৭ ভোটে পাস হয়। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ১৯৭৪ সালের ২৭শে নভেম্বর।
১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি এ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটানো হয়। সংসদীয় শাসন পদ্ধতির পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন পদ্ধতি চালু এবং বহুদলীয় রাজনীতির পরিবর্তে একদলীয় রাজনীতি প্রবর্তন এই সংশোধনীর মূল কথা। আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর সংশোধনীর বিষয়টি উত্থাপন করেন। বিলটি ২৯৪-০ ভোটে পাস হয়। বিলটি পাসের সময় সরকারি দলের সদস্য এমএজি ওসমানী ও ব্যারিস্টার মঈনুল ইসলাম সংসদ বর্জন করেন। বিলটি পাস হওয়ার দিন ২৫ জানুয়ারিই তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায়।
জাতীয় সংসদে এ সংশোধনী আনা হয় ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে ১৯৭৯ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সামরিক সরকারের যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দানসহ সংবিধানে এর মাধ্যমে “বিসমিল্লাহির-রাহমানির রাহিম” সংযোজন করা হয়। সংসদ নেতা শাহ আজিজুর রহমান উত্থাপিত বিলটি ২৪১-০ ভোটে পাস হয়। পরে সংশোধনীটি উচ্চ আদালতের রায়ে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অবৈধ ঘোষিত হয়ে যায়।
১৯৮১ সালের ৮ জুলাই এ সংশোধনী আনা হয়। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর উপরাষ্ট্রপতি আবদুর সাত্তার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেই সময়ে বিএনপি রাষ্ট্রপতি পদে তাদের প্রার্থী হিসেবে আবদুস সাত্তারকে মনোনয়ন দেয়। ষষ্ঠ সংশোধনীতে সেই পথটাই নিশ্চিত করা হয়। উপরাষ্ট্রপতি পদে বহাল থেকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের বিধান নিশ্চিত করা হয় এই সংশোধনীর মাধ্যমে। সংসদ নেতা শাহ আজিজুর রহমান উত্থাপিত বিলটি ২৫২-০ ভোটে পাস হয়। এটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায় ওই বছরের ১০ জুলাই।
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে সামরিক শাসন বহাল ছিল। ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর জাতীয় সংসদে সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে এইচএম এরশাদের ওই সামরিক শাসনে বৈধতা দেওয়া হয়। ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ৯ নভেম্বর পর্যন্ত সামরিক আইন বলবৎ থাকাকালীন সময়ে প্রণীত সব ফরমান, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের আদেশ, নির্দেশ ও অধ্যাদেশসহ অন্যান্য আইন অনুমোদন দেওয়া হয় এই সংশোধনীর মাধ্যমে। আইনমন্ত্রী বিচারপতি কে এম নুরুল ইসলাম উত্থাপিত সংবিধান সংশোধনী বিলটি ২২৩-০ ভোটে পাস হয়। ১১ নভেম্বরেই এটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায়। ৫ম সংশোধনীর মতো এ সংশোধনীকে ২০১০ সালের ২৬ আগস্ট বাংলাদেশের উচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করে।
১৯৮৮ সালের ৭ জুন সংবিধানে অষ্টম সংশোধনী আনা হয়। এ সংশোধনীর মাধ্যমে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদে (২, ৩, ৫, ৩০ ও ১০০) পরিবর্তন আনা হয়। রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে স্বীকৃতি প্রদান করা ও ঢাকার বাইরে ৬টি জেলায় হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করার বিধান চালু করা হয়। Dacca-এর নাম Dhaka এবং Bangali-এর নাম Bangladeshi-তে পরিবর্তন করা হয় এই সংশোধনীর মাধ্যমে। সংসদ নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ উত্থাপিত এ বিলটি ২৫৪-০ ভোটে পাস হয়। সংশোধনীটি দুইদিন পর ৯ জুন রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায়। তবে পরবর্তীতে ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের বেঞ্চ গঠনের বিষয়টি বাতিল করে দেন সর্বোচ্চ আদালত।
নবম সংশোধনী আনা হয় ১৯৮৯ সালের ১০ জুলাই। এ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতিকে নিয়ে কিছু বিধান সংযোজন করা হয়। এ সংশোধনীর আগে রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি যতবার ইচ্ছা রাষ্ট্রপতি পদের জন্য নির্বাচন করতে পারতেন। এ সংশোধনীর পর অবস্থার পরিবর্তন হয়। রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের সঙ্গে একই সময়ে উপরাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা, রাষ্ট্রপতি পদে কোনও ব্যক্তির পর পর দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন সীমাবদ্ধ রাখা হয়। উত্থাপনকারী সংসদ নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। বিলটি ২৭২-০ ভোটে পাস হয়। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায় ১১ জুলাই। দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার থেকে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তিত হলে এ সংশোধনী কার্যকারিতা হারায়। যদিও সংশোধনীটি বাতিল করা হয়নি।
এই বিলটি পাস হয় ১৯৯০ সালের ১২ জুন। রাষ্ট্রপতির কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে ১৮০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ব্যাপারে সংবিধানের ১২৩(২) অনুচ্ছেদের বাংলা ভাষ্য সংশোধন ও সংসদে মহিলাদের ৩০টি আসন আরও ১০ বছর কালের জন্য সংরক্ষণ করার বিধান করা হয়। আইনমন্ত্রী হাবিবুল ইসলাম ভূঁইয়া উত্থাপিত বিলটি ২২৬-০ ভোটে পাস হয়। এটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ১৯৯০ সালের ২৩শে জুন।
গণঅভ্যুত্থানে এইচ এম এরশাদের পতনের পর বিচারপতি মো. সাহাবুদ্দিনের দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে ১৯৯১ সালে ৬ আগস্ট এ সংশোধনী পাস হয়। এর মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগদান বৈধ ঘোষণা করা হয়। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদের প্রধান বিচারপতির পদে ফিরে যাবার বিধান পাস করানো হয় এই সংশোধনীতে। আইনমন্ত্রী মির্জা গোলাম হাফিজ উত্থাপিত বিলটি ২৭৮-০ ভোটে পাস হয়। এ বিলটি সরকারি ও বিরোধী দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে পাস হয়। এটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায় ১০ আগস্ট।
১৯৯১ সালের ৬ আগস্টের এ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৭ বছর পর দেশে পুনরায় সংসদীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং উপরাষ্ট্রপতির পদ বিলুপ্ত করা হয়। সংশোধনীটি উত্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ৩০৭-০ ভোটে বিলটি পাস হয়। একাদশের মত এ বিলটিও সরকারি ও বিরোধী দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে পাস হয়। এটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায় ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর।
১৯৯৬ সালের ২৭ মার্চ এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষ-নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী জমির উদ্দিন সরকার এই সংশোধনীটি উত্থাপন করেন। এটি ২৬৮-০ ভোটে পাস হয়। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায় ২৮ মার্চ। উচ্চ আদালতের আদেশে ২০১১ সালে এই সংশোধনীটি বাতিল হয়।
২০০৪ সালের ১৬ মে এ সংশোধনী আনা হয়। এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত মহিলা আসন ৩০ থেকে ৪৫টি করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা ৬৫ থেকে ৬৭ বছর করা হয়। এছাড়া রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি এবং সরকারি ও আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতি বা ছবি প্রদর্শনের বিধান করা হয়। আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমেদ উত্থাপিত বিলটি ২২৬-১ ভোটে এটি পাস হয়। এটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায় ১৭ মে।
সংবিধান আইন ২০১১ (পঞ্চদশ সংশোধনী) পাস হয় ২০১১ সালের ৩০শে জুন এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ২০১১ সালের ৩রা জুলাই। এই সংশোধনী দ্বারা সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল করা হয় এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতিও দেওয়া হয়। এই সংশোধনীর দ্বারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। জাতীয় সংসদে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বিদ্যমান ৪৫-এর স্থলে ৫০ করা হয়। সংবিধানে ৭ অনুচ্ছেদের পরে ৭ (ক) ও ৭ (খ) অনুচ্ছেদ সংযোজন করে সংবিধান বহির্ভূত পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পথ রুদ্ধ করা হয়। এই সংশোধনীর বিষয়টি উত্থাপন করেন সেই সময়ের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। বিরোধী দল বিএনপির বর্জনের মধ্যে ২৯১-১ ভোটে বিলটি পাস হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর এই সংশোধনীটি আংশিক অবৈধ বলে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ।[৩][৪]
২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরে এই সংশোধনী আনা হয়। ৭২ এর সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনঃস্থাপনের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদকে ফিরিয়ে দেওয়ার বিধান পাস করা হয় এই সংশোধনীর মাধ্যমে। এটি উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ৩২৭-০ জনের ভোটে সর্বসম্মতভাবে পাস হয় বিলটি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি বিলটির পক্ষে ভোট দেয়। পরে হাইকোর্ট বিভাগ একে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। আপিল বিভাগও ওই রায় বহাল রাখে। ২০ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে পুন:আপিল শুনানির পর আপিল বিভাগ ষোড়শ সংশোধনী আগের দেওয়া রায় বহাল রাখেন।[৫]
৮ জুলাই ২০১৮ সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচনের বিধি আরও ২৫ বছর বহাল রাখার প্রস্তাবসংবলিত সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনী বিল পাস হয়েছে। সংসদের ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ২৯৮-০ ভোটে বিলটি পাস হয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ২৯ জুলাই ২০১৮ এটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায়।
আইনের শিরোনাম | সংশোধনীর বিষয়বস্তু | উত্থাপনকারী | উত্থাপনের তারিখ | পাসের তারিখ | রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের তারিখ | পক্ষে-বিপক্ষে ভোট | মন্তব্য | তৎকালীন রাষ্ট্রপতি/প্রধানমন্ত্রী |
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
সংবিধান (প্রথম সংশোধনী) আইন ১৯৭৩ | যুদ্ধাপরাধীসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা | তৎকালীন আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর | ১২ই জুলাই, ১৯৭৩ | ১৫ই জুলাই ১৯৭৩ | ১৭ই জুলাই ১৯৭৩ | ২৫৪-০ (বিরত ৩ জন) | *** | শেখ মুজিবুর রহমান[৬] |
সংবিধান (দ্বিতীয় সংশোধনী) আইন ১৯৭৩ ২৫ এপ্রিল | অভ্যন্তরীণ গোলযোগ বা বহিরাক্রমনে দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক জীবন বাধাগ্রস্ত হলে “জরুরি অবস্থা” ঘোষণার বিধান | আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর | ১৮ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩ | ২০শে সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩ | ২২শে সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ | ২৬৭-০ (স্বতন্ত্র ও বিরোধীরা ওয়াকআউট করেন) | *** | শেখ মুজিবুর রহমান[৬] |
সংবিধান (তৃতীয় সংশোধনী) আইন ১৯৭৪ | বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন এবং চুক্তি অনুযায়ী ছিটমহল ও অপদখলীয় জমি বিনিময় বিধান | আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর | ২১শে নভেম্বর, ১৯৭৪ | ২৩শে নভেম্বর ১৯৭৪ | ২৭শে নভেম্বর ১৯৭৪ | ২৬১-০৭ | *** | শেখ মুজিবুর রহমান[৬] |
সংবিধান (চতুর্থ সংশোধনী) আইন ১৯৭৫ | সংসদীয় শাসন পদ্ধতির পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন পদ্ধতি চালু এবং বহুদলীয় রাজনীতির পরিবর্তে একদলীয় রাজনীতি প্রবর্তন এবং বাকশাল গঠন | আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর | ২৫শে জানুয়ারি ১৯৭৫ | ২৫শে জানুয়ারি ১৯৭৫ | ২৫শে জানুয়ারি ১৯৭৫ | ২৯৪-০ | *** | শেখ মুজিবুর রহমান[৬] |
সংবিধান (পঞ্চম সংশোধনী) আইন ১৯৭৯ | ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে ১৯৭৯ সালের ৫ই এপ্রিল পর্যন্ত সামরিক সরকারের যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দান,"বিসমিল্লাহির-রাহমানির রাহিম" সংযোজন | সংসদ নেতা শাহ আজিজুর রহমান | ৪ই এপ্রিল ১৯৭৯ | ৬ই এপ্রিল ১৯৭৯ | ৬ই এপ্রিল ১৯৭৯ | ২৪১-০ | সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত এবং বাতিলকৃত | জিয়াউর রহমান[৬] |
সংবিধান (ষষ্ঠ সংশোধনী) আইন ১৯৮১ | উপরাষ্ট্রপতি পদে বহাল থেকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের বিধান নিশ্চিতকরণ | সংসদ নেতা শাহ আজিজুর রহমান | ১লা জুলাই ১৯৮১ | ৮ই জুলাই ১৯৮১ | ৯ই জুলাই ১৯৮১ | ২৫২-০ | *** | জিয়াউর রহমান[৬] |
সংবিধান (সপ্তম সংশোধনী) আইন ১৯৮৬ | ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ৯ই নভেম্বর পর্যন্ত সামরিক আইন বলবৎ থাকাকালীন সময়ে প্রণীত সকল ফরমান, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের আদেশ, নির্দেশ ও অধ্যাদেশসহ অন্যান্য সকল আইন অনুমোদন | আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বিচারপতি কে এম নুরুল ইসলাম | ১০ই নভেম্বর ১৯৮৬ | ১০ই নভেম্বর ১৯৮৬ | ১০ই নভেম্বর ১৯৮৬ | ২২৩-০ | সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত এবং বাতিলকৃত | হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ[৬] |
সংবিধান (অষ্টম সংশোধনী) আইন ১৯৮৮ | রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে স্বীকৃতিদান ও ঢাকার বাইরে ৬টি জেলায় হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন। Dacca-এর নাম Dhaka এবং Bangali-এর নাম Bangla-তে পরিবর্তন করা হয় | সংসদ নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ | ১১ই মে ১৯৮৮ | ৭ই জুন ১৯৮৮ | ৯ই জুন ১৯৮৮ | ২৫৪-০ | *** | হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ[৬] |
সংবিধান (নবম সংশোধনী) আইন ১৯৮৯ | রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের সাথে একই সময়ে উপরাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা, রাষ্ট্রপতি পদে কোনও ব্যক্তিকে পর পর দুই মেয়াদে সীমাবদ্ধ রাখা | সংসদ নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ | ৬ই জুলাই ১৯৮৯ | ১০ই জুলাই ১৯৮৯ | ১১ই জুলাই ১৯৮৯ | ২৭২-০ | *** | হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ[৬] |
সংবিধান (দশম সংশোধনী) আইন ১৯৯০ | রাষ্ট্রপতির কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে ১৮০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ব্যাপারে সংবিধানের ১২৩(২) অনুচ্ছেদের বাংলা ভাষ্য সংশোধন ও সংসদে মহিলাদের ৩০টি আসন আরো ১০ বছরকালের জন্য সংরক্ষণ | আইন ও বিচারমন্ত্রী হাবিবুল ইসলাম | ১০ই জুন ১৯৯০ | ১২ই জুন ১৯৯০ | ২৩শে জুন ১৯৯০ | ২২৬-০ | *** | হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ[৬] |
সংবিধান (একাদশ সংশোধনী) আইন ১৯৯১ | অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের স্বপদে ফিরে যাবার বিধান | আইন ও বিচারমন্ত্রী মির্জা গোলাম হাফিজ | ২রা জুলাই ১৯৯১ | ৬ই আগস্ট ১৯৯১ | ১০ই আগস্ট ১৯৯১ | ২৭৮-০ | *** | শাহাবুদ্দিন আহমেদ (প্রধান উপদেষ্টা) |
সংবিধান (দ্বাদশ সংশোধনী) আইন ১৯৯১ | সংসদীয় পদ্ধতির সরকার পুনঃপ্রবর্তন ও উপরাষ্ট্রপতি পদ বিলুপ্তি | প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া | ২রা জুলাই ১৯৯১ | ৬ই আগস্ট ১৯৯১ | ১৮ই সেপ্টেম্বর ১৯৯১ | ৩০৭-০ | *** | বেগম খালেদা জিয়া |
সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধনী) আইন ১৯৯৬ | অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষ-নিদর্লীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন | আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী জমির উদ্দিন সরকার | ২১শে মার্চ ১৯৯৬ | ২৭শে মার্চ ১৯৯৬ | ২৮শে মার্চ ১৯৯৬ | ২৬৮-০ | সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত এবং বাতিলকৃত | বেগম খালেদা জিয়া |
সংবিধান (চতুর্দশ সংশোধনী) আইন ২০০৪ | নারীদের জন্য সংসদে ৪৫টি সংসদীয় আসন সংরক্ষণ, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংরক্ষণ, অর্থ বিল, সংসদ সদস্যদের শপথ, সাংবিধানিক বিভিন্ন পদের বয়স বৃদ্ধি | আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ | ২৭শে মার্চ ২০০৪, দ্বিতীয়বার ২৮শে এপ্রিল ২০০৪ | ১৬ই মে ২০০৪ | ১৭মে ২০০৪ | ২২৬-১ | *** | বেগম খালেদা জিয়া |
সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধনী) আইন ২০১১ | সংবিধানের প্রস্তাবনা সংশোধন, ১৯৭২-এর মূলনীতি পূনর্বহাল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তকরণ, ১/১১ পরবর্তী দ্বিতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ম বহির্ভুতভাবে ৯০ দিনের অধিক ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি প্রমার্জ্জনা, নারীদের জন্য সংসদে ৫০ টি সংসদীয় আসন সংরক্ষণ, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি | আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ | ২৫শে জুন ২০১১ | ৩০শে জুন ২০১১ | ৩রা জুলাই ২০১১ | ২৯১-১ | সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত এবং আংশিক বাতিলকৃত[৭] | শেখ হাসিনা |
সংবিধান (ষোড়শ সংশোধনী) আইন ২০১৪ | বাহাত্তরের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনঃস্থাপনের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদকে ফিরিয়ে দেয়া | আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক | ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ | ৩২৮-০[৮] | সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত এবং বাতিলকৃত | শেখ হাসিনা |
সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) আইন - ২০১৮ | আরও ২৫ বছরের জন্য জাতীয় সংসদের ৫০টি আসন শুধুমাত্র নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত রাখা | আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক | ১০ এপ্রিল ২০১৮ | ৮ জুলাই ২০১৮ | ২৯ জুলাই ২০১৮ | ২৯৮-০[৯] | *** | শেখ হাসিনা |