বাইজেন্টাইন রসনা (আধুনিক গ্রিক : βυζαντινή κουζίνα) হচ্ছে গ্রীক ও রোমান ভোজনবিদ্যার একটি সম্মিলিত রূপ। বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের অগ্রগতির পাশাপাশি বাণিজ্য বাড়তে থাকে এবং গ্রীসে মসলা, চিনি ও বিভিন্ন নতুন সবজি আমদানি করা হতে থাকে।
পাচকগণ নতুন খাদ্যসামগ্রী দ্বারা নতুন খাবার তৈরির পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতে থাকেন। ফলশ্রুতিতে দুটি নতুন ধারার রন্ধনশৈলীর আবির্ভাব ঘটে। এর একটি পূর্বাঞ্চলীয় (এশিয়া মাইনর ও পূর্ব এজিয়ান) আমদানিকৃত খাদ্য নির্ভর বাইজান্টাইন রসনা এবং অন্যটি পূর্ব থেকে প্রচলিত স্থানীয় গ্রীক রসনা।
বাইজেন্টাইন খাদ্য শ্রেণিভেদে বৈচিত্রময়। রাজপ্রাসাদ ছিলো মশলা এবং বহিরাগত রেসিপির এক মহানগরী। অতিথিদের ফল, মধু-কেক এবং সিরাপি মিষ্টান্ন পরিবেশন করা হত। সাধারণ মানুষের খাদ্যাভ্যাস রক্ষণশীল ছিলো। তাদের প্রধান খাদ্য ছিল রুটি, সবজি, ডাল এবং শস্য দিয়ে বিভিন্ন উপায়ে প্রস্তুত খাদ্যাদি। সালাদ খুবই জনপ্রিয় ছিল; ১৪৩৯ সালে সম্রাট জন অষ্টম পায়ালোগোস প্রতিবেলা খাবারের সঙ্গে সালাদ চাইতেন।
বাইজান্টাইনগণ এনথোটিরো বা কেফালিন্টজিন সহ বিভিন্ন প্রকার চীজ প্রস্তুত করতো। তারা স্বাদু ও লোনাপানির শেলফিশ এবং মাছ খেতো। তারা ডিমের বিখ্যাত অমলেট স্পৌনগাটা তৈরী করতো। থিয়েডোর প্রদুমস এটার উল্লেখ করেছেন। প্রতিবাড়িতে হাঁস মুরগী পালা হতো।
বাইজেন্টাইন গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ শিকারের মাধ্যমে মাংস সংগ্রহ করতো। পুরুষের কাছে এটা প্রিয় এবং বিশিষ্ট পেশা। তারা সাধারণত কুকুর ও বাজপাখি নিয়ে শিকারে যেতো। কখনও কখনও ফাঁদ পাততো, জাল এবং পাখি ব্যবহার করতো। বৃহৎ আকারের প্রাণীর মাংস ছিলো একটি ব্যয়বহুল এবং বিরল খাদ্য। শীতের সকালে নাগরিকগণ শূকর হত্যা করত এবং বছরব্যাপী পরিবারের জন্য সসেজ, নোনা পোর্ক এবং চর্বি হিসেবে ব্যবহার করতো।
মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত বাইজান্টাইনরা শুধু ল্যাম্বের মাংসের সংস্থান করতে পারতো। চাষাবাসে গরু ব্যবহৃত হতো বলে তারা কদাচিৎ গরুর মাংস খেতো। কনস্ট্যান্টিনোপল এবং থেসসালোনিকির মত শহরের বাসিন্দারা তাভেরনার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা পশুর মাংস খেতো। রান্নার সাধারণ ধরন ছিলো সিদ্ধ করা। অলস পাচকেরা প্রায় সব কিছুই সিদ্ধ করতো।
অনেক পন্ডিতের মতে বাইজেন্টাইন কপটপলাকুস (মধ্যযুগীয় গ্রিক: κοπτοπλακοῦς) এবং প্লাকুন্তাস টেটায়রোমেনাস হচ্ছে যথাক্রমে আধুনিক বাকলাভা এবং তিরোপিতার পূর্বপুরুষ।[১][২][৩]
কনস্টান্টিনোপলের মধ্যে জনপ্রিয় বাণিজ্য পথ থাকায় বাইজান্টাইন রসনা বিভিন্ন অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর সংস্পর্শ লাভ করে যেমন ইতালির লোমবারড়দ, পারস্য সাম্রাজ্য, উঠতি আরব সাম্রাজ্য ইত্যাদি। উসমানীয় খেলাফতের সময়ে এরা মিশ্রিত হয়ে যায় সেজন্য আধুনিক তুর্কি রন্ধনপ্রণালী, গ্রিক রন্ধনপ্রণালী, এবং বালকানস রান্না সব প্রায় অভিন্ন।
মধু প্রধান সুইটেনার হিসাবে ব্যবহার করা হয়।[৪]:১৭১-২ মধ্য বাইজেন্টাইন যুগে আখের চিনি শুরু ছিল, তবে এটি একটি বিলাসবহুল পণ্য ছিল।[৪]:১৭২
অনেক পন্ডিত বলেছেন যে বাইজেন্টাইন কোপটোপ্লাকুস (মধ্যযুগীয় গ্রিক: κοπτοπλακοῦς) এবং প্লাকুন্টাস টেইরোমেনাস যথাক্রমে আধুনিক বাক্লাভা এবং তিরোপিটা (বোরেক) এর পূর্বপুরুষ।[৫][২][৩] উভয় রূপই প্রাচীন গ্রিক প্লাসেন্টা কেক থেকে উদ্ভূত হয়েছিল।
ম্যাসেডোনিয়া তার মদের জন্য বিখ্যাত ছিলো। যা উচ্চবিত্ত বাইজান্টাইনদের মধ্যে পরিবেশিত হতো। ক্রুসেড এবং পরবর্তীকালে পশ্চিম ইউরোপ বাইজান্টাইনের দামী মদের কদর করে। অদ্যাপি বিখ্যাত উদাহরণ হচ্ছে রাজা রিচার্ড লায়নহারটের বিবাহে সাইপ্রাসের কমান্ডারিয়া মদ পরিবেশন করা হয়[৬]। অন্যান্য প্রখ্যাত প্রকরণের মধ্যে আছে মাস্কাট আঙুর থেকে তৈরী ক্রীটের মদ, রামনি এবং মালভাসিয়া বা মাল্মসে। রেটসিনা মদের সংগে পাইনের রজন মেশানো হতো স্বাদে ভিন্নতা আনার জন্য। বর্তমান দিনেও এটা গ্রীসে দেখতে পাওয়া যায়।
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "faas" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; Vroom 2018
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি