২২শে শ্রাবণ | |
---|---|
পরিচালক | সৃজিত মুখোপাধ্যায় |
প্রযোজক | শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস |
রচয়িতা | সৃজিত মুখোপাধ্যায় |
শ্রেষ্ঠাংশে | প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় রাইমা সেন গৌতম ঘোষ আবীর চট্টোপাধ্যায় রাজেশ শর্মা |
সুরকার | অনুপম রায় |
চিত্রগ্রাহক | সৌমিক হালদার |
সম্পাদক | বোধাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ১৪০ মিনিট |
দেশ | ভারত |
ভাষা | বাংলা |
নির্মাণব্যয় | ₹ ১.৫ কোটি (ইউএস$ ১,৮৩,৩৪৯.৫) |
আয় | ₹ ৩.০ কোটি (ইউএস$ ৩,৬৬,৬৯৯) |
বাইশে শ্রাবণ বা ২২শে শ্রাবণ সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ২০১১ সালের একটি বাংলা মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলারমূলক চলচ্চিত্র।[১] শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস প্রযোজিত এই চলচ্চিত্রে মুখ্য ভূমিকায় আছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, রাইমা সেন, গৌতম ঘোষ, আবীর চট্টোপাধ্যায়। গৌতম ঘোষ ২৯ বছর পর অভিনয়ে ফিরে আসেন এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। চলচ্চিত্রটি দুই সাংবাদিক এবং দুই পুলিশ অফিসার (একজন বহিষ্কৃত) নিয়ে গড়ে উঠেছে যারা একজন পাগল ক্রমিক খুনির বিরুদ্ধে তদন্ত করছেন এবং খুনি বাংলা কবিতার লাইন রেখে খুন করে।[২] বাইশে শ্রাবণ সমালোচকদের থেকে ভালো পর্যালোচনা লাভ করে। চলচ্চিত্রটি প্রাপ্তবয়স্ক ভাষা ব্যবহারের জন্য ফিল্ম সার্টিফিকেশন কেন্দ্রীয় বোর্ড থেকে সার্টিফিকেট পায়।
গোটা কলকাতা জুড়ে একের পর এক খুন হচ্ছে এবং এর জন্য একজন ক্রমিক খুনিকেই দায়ী করা হচ্ছে। খুনগুলো হচ্ছে বাংলা কবিতার লাইন অনুযায়ী যা খুনি লাশের পাশে রেখে যাচ্ছে। পুলিশ কিংকর্তব্যবিমূঢ হয়ে আছে; প্রধান গোয়েন্দা অভিজিৎ পাকড়াশী (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) কেসের সমাধান করার জন্য উঠে পড়ে লাগে, যা তার বান্ধবী অমৃতা মুখার্জী (রাইমা সেন) এর সাথে সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলে। পাকড়াশীর উপরস্থ কর্মকর্তা কেসের সমাধান করার জন্য একজন প্রাক্তন গোয়েন্দা প্রবীর (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) কে নিয়ে আসে। প্রবীরকে তার সহিংস পদ্ধতি, বদমেজাজ ও গালিগালাজের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছিল। প্রবীর ও পাকড়াশী একত্রে কাজ করে, ওদিকে অমৃতা (টেলিভিশনের সাংবাদিক) এবং অফিসের কলিগ সূর্য সিনহা (আবীর চট্টোপাধ্যায়) একটি ধারাবাহিকের জন্য ক্রমিক খুনিদের ওপর গবেষণা করে। ধারাবাহিকটির তের নং এবং শেষ পর্বটি হবে এক সমসাময়িক খুনির ওপর। এরমধ্যে পাগলাটে কবি নিবারণ চক্রবর্তী (গৌতম ঘোষ) যিনি নিজেকে হাংরি আন্দোলন-এর একজন মনে করেন এবং রাতে কলকাতায় ঘুরে ঘুরে কবিতা আবৃত্তি করেন।
ক্রমিক খুনিদের উপর গবেষণা করতে, অমৃতা এক জেলে গিয়ে ওয়ার্ডেন মনে করে বলেন যে রফিক আহমেদ এবং তার বন্ধু নিবারণ চক্রবর্তী ১৮ বছর কারাবাস করে। সে এবং সূর্য নিবারণের বাড়িতে গিয়ে তার চাকর স্বপনের অভ্যর্থনা পায় এবং এরপর নিবারণকে প্রশ্ন করে। নিবারণ বলে যে সে "রবীন্দ্রনাথ"-এর সাথে মিটিং করতে যাচ্ছে!
কেসের তদন্ত করতে গিয়ে পাকড়াশী অমৃতা ও সূর্যকে একত্রে দেখে। সে হিংসা বোধ করে। মাতাল হয়ে প্রবীরের কাছে গিয়ে সে তার মনের সব কথা বলে; সে তাকে বলে যে শৈশবেই সে তার বাবাকে হারিয়েছিল এবং সে মদ ত্যাগ করতে চায় কারণ সে জানত এটা তার বাবাকে কি করেছে। প্রবীর পাকড়াশীকে বলে যে সে তার স্ত্রী এবং সন্তানদের হারিয়ে তার পরবর্তী দিনও কাজে গিয়েছিল। এভাবে সে পাকড়াশীকে শক্ত হতে বলে। সূর্য অমৃতাকে এক সমাধিতে নিয়ে বলে যে সে কিছুদিনের মধ্যেই তাকে ভালোবাসা নিবেদন করবে। তাদের একজন পুলিশ অফিসার (রাজেশ শর্মা) দেখে ফেলে স্টেশনে নিয়ে যায় এবং সেখানে অমৃতা তাকে থাপ্পড় মারে। পাকড়াশী তখনও মাতাল হলেও তাদের বাঁচায় এই বলে যে অমৃতা তার বান্ধবী। তারা আবারও বন্ধু হয়।
পরের দিন ইচ্ছামত কবিতা ও কাব্য নিয়ে আলোচনার পর প্রবীর ও পাকড়াশী অনুমান করে যে খুনি নামকরা বাঙালি কবিদের মৃত্যুবার্ষিকীতেই খুন করে এবং তারা বুঝতে পারে যে এর পরের খুনের তারিখ হলো ২৯শে জুন। কারণ সেদিন মাইকেল মধুসূদন দত্তের মৃত্যুবার্ষিকী।
অমৃতা পাকড়াশীকে বলে যে সে ও সূর্য কি করছিল। সেইসাথে সে নিবারণের সাথে সাক্ষাৎকারের কথাও বলে। পাকড়াশী সন্দেহ করে যে নিবারণই আসল খুনী, বিশেষত যখন স্বপন প্রবীরকে বলে যে সে তার চাকরি নিয়ে ভয়ে আছে।
পাকড়াশী ও প্রবীর নিবারণের বাড়িতে নজর রাখে। একজন মাথাঢাকা মূর্তি বেরিয়া আসে। ও ছিল স্বপন, যে পালাচ্ছিল। বাড়িতে ঢুকে তারা দেখে যে নিবারণ আত্মহত্যা করেছে এবং কেস বন্ধ হয়ে যায়।
এর একমাস পর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুবার্ষিকী (বাইশে শ্রাবণ) চলে আসে। প্রবীর পাকড়াশীকে রবীন্দ্রনাথ নামের একজনের সাথে সাক্ষাতের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। পাকড়াশী অবাক হয়ে দেখে যে "স্বপন" হলো প্রবীরের চাকর কানাই। প্রবীর বলে যে সেই সকল খুনের হোতা এবং কানাই (একজন প্রাক্তন খুনি) তার আদেশ পালন করত। সে তার বহিষ্কারাদেশের জন্য পুলিশের বিরুদ্ধে রাগ হয়ে এইসব করেছে। বিষয়টিকে সে তার ওপর অপমান হিসেবে ধরে নেয়। তখন সে বলে যে সেদিনই শেষ খুন করবে সে, আর সে খুন তার নিজেরই। এই বলে সে নিজেকে গুলি করে।
প্রকৃতপক্ষে এই চলচ্চিত্রে গৌতম ঘোষ অভিনীত হাংরি আন্দোলনকারী চরিত্রটির সঙ্গে ষাটের দশকে মলয় রায়চৌধুরী, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সমীর রায়চৌধুরী ও দেবী রায় পরিচালিত সাহিত্য আন্দোলনটির কোনো সম্পর্ক নেই । নিবারণ চক্রবর্তী চরিত্রটি কাল্পনিক এবং কোনো হাংরি আন্দোলনকারী তাদের রচনা প্রকাশ করার জন্য এই উন্মাদ চরিত্রটির মতো কাউকে ধরাধরি করতেন না । তারা লিফলেট অথবা বুলেটিনের আকারে নিজেদের রচনা প্রকাশ করতেন এবং সেগুলো কলকাতার কফিহাউস এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও সংবাদপত্র দপতরে বিনামূল্যে বিলি করতেন । তাদের কেউই কলকাতার বইমেলায় অগ্নিসংযোগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না । তাদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছিল তা আইপিসি ১২০(বি) ও ২৯২ ধারায়, মলয় রায়চৌধুরী রচিত প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার কবিতাটির জন্য । নিম্ন আদালতে মলয় রায়চৌধুরীর এক মাসের কারাদণ্ডাদেশ হলেও কলকাতা উচ্চ আদালত তাকে বেকসুর খালাস করে দিয়েছিল । প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার (চলচ্চিত্র) কবিতাটি নিয়ে একটি ছোট চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে ।
শিরোনামহীন | |
---|---|
দৈর্ঘ্য | ৩২:২৯ |
বাইশে শ্রাবণ চলচ্চিত্রের গান লিখেছেন ও সুর করেছেন অনুপম রায়। ২৭শে আগস্ট, ২০১১ সালে এই চলচ্চিত্রের গান মুক্তি পায়।
সংগীত তালিকা | |||
---|---|---|---|
নং. | শিরোনাম | কণ্ঠশিল্পী | দৈর্ঘ্য |
১. | ""একবার বল"" | অনুপম রায় | ৪:৫৯ |
২. | "যে কটা দিন (দ্বৈত)" | সপ্তর্ষী মুখোপাধ্যায়, শ্রেয়া ঘোষাল | ৪:০৫ |
৩. | "গভীরে যাও (পুরুষ)" | রূপঙ্কর বাগচী | ৪:৫৫ |
৪. | "মাটি খুঁড়ে" | রাঘব চট্টোপাধ্যায় | ৫:৪৮ |
৫. | "এই শ্রাবণ" | রূপম ইসলাম | ৩:৪২ |
৬. | "যে কটা দিন (পুরুষ)" | অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় | ৪:০৪ |
৭. | "গভীরে যাও (নারী)" | শ্রেয়া ঘোষাল | ৪:৫৪ |
মোট দৈর্ঘ্য: | ৩২:২৯ |
বাইশে শ্রাবণ প্রথম মূলধারার চলচ্চিত্র যা ১৯৬০-এর বাংলার "হাংরি আন্দোলন"কে কাহিনীতে আনে।
আনন্দবাজার পত্রিকা বাইশে শ্রাবণকে দেয়।[৩] দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া একে দেয়।[৪]
২০১১ সালের দুবাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য চলচ্চিত্রটি নির্বাচিত হয়। চলচ্চিত্রটি ২০১২ সালের লন্ডন ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপনী চলচ্চিত্র ছিল এবং সিঙ্গাপুরের দর্পণ চলচ্চিত্র উৎসবে ও কলকাতার অ্যালায়ান্স ফ্রান্সাইজ চলচ্চিত্র উৎসবেও এটি নির্বাচিত হয়। চলচ্চিত্রটি টানা ১০৫ দিন চলে বছরের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্রে পরিণত হয়। বাইশে শ্রাবণ মোট ৪১টি পুরস্কার লাভ করে। এরমধ্যে জি বাংলা গৌরব-এ এটি ১৩টি মনোনয়নের মধ্যে ৯টি পুরস্কার লাভ করে।
পুরস্কার | বিভাগ | মনোনিত | ফলাফল |
---|---|---|---|
মির্চি মিউজিক অ্যাওয়ার্ড | সেরা আপকামিং গীতিকার | অনুপম রায় ("একবার বল") | বিজয়ী |
সেরা গীতিকার | অনুপম রায় ("একবার বল") | বিজয়ী | |
সেরা ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর | প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় | বিজয়ী | |
সেরা চলচ্চিত্র অ্যালবাম (জনপ্রিয়তা) | "বাইশে শ্রাবণ" | বিজয়ী | |
সেরা চলচ্চিত্রের অ্যালবাম (সমালোচক পছন্দ) | "বাইশে শ্রাবণ" | বিজয়ী | |
সেরা গান (জনপ্রিয়তা) | "একবার বল" | বিজয়ী | |
সেরা গান (সমালোচক পছন্দ) | "গভীরে যাও" | বিজয়ী | |
কলাকার অ্যাওয়ার্ড | সেরা চলচ্চিত্র | "বাইশে শ্রাবণ" | বিজয়ী |
এবিপি-ফ্রেন্ডস এফএম বাংলা মিউজিক অ্যাওয়ার্ড | সেরা সংগীত পরিচালক | অনুপম রায় | বিজয়ী |
সেরা কণ্ঠশিল্পী (পুরুষ) | রূপঙ্কর বাগচী ("গভীরে যাও") | বিজয়ী | |
সেরা গান'' | "যে কটা দিন" | বিজয়ী | |
সেরা চলচ্চিত্রের অ্যালবাম | প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় | বিজয়ী | |
সৃজন সম্মান (২০১২) | সেরা চলচ্চিত্রের পোস্টার | "বাইশে শ্রাবণ" | বিজয়ী |
১২তম টেলিসিনে অ্যাওয়ার্ড | সেরা পরিচালক | সৃজিত মুখোপাধ্যায় | বিজয়ী |
সেরা পার্শ্বনায়ক | পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় | বিজয়ী | |
সেরা কণ্ঠশিল্পী (পুরুষ) | অনুপম রায় ("একবার বল") | বিজয়ী | |
জি বাংলার গৌরব | সেরা চলচ্চিত্র | "বাইশে শ্রাবণ" | বিজয়ী |
সেরা পরিচালক | সৃজিত মুখোপাধ্যায় | বিজয়ী | |
সেরা অভিনেতা (সমালোচক পছন্দ) | প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় | বিজয়ী | |
সেরা পার্শ্বনায়ক | পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় | বিজয়ী | |
সেরা সংগীত পরিচালক | অনুপম রায় | বিজয়ী | |
সেরা চিত্রনাট্য ও সংলাপ | বিজয়ী | ||
সেরা কণ্ঠশিল্পী (পুরুষ) | রূপঙ্কর বাগচী ("গভীরে যাও") | বিজয়ী | |
সেরা চিত্রধারণ | বিজয়ী | ||
সেরা সম্পাদনা | বিজয়ী | ||
স্টার গাইড বেঙ্গলি ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড | সেরা পরিচালক | সৃজিত মুখোপাধ্যায় | বিজয়ী |
সেরা চিত্রধারণ | বিজয়ী | ||
সেরা কণ্ঠশিল্পী (পুরুষ) | অনুপম রায় ("একবার বল") | বিজয়ী | |
আন্তর্জাতিক বাংলা ফিল্ম একাডেমি অ্যাওয়ার্ড, পাতায়া | সেরা পরিচালক | সৃজিত মুখোপাধ্যায় | বিজয়ী |
সেরা চিত্রনাট্য | বিজয়ী | ||
সেরা কণ্ঠশিল্পী (পুরুষ) | অনুপম রায় ("একবার বল") | বিজয়ী | |
সেরা চিত্রধারণ | বিজয়ী | ||
সেরা পার্শ্বনায়ক | গৌতম ঘোষ | বিজয়ী | |
সেরা পারফরম্যান্স (সমালোচক পছন্দ) | পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় | বিজয়ী | |
শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড | সেরা অভিনেত্রী | রাইমা সেন | বিজয়ী |
আইবিএফসিএ ইন্দো-বাংলাদেশ ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড | সেরা গীতিকার | বিজয়ী | |
সেরা সুরকার | বিজয়ী | ||
সেরা কণ্ঠশিল্পী (পুরুষ) | অনুপম রায় ("একবার বল") | বিজয়ী | |
সেরা পার্শ্বনায়ক | পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় | বিজয়ী | |
সেরা অভিনেতা | প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় | বিজয়ী | |
সেরা পরিচালক | সৃজিত মুখোপাধ্যায় | বিজয়ী |
|শিরোনাম=
at position 20 (সাহায্য)
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)