বাত | |
---|---|
প্রতিশব্দ | বাতজনিত রোগ |
বিশেষত্ব | রিউম্যাটোলজি |
বাতজনিত রোগ বা রিউম্যাটিজম (ইংরেজি: Rheumatism) হল কঙ্কালতন্ত্র ও যোজক কলার দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগ। এটি আসলে নির্দিষ্ট কোনো রোগ না, তবে গেঁটেবাত (আর্থ্রাইটিস) ও নন-আর্টিকুলার রিউম্যাটিজম সহ কমপক্ষে ২০০টি বিভিন্ন প্রকারের বাতজনিত রোগ রয়েছে।[১][২] সফট টিস্যু ডিজঅর্ডার এবং বাত রোগের বেশ মিল রয়েছে। এমনকি, কখনও কখনও "সফট টিস্যু ডিজঅর্ডার" শব্দটি দিয়েই বাতজনিত রোগকে বুঝানো হয়।[৩]
মেডিকেল সাবজেক্ট হেডিংয়ে "বাতজনিত রোগ" শব্দটি সাধারণত যোজক কলার রোগ বুঝাতে ব্যবহার করা হয়।[৪] ঔষধশাস্ত্রের যে শাখাটি বাতজনিত রোগ নির্ণয় এবং থেরাপিতে নিবেদিত তাকে রিউম্যাটোলজি বলা হয়।[৫]
বাতজনিত রোগে দীর্ঘস্থায়ী বা মাঝে মাঝে ব্যথা (জয়েন্টে, ঘাড়ে বা পিঠে) ঐতিহাসিকভাবে সংক্রামক রোগের কারণে ঘটেছিল। লাইম রোগ (উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে), কোকসিডিওমাইসিস বা উপত্যকা জ্বর (পশ্চিম আমেরিকাতে), ভারতের চিকুনগুনিয়া এবং রিঅ্যাকটিভ আর্থ্রাইটিসের মতো এ রোগের কারণ ও চিকিৎসা পদ্ধতিও বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত অজানা ছিল।
আমেরিকান কলেজ অব রিউম্যাটোলজি (এসিআর) ১৯৮৩ সালে প্রধান প্রধান বাতজনিত রোগগুলোকে ১০টি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করার প্রস্তাব দিয়েছে।[৬] এগুলো হল:
বাতজনিত রোগের প্রধান লক্ষণ হল: পেশী-কঙ্কালে ব্যথা এবং আড়ষ্টতা। হাত পায়ের সন্ধিস্থলের পেশিতে তীব্র ব্যথা, প্রদাহ ও আড়ষ্টতা এই রোগের লক্ষণ। এর সঙ্গে অঙ্গ-প্রতঙ্গ নাড়ানোর ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। অস্থিসন্ধিতে বাত সীমাবদ্ধ থাকলে একে অস্থিসন্ধির প্রদাহ বলা হয়। বিভিন্ন ধরনের সন্ধিপ্রদাহ ও বাতরোগকে কখনও কখনও নানাভাবে শ্রেণিবিভক্ত করা হয়, যথা অস্থায়ী অস্থিসন্ধিপ্রদাহ (অস্থিসন্ধি জ্বর); স্থায়ী অস্থিসন্ধিপ্রদাহ (বাতগ্রস্ত অস্থিসন্ধিপ্রদাহ, গেঁটেবাত); আঘাতজনিত অস্থিসন্ধিপ্রদাহ; স্ফীতিজনিত অস্থিসন্ধিপ্রদাহ; সংক্রামক বাতরোগ (গণোরিয়াজাত অস্থিসন্ধিপ্রদাহ); পেশিবাত (পেশিপ্রদাহ, পেশিশূল) এবং পুনরাক্রমী বাতরোগ। বাতরোগে তাপ ও ফোলাসহ অস্থিসন্ধি ব্যথা বিভিন্ন মেয়াদী হয়, কয়েক ঘণ্টা থেকে প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী থাকতে পারে। হাঁটু এ রোগের প্রধান আক্রান্তকারী স্থান, কিন্তু রোগটির ব্যথা একই অস্থিসন্ধিসমূহে সব সময় ফিরে আসে না।
সাধারণত চিকিৎসকগণ রোগীর কাছ থেকে সমস্যার বিস্তারিত ইতিহাস শুনে এবং শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে, ইমেজিং ও ল্যাবরেটরি পরীক্ষা রোগ নির্ণয় এবং রোগের ক্রম পরিণতি অনুধাবনে সহায়তা করে। এই রোগ নির্ণয়ের জন্য অল্প কিছু নির্দিষ্ট পরীক্ষা রয়েছে।[১০]
"রিউম্যাটিজম" এর জন্য প্রচুর পরিমাণে ভেষজ ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।[১১] আধুনিক ঔষধবিদ্যা স্বীকৃতি দেয় যে বিভিন্ন বাতজনিত ব্যাধির কারণও ভিন্ন ভিন্ন (এবং তাদের বেশিরভাগের একাধিক কারণ রয়েছে) এবং তাই একেক বাত জনিত রোগে একেক ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন।
তবে, বড় বড় বাতজনিত রোগে প্রাথমিকভাবে আইবুপ্রোফেন এবং নেপ্রোক্সেন প্রভৃতি প্যারাসিটামল ও অ-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস (এনএসএআইডি) জাতীয় ব্যথানাশক পদার্থের থেরাপি দেওয়া হয়। প্রায়ই শক্তিশালী বেদনানাশক প্রয়োজন হয়ে থাকে।
প্রাচীন গ্রীকরা লিপিবদ্ধ করেছে যে কিছু ধরনের বাত রোগে মৌমাছির বিষের উপকারী প্রভাব আছে। ১৯ শতকের শেষদিকে মৌমাছি এবং পিঁপড়ার স্টিংগুলি লোক প্রতিকার হিসাবে পরিচিত ছিল এবং একজন চিকিৎসক ফর্মিক অ্যাসিডের ইনজেকশন দিয়ে একটি চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন।[১২] জোয়া সহ কয়েকটি অ্যামাজনীয় উপজাতি ব্যথার প্রতিষেধক হিসেবে ফায়ার অ্যান্ট পিঁপড়ার স্টিং ব্যবহার করে।[১৩]
বিভিন্ন সময়ে কড লিভার অয়েলও এর প্রতিষেধক হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। আর, পূর্ব ভারতীয় সংস্কৃতি অনুসারে নিম গাছের তেল বাতজনিত রোগের প্রতিকার হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে।[১৪]
ইংরেজি rheumatism শব্দটি প্রাচীন গ্রিক শব্দ ῥευματίζομαι (রিউম্যাটিজমাস) থেকে এসেছে। এখানে, "রিউম" অর্থ দৈহিক তরল (বডি ফ্লুইড)।
১৭ শতকের আগে অস্থিসন্ধির যেসব ব্যাথা অস্থিসন্ধিতে বিদ্যমান ভ্যাকুয়াস হিউমারের কারণে ঘটত সেগুলোকে গেঁটেবাত বলা হত। এই গেঁটেবাতের ইংরেজি প্রতিশব্দ- Gout মধ্য ইংরেজি ভাষায় এসেছে প্রাচীন ফরাসি ভাষার শব্দ Gote থেকে। তবে, এই গোট আর বর্তমানে ইউরিক অ্যাসিডের আধিক্য বোঝাতে ব্যবহৃত গোট মোটেই এক নয়।
বর্তমান অর্থে ইংরেজি রিউম্যাটিজম শব্দটি সপ্তদশ শতাব্দীর শেষের দিক থেকে প্রচলিত হতে শুরু করে। কারণ, তখন থেকেই বিশ্বাস করা হত যে দীর্ঘস্থায়ী অস্থিসন্ধির ব্যথা "রিউম"-এর অত্যধিক প্রবাহের কারণে ঘটে। অর্থাৎ, অস্থিসন্ধিতে শারীরিক তরল প্রবেশ করে।[১৫]
শ্রেণীবিন্যাস |
---|