বাতজ্বর | |
---|---|
প্রতিশব্দ | তীব্র বাতজ্বর |
বাতজ্বরের রোগীর ময়নাতদন্ত করে প্রাপ্ত হৃৎপিণ্ড ( স্ফীত মাইট্রাল ভালভ, স্ফীত কর্ডা টেন্ডনি)। | |
বিশেষত্ব | কার্ডিওলজি |
লক্ষণ | জ্বর, আর্থালজিয়া, অনৈচ্ছিক পেশীর নড়াচড়া, এরিথেমা[১] |
জটিলতা | Rheumatic heart disease, heart failure, atrial fibrillation, infection of the valves[১] |
রোগের সূত্রপাত | 2–4 weeks after a streptococcal throat infection, age 5-14 years[২] |
কারণ | Autoimmune disease triggered by Streptococcus pyogenes[১] |
ঝুঁকির কারণ | বংশগত সমস্যা, অপুষ্টি, দারিদ্র্য[১] |
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি | সংক্রমণের ইতিহাস এবং লক্ষণের উপর নির্ভর করে[৩] |
প্রতিরোধ | গলার রোগের ক্ষেত্রে যথাযথ এন্টিবায়োটিক গ্রহন, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা[১][৪] |
চিকিৎসা | দীর্ঘমেয়াদি এন্টিবায়োটিক, কপাটিকা প্রতিস্থাপন,হৃৎপিণ্ডের কপাটিকা মেরামত[১] |
সংঘটনের হার | প্রতি বছর ৩২৫,০০০ শিশু[১] |
মৃতের সংখ্যা | ৩১৯,৪০০ (২০১৫)[৫] |
বাতজ্বর (ইংরেজি: Rheumatic fever) হলো প্রদাহজনিত রোগ যা হৃৎপিন্ড, ত্বক, মস্তিস্ক কে আক্রান্ত করতে পারে।[৬] এই রোগ সাধারণত গলায় সংক্রমণের দুই থেকে চার সপ্তাহ পরে শুরু হয়। [২] লক্ষণের মধ্যে রয়েছে জ্বর, জয়েন্টে ব্যথা,কোরিয়া, ইরায়থেমা মারজিনেটাম।[৬] প্রায় অর্ধেক ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ড আক্রান্ত হয়।[৬] বাতজ্বরের জন্য দায়ী ব্যাক্টেরিয়া হলো স্ট্রেপটোকক্কাস পায়োজেনস। [৭]
এই রোগে ব্যক্তির নিজের শরীরের টিস্যুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। তবে যাদের শরীরে এই রোগের জিন রয়েছে তারা অন্যদের তুলনায় খুব সহজে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে পুষ্টিহীনতা, দারিদ্র্য প্রভৃতি। [১] এই রোগ শনাক্ত করার ক্ষেত্রে উপসর্গগুলোর পাশাপাশি স্ট্রেপ্টোকক্কাস দ্বারা সংক্রমিত হবার প্রমাণ থাকা জরুরি। [৮]
স্ট্রেপ্টোকক্কাস দ্বারা কণ্ঠনালীর সংক্রমণে পেনিসিলিন দ্বারা চিকিৎসা করালে বাতজ্বর হবার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। [৯]
প্রতিবছর প্রায় ৩২৫০০০ জন শিশু বাতজ্বরে আক্রান্ত হয় এবং প্রায় ১৮ মিলিয়ন লোক বাতজ্বর সংক্রান্ত হৃদরোগে আক্রান্ত। বাতজ্বর রোগীদের বয়স সাধারণত ৫ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে।[১] তবে ২০% ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্করাও প্রথমবারের মত আক্রান্ত হতে পারে।[১০] উন্নত দেশগুলোর আদিবাসী লোকজন ও উন্নয়নশীল দেশে এই রোগের প্রাদূর্ভাব বেশি।[১] ২০১৩ সালে এই রোগে মৃত্যুর সংখ্যা ছিলো ২৭৫০০০ জন যেখানে ১৯৯০ সালে ছিলো প্রায় ৩৭৪০০০ জন।[১১] অধিকাংশ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে উন্নয়নশীল দেশে যেখানে প্রতিবছর প্রায় ১২.৫% রোগী মৃত্যুবরণ করে[১] এই রোগের বর্ণনা খৃস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে হিপোক্রেটিসের লেখায় পাওয়া যায়।[১২] বাতরোগের অনেক উপসর্গের সাথে এই রোগের উপসর্গের মিল থাকায় এই রোগের নাম বাতজ্বর রাখা হয়েছে।[১৩]
এই জ্বর সাধারনত বিটা হিমোলাইটিক স্ট্রেপটোকক্কাস নামক এক ধরনের জীবাণুর আক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। দারিদ্র্য, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, ঠাণ্ডা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে এবং অজ্ঞতাই এ রোগের প্রধান কারণ। যেসব শিশুর দীর্ঘ দিন ধরে খোসপাঁচড়া ও টনসিলের রোগ থাকে, তাদের বাতজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে।[১৫]
বাতজ্বরের রোগীর সাধারণত নিম্নলিখিত উপসর্গসমূহ দেখা দেয়।
• জ্বর
• অস্থিসন্ধিতে মৃদু বা তীব্র ব্যথা যা প্রায়ই পায়ের গোড়ালি, হাঁটু, কনুই অথবা হাতের কবজি এবং কখনো কখনো কাঁধ, কোমর, হাত, পায়ের পাতায় হয়ে থাকে।
• ব্যথা সাধারণত এক অস্থিসন্ধি থেকে আরেক অস্থিসন্ধিতে ছড়িয়ে পড়ে যা মাইগ্রেটরি পলি-আর্থ্রাইটিস নামে পরিচিত।
• জয়েন্ট লাল,উষ্ণ ও ফোলা থাকে।
• ত্বকের নিচে ক্ষুদ্র ব্যথাহীন পিন্ড বা সাবকিউটেনিয়াস নডিউল থাকে।
• বুকে ব্যথা ও বুক ধড়ফড় করে,
• অল্পতে ক্লান্ত বা দুবর্ল বোধ হয়,
• শ্বাসকষ্ট হয় ইত্যাদি।
গ্রুপ-এ বিটা হিমোলাইটিক স্ট্রেপ্টোকক্কাস দ্বারা ফ্যারিংসে সংক্রমণ হওয়ার ২ থেকে ৪ সপ্তাহ পর বাতজ্বর দেখা দিতে পারে। সে সময় ফ্যারিঞ্জাইটিসের লক্ষণসমূহ আর থাকেনা। তবে একতৃতীয়াংশ রোগীর ক্ষেত্রে ফ্যারিঞ্জাইটিসের কোনো ইতিহাস থাকেনা। গ্রুপ-এ স্ট্রেপ্টোকক্কাসের কোষপ্রাচীরে এম প্রোটিন থাকে যা খুবই অ্যান্টিজেনিক।[৬][১৬]
শরীরের ইমিউন সিস্টেম উক্ত প্রোটিনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে যা হার্ট, জয়েন্ট ওমস্তিষ্কের টিস্যুর সাথে ক্রসরিয়াকশন করে।[১৭]
চিকিৎসাবিজ্ঞানী T. Duckett Jones ১৯৪৪ সালে এইরোগ নির্ণয়ের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেন যা জোন’স ক্রাইটেরিয়ানামে পরিচিত।[১৮] এই নীতিমালা অনুসারে বাতজ্বরের উপসর্গগুলোকে মেজর ও মাইনর দুই শ্রেণিতে ভাগ করা হয় এবং বাতজ্বরের ক্ষেত্রে দুটি মেজর ক্রাইটেরিয়া অথবা একটি মেজর ও দুটি মাইনর ক্রাইটেরিয়া মিলতে হবে এবং এর সাথে গ্রুপ-এ স্ট্রেপ্টোকক্কাস দ্বারা সংক্রমণের প্রমাণ থাকতে হবে।[১৯] এই নীতিমালা শুধু প্রথম বার বাতজ্বরে আক্রান্ত হলে প্রযোজ্য, এরপরে পুনরায় এই রোগে আক্রান্ত হলে এটি প্রযোজ্য হবেনা। সিডেনহাম কোরিয়া ও কার্ডাইটিসের লক্ষণ থাকলে এই নীতিমালা অনুসরণ না করে সরাসরি বাতজ্বর রোগ নির্ণয় করা যায়। [২০][২১][২২]
মাইগ্রেটরি পলি-আর্থ্রাইটিস
বাতজ্বরে আক্রান্ত ৭৫% রোগীর এই লক্ষণটি প্রকাশ পায়। সাধারণত হাঁটু, গোড়ালির গাঁট, কব্জি ও কনুই এর মতো বড় জয়েন্টগুলো আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত জয়েন্ট ফুলে লাল হয়ে যায়, অত্যন্ত ব্যথা ও গরম থাকে। সাধারণত ১-৩ দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যায়। মেরুদণ্ড, হাত ও পায়ের ছোট ছোট জয়েন্ট ও নিতম্বের জয়েন্ট আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
কার্ডাইটিস
৫০-৬০% রোগীর ক্ষেত্রে এটি হয়।বাতজ্বরে হার্টের তিনটি স্তরেই (এন্ডোকার্ডিয়াম, মায়োকার্ডিয়াম, পেরিকার্ডিয়াম)প্রদাহ হয় বলে এটা প্যানকার্ডাইটিস নামে পরিচিত। হার্টের ভালব বা কপাটিকা বিশেষ করে মাইট্রাল ভালব ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাইট্রাল ভালবের সাথে কখনো কখনো অ্যাওর্টিক ভালবও আক্রান্ত হতে পারে। তবে শুধু অ্যাওর্টিক ভালব বা ডানপার্শ্বীয় ট্রাইকাসপিড ভালব সাধারণত আক্রান্ত হয়না।
সিডেনহাম কোরিয়া
১০-১৫% রোগীর এই সমস্যা হয়।ঐচ্ছিক পেশির অনিয়মিতভাবে অনৈচ্ছিক আন্দোলন কে কোরিয়া বলে। এই রোগীদের হাত বেঁকে গিয়ে চামুচের মতো আকৃতি ধারণ করতে পারে, জিহ্বা বাইরে বের হয়ে লাফাতে থাকে। এছাড়া হাতের লেখা খারাপ হতে থাকে, লেখাপড়ায় অবনতি হয়। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। মানসিক চাপের সময় এই লক্ষণগুলো বাড়ে তবে ঘুমানোর সময় আর থাকেনা। [২৩]
সাবকিউটেনিয়াস নডিউল
ত্বকের নিচে ব্যথাহীন কিছুটা শক্ত দলা পাওয়া যায়।
ইরাইথেমা মার্জিনেটাম
এক ধরনের লালচে চুলকানিমুক্ত ফুসকুড়ি যার মধ্যভাগ কিছুটা বিবর্ণ। এটিদেহ,হাত ও পায়ে হয়ে থাকে তবে মুখমণ্ডলে হয়না। চামড়া গরম হলে ফুসকুড়ি বেশি হয়।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে ও আক্রান্ত জয়েন্ট নড়াচড়া করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ব্যথানাশক ঔষধ হিসেবে অ্যাসপিরিন খুবই কার্যকর। প্রদাহ কমানোর জন্য অ্যাসপিরিনের পাশাপাশি কর্টিকোস্টেরয়েড যেমন প্রেডনিসোলন ব্যবহৃত হয়। এর পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক যেমন ফিনক্সিমিথাইলপেনিসিলিন, বেনজাথিন পেনিসিলিন ও ইরাইথ্রোমাইসিন প্রভৃতি ব্যবহৃত হয়।
স্ট্রেপ্টোকক্কাস দ্বারা কণ্ঠ নালীর সংক্রমণে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারকরে বাতজ্বর প্রতিরোধ করা যায়।[২৬] স্ট্রেপ্টোকক্কাস পায়োজেন্স এর বিরুদ্ধে টিকা উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে তবে স্ট্রেপ্টোকক্কাস প্রজাতির বৈচিত্র্যের জন্য এখনো এটি সফলতার মুখ দেখেনি। [২৭]
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; CDC2015Def
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; Sp2021
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; GBD2015De
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নিটেমপ্লেট:Circulatory system pathology টেমপ্লেট:Hypersensitivity and autoimmune diseases টেমপ্লেট:Arthritis in children