বার্লিংটন জনসংখ্যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্ট অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম শহর ও চিতেনডেন কাউন্টির সদর দপ্তর। শহরটি কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সীমানার ৪৫ মাইল দক্ষিণে ও মন্ট্রিল শহরের ৯৪ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত। ২০১০ এর আদমশুমারি অনুযায়ী বার্লিংটনের জনসংখ্যা ৪২,৪১৭।[১]
বার্লিংটনে ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও চ্যাম্পলেইন কলেজ ও ভার্মন্টের বৃহত্তম হাসপাতাল ইউভিএম মেডিকেল সেন্টার অবস্থিত। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম শহর হিসেবে বার্লিংটন সম্পূর্ণ নবায়নযোগ্য শক্তিতে পরিচালিত হতে শুরু করে।[২]
বার্লিংটনের নামকরণের ইতিহাস নিয়ে দুইটি তত্ত্ব প্রচলিত। কেউ কেউ বলেন, আর্ল অব বার্লিংটন রিচার্ড বয়েলের নামানুসারে শহরটির নাম "বার্লিংটন।" আবার কেউ কেউ বলেন, নিউইয়র্কের সম্ভ্রান্ত বার্লিং পরিবারের সম্মানে শহরটির নাম দেওয়া হয়েছে "বার্লিংটন।" বার্লিং পরিবার শহরের আশপাশেই কিছু ভূমির মালিক ছিল।
নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের গভর্নর বেনিং ওয়েন্টওয়ার্থ ১৭৬৩ সালের ৭ জুন স্যামুয়েল উইলিসসহ আরো ৬৩ জন ব্যক্তিকে বার্লিংটনের ভূমিস্বত্ব প্রদান করেন। ১৭৭৫ সালে তারা বসবাস শুরু করলেও স্বাধীনতাযুদ্ধের ফলে বসতিগুলো ধ্বংস হয়। [৩]
১৮১২ এর যুদ্ধের সময় বার্লিংটনে ৫,০০০ সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছিল। যথাযথ পয়ঃনিষ্কাশনের অভাবে তাদের ৫০০ জন-ই মারা যায়। কেউ কেউ ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে-ও অবস্থান করছিল।[৪]
১৮১৩ সালের ২ আগস্ট ব্রিটিশরা বার্লিংটনে কামান দাগায়। প্রায় ১০ মিনিট এটি স্থায়ী ছিল। যুদ্ধে থমাস ম্যাকডোনাউ আমেরিকান বাহিনীর নেতৃত্ব দেন।
চ্যাম্পলেন হ্রদের তীরে এর অবস্থান শহরটিকে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের প্রাণকেন্দ্র করে গড়ে তুলে। ১৮৬৫ সালে শহরটিকে স্থানীয় শাসনের আওতাভুক্ত করা হয়।
১৮৭০ সালে পাইন স্ট্রিট খাল নির্মাণের মাধ্যমে জলধারার সম্প্রসারণ ঘটানো হয়।[৫] বার্নি স্যান্ডার্স শহরের মেয়র নির্বাচিত হলে সৌন্দর্যবর্ধনে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
১৯০১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর থিওডোর রুজভেল্ট বার্লিংটন শহরে বক্তৃতা দেন। নয় দিন পরে উইলিয়াম ম্যাককিনলে মারা গেলে রুজভেল্ট রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন ।[৬]
১৯৭৮ সালে আইসক্রিম কোম্পানি বেন অ্যান্ড জেরি বার্লিংটন শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়।
বার্লিংটন চ্যাম্পলেন হ্রদের পূর্ব তীরে ও শেলবুর্ন উপসাগরের উত্তরে অবস্থিত। উইনুস্কি নদীর মুখে ৬ মাইল দক্ষিণে একখণ্ড ভূমির উপর শহরটি গড়ে ওঠেছে। এর আয়তন ১৫.৪৯ বর্গমাইল, যার ১০.৩ বর্গমাইল স্থল ও ৫.১৯ বর্গমাইল জল। [৭]
শহরে একটি বিশাল গিরিপথ ছিল -বর্তমানে গিরিপথটি বর্জ্য সংরক্ষণাগারে রূপান্তরিত করা হয়েছে।
বার্লিংটন শহর বেশ কিছু এলাকা নিয়ে গঠিত। এগুলো হলো- ডাউনটাউন (শহরের কেন্দ্র), হিল সেকশন, ইন্টারভ্যাল, নিউ নর্থ এন্ড (জনসংখ্যায় বৃহত্তম এলাকা),সাউথ এন্ড ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা।
বার্লিংটনের জলবায়ু আর্দ্র মহাদেশীয় ধরনের। জানুয়ারি মাসে গড় তাপমাত্রা হয় ১৮.৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট, জুলাই মাসে যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭০.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট। বছরে গড়ে ৩৬.৮ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত ও তুষারপাত হয় ৮১.২ ইঞ্চি।
২০১০ এর আদমশুমারি অনুযায়ী বার্লিংটনের জনসংখ্যা ৪২,৮১৯। এদের ৮৫.৭% শ্বেতাঙ্গ, ৪.৯% কৃষ্ণাঙ্গ, ৬% এশীয় ও ০.৪% আদিবাসী আমেরিকান। হিস্পানিক ও লাতিনোরা বাসিন্দাদের ২.৬%।
শহরের পরিবারগুলোর আয় ৬১,০৫৭ মার্কিন ডলার। পুরুষদের গড় আয় ৩০,১৪৪ ডলার ও নারীদের গড় আয় ২৫,২৭০ ডলার। শহরেরর মাথাপিছু আয় ২৫,৫৮৯ ডলার। ১৬.৯% পরিবার ও ৩০.৭% বাসিন্দা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। এদের মধ্যে ১২.৫% এর বয়স ১৮ এর নিচে ও ১২.৯% এর বয়স ৬৫ এর উপরে।