বাস্তব বিশ্লেষণ

গণিতে বাস্তব বিশ্লেষণ (ইংরেজি: Real Analysis) এর শাখাটি বাস্তব সংখ্যা, বাস্তব ক্রম আর শ্রেণি এবং বাস্তব অপেক্ষক সম্পর্কে আলোকপাত করে। এই শাখার অপেক্ষক আর ক্রমের কিছু বৈশিষ্ট্য হলো অভিসৃতি, সীমা, সন্ততা, অন্তরকলনযোগ্যতা এবং সমাকলনযোগ্যতা

বাস্তব বিশ্লেষণ অবাস্তব বিশ্লেষণের বিশেষ শাখাবিশেষ। অবাস্তব বিশ্লেষণে অবাস্তব ও জটিল সংখ্যা ও অপেক্ষক সম্পর্কে সাধারণত আলোকপাত করা হয়।

বিষয়সমূহ

[সম্পাদনা]

বাস্তব সংখ্যার গঠন

[সম্পাদনা]

বাস্তব বিশ্লেষণ এর উপপাদ্য গুলি সাধারণত বাস্তব সংখ্যার ধর্মের উপর ভিত্তি করে প্রমাণ করা হয়। বাস্তব সংখ্যার সংগঠন একটি অপরিমেয় সেট ({}), এবং দুটি দ্বিপদ প্রক্রিয়া + এবং ⋅, আর একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়া ≤ দিয়ে গঠিত। এই প্রক্রিয়াগুলির দৌলতে বাস্তব সংখ্যার সেট একটি ফিল্ড, এবং ক্রমের জন্য একটি ক্রমিক ফিল্ড। বাস্তব সংখ্যার সংগঠন একটি একক সম্পূর্ণ ক্রমিক ফিল্ড, অর্থাৎ এর সাথে অন্য যেকোনো সম্পূর্ণ ক্রমিক ফিল্ড আইসোমরফিক হয়। আপাতভাবে সম্পূর্ণতার অর্থ এখানে বাস্তব সংখ্যার মধ্যে কোনো শূন্যস্থান নেই। এই ধর্মটি বাস্তব সংখ্যাকে অন্য যেকোনো ক্রমিক ফিল্ড (যেমন- মূলদ সংখ্যা {}) এবং এটি অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম প্রমাণ করার জন্য‌ও কাজে লাগে। মূলদ সংখ্যার সম্পূর্ণতা সাধারণত ন্যূনতম উর্ধ্বতন সীমানা দ্বারা প্রকাশিত হয় (নিম্নে সংজ্ঞা প্রদত্ত)।

ক্রম সংক্রান্ত ধর্ম

[সম্পাদনা]

বাস্তব সংখ্যার কিছু বিশেষ ল্যাটিস থিওরি সংক্রান্ত ধর্ম আছে যা জটিল সংখ্যার ক্ষেত্রে নেই। আবার এই সেটটি একটি ক্রমিক ফিল্ড গঠন করে যেখানে ধনাত্মক সংখ্যার যোগফল আর গুণফল সর্বদা ধনাত্মক হয়। আবার, এখানে বাস্তব সংখ্যার ক্রমগঠন সম্পূর্ণ, আর এই সংখ্যাগুলি সর্বনিম্ন উর্ধ্বতন সীমানা ধর্ম মেনে চলে:

বাস্তব সংখ্যার সেট () এর প্রতিটি অশূন্য উপসেটের অন্ততপক্ষে একটি বাস্তব সর্বনিম্ন উর্ধ্বতন সীমানা থাকবেই।

এইসব ক্রমিক ধর্মগুলিই পরবর্তীকালে কিছু মৌলিক উপপাদ্য, যেমন- একমুখী অভিসৃতি উপপাদ্য, মধ্যবর্তী মান উপপাদ্য, এবং গড় মান উপপাদ্য এর জন্ম দিয়েছে। অন্যদিকে, এইসব ধর্মগুলির সাধারণত একটু উন্নত সংস্করণ অন্যান্য গাণিতিক বস্তুর বিশ্লেষণেও ব্যবহৃত হয়। যেমন আপেক্ষিক বিশ্লেষণএর অপারেটর এর ধর্ম.. যেগুলো রিজ স্পেস এর তত্ত্ব অনুসারে উন্নতিসাধন করা হয়েছে। আবার, গণিতবিদরা জটিল সংখ্যার বাস্তব আর অবাস্তব অংশগুলিকে পৃথক করে নিয়েও এই ক্রমিক ধর্মগুলি আর বিন্দুভিত্তিক অভিসৃতি ব্যবহার করে থাকেন।

একটি ক্রম আসলে একটি অপেক্ষক যার ডোমেন একটি পরিমেয় সামগ্রিক ক্রমসম্পন্ন সেট।[] এই ডোমেন সাধারণত স্বাভাবিক সংখ্যার সেট,[] যদিও কিছুক্ষেত্রে ঋণাত্মক সংখ্যা সহ সবরকম পূর্ণসংখ্যা দিয়ে সূচিত উভমুখী ক্রমকে ডোমেন হিসাবে ধরা হয়।

বাস্তব বিশ্লেষণে বাস্তব ক্রম, একটি অপেক্ষক যেটি . প্রতিটি কে এক একটি পদ (বা, উপাদান) বলে। একটি ক্রমকে বিরলভাবে অপেক্ষক হিসাবে প্রকাশ করা হয়, সাধারণত সর্বসম্মত ভাবে একে একটি অসীম পদের ক্রমিক শ্রেণি হিসাবে কল্পনা করা হয়, যেখানে সাধরণ পদকে একটি ব্র্যাকেটের মধ্যে রাখা হয়। রুডিনের মতো কিছু লেখক এর পরিবর্তে ব্র্যাকেট ব্যবহার করতেন। যদিও এই প্রকাশপদ্ধতি সেটএর প্রকাশের মতোই দেখতে লাগে, যেটা, ক্রমের থেকে কিছুটা পৃথকভাবে পদের একাধিক ব্যবহার এবং ক্রমান্বয়ে সাজানোর ব্যাপারটাকে অস্বীকার করে। একটি সীমাসম্পন্ন (অর্থাৎ, ) ক্রমকে বলা হয় অভিসৃত; অন্যথায় অপসৃত. (পরবর্তী সেকশন উল্লেখ্য) একটি বাস্তব ক্রম কে 'বদ্ধ বলা হয় যদি is bounded যদি যখন যেখানে . একটি বাস্তব ক্রম কে একমুখীভাবে বৃদ্ধিশীল বা হ্রাসশীল বলা হয় যদি বা ধর্মগুলি ক্রমের পদগুলো যথাক্রমে সিদ্ধ করে। দুটোর যেকোনো একটি সিদ্ধ হলে ক্রমটিকে বলা হয় একমুখী. এই একমুখীতা কে কঠোর বলা হয় যদি ধর্মগুলি বা এর পরিবর্তে < বা > বসালেও সিদ্ধ হয়।

ধরা যাক কোনো ক্রম প্রদত্ত, অন্য একটি ক্রম আগের ক্রমটির উপক্রম বলা হবে যদি যেখানে গুলি ধনাত্মক সংখ্যা আর একটি কঠোরভাবে বর্ধমান স্বাভাবিক সংখ্যার ক্রম।

সীমা ও অভিসৃতি

[সম্পাদনা]

আপাতভাবে বলে যখন কোনো অপেক্ষকের প্রবেশকারী চলক কোনো মানের দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে থাকে তখন ওই অপেক্ষক এর মান যে মানের দিকে অগ্রসর হ‌তে থাকে তাকে ওই বিশেষ চলকের মানের জন্য অপেক্ষকটির সীমা বলে।[] (এই মান সাধারণত ও হয় যখন অপেক্ষক টি বাধাহীনভাবে বাড়তে বা কমতে থাকে)। লিমিটের ধারণা কলনবিদ্যা (এবং সাধারণ ভাবে গাণিতিক বিশ্লেষণ) সাধারণত সন্ততা, অন্তরকলনযোগ্যতা, আর সমাকলন এইসবের ধারণা প্রকাশ করতে কাজে লাগে। (এই ধারণা গাণিতিক বিশ্লেষণ আর কলনবিদ্যাকে অন্যান্য গণিতের শাখার থেকে পৃথক করে তোলে।)

অপেক্ষক এর সীমার ধারণা মৌলিকভাবে আইজ্যাক নিউটন আর গডফ্রে উইলিয়াম লিবনিৎস সপ্তদশ শতকে পৃথক পৃথকভাবে দেন। ক্রমের ক্ষেত্রে এই ধারণা দেন অগাস্তিন লুই কচি,(যা এটিকে তখন শ্রমসাধ্য করে তোলে), এবং উনিশ শতকের শেষে বার্নাড বোলজানো আর কার্ল ওয়েরস্ট্রাস, যারা প্রথম আধুনিক ε-δ সংজ্ঞা দিয়েছিলেন। সংজ্ঞাটি নিম্নরূপ:

সংজ্ঞা: ধরা যাক  একটি বাস্তব অপেক্ষক যা .  এর উপর সংজ্ঞাত। আমরা বলি ,  এর দিকে যায় যখন ,  এর দিকে যায় , অথবা   এর সীমা  যখন ,  এর দিকে যায়  যখন, যেকোনো  এর ক্ষেত্রে,  এর অস্তিত্ব বর্তমান যার হেতু সব  এর জন্য,  সিদ্ধ হলে ও সিদ্ধ হবে।  আমরা চিহ্নের দ্বারা লিখে থাকি  অথবা  এইভাবে।

আপাতভাবে, এই সংজ্ঞাকে নিম্নোক্ত ভাবেও ভাবা যেতে পারে : আমরা বলি যেখানে , যখন, প্রদত্ত কোনো ধনাত্মক সংখ্যা এর ক্ষেত্রে,(যত‌ই তা ছোটো হোক), আমরা সবসময় একটি খুঁজে পাই, যার জন্য আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি এবং এর মধ্যে দূরত্ব কম করে , যতক্ষণ (অবশ্য‌ই এটি এর ডোমেনের অন্তর্গত) একটি বাস্তব সংখ্যা যা এর থেকে কমপক্ষে দূরে অবস্থিত এবং তা এর থেকে পৃথক। শেষ কথাটির উদ্দেশ্য, যেটা সংজ্ঞার কথাটির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, হলো এটা নিশ্চিত করা যে , এর মানের ব্যাপারে কিছু ইঙ্গিত করেনা। আসলে, মানটি এর অস্তিত্বের জন্য এর ডোমেন এ থাকার‌ও প্রয়োজন হয়না।

খানিকটা আলাদা ধারণায় আসা যাক যখন এর ক্ষেত্রে খুব বড়ো হয়ে যায়।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Sequences intro"khanacademy.org 
  2. Gaughan, Edward (২০০৯)। "1.1 Sequences and Convergence"। Introduction to Analysis। AMS (2009)। আইএসবিএন 978-0-8218-4787-9 
  3. Stewart, James (২০০৮)। Calculus: Early Transcendentals (6th সংস্করণ)। Brooks/Coleআইএসবিএন 978-0-495-01166-8 

  • Athreya, Krishna B.; Lahiri, Soumendra N. (২০০৬), Measure theory and probability theory, Springer, আইএসবিএন 0-387-32903-X 
  • Nielsen, Ole A. (১৯৯৭), An introduction to integration and measure theory, Wiley-Interscience, আইএসবিএন 0-471-59518-7 
  • Royden, H.L. (১৯৮৮), Real Analysis (third সংস্করণ), Collier Macmillan, আইএসবিএন 0-02-404151-3 

গ্রন্থপঞ্জী

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]