বাংলার ইতিহাস |
---|
ধারাবাহিকের একটি অংশ |
বাংলার ইতিহাস বলতে এখন বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং আসামের বরাক উপত্যকার বিগত চার সহস্রাব্দের ইতিহাসকে বোঝায়।[১]গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদ এক অর্থে বাংলাকে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও ভারতের ইতিহাসে বাংলা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। প্রাচীন রোমান ও গ্রিকদের কাছে এই অঞ্চল গঙ্গারিডাই নামে পরিচিত ছিল। চার সহস্রাব্দ পূর্বে বাংলায় সভ্যতার ক্রমবিকাশ শুরু হয়।[১] প্রাচীন গ্রিক ও রোমান ভাষায় এই অঞ্চলকে গঙ্গারিডই নামে উল্লেখ করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে বাংলা সর্বদাই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রাচীন বাংলা কয়েকটি জনপদে বিভক্ত ছিল এবং বেশ কিছু প্রাচীন নগরের বৈদিক যুগে পত্তন এখানে হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। প্রাচীন বাংলার অধিবাসীরা ভারত মহাসাগরে অবস্থিত বিভিন্ন দ্বীপে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল। পারস্য, আরব এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের সাথে বাংলার দৃঢ় বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। [২] এই অঞ্চল মৌর্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্য সহ আরও অনেক ভারতীয় সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। বাংলা বিভিন্ন সময়ে আঞ্চলিক শাসকদের রাজধানী রূপে স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রাচীন দুর্গ নগর গৌড়(কখনো একটি জনপদ রূপেও গড়ে উঠেছিল), বহু বছর ধরে বাংলার রাজধানী ছিল। (৮ম থেকে ১১ শতকে) বৌদ্ধ শাসক পাল আমলে এবং (১১ থেকে ১২ শতকের) হিন্দু শাসক সেন আমলে শাসনকালে বাংলার রাজধানী ছিল গৌড়। এই সময়ে বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সঙ্গীত, কলা এবং স্থাপত্যের প্রভূত উন্নতি হয়। ১৩ শতাব্দীর পর এই অঞ্চল মুসলমান সুলতান, বারো ভুঁইয়া এবং হিন্দু রাজন্যবর্গের দ্বারা শাসিত হয়েছিল। [৩] ১৬ শতকের শেষে এবং ১৭ শতকের শুরুতে ঈশা খাঁ নামের একজন মুসলিম রাজপুত বারো ভূঁইয়াদের নেতৃত্ব দেন।[৪]
দিল্লি সালতানাত এবং শাহী বাংলার সুলতানদের সময়, ইউরোপবাসীরা বাংলাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী বাণিজ্যিক দেশ রূপে গণ্য করত [৫] এরপর, বাংলা মুঘলদের অধিকারে চলে আসে। মুঘল আমলে বাংলা ছিল সবচেয়ে সম্পদশালী প্রদেশ। মুঘল আমলে, সুবাহ বাংলা সমগ্র সাম্রাজ্যের শতকরা ৫০ ভাগ জিডিপি এর যোগান দিত।,[৬] বাংলা সমুদ্রগামী জাহাজ ও বস্ত্র শিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল।[৭][৮][৯]মুঘল সাম্রাজ্যের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপির) ১২ শতাংশ উৎপন্ন হত সুবাহ বাংলায়,[৬][১০][১১] যা সে সময় সমগ্র ইউরোপের মোট দেশজ উৎপাদনের চেয়ে অধিক ছিল।[১২] ক্রমে মুঘল শাসন দুর্বল হয়ে পড়লে, মারাঠা আক্রমণের পর বাংলায় প্রায়-স্বাধীন নবাবদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর বাংলা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনে চলে যায়।
১৮ শতকের দ্বিতীয় ভাগে ব্রিটিশরা সমগ্র বাংলার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। ১৭৫৭ সলে পলাশীর যুদ্ধ ও ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধের পর কোম্পানি বাংলায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। বাংলায় ব্রিটিশদের লুণ্ঠনক্রিয়া তৎকালীন ব্রিটেনে শিল্প বিপ্লবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল।[৭][৮][৯][১৩] বাংলা থেকে নিয়ে যাওয়া পুঁজি ব্রিটেনের বিভিন্ন শিল্পে, বিশেষ করে বস্ত্র শিল্পে বিনিয়োগ করে, ব্রিটিশরা প্রভূত সম্পদের অধিকারী হয়েছিল। একই সাথে, এই লুণ্ঠনের ফলে বাংলায় শিল্পায়ন ব্যাহত হয় এবং দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।[৭][৮][৯] ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তানের স্বাধীনতার সময়ে বাংলাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। বাংলার পশ্চিম অংশ ভারতের একটি রাজ্যে পরিণত হয়। পূর্ব অংশ যুক্ত হয় পাকিস্তানের সাথে। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন রাষ্ট্র রূপে আত্মপ্রকাশ করে।
বাংলা শব্দের প্রকৃত অর্থ জানা না গেলেও ধারণা করা হয় যে ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীয় ভাষা থেকে বঙ বা বঙ্গ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। [১৪][১৫] কেউ মনে করেন যে বাংলা শব্দটি অস্ট্রিক ভাষার বোঙ্গা শব্দটি থেকে এসেছে যার অর্থ সূর্য-দেবতা। মহাভারত ও পুরাণ অনুসারে বঙ্গ শব্দটি এসেছে পৌরাণিক রাজা বলির পুত্রের নামানুসারে যিনি বঙ্গরাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সংস্কৃত ভাষার বিবিধ গ্রন্থাদিতে বঙ্গ নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। আবার কিছু অংশ উপবঙ্গ রূপেও পরিচিত ছিল।
বাঙ্গালা শব্দ থেকে বাংলা শব্দের সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে[১৬][১৭][১৮] কারণ মধ্যযুগে এ অঞ্চল বুঝানোর জন্য শব্দটি ব্যবহার করা হতো। বাংলার সুলতানদের বাঙ্গালার শাহ বলে ডাকা হতো । মুঘলরা তাদের বাংলা প্রদেশকে সুবাহ-ই-বাংলা বলে উল্লেখ করত ।
২০০০০ বছর পূর্বের প্রস্তর যুগের [১৯] এবং প্রায় চার হাজার বছরের পুরনো তাম্রযুগের ধ্বংসাবশেষ বাংলায় পাওয়া গেছে।
ইন্দো-আর্যদের আসার পর অঙ্গ, বঙ্গ এবং মগধ রাজ্য গঠিত হয় খ্রিষ্টপূর্ব দশম শতকে । এই রাজ্যগুলি বাংলা এবং বাংলার আশেপাশে স্থাপিত হয়েছিল । অঙ্গ বঙ্গ এবং মগধ রাজ্যের বর্ণনা প্রথম পাওয়া যায় অথর্ববেদে প্রায় ১২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে । মহাভারতে পৌন্ড্র রাজ বাসুদেব এর উল্লেখ পাওয়া যায় । এছাড়া চেদি রাজ্য আধুনা ভাওয়াল এর কাছে অবস্থিত । মগধরাজ জরাসন্ধ মহাপরাক্রমশালী নৃপতি ছিলেন। মহাভারতে পাওয়া যায় বঙ্গরাজ সমুদ্রসেন ও চন্দ্রসেন ভীমের দিগ্বিজয় আটকে দিয়েছিল । এরা বঙ্গের অতি পরাক্রমশালী নৃপতি ছিলেন ।
খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে বাংলার অধিকাংশ অঞ্চলই শক্তিশালী রাজ্য মগধের অংশ ছিল । মগধ ছিল একটি প্রাচীন ভারতীয়-আর্য রাজ্য । মগধের কথা রামায়ণ এবং মহাভারতে পাওয়া যায় । বুদ্ধের সময়ে এটি ছিল ভারতের চারটি প্রধান রাজ্যের মধ্যে একটি । মগধের ক্ষমতা বাড়ে বিম্বিসারের (রাজত্বকাল ৫৪৪-৪৯১ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ) এবং তার ছেলে অজাতশত্রুর (রাজত্বকাল ৪৯১-৪৬০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ) শাসনকালে । বিহার এবং বাংলার অধিকাংশ স্থানই মগধের ভিতরে ছিল ।
৩২৬ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের সেনাবাহিনী মগধের নন্দ সাম্রাজ্যের সীমানার দিকে অগ্রসর হয় । এই সেনাবাহিনী ক্লান্ত ছিল এবং গঙ্গা নদীর কাছাকাছি বাংলার বিশাল বাহিনীর মুখোমুখি হতে ভয় পেয়ে যায় । এই বাহিনী বিপাশা নদীর কাছে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং আরও পূর্বদিকে যেতে অস্বীকার করে । আলেকজান্ডার তখন তার সহকারী কইনাস (Coenus) এর সাথে দেখা করার পরে ঠিক করেন ফিরে যাওয়াই ভাল ।
মৌর্য সাম্রাজ্য মগধেই গড়ে উঠেছিল । মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য । এই সাম্রাজ্য অশোকের রাজত্বকালে ভারতের অধিকাংশ, বাংলাদেশ,পাকিস্তান ও আফগানিস্তান অবধি বিস্তার লাভ করেছিল । পরবর্তীকালে শক্তিশালী গুপ্ত সাম্রাজ্য মগধেই গড়ে ওঠে যা ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তরাংশে, বাংলাদেশ ও সম্ভবত পাকিস্তানের কিছু অংশেও বিস্তার লাভ করেছিল।
বাংলার প্রথম স্বাধীন রাজা ছিলেন শশাঙ্ক যিনি ৬০৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন। সম্ভবত তিনি গুপ্ত সম্রাটদের অধীনে একজন সামন্তরাজা ছিলেন । হর্ষবর্ধনের ভ্রাতা রাজ্যবর্ধনকে ইনি হত্যা করেন। এই জন্য হর্ষবর্ধন-এর সঙ্গে তাঁর যুদ্ধ হয় । তাঁর শক্তি বৃদ্ধি হতে দেখে কামরূপ রাজ ভাস্করবর্মন তাঁর শত্রু হর্ষবর্ধনের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করেন । শশাঙ্ক চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর সাহায্য পেয়েছিলেন এঁদের বিরুদ্ধে। শশাঙ্ক পরম শৈব ও বৌদ্ধবিদ্বেষী ছিলেন। পাটলীপুত্র ও কুশীনগরে বহু বৌদ্ধকীর্তি ধ্বংস করেন। ৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দে শশাঙ্ক-এর মৃত্যুর পর তাঁর রাজ্যের পতন ঘটে। শশাঙ্কই প্রথম বাংলার রূপরেখা দিয়েছিলেন।
৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দে গৌড়রাজ শশাঙ্কের মৃত্যুর পর বাংলার ইতিহাসে একঘোরতর নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়। যা প্রায় দেড়শো বছর স্থায়ী হয়। এই সময় বাংলাতে বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের সৃষ্টি হয়। আত্মকলহ, গৃহযুদ্ধ, গুপ্তহত্যা, অত্যাচার প্রভৃতি চরমে ওঠে।বাংলার সাধারণ দরিদ্র মানুষের দুর্দশার শেষ ছিল না। স্থায়ী প্রশাসন না থাকাতে বাহুবলই ছিল শেষ কথা। বাংলায় প্রতিষ্ঠিত হয় অভিজাততন্ত্র এই সময় প্রভাবশালী লোকেদের সভা প্রকৃত্পুঞ্জ গোপাল নামের এক রাজাকে নির্বাচন করেন, তিনি মাৎস্যন্যায় এর পতন ঘটান।
মাৎস্যন্যায়ের সময় বাংলার বিশৃঙ্খলা দমনের জন্য বাংলার মানুষ নির্বাচনের মাধ্যমে গোপাল নামক এক সামন্তরাজাকে বাংলার রাজা রূপে গ্রহণ করেন । গোপালই হলেন পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা । পাল বংশের সবচেয়ে শক্তিশালী দুই রাজা ছিলেন ধর্মপাল (রাজত্বকাল ৭৭৫-৮১০ খ্রিষ্টাব্দ) এবং দেবপাল (রাজত্বকাল ৮১০-৮৫০ খ্রিষ্টাব্দ) । পাল বংশের স্থায়ীত্বকাল ছিল প্রায় ৪০০ বছর।পাল বংশের অন্য উল্ল্যেখ যোগ্য রাজা ছিলেন নারায়ণপাল ৮৬০-৯১৫ , মহীপাল ৯৭৮-১০৩০, রামপাল। তাঁর শাসনকালে শিল্প কলায় বাংলা শিখরে উঠে । কিন্তু এই সময় বহু ব্রাহ্মণ বৌদ্ধ অত্যাচারে বাংলা ত্যাগ করে উত্তর ও পশ্চিম ভারতে চলে যায় ।
অষ্টম শতকের শুরু থেকে উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসন টিকে ছিলো ৷
ভারতে ইসলামের শাসন শুরু হয় ৭১২ সালে মুহাম্মদ বিন কাসিম দ্বারা সিন্ধু জয়ের মাধ্যমে ৷ ৭১২ সালে দামেস্কের খলিফা আল-ওয়ালিদের আশির্বাদপুষ্ট ও বাগদাদের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফের দ্বারা পারিচালিত হয়ে কাসিম ভারতে ইসলামের বিজয় ও শাসনের অভিষেক ঘটান ৷ ১৫৯০ এর দশকে মুঘল সম্রাট আকবরের অধীনে মুসলিম শাসকগণ শক্তভাবে ভারতবর্ষের প্রায় সম্পূর্ণ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ লাভ করে ৷ সম্রাট আওরঙ্গজেবের অধীনে (১৬৫৮-১৭০৭) ভারতে মুসলিম নিয়ন্ত্রণ আরও কিছুটা সম্প্রসারিত হয় ৷ ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভাড়াটিয়া বাহিনীর হাতে বাংলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয় ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সূচনা করে ৷ ১৭৯৯ সালে সর্বশেষ স্বাধীন মুসলিম শাসক মহীশুরের টিপু সুলতান ইংরেজদের হাতে পরাজিত হলে কার্যত ভারতে স্বাধীন মুসলিম শাসনের সমাপ্তি হয় ৷
ভারতে মুসলিম শাসন প্রথম প্রতিষ্ঠা করেন মুহম্মদ ঘুরী বাংলায় প্রথম মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন ইখতিয়ার উদ্দীন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি (১২০৪- ত্রয়োদশ শতাব্দীর শুরুতে)। এই সময় মরক্কোর বিখ্যাত পর্যটক ইবন বতুতা বাংলায় ভ্রমণ করেন। এই সময়ের কয়েকটি উল্ল্যেখযোগ্য সুলতান সিকান্দর বিন ইলিয়াস, নাসির আল দিন মাহমুদ, হুসেন শাহ প্রভৃতি । ইনি হুসেন শাহের সমসাময়িক । ১৫৭৬ এ মুঘলরা বাংলা দখল করলে সুলতানী যুগের সমাপ্তি হয়।
== ওলন্দাজ কলোনি == ডাচ্ দের বলা হয় ওলন্দাজ
ব্রিটিশ শাসনের সময়ে দুটি মারাত্মক দুর্ভিক্ষ বা মন্বন্তর বহুমানুষের জীবনহানি ঘটিয়েছিল । প্রথম দুর্ভিক্ষটি ঘটেছিল ১৭৭০ খ্রিষ্টাব্দে এবং দ্বিতীয়টি ঘটেছিল ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে । ১৭৭০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির রাজত্বকালে বাংলার দুর্ভিক্ষটি ছিল ইতিহাসের সব থেকে বড় দুর্ভিক্ষগুলির মধ্যে একটি । বাংলার এক তৃতীয়াংশ মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল ১৭৭০ এবং তার পরবর্তী বছরগুলিতে ।
১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের সিপাহি বিদ্রোহ ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির শাসনের অবসান ঘটায় এবং বাংলা সরাসরি ভাবে ব্রিটিশ রাজবংশের শাসনাধীনে আসে ।
বাংলা ছিল খুব ভালো ধান উৎপাদক অঞ্চল এবং এখানে সূক্ষ সুতিবস্ত্র মসলিন তৈরি হত । এছাড়া এই অঞ্চল ছিল পৃথিবীর পাট চাহিদার মুখ্য যোগানকারী । ১৮৫০ সাল থেকেই বাংলায় ভারতের প্রধান শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠতে থাকে । এই শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠেছিল মূলত কলকাতার আশেপাশে এবং সদ্য গড়ে ওঠা শহরতলি এলাকায় । কিন্তু বাংলার বেশিরভাগ মানুষ তখনও কৃষির উপরেই বেশি নির্ভরশীল ছিলেন । ভারতের রাজনীতি এবং সংস্কৃতিতে বাংলার মানুষেরা অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করলেও বিশেষ করে(?) পূর্ব বাংলায় তখনও খুব অনুন্নত জেলা ছিল । ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে রাণী ভিক্টোরিয়া যখন ভারতের সম্রাজ্ঞী উপাধিতে নিজেকে ভূষিত করলেন তখন ব্রিটিশরা কলকাতাকে ব্রিটিশ রাজের রাজধানী বলে ঘোষণা করে।
সর্বপ্রথম ১৯০৫ সালে ব্রিটিশ সরকার পূর্ববঙ্গ ও আসামকে নিয়ে আলাদা রাজ্য গঠনের মধ্য দিয়ে বঙ্গভঙ্গের সূচনা করে, যা পরবর্তীতে ১৯১১ সালে প্রবল আন্দোলনে বাতিল করা হয়। ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে ইংরেজ শাসিত ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে গণপ্রজাতন্ত্র ভারত এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তান নামে দুটি আলাদা রাষ্ট্র আত্মপ্রকাশ করে। তখন বাংলাকে ভাগ করে পশ্চিম বাংলাকে ভারতের একটি অংশ এবং পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তানের একটি অংশে পরিণত করা হয়।
জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর মুঘল সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা।
মুঘল শাসনের সময় বঙ্গ মুঘলদের মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ প্রদেশ ছিল। এপ্রদেশ কাপড় উৎপাদন জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল।[৯][৭] [৮] রাজধানী ঢাকার ১ লক্ষ জনগণের মধ্য ৮০০০০ ছিলে কাপড় বুননের দক্ষ কারিগর এবং সিল্ক, সুতা বস্ত্র, ইস্পাত, লবণ উৎপাদন ও রপ্তানিকারী [৬]
বাংলার কৃষকরা ১৬০০ থেকে ১৬৫০ সালের মধ্য রেশম চাষ শেখে। [২১]
মুঘল আমলে বাংলা ছিল মসলিন, সিল্ক এবং মুক্তা বাণিজ্যের কেন্দ্র বিন্দু। [২২] ঢাকার সিল্ক মধ্য এশিয়ায় 'ঢাকা' নামে পরিচিত ছিল।[২৩]
ব্যক্তির নাম[২৪] | শাসনকাল | ||
---|---|---|---|
মুনিম খান খান-ই-খানান منعم خان، خان خاناں |
২৫ সেপ্টেম্বর ১৫৭৪ - ২৩ অক্টোবর ১৫৭৫ | ||
হোসেন কুলি বেগ খান জাহান ১ حسین قلی بیگ، خان جہاں اول |
১৫ নভেম্বর ১৫৭৫ - ১৯ ডিসেম্বর ১৫৭৮ | ||
মুজাফফর খান তুরবারি مظفر خان تربتی |
১৫৭৯ - ১৫৮০ | ||
মির্জা আজিজ কোকা খান-ই-আজম میرزا عزیز کوکہ،خان اعظم |
১৫৮২ - ১৫৮৩ | ||
শাহবাজ খান কামবোহ شھباز خان کمبوہ |
১৫৮৩ - ১৫৮৫ | ||
সাদিক খান صادق خان |
১৫৮৫ - ১৫৮৬ | ||
ওয়াজির খান তাজিক وزیر خان |
১৫৮৬ - ১৫৮৭ | ||
সাঈদ খান سعید خان |
১৫৮৭ - ১৫৯৪ | ||
রাজা মানসিংহ ১ راجہ مان سنگھ |
৪ জুন ১৫৯৪ - ১৬০৬ | ||
কুতুবুদিন কোকা قطب الدین خان کوکہ |
২ সেপ্টেম্বর - মে ১৬০৭ | ||
জাহাঙ্গীর কুলি বেগ جہانگیر قلی بیگ |
১৬০৭ - ১৬০৮ | ||
ইসলাম খাঁ ১ ইসলাম খান চিশতী اسلام خان چشتی |
জুন ১৬০৮ - ১৬১৩ | ||
কাসিম খান চিশতি قاسم خان چشتی |
১৬১৩ - ১৬১৭ | ||
ইব্রাহীম খান ফাতেহ জং ابراہیم خان فتح جنگ |
১৬১৭ - ১৬২২ | ||
মোহাবাত খান محابت خان |
১৬২২ - ১৬২৫ | ||
মির্জা আমানুল্লাহ খান জামান ২ میرزا أمان اللہ ، خان زماں ثانی |
১৬২৫ | ||
মোকাররম খান مکرم خان |
১৬২৫ - ১৬২৭ | ||
ফিদাই খান فدای خان |
১৬২৭ - ১৬২৮ | ||
কাসিম খান জুইনিকাসেম মনিজা قاسم خان جوینی، قاسم مانیجہ |
১৬২৮ - ১৬৩২ | ||
মীর মুহাম্মাদ বাকির আজম খান میر محمد باقر، اعظم خان |
১৬৩২ - ১৬৩৫ | ||
মীর আব্দুস সালাম ইসলাম খান মাশহাদি اسلام خان مشھدی |
১৬৩৫ - ১৬৩৯ | ||
সুলতান শাহ্ সুজা شاہ شجاع |
১৬৩৯-১৬৬০ | ||
মীর জুমলা ২ میر جملہ |
মে ১৬৬০ - ৩০ মার্চ ১৬৬৩ | ||
মির্জা আবু তালিব শায়েস্তা খান ১ میرزا ابو طالب، شایستہ خان |
মার্চ ১৬৬৪ - ১৬৭৬ | ||
আজম খান কোকা, ফিদাই খান ২ اعظم خان کوکہ، فدای خان ثانی |
১৬৭৬ - ১৬৭৭ | ||
সুলতান মুহাম্মদ আজম শাহ আলিজাহ محمد اعظم شاہ عالی جاہ |
১৬৭৮ - ১৬৭৯ | ||
মির্জা আবু তালিব শায়েস্তা খান ১ میرزا ابو طالب، شایستہ خان |
১৬৭৯ - ১৬৮৮ | ||
ইব্রাহীম খান ইবনে আলি মাদান খান ابراہیم خان ابن علی مردان خان |
১৬৮৮ - ১৬৯৭ | ||
সুলতান আজিম-উস-শাহ্ عظیم الشان |
১৬৯৭ - ১৭১২ | ||
১৭১২-১৭১৭ তে অন্যরা নিযুক্ত হয়েছিলেন কিন্তু প্রকাশ করা হয় নাই। সহকারী সুবেদার মুর্শিদ কুলি খান সেসময়য় নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন | |||
মুর্শিদ কুলি খান مرشد قلی خان |
১৭১৭ - ১৭২৭ |
১৯৪৭ সালে বঙ্গভঙ্গ ভারত বিভাজনের একটি অংশ হিসেবে ধর্মের উপর ভিত্তি করে ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত বঙ্গ প্রদেশ ভারত এবং পাকিস্তানের অংশ হিসেবে বিভক্ত হয়। প্রধানত হিন্দু অধ্যুষিত পশ্চিমবঙ্গ ভারত এবং মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হয়।
১৯৪৭ সালের ২০ জুন, বঙ্গীয় আইন পরিষদের বঙ্গ প্রদেশের ভবিষ্যত নির্ধারণের জন্য মিলিত হয় যেখানে ভারত বা পাকিস্তানের মধ্যে সংযুক্ত বাংলা বা পূর্ব বাংলা এবং পশ্চিমবঙ্গে বিভক্ত যথাক্রমে বাঙালি মুসলমান এবং বাঙালি হিন্দুদের আবাসস্থল হিসাবে গঠনের প্রস্তাব হয়। প্রাথমিক যৌথ অধিবেশনে, পরিষদ ১২০-৯০ দ্বারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে যদি বঙ্গ পাকিস্তানের নতুন গণপরিষদে যোগ দেয় তবে এটি ঐক্যবদ্ধ বা অবিভক্ত থাকবে। পরে, পশ্চিমবঙ্গের আইনপ্রণেতাদের একটি পৃথক বৈঠকে ৫৮-২১ ভোটে সিদ্ধান্ত নেয় যে প্রদেশটি বিভক্ত করা উচিত এবং পশ্চিমবঙ্গকে ভারতের বিদ্যমান গণপরিষদে যোগদান করা উচিত। পূর্ব বাংলার আইনপ্রণেতাদের আরেকটি পৃথক সভায় ১০৬-৩৫ ভোটে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে প্রদেশটি বিভক্ত করা উচিত নয় এবং ১০৭-৩৪ সালের মধ্যে দেশভাগের ক্ষেত্রে পূর্ব বাংলা পাকিস্তানে যোগ দেবে।[২৮] ভারতীয় জনতা পার্টি ও পশ্চিমবঙ্গের রাজভবন এই ২০ জুন তারিখকে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিষ্ঠা দিবস অর্থাৎ "পশ্চিমবঙ্গ দিবস" হিসাবে পালন করে।[২৯][৩০]
১৯৪৭ সালের ৬ জুলাই সিলেট গণভোটে আসাম থেকে সিলেটকে বিচ্ছিন্ন করে পূর্ব বাংলায় একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়।
৩ জুন পরিকল্পনা বা মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা অনুসারে ১৯৪৭ সালের ১৪ এবং ১৫ অগাস্ট যথাক্রমে পাকিস্তান এবং ভারতের নিকট এই নতুন ভাবে বিভক্ত বাংলা প্রদেশের ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তান যা পাকিস্তানের প্রদেশ ছিল, তা ১৯৭১ সালে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি স্বাধীন এবং সার্বভৌম দেশ বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।Bengal [...] was rich in the production and export of grain, salt, fruit, liquors and wines, precious metals and ornaments besides the output of its handlooms in silk and cotton. Europe referred to Bengal as the richest country to trade with.