বাগো (পূর্বের বানান পেগু[১]; বর্মী: ပဲခူးမြို့), যা হানতাওয়াদি নামে পরিচিত ছিল, মিয়ানমারের বাগো অঞ্চলের রাজধানী এবং একটি শহর। এটি ইয়াঙ্গুনের উত্তর-পূর্বে ৯১ কিলোমিটার (৫৭ মাইল) দূরে অবস্থিত।
বাগো ပဲခူးမြို့ | |
---|---|
শহর | |
মিয়ানমারে বাগোর অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ১৭°২০′১২″ উত্তর ৯৬°২৮′৪৭″ পূর্ব / ১৭.৩৩৬৬৭° উত্তর ৯৬.৪৭৯৭২° পূর্ব | |
দেশ | মিয়ানমার |
বিভাগ | বাগো অঞ্চল |
শহরাঞ্চল | বাগো শহরাঞ্চল |
প্রতিষ্ঠা | ১১৫২ খ্রিস্টাব্দ |
উচ্চতা | ১৩ ফুট (৪ মিটার) |
জনসংখ্যা (২০১৪) | |
• মোট | ২,৫৪,৪২৪ |
• নৃগোষ্ঠী | বামার শান বর্মী চীনা বর্মী ভারতীয় কাড়েন |
• ধর্ম | বৌদ্ধধর্ম |
সময় অঞ্চল | মায়ানমার মান সময় (ইউটিসি+ ৬.৩০) |
বর্মী নাম বাগো (ပဲခူး) সম্ভবত মন ভাষার স্থানের নাম বাগাও (মন ভাষা: ဗ ဂေါ,) থেকে উদ্ভূত হয়েছে। ১৯৮৯ সালে বর্মী সরকার সারা দেশে ইংরেজি স্থানের নাম পরিবর্তন না করা পর্যন্ত বাগো পেগু নামে পরিচিত ছিল। বাগো আগে হানতাওয়াদি (বর্মী: ဟံသာဝတီ; মন: ဟံသာ ဝ တဳ হংসাওয়াতোয়ী; পালি: হাশবতী) নামে পরিচিত ছিল, এটি একটি বর্মী-মন রাজ্যের নাম।
মন ভাষার বিভিন্ন বর্ষপঞ্জিতে বাগোর প্রতিষ্ঠা তারিখগুলো প্রকাশিত হয়, এদের মধ্যে ৫৭৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১১৫২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সালের উল্লেখ রয়েছে। পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমদিকে বর্মী প্রশাসনিক গ্রন্থ জাবু কুঞ্চা অনুযায়ী পেগু ১২৭৬/৭৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[২] চীনা সূত্রগুলো রাজা সপ্তম জয়াভরমন যে ১১৯৯ সালে পেগুকে খমের সাম্রাজ্যের ভূখণ্ডে যুক্ত করেছে তার উল্লেখ করে।[৩] স্থান হিসেবে পেগুর প্রথম দিকের প্রমাণ কেবল প্যাগান আমলের (১২১২ এবং ১২৬৬) শেষ অবধিতে পাওয়া যায়। তখন এটি প্রাদেশিক রাজধানী নয়, মাত্র একটি ছোট শহর ছিল। প্যাগান সাম্রাজ্যের পতনের পরে, বাগো ১২৯০ এর দশকে হানতাওয়াদি রাজ্যের অংশ হয়ে যায়।
এই অঞ্চলটি মন ভাষাভাষীর রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে জনবহুল হওয়ায় ছোট বসতিটি ১৪ শতাব্দীতে দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ১৩৬৯ সালে, রাজা বিন্নইয়া উ বাগোকে রাজধানী করেছিলেন। ১৫৩৮ সালে রাজ্যের পতনের আগ পর্যন্ত এই শহরটি রাজধানী ছিল।
রাজা রাজাদারিতের রাজত্বকালে বাগো এবং আভা রাজ্য চল্লিশ বছরের যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। রানী শিন সাওবু যখন বৌদ্ধ ভিক্ষু ধামমাজেদীকে (১৪৭১-১৪৯২) তার উত্তরসূরির জন্য বেছে নেয় তখন রানীর শান্তিপূর্ণ রাজত্বের অবসান ঘটে। ধামমাজেদির অধীনে বাগো বাণিজ্য ও থেরবাদ বৌদ্ধ ধর্মের কেন্দ্রে পরিণত হয়।
১৫১৯ সালে, কোচিনের পর্তুগিজ বসতি ক্যাসাডো থেকে আগত ব্যবসায়ী আন্তোনিও কোরিয়া বাগোতে অবতরণ করেন। বাগ তখন পর্তুগিজদের কাছে পেগু নামে পরিচিত ছিল। তিনি কোচিন থেকে মরিচের জন্য নতুন বাজারের সন্ধান করেছিলেন।[৪][৫] এক বছর পরে পর্তুগিজ ভারতের গভর্নর ডায়োগো লোপস ডি সেকুইরা পেগুতে একজন রাষ্ট্রদূত প্রেরণ করেছিলেন।
একটি প্রধান সমুদ্রবন্দর হিসাবে, শহরটিতে প্রায়শই ইউরোপীয়রা আসত। এর মধ্যে ১৫০০ এর দশকের শেষদিকে গ্যাসপারো বালবি এবং রাল্ফ ফিচ এখানে এসেছিল। ইউরোপীয়রা প্রায়শই এর বিশালতা সম্পর্কে মন্তব্য করেছিল।
১৫৯৯ সালে টাঙ্গোট ও আরাকানের রাজাদের দ্বারা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর পেরুতে পর্তুগিজ বিজয়কে ম্যানুয়েল দে আব্রেউ মৌসিনহো বর্ণনা করেছিলেন ''Breve discurso em que se conta a conquista do Reino do Pegú na India oriental feita pelos portugueses em tempo do vice-rei Aires de Saldanha, sendo capitão Salvador Ribeiro de Sousa, chamado Massinga, natural de Guimarães, a quem os naturais do Pegú elegeram por seu rei no ano de 1600" (পূর্ব ভারতের পেগু বিজয়ের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা যখন ভাইসরয় আয়েরস সাল সালদানার সময়ে অধিনায়ক সালভাদোর রিবেইরো দে সউসা, ম্যাসিঙ্গা নামে পরিচিত, ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে রাজা হিসাবে নির্বাচিত ছিলেন) নামক বইয়ে। ফার্নো মেন্ডেসের "পেরেগ্রিনিয়াম" এর সাথে এটি ১৭১১ থেকে ১৮২৯ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছিল।
রাজধানীটি টুঙ্গুর ভাইসরয়, টুঙ্গুর দ্বিতীয় মিনে থিহথু দ্বারা লুট করা হয়েছিল এবং তারপরে বর্মী-সিয়ামীয় যুদ্ধের সময় (১৫৯৪-১৬০৫) রাখাইনের ভাইসরয় দ্বারা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। রাজা নন্দা বাইন এটি পরিত্যাগ করার পর থেকে নির্জন হওয়ার পর রাজা আনউকপেটলুন হংকসওয়াদিকে পুনর্নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। তবে তিনি কেবলমাত্র একটি অস্থায়ী প্রাসাদ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল।[৬]
বর্মী রাজধানী ১৬৩৪ সালে আভাতে স্থানান্তরিত হয়। ১৭৪০ সালে মন গোষ্ঠী বিদ্রোহ করে পুনরুদ্ধার হানতাওয়াদি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। তবে, ১৭৫৭ সালের মে মাসে এক বামার রাজা আলাউংপায়া শহরটি দখল করেছিলেন।
বাগো রাজা বোদাওয়াপায়া (রাজত্ব ১৭৮২-১৮১৯) পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। তবে ততক্ষণে নদীটি শহরটিকে সমুদ্র থেকে বিচ্ছিন্ন করে পথ পরিবর্তন করেছিল। এটি পূর্বের গুরুত্বটি কখনই অর্জন করতে পারেনি। দ্বিতীয় অ্যাংলো-বর্মী যুদ্ধের পরে, ব্রিটিশরা ১৮৫২ সালে বাগোকে দখল করে। ১৮৬২ সালে ব্রিটিশ বার্মা প্রদেশটি গঠিত হয় এবং রাজধানী ইয়াঙ্গুনে স্থানান্তরিত হয়। বর্মী শব্দ ও উচ্চারণের সাথে ব্রিটিশদের উচ্চারণে যথেষ্ট পার্থক্য থাকায় বাগোর নাম ''পেগু'' নামে পরিচিত হয়।
১৯১১ সালে, হানতাওয়াদিকে নিচু বার্মার বাগো (বা পেগু) অঞ্চলের একটি জেলা হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল। এটি ইয়াঙ্গুন জেলাতে অবস্থিত, যেখান থেকে এই শহরটি ১৮৮০ সালে একটি পৃথক জেলা তৈরি করতে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। এর ক্ষেত্রফল ৭,৮৩০ বর্গ কিলোমিটার (৩,০২৩ বর্গমাইল)। ১৯০১ সালে এর জনসংখ্যা ছিল ৪৮,৪১১ জন। গত দশকে জনসংখ্যা ২২% বৃদ্ধি পেয়েছে। হানতাওয়াদি এবং হিনতাদা এই প্রদেশের দুটি সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ জেলা ছিল।
হানতাওয়াদি, যেমনটি ১৯১১ সালে গঠিত হয়েছিল, ইরাবদী নদী এবং পেগু রেঞ্জের মাঝামাঝি সমুদ্র থেকে প্রসারিত বিস্তৃত সমভূমি দ্বারা তৈরি। জেলার সদর দপ্তর ছিল রাঙ্গুনে, যা একটি উপ-বিভাগীয় সদর দপ্তরও ছিল। দ্বিতীয় উপ-বিভাগটির সদর দপ্তর ইনসেইনে ছিল, যেখানে বিশাল রেলওয়ের কাজ ছিল। চাষাবাদ প্রায় পুরোপুরি ভাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, তবে এখানে প্রচুর শাকসবজি এবং ফলের বাগান ছিল।
বর্তমানে হানতাওয়াদি বাগো শহরের একটি ওয়ার্ড।
২০১৪ মিয়ানমার আদমশুমারি অনযায়ী বাগোর জনসংখ্যা ছিল ২,৫৪,৪২৪ জন যা বাগো শহরাঞ্চলের মোট জনসংখ্যার ৫১.৮%।[৭] বাগো ৩৪টি ওয়ার্ডে বিভক্ত।[৭]
বাগো, মিয়ানমার (১৯৮১–২০১০)-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
উৎস: Norwegian Meteorological Institute[৮] |
International Dictionary of Historic Places: Asia and Oceania