বাংলাদেশ |
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
---|---|
কূটনৈতিক মিশন | |
বাংলাদেশ দূতাবাস, ওয়াশিংটন, ডি.সি. | মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস, ঢাকা |
বাংলাদেশ–মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক হল বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রদ্বয়ের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। ওয়াশিংটন ডি.সি.তে বাংলাদেশের দূতাবাস রয়েছে, আর ঢাকায় রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস। এছাড়া নিউ ইয়র্ক ও লস এঞ্জেলসে কনস্যুলেট অফিস রয়েছে। আর চট্টগ্রাম, যশোর, রাজশাহী ও সিলেটে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইনফরমেশন সেন্টার। বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাস আর্চার কে ব্লাড আমেরিকান লাইব্রেরী এবং এডওয়ার্ড এম কেনেডি সেন্টার ইন ঢাকা পরিচালনা করে। এ দুই রাষ্ট্রই জাতিসংঘের সদস্য।
২০১৪ সাল অনুযায়ী ৭৬% বাংলাদেশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে পছন্দসই মতামত দিয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে হওয়া জরিপে বৃহত্তম।[১]
বাংলাদেশ | মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | |
---|---|---|
ক্ষেত্র | ১৪৭,৫৭০ km2 | ৯,৮৩৩,৫১৭ km2 |
জনসংখ্যা | ১৭১,৭০০,০০০ | ৩২৪,০৯৯,৫৯৩ |
জনসংখ্যার ঘনত্ব | ১,৩১৯/কিমি২ | ৩৫/কিমি২ |
রাজধানী | ঢাকা | ওয়াশিংটন ডি.সি. |
বৃহত্তম মহানগর | ঢাকা | নিউ ইয়র্ক সিটি |
সরকারব্যবস্থা | কেন্দ্রীভূত সংসদীয় প্রভাবশালী দল শাসিত সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র | যুক্তরাষ্ট্রীয় রাষ্ট্রপতি শাসিত সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র |
প্রথম নেতা | শেখ মুজিবুর রহমান (প্রেসিডেন্ট; পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রী) | জর্জ ওয়াশিংটন (প্রেসিডেন্ট) |
বর্তমান নেতা | ড. মুহম্মদ ইউনূস | জো বাইডেন |
সহকারী নেতা (Deputy) | নেই [n ১] | কমলা হ্যারিস |
প্রাতিষ্ঠানিক ভাষা | দে জুরি: বাংলা; দে ফ্যাক্তো: বাংলা, ইংরেজি |
দে জুরি: কোনো সংবিধানপ্রদত্ত ভাষা নেই; দে ফ্যাক্তো: ইংরেজি |
জিডিপি (নমিনাল) | ইউএস $২০৫ বিলিয়ন | ইউএস $১৮ ট্রিলিয়ন |
জিডিপি (নমিনাল) পার ক্যাপিটাল (2014) | ইউএস $১,২৮৪ | ইউএস $৫৭,২২০ |
জিডিপি (পিপিপি) (২০১৪) | ইউএস $৫৭২.৪৪ বিলিয়ন | ইউএস $১৮.৫ ট্রিলিয়ন |
জিডিপি (পিপিপি) পার ক্যাপিটাল (২০১৪) | ইউএস $৩,৫৮১ | ইউএস $৫২,২২০ |
মানব উন্নয়ন সূচক | ০.৫৭০ (medium) | ০.৯১৫ (high) |
মুদ্রা | বাংলাদেশী টাকা | মার্কিন ডলার |
সামরিক ব্যয় | ইউএস $৩.০৩ বিলিয়ন (জিডিপির ১.২%) | ইউএস $৫৩৪.৩ বিলিয়ন (২০১২) (জিডিপির ৪.০৬%) |
মানবশক্তি | সক্রিয় সৈন্য: ১৫৭,০০০ (৬৩,০০০ সংরক্ষিত কর্মকর্তা) | সক্রিয় সৈন্য: ১,৩০১,৩০০ (৮১১,০০০ সংরক্ষিত কর্মকর্তা) |
প্রধান ধর্ম | ইসলাম ধর্ম (৮৯%), হিন্দু ধর্ম (৯%), বৌদ্ধধর্ম (১%), খ্রিস্ট ধর্ম, অন্যান্য (১%), নাস্তিক্যবাদ। | খ্রিস্ট ধর্ম (৭০%), নাস্তিক্যবাদ (১৫℅), জৈন ধর্ম (১%), ইসলাম ধর্ম (০.৯%), হিন্দু ধর্ম (০.৭%) ও বৌদ্ধধর্ম (০.৭%), অন্যান্য |
বঙ্গের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক স্থাপিত হয় ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনামল থেকে। ১৮৬০-এর দিকে, ফোর্ট উইলিয়ামের আমেরিকান কনস্যুলেট জেনারেল চট্টগ্রামে কনস্যুলার এজেন্সি খোলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন বার্মা ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে পূর্ববঙ্গে আমেরিকান নৌ, বিমান ও সামরিক বাহিনী নিযুক্ত ছিল।
১৯৪৯ সালের ২৯শে আগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারত বিভাগের পর ঢাকায় (বহির্বিশ্বে "Dacca" হিসেবে উচ্চারিত হত) কনস্যুলেট জেনারেল স্থাপন করে,[২] এবং পূর্ববঙ্গ হয়ে উঠল পাকিস্তান শাসনের পূর্বশাখা। ১৯৬০-এর দিকে আমেরিকান শিক্ষক, স্থাপত্যবিদ এবং সাহায্যকর্মীরা পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানীতে প্রায়শই আসত।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষে। তবে আর্চার কে ব্লাড কনস্যুল জেনারেলের নেতৃত্বে আমেরিকান অধিবাসীরা বাংলাদেশি সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী ও বুদ্ধিজীবীদের উপর পশ্চিম পাকিস্তানিদের নৃশংসতার বিরুদ্ধে একাধিক টেলিগ্রাম করে। নিক্সন প্রশাসন বাংলাদেশের গণহত্যার ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকা এবং পাকিস্তানি সামরিক জান্তাকে সহযোগিতার বিরুদ্ধে তাদের অনেকেই অবস্থান নেয়। বাংলাদেশ বিষয়ে নিক্সনের নীতির বিরুদ্ধে আমেরিকাতে জনগণের অবস্থান বদলে যায়। টেড কেনেডি, ফ্রাঙ্ক চার্চ ও উইলিয়াম বি. স্যাক্সবেসহ ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিক উভয় দলের আইনপ্রণেতারাই এ শোষণের বিষয়ে নিক্সনের হোয়াইট হাউজের সমর্থনের বিরোধিতা করেন। আমেরিকান সাংস্কৃতিক কর্মী, যেমন কবি এলেন জিনসবার্গ (যিনি সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড লেখেন), গায়ক জোয়ান বায়েজ বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া যুদ্ধের ব্যাপারে জানান। ব্রিটিশ, আমেরিকান ও ভারতীয় সংগীতজ্ঞরা নিউ ইয়র্ক সিটিতে কনসার্ট ফর বাংলাদেশের আয়োজন করেন, সেখানে বব ডিলানের মত গায়কেরা অংশ নেন। মার্কিন কংগ্রেস পাকিস্তানে অস্ত্র অবরোধ আরোপ করলেও নিক্সন হোয়াইট হাউজ গোপনে সপ্তম নৌবহর পাঠায় পাকিস্তানকে যুদ্ধে সহায়তার জন্য। ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে ভারত মুক্তিবাহিনীর সাথে অংশ নিলে হোয়াইট হাউজ বঙ্গোপসাগরে এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার পাঠায়।[৩] শান্তিরক্ষীরা আমেরিকার বেশকিছু উত্তর-পূর্ব বন্দরে অস্ত্র সরবরাহ অবরোধ করে।[৪] ওয়াশিংটন ডি.সি.তে অবস্থিত বাঙালি কূটনীতিকেরা অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের হয়ে কাজ করে যান।
৪ঠা ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে হেনরি কিসিঞ্জার নিরাপত্তা পরিষদের আহূত অধিবেশনে যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য প্রত্যাহারের দাবী সংবলিত মার্কিন প্রস্তাব পেশ করার প্রস্তুতি নেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে উপমহাদেশের সংঘাতের জন্য মুখ্যত ভারতকে দায়ী করেন। নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন শুরু হবার পর মার্কিন প্রতিনিধি জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা, ভারত ও পাকিস্তানের সৈন্য স্ব স্ব সীমান্তের ভিতরে ফিরিয়ে নেওয়া এবং সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ মহাসচিবকে ক্ষমতা প্রদান করার জন্য এক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সোভিয়েট প্রতিনিধি এই প্রস্তাবকে ‘একতরফা’ বলে অভিহিত করে ভেটো প্রয়োগ করেন। পোল্যান্ডও প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। ফ্রান্স ও ব্রিটেন ভোট দানে বিরত থাকে।[৫]
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। পরের বছরের মার্চে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়। এরপর ১৯৭২ সালের ৪ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। সেইসাথে সহায়তার জন্য ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেয়।[৬][৭] তখন হার্বার্ট ডি. স্পিভ্যাক ঢাকায় নিযুক্ত প্রধান আমেরিকান কূটনীতিক কর্মকর্তা ছিলেন।[৮] চারদিন পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ দূতাবাস পর্যায়ে পারস্পরিক কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নীত করতে সম্মত হয়।[৯] একই বছরের ১৮ই মে কনস্যুলেট-জেনারেল দূতাবাসে উন্নীত হয়।[১০] ১৯৭০-এর দশকের শেষদিকে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক নাটকীয়ভাবে সুদৃঢ় হতে থাকে, যখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রথম স্বাধীনতাপরবর্তী সরকারের সমাজতান্ত্রিক নীতি বাদ দিয়ে মুক্ত বাজার নীতির দিকে ফিরে যায়। ১৯৮৩ সালে সামরিক শাসক লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি রোন্যাল্ড রিগ্যান হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ জানান।[১১] রাষ্ট্রপতি রিগ্যান শীতল যুদ্ধকালীন ঢাকার অবস্থানের প্রশংসা করে বলেন, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়ে এর গঠনমূলক অবস্থানের জন্য করতালিতে সংবর্ধনা জানাতে চায়। কিছু উদাহরণস্বরূপঃ আফগানিস্তান ও কাম্পুচিয়ার একটানা আগ্রাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তাদের সাহস দেখিয়েছে। দেশটি দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মুখ্য ভুমিকা পালন করেছে, যা কিনা দক্ষিণ এশিয়ার মানুষকে আরও উন্নয়নমূলক ও স্থিতিশীল অঞ্চলের অধিবাসী হিসেবে গড়ে তুলবে। বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতিতে অন্তর্ভুক্ত থাকা সক্রিয়তা, সংযম ও নৈতিকতা সারা বিশ্বের শ্রদ্ধা অর্জন করেছে।"[১২]
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অংশীদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৭২ সাল থেকে ইউএসএইড প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্য দিয়েছে বাংলাদেশকে।[১৩] দেশটির অবকাঠামোগত উন্নয়নেও সহায়তা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যেমন নাসা স্পেস রিসার্চ অ্যান্ড রিমোট সেন্সিং অর্গানাইজেশন (স্পারসো) এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে ট্রিগা রিসার্চ সেন্টার খুলতে সহায়তা করেছে।
বাংলাদেশি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস ইউএস প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক স্বীকৃতি ইউএস কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল লাভ করেন।[১৪][১৫]
দক্ষিণ এশিয়ায় আমেরিকার অন্যতম প্রধান মিত্র বাংলাদেশ। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা, জঙ্গিবাদ বিরোধী ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রসঙ্গে এ দুই রাষ্ট্র বেশকিছু সহায়তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।[১৬] ওবামা প্রশাসনের আন্তর্জাতিক উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং পরিবেশ উন্নয়নমূলক বেশকিছু কাজে বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান সহযোগী ছিল।[১৬] ২০১২ সালে রাষ্ট্রদ্বয়ের মধ্যে একটি কৌশলগত চুক্তি হয়। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিকাট ২০১৫ সালে এ সম্পর্ককে "স্পন্দনশীল, বহুমুখী, এবং অপরিহার্য" বলে আখ্যায়িত করেন।[১৭]
বাংলাদেশের প্রতি মার্কিন নীতি হল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রতি গুরুত্বারোপ করে। ইসলামিক রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে উদারচেতা হিসেবেই ইউএস দেখে থাকে।[১৮] সম্পর্ক ঐতিহ্যগতভাবে অসাধারণ হিসেবে মনে করা হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বাংলাদেশে আইনের অপপ্রয়োগ, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব এবং নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদ করে আসছে। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বয়কট করায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্ক কিছুটা শীতল হয়, তবে সকল সহযোগিতামূলক কার্যক্রমই পরিচালিত হয়।[১৯]
আমেরিকান কূটনীতিকদের মতানুযায়ী বাংলাদেশের প্রতি মার্কিন নীতি ছিল "তিনটি ডি"; অর্থাৎ ডেমোক্রেসি বা গণতন্ত্র, ডেভেলপমেন্ট বা উন্নয়ন এবং ডিনায়াল অব স্পেস ফর টেরোরিজম বা জঙ্গিবাদের জন্য স্থান না দেওয়া।
২০১৬ সাল অনুযায়ী বাংলাদেশ এশিয়ার মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের পর সবচেয়ে বেশি মার্কিন সহায়তা লাভ করে।[২০]
বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগকারী রাষ্ট্রও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এখানে বৃহত্তম আমেরিকান বিনিয়োগ করা হয় শেভ্রনের মাধ্যমে, যারা বাংলাদেশের ৫০% প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন করে থাকে।[২১] ২০১৪ সালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশে প্রধান আমেরিকান রপ্তানি দ্রব্য হল কৃষিজ দ্রব্য (সয়াবিন, তুলা, ভুট্টা, দুগ্ধজাত দ্রব্য), এয়ারক্র্যাফট, মেশিনারি, ইঞ্জিন, লোহা ও স্টিল সামগ্রী। বাংলাদেশ থেকে প্রধান আমদানি দ্রব্য হল পোশাক, ফুটওয়্যার, বস্ত্র, খেলনা, গেইম ও খেলার সামগ্রী, গলদা ও বাগদা চিংড়ি, এবং কৃষিজ দ্রব্য।[২২]
২০১৩ সালের জুন মাসে ২০১৩ সাভার ভবন ধস ঘটনায় প্রায় ১,০০০ জন মৃত্যুবরণ করে। এরপরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণ দেখিয়ে ডিউটি-ফ্রি এক্সেস বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তখন এক বিবৃতিতে জানায়, "এটা বাংলাদেশের বস্ত্রশ্রমিকদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক যে জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস (জিএসপি) সুবিধা প্রত্যাহার করে নেওয়া হল এমন এক সময় যখন বাংলাদেশ সরকার বস্ত্র কারখানার নিরাপত্তা ও শ্রমিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য কনক্রিট ও দৃশ্যমান পন্থা গ্রহণ করেছে।"[২৩]
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কৌশলগত সামরিক মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ প্রতিরক্ষা খাতের সহায়তা আঞ্চলিক শক্তিধর রাষ্ট্র ভারত ও চীনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গোপসাগরে প্রায়শই যৌথ কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর সাথে মার্কিন প্যাসিফিক কমান্ড নিয়মিত কার্যক্রম বজায় রাখে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিশেষ বাহিনী সোয়াডস গঠনে আমেরিকার ও দক্ষিণ কোরীয় বিশেষ বাহিনীর নকশানুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করেছে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম অবদানকারী। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণের অন্যতম সমর্থক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।[২৪]
২০১৩ সাল অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ৩,৮২৮ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছিল।[২৫] সাংস্কৃতিক দিক থেকে ইউএসএইড এর আর্থিক সহযোগিতায় সিসিম স্ট্রীট অবলম্বনে সিসিমপুর নির্মিত হয়, যা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত জনপ্রিয় শিশুতোষ অনুষ্ঠান ছিল।
১৯৯১ ও ২০০৭ সালে ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশকে ত্রাণ কার্যক্রমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করে।[২৬] ১৯৯১ বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড় ও ২০০৭ সালের সিডরে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে হাজারো মানুষকে ত্রাণ সহায়তায় ইউএস ম্যারিন অংশ নেয়। অপারেশন সী এঞ্জেল ওয়ান ও অপারেশন সী এঞ্জেল টু এ দুই বারে কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ককে বাংলাদেশি আমেরিকান সম্প্রদায় আরও সুদৃঢ় করে তুলছে। ফজলুর রহমান খান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে অবস্থিত উচ্চতম টাওয়ারের নকশা করেন। সাল খান একজন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ। হ্যানসেন ক্লার্ক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রথম মার্কিন কংগ্রেসম্যান হন। এম. ওসমান সিদ্দীক ফিজিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
উইকিমিডিয়া কমন্সে বাংলাদেশ–মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।