বাস্তুহারা | |
---|---|
পরিচালক | জি অরবিন্দন |
প্রযোজক | টি রবীন্দ্রনাথ |
চিত্রনাট্যকার | জি অরবিন্দন সংলাপ: সি ভি শ্রীরামন জি অরবিন্দন এন মোহনন |
কাহিনিকার | সি ভি শ্রীরামন |
শ্রেষ্ঠাংশে | মোহনলাল শোভনা নীলাঞ্জনা মিত্র নীনা গুপ্তা |
সুরকার | সলিল চৌধুরী |
চিত্রগ্রাহক | সানি জোসেফ |
সম্পাদক | কে আর বোস |
প্রযোজনা কোম্পানি | প্যারাগন মুভি মেকার্স |
পরিবেশক | চন্দ্রকান্ত রিলিজ |
মুক্তি | ৩রা জুন ১৯৯১ |
দেশ | ভারত |
ভাষা | মালয়ালম |
বাস্তুহারা (অনু. দখল চ্যূত) হল ১৯৯১ সালের ভারতীয় মালয়ালম ভাষার সামাজিক নাট্য চলচ্চিত্র। এটি রচনা এবং পরিচালনা করেছিলেন জি অরবিন্দন। এটি সি ভি শ্রীরামনের লেখা একই নামের ছোটগল্পের উপর ভিত্তি করে নির্মিত। এই চলচ্চিত্রটি পূর্ব বাংলা থেকে পশ্চিমবঙ্গে আসা বাস্তুচ্যূত শরণার্থীদের জীবনের গল্প। আরো বড় করে দেখতে গেলে, এটি শরণার্থীদের সর্বজনীন গল্প। এই ছবিতে মোহনলাল, শোভনা, নীলাঞ্জনা মিত্র, এবং নীনা গুপ্তা অভিনয় করেছিলেন। এর সংলাপ লিখেছিলেন শ্রীরামন, অরবিন্দন এবং এন মোহনন।[১][২]
গল্পটি বলা হয়েছে ভেনুর চোখ দিয়ে, সে একজন মালয়লী সরকারী কর্মকর্তা। তাকে কলকাতায় পাঠানো হয়েছিল একটি বিশেষ কাজে, সেটি হল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে শরণার্থীদের পুনর্বাসন করা।[৩] ১৯৯১ সালের ৩রা জুন বাস্তুহারা মুক্তি পেয়েছিল এবং ব্যাপক প্রশংসামূলক সমালোচনা পেয়েছিল। ছবিটি শ্রেষ্ঠ মালায়লাম ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং তিনটি কেরল রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিল, সেগুলি হল— সেরা চলচ্চিত্র, সেরা পরিচালক এবং সেরা গল্প (শ্রীরামন)। মৃত্যুর আগে অরবিন্দনের শেষ কাজ ছিল বাস্তুহারা।[৪]
ছবিটি একাত্তর সালের কলকাতার পটভূমিতে তৈরি। গল্পটি শুরু হয়েছে যখন পুনর্বাসন কর্মকর্তা ভেনু (মোহনলাল] তার নিয়মিত একটি সফরে কলকাতায় আসে, প্রায় ৩৫ থেকে ৪০টি শরণার্থী পরিবারকে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে স্থানান্তরিত করতে। বর্তমান পুনর্বাসন পরিকল্পনাটি ছিল শুধুমাত্র তফসিলী জাতের কৃষকদের জন্য। আন্দামানের মানুষজনও এত শরণার্থী আসাতে খুশী ছিল না। সমস্ত শরণার্থী গত দুই দশক ধরে পশ্চিমবঙ্গের রানাঘাটের স্থায়ী দায়বদ্ধতা শিবিরে অবস্থান করছিল। দরিদ্র বাস্তুচ্যুত মানুষের ছিন্নবিচ্ছিন্ন জীবনের অভিজ্ঞতা ভেনুকে গভীরভাবে কষ্ট দেয়। দিনের বেলা ভেনুর যে সব আশ্রয় প্রার্থীদের সাথে দেখা হয়, তার নিঃশব্দ মুহূর্তে একা তার ছোট লজ ঘরে, তাদের জীবন সম্পর্কে চিন্তায় ভেনু নিজেকে প্রায়শই হারিয়ে ফেলে। নিপীড়িত জীবন যাপন ক'রে, তাদের একমাত্র আশা, আমলাতান্ত্রিক রাজ্য কর্তৃক মাঝে মাঝে জমি, গবাদি পশু এবং অন্যান্য অনুদানের প্রতিশ্রুতি।
অরবিন্দন আমাদের শরণার্থীর জীবনে আরও কাছে নিয়ে গেছেন, যখন ভেনু বুঝতে পারে যে একটি শরণার্থী পরিবারের দুঃখ তার নিজস্ব। একদিন, এক বৃদ্ধ মহিলা, আরতি পানিকার (নীলাঞ্জনা মিত্র) ভেনুর লজে তার সাথে দেখা করতে আসে। সে ভাঙা মালায়ালাম ভাষায় কথা বলে, সেটি ভেনুকে অবাক করে দেয়। সে পূর্ববাংলার উদ্বাস্তু। সে তার সন্তানদের উন্নত ভবিষ্যতের জন্য মরিয়া হয়ে হতভাগ্য কলকাতা থেকে চলে যেতে চায়, তার এক মেয়ে (যে এমএ পড়া শেষ করেছে কিন্তু পরীক্ষা দেয়নি) এবং এক ছেলে (তাকে নিয়ে সে খুবই দুঃখিত)। তার মেয়ে দময়ন্তী (নীনা গুপ্তা) পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে এবং একজন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কমিউনিস্ট বিপ্লবী। ভেনু বুঝতে পারে যে এরা তার নিজের কাকার পরিবার। তার কাকা কবি ও বিপ্লবী কুঞ্জুন্নি পানিকারকে সে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করত। ভেনু যখন ছোট ছিল তখন তার কাকা বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল (সম্ভবত বোসের আইএনএতে যোগ দিতে)।
কুঞ্জুন্নি কাকার পরিবারের সাথে হঠাৎ সাক্ষাৎ সম্পর্কে আলোচনা করতে এবং সম্পত্তির ওপর তাদের ন্যায্য অধিকার তাদের পাইয়ে দিতে, ভেনু কেরালায় একটি বিশিষ্ট মাতৃতান্ত্রিক নায়ার পরিবারের বাড়িতে গিয়েছিল। ভেনুর মায়ের আরতি পানিকার ও তার সন্তানদের প্রতি কোনও সহানুভূতি ছিলনা। কুঞ্জুন্নি কাকার জমি ভেনুর পিসি ভবানীর (পদ্মিনী) দখলে ছিল। কিশোর বয়সে সে কুঞ্জুন্নিকে পছন্দ করত। ভেনুর ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যখন সে কিশোরী ভবানীর (শোভানা) গোপন প্রেরিত বার্তা নিয়ে যেত। ভবানী আরতির প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। যাকে সে একদিন ভালবাসত, তার স্ত্রী সন্তানদের কখনো না দেখলেও, সে তাদের সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে পড়ে। সে তাদের জমি বা অর্থ, যা তাদের পক্ষে সুবিধাজনক হবে, তা দিতে রাজি হয়। (জীবনের শেষ দিকে এসে ভবানী একাকী, অপরাধবোধে জীবন কাটাচ্ছে, সে দুই ভাইয়ের জীবনই নষ্ট করেছে — সে আনন্দনকে বিবাহ করেছিল কিন্তু সে সম্ভবত অসুখী বিবাহের কারণে, আত্মহত্যা করেছিল।)
ভেনু কলকাতায় ফিরে এসে আরতির কাছে তার পরিচয় প্রকাশ করে। তারা খুশির সঙ্গে অবাক হয়; আরতি এবং দময়ন্তী শেষ পর্যন্ত সুরক্ষিত অনুভব করে। তবে আরতি তার স্বামীর পরিবারের আর্থিক সহায়তা প্রত্যাখ্যান করে। অনেকদিন আগে সে যখন তাদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল, তারা তাকে বাড়ির প্রাঙ্গণেও প্রবেশ করতে দেয়নি। আরতি জানায়, এক প্রখর গ্রীষ্মের বিকেলে, তার স্বামীর পৈতৃক বাড়ির বন্ধ দরজা থেকে তাদের অপমানিত হয়ে ফিরে আসতে হয়েছিল। সে এবং কুঞ্জুন্নি ফেরার পথে ভেঙে পড়েছিল। পূর্ববাংলায় ফিরে আসার পরপরই, দেশ স্বাধীনতা লাভ করেছিল এবং দেশ বিভাজনের পর তারা ভারতে আশ্রয় চেয়েছিল। কুঞ্জুন্নি শরণার্থী শিবিরে কলেরার মারা যায় এবং সন্তান সম্ভবা আরতি দু'বছরের দময়ন্তীকে নিয়ে একেবারে অবক্ষয়ী দারিদ্রতায় পড়ে যায়।
ভেনু দময়ন্তীর ভাইয়ের সাথে দেখা করেছিল, সেও পুলিশের থেকে লুকিয়ে থাকা একজন কমিউনিস্ট বিপ্লবী। তাদের জীবনে ভেনুর আগমন দীর্ঘদিনের হারানো আশা এবং সুখ নিয়ে আসে। তবে এটি স্বল্পস্থায়ী হল, কারণ এবার ভেনুকে নির্বাচিত শরণার্থীদের নিয়ে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে যেতে হবে। যে সময় কলকাতার বাকি অংশ দুর্গাপূজা উদ্যাপন করছিল, সেই সময় কয়েকটি শরণার্থী পরিবারকে একটি মালবাহী ট্রাকে তুলে বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। আরতি এবং দময়ন্তী তাকে বিদায় জানাতে বন্দরে পৌঁছোয়। দময়ন্তী তার আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে কেঁদে ফেলে। ভেনু তাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেয়।
চলচ্চিত্রটি এই খানেই করুণভাবে শেষ হয়ে যায়, কারণ ঠিকভাবে বিদায় না নিয়েই ভেনুকে তাড়াতাড়ি জাহাজে উঠতে হয়েছিল। ভেনু জাহাজে ভিড়ের মধ্যে সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই, ক্রন্দনরতা দময়ন্তী পেছন থেকে বলে ওঠে, "দাদা আমাকে চিঠি লিখো... দময়ন্তী পানিকার, আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগার, কলকাতা"।
জাহাজটি আন্দামানের দিকে অগ্রসর হয়, একটি নতুন যাত্রা শুরু করে, কয়েকজন বাস্তুহারার জন্য একটি নতুন যুগের শুরু হয়, পূর্ব দ্বীপপুঞ্জের কোথাও একটি নতুন প্রতিশ্রুত জমির সবুজ তীরে, একটি জমি নতুন আশা।
তাদের বাড়িঘর থেকে বাস্তুচ্যুত, আশ্রয়প্রাপ্ত দেশে অবাঞ্ছিত বহিরাগত, স্বল্প সময়ের নানা রকম কাজ করে জীবিকা নির্বাহ, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ মজুর হিসাবে অবজ্ঞাপূর্ণ পরিস্থিতিতে কাজ করা, কেউ তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে, কেউ কেউ কেবল হাল ছেড়ে দেয়, আবার কেউ কেউ দময়ন্তী ও তার ভাইয়ের মতো বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
টেমপ্লেট:G. Aravindan টেমপ্লেট:KeralaStateFilmAwardBestFilm টেমপ্লেট:National Film Award Best Feature Film Malayalam