বাদালিং (সরলীকৃত চীনা: 八达岭; প্রথাগত চীনা: 八達嶺; ফিনিন: Bādálǐng) চীনের মহাপ্রাচীরের সবচেয়ে ভ্রমণকারী জায়গা, ইয়ানকিং অঞ্চলের বেইজিং শহর থেকে প্রায় ৮০ কিমি উত্তর-পশ্চিমে, যা বেইজিং পৌরসভার মধ্যে অবস্থিত। প্রাচীরের এই অংশটুকু করা হয় ১৫০৪ সালে মিং রাজবংশের সময়, যা সামরিক ঘাটির কৌশলগত অবস্থানে গুরুত্ত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাদালিং এর সবচেয়ে উচু জায়গা বেইবালোও (北八樓) যা সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ১০১৫ মিটার (৩৩৩০ ফিট) উচ্চতায় অবস্থিত।
বাদালিং মহাপ্রাচীর মিং বংশের শাসনামলে (১৫০৫ সালে) নির্মিত হয়েছিল যা একটি আদেশমূলক এবং কৌশলগত অবস্থানের মাধ্যমে দক্ষিণের জুইয়াংগান গিরিপথ (মহাপ্রাচীরের জুইয়াংগান অংশ) ও বেইজিং শহর রক্ষা করার জন্য।[১]
পরবর্তীতে বাদালিং অংশ সংস্কার করা হয়। ১৯৫৭ প্রথম পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। প্রতিবছল মিলিয়ন মিলিয়ন পর্যটক সেখানে ভ্রমণ করে এবং খুব অল্পসময়ের মধ্যে সেখানে হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও একটি কেব্লকার সহ উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধিত হয়। সম্প্রতি বেইজিংয়ের সঙ্গে বাদালিং সংযোগ এর জন্য বাদালিং দ্রুতগমনপথ সম্পন্ন হয়েছে। বেইজিং উত্তর রেলওয়ে স্টেশন থেকে যারা মহাপ্রাচীর দেখতে যেতে চায় তাদের জন্য বেইজিং শহরতলির রেলওয়ে লাইন S2 রয়েছে। বেইজিংয়ের উত্তর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বাদালিং স্টেশন পর্যন্ত যাওয়ার জন্য টিকেট কিনা যায়। ৮৭৭ বাসটি ডেসেংমেন বাস স্টেশন এবং বাদালিং (বেইজিং সাবওয়ে এর নীল-লাইন জিশুইতান স্টেশন সংলগ্ন ) মধ্যে ঘন ঘন চলাচল করে।
চীনের ১০ হাজার মাইল মহাপ্রাচীরের শ্রেষ্ঠ অংশ হচ্ছে বাদালিং মহাপ্রাচীর। ১৯৭২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্যের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন এবং তার স্ত্রী তাদের ঐতিহাসিক সফরে চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী লি জিয়ান্নিয়ানের সাথে বাদালিং পরিদর্শন করেন।[২]
বাদালিং মহাপ্রাচীর পরিদর্শনে এসে মার্গারেট থ্যাচার, রোনাল্ড রিগ্যান ও মিখাইল গর্বাচেভ সহ বিশ্বের ৮০ জনেরও বেশি রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান তাদের বাণী লিখেছেন।[৩] ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ লিখেছেন: আমি বিশ্বের অনেক জায়গায় গিয়েছি। এদের মধ্যে মহাপ্রাচীর সবচেয়ে সুন্দর। সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন লিখেছেন: শুধুমাত্র একটি মহান জাতি একটি মহাপ্রাচীর সৃষ্টি করতে পারে।
২০০৮ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের নগর রোড সাইক্লিং কোর্সের সমাপ্তি বাদালিং এবং এর রাস্তাগুলোয় ছিল। এই প্রশিক্ষনে এর প্রাচীরের দরজাগুলো অতিক্রম করে যেতে হয়েছে। ২০১৬ সালের ২৯ জুলাই থেকে বাদালিং মহাপ্রাচীর সৈনিক ও প্রতিবন্ধী সৈনিকদের জন্য বিনামূল্য করে দেওয়া হয়।