সরকারের মৌলিক গঠন |
---|
রাজনীতি বিষয়ক ধারাবাহিকের একটি অংশ |
রাজনীতি প্রবেশদ্বার |
বিকেন্দ্রীকরণ এমন একটি সংবিধিবদ্ধ পদ্ধতি যেখানে কোন কেন্দ্রীয় সরকার, আঞ্চলিক বা স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করে।[১] এটি একধরনের 'প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ'।বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে একটি দেশের কোন অঞ্চল তার প্রয়োজন অনুযায়ী আইনপ্রণয়ন করতে পারে এবং অঞ্চলগুলিতে স্বায়ত্তশাসনের (স্বশাসন) মাত্রা বৃদ্ধি পায়।[২]
বিকেন্দ্রীকরণ পদ্ধতি, 'যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা' বা ফেডারেশন থেকে আলাদা কারণ বিকেন্দ্রীকরণ পদ্ধতিতে 'প্রকৃত ক্ষমতা' কেন্দ্রের হাতে থাকে এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে 'বিকেন্দ্রীকৃত ক্ষমতা' ক্ষণস্থায়ী হয় যেটি কেন্দ্র যেকোন সময়ে ফিরিয়ে নিতে পারে।তাই,রাষ্ট্র খাতা-কলমে (আইনানুসারে) একক কোন কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনেই থাকে।[৩] যে আইনের দ্বারা বিকেন্দ্রিত 'আঞ্চলিক আইনসভা' তৈরি করা হয়,তা কেন্দ্রীয় সরকার অন্যান্য আইনের মতই বাতিল অথবা সংশোধন করতে পারে।অন্যদিকে,যুক্তরাষ্ট্রীয় (ফেডারেশন) পদ্ধতিতে আঞ্চলিক বা প্রাদেশিক সরকারের ক্ষমতা দেশের সংবিধান কর্তৃক নিশ্চিত করা থাকে যা কেন্দ্রীয় সরকার ইচ্ছানুসারে তুলে নিতে পারেনা (প্রাদেশিক সরকারের অনুমতি ও সংবিধান পরিবর্তন ব্যতীত)।অর্থাৎ,যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার তুলনায় বিকেন্দ্রীকরণ পদ্ধতিতে আঞ্চলিক সরকারের নিরাপত্তা কম।[৪]
অস্ট্রেলিয়া একটি ফেডারেশান (যুক্তরাষ্ট্রীয় পদ্ধতিতে শাসিত একাধিক অঙ্গরাজ্যের সমষ্টি)।এতে ছয়টি অঙ্গরাজ্য এবং দুটি অঞ্চল (যাদের ক্ষমতা রাজ্যগুলোর তুলনায় কম) আছে।
'অস্ট্রেলীয় রাজধানী অঞ্চল' ১৯৭৮ সালের গণভোটে স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাখান করে,তবে ১৯৭৯ সালে 'হাউস অফ এসেম্বলি' (বিধায়কদের সমাবেশকক্ষ) গঠনের মাধ্যমে এ অঞ্চলে স্বশাসনের জন্য অল্প কিছু ক্ষমতা দেয়া হয়,এবং পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে 'অস্ট্রেলীয় রাজধানী অঞ্চল আইনসভা' গঠনের মাধ্যমে এ ক্ষমতা বাড়ানো হয়।
অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলের নাগরিকেরা ১৯৯৮ সালের এক গণভোটে, 'উত্তরাঞ্চলকে' একটি অঞ্চল থেকে অস্ট্রেলিয়ার একটি অঙ্গরাজ্যে পরিণত করার প্রস্তাবকে প্রত্যাখান করে।(ফলাফলটি 'অস্ট্রেলীয় সরকার' ও ‘উত্তরাঞ্চল সরকার' উভয়কে বিস্মিত করে।)
অস্ট্রেলিয়ার যেকোন অঞ্চলের তৈরি আইন, ক্যানবেরার কেন্দ্রীয় সরকার বাতিল করতে পারে। (একটি ব্যতিক্রম ছিল উত্তরাঞ্চলের ক্ষণস্থায়ী 'মরাণাপন্নদের অধিকার আইন ১৯৯৫' যার মাধ্যমে মৃত্যুপথযাত্রীরা যন্ত্রণাহীন মৃত্যুবরণের উদ্দেশ্যে আত্মহত্যা করতে পারতেন)।
যদিও কানাডাতে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা রয়েছে, তবুও কানাডা ভূখণ্ডের উত্তরের বিশাল অংশ সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা শাসিত হয়।১৮৭০ সাল থেকে এই পদ্ধতি চলে আসছে।‘রুপার্টের ভূখণ্ড আইন ১৮৬৮','সংবিধান আইন ১৮৬৭'তে ১৪৬ নং অনুচ্ছেদ যোগ এবং ১৮৭০ সালে 'রুপার্ট ভূখণ্ড ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল আইন' পাসের মাধ্যমে দুই ভূখণ্ডকে('রুপার্টের ভূখণ্ড' এবং 'উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল') কানাডাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।এছাড়া ১৮৭০ সালে 'মানিটোবা আইন ১৮৭০' পাসের মাধ্যমে রুপার্ট-ভূখণ্ড থেকে মানিটোবাকে আলাদা করা হয়।এবং পরবর্তীতে মানিটোবাকে যোগ করা হয় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে,যে অঞ্চলটি ('সংবিধান আইন ১৮৭১' অনুযায়ী)ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের শাসনাধীন ছিল।
১৯৭০ সাল থেকে কেন্দ্রীয় সরকার,নীতিনির্ধারণী অনেক সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা উত্তরাঞ্চলের সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছে।এর অর্থ উক্ত অঞ্চলের ভবিষ্যত নির্ধারণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগ্রহণ ও নানা দায়িত্বের সিংহভাগ বর্তমানে আঞ্চলিক সরকারের হাতে ন্যাস্ত। ১৮৯৮ সালে উত্তরাঞ্চল থেকে ইউকোন কে আলাদা করা হয় কিন্তু এটিও কেন্দ্রীয় শাসনাধীন রাখা হয়।পরবর্তীতে, ১৯০৫ সালে উত্তরাঞ্চল থেকে আলবার্টা ও সাসকাচিওয়ান নামে দুটি প্রদেশ তৈরি করা হয়।রুপার্ট ভূখণ্ডের বিভিন্ন অংশ ওন্টারিও এবং কুইবেক প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত করা হয়(যার ফলে ওন্টারিও আর কুইবেকের ভূখণ্ড সেইন্ট লরেন্স ও নিম্ন মহাহৃদ এলাকাজুড়ে বিস্তৃত হয়)।১৮৯৫ থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত উনগাভা জেলা কানাডার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি প্রশাসনিক জেলা ছিল।কানাডার সংসদ, 'কুইবেক সীমানা বিস্তৃতিকরণ আইন ১৮৯৮' ও 'কুইবেক সীমানা বিস্তৃতিকরণ আইন ১৯১২' এই দুইটি আইন পাস করার মাধ্যমে উনগাভা জেলাকে কুইবেক প্রদেশে অন্তর্ভুক্ত করে।ল্যাবরাডোরের কিছু ভূখণ্ড (যা উনগাভা জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল),১৯২৭ সালে প্রিভি কাউন্সিলের 'ব্রিটিশ বিচারক সমিতির' সিদ্ধান্তে নিউফাউন্ডল্যান্ড প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১৯৯৯ সালে,কানাডার পূর্বদিকে মেরুঅঞ্চলে বসবাসকারী 'ইনুইট' উপজাতীদের সাথে কেন্দ্রীয় সরকার একটি ভূমিচুক্তি স্বাক্ষরের পর নুনাভুট নামক প্রশাসনিক অঞ্চলটি তৈরি হয়।১৯৯৯ সালে নুনাভুট তৈরির আগপর্যন্ত কুইবেকের উত্তর ও পশ্চিমের দ্বীপগুলি 'উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল' নামক প্রশাসনিক এলাকার ভেতরে ছিল।
এরপর থেকেই,কেন্দ্রীয় সরকার ধীরে ধীরে আইনপ্রণয়নসহ অন্যান্য ক্ষমতা হস্তান্তর করতে শুরু করে।ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের মূল উদ্দেশ্য ছিল,এসব অঞ্চলকে স্বায়ত্তশাসিত ও সমৃদ্ধ করা হলে কানাডীয় ফেডারেশানের মধ্যে এরা শক্তিশালী ভূমিকা পালন করবে ও কানাডার উত্তরাঞ্চলে উন্নয়ন ঘটবে।এসব বিকেন্দ্রিত ক্ষমতাপ্রাপ্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে, 'ইউকোন' সর্বাপেক্ষা অগ্রসর।
স্বল্পস্থায়ী(১৮৯৮-১৯০৫) একটি নির্বাচিত আইনসভা ছাড়া উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলকে ১৮৭০ সাল থেকে ১৯৭০র দশক পর্যন্ত ওটায়া থেকে শাসন করা হয়েছে।উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সম্ভাব্য সরকারব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা করার লক্ষ্যে লেস্টার বি. পিয়ার্সনের সরকার ১৯৬৩ সালের এপ্রিলে ক্যারোথার কমিশন গঠন করে।কমিশনটি ১৯৬৫ ও ১৯৬৬ সালে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের মতামতের উপর একটি জরিপ করে ১৯৬৬ সালে সরকারের কাছে একটি প্রতিবেদন পেশ করে।প্রতিবেদনটিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যে সুপারিশটি করা হয় তা হল, যেকোন অঞ্চলের সরকার সেই ভূখণ্ডের ভেতরেই গঠন করা উচিত।তার পরিপ্রেক্ষিতে ইয়েলোনাইফ শহরকে 'উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের' রাজধানী হিসেবে বাছাই করা হয়।এছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রশাসনিক ক্ষমতা আঞ্চলিক সরকারের কাছে হস্তান্তর করার সুপারিশ করা হয় এই প্রতিবেদনে যা কেন্দ্রীয় সরকার অনুসরণ করে।এইসব বিকেন্দ্রিত ক্ষমতার মধ্যে ছিল শিক্ষা,ক্ষুদ্র ব্যবসা,জনকল্যাণমুখী কর্মকাণ্ড,সামাজিক বিভিন্ন সেবা ও স্থানীয় সরকারব্যবস্থার বাকি দায়িত্বসমূহ।প্রতিবেদনটি পেশের পর থেকে এখন পর্যন্ত,উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সরকার স্বাস্থ্যসেবা,সমাজসেবা,উচ্চশিক্ষা,বিমানবন্দর ও বন ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির দায়িত্বও গ্রহণ করেছে।‘উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল আইন' এর ১৬ অনুচ্ছেদে আঞ্চলিক আইনসভার এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়গুলি উল্লেখ করা হয়েছে।
বর্তমানে কানাডা সরকার,আদিবাসী বিষয়ক বিভাগ ও উত্তরাঞ্চলের উন্নয়ন সংক্রান্ত অন্যান্য বিভাগগুলোর মত বাকি প্রাদেশিক দায়িত্বগুলোও আঞ্চলিক সরকারের কাছে হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে আলোচনা করছে।এসব দায়িত্বের মধ্যে আইন প্রণয়ন,উত্তরাঞ্চলীয় উন্নয়ন বিষয়ক বিভাগ (NAP) ইত্যাদি রয়েছে।এছাড়া বিকেন্দ্রিত নতুন দায়িত্বগুলোর মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহারও অন্তর্ভুক্ত আছে যার মাধ্যমে আঞ্চলিক সরকার পাবে,
কানাডা সরকার,উত্তরপশ্চিমাঞ্চল সরকার ও আদিবাসী সমিতি প্রত্যেকেই এসব ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের আলোচনায় একজন করে মূখ্য মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করেছে।২০০৪ সালে চুক্তির রূপরেখা সমাপ্ত হয়।বিকেন্দ্রীকরণ বিষয়ক সকল আলোচনা ২০০৭ সালের মধ্যে সমাপ্ত করার লক্ষ্যস্থির করা হয়।কিন্তু,'কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের আঞ্চলিক সরকারে পাঠানো' ও 'আঞ্চলিক সরকারের প্রাপ্য অর্থ' বিষয়ক বিতর্কের কারণে উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণে বিলম্ব হচ্ছে।
১৯৬৬ সালে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক ক্যারোথার কমিশন গঠনের পর একে উত্তরের সরকারব্যবস্থা প্রণয়নের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়।বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ ও আলোচনার পর কমিশন এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে,উত্তরপশ্চিম অঞ্চলকে বিভক্ত করা অনিবার্য ও যুক্তিযুক্ত।জরিপে এটা উঠে আসে যে, উত্তরের জনগণ তাদের নিজেদের ব্যাপার নিজেরা সামলাতে চায় ও তাদেরকে সে ক্ষমতা দিতেই হবে।অবশ্য,তা করার আগে কেন্দ্রীয় সরকারব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি ছিল।আর তাই,এই কমিশন উত্তরাঞ্চলে একটি প্রতিনিধি সরকার গঠনের সুপারিশ করে।যার ফলশ্রুতিতে, ১৯৬০ ও ১৯৭০ এর দশকে কেন্দ্রীয় সরকার ধীরে ধীরে বিভিন্ন ক্ষমতা আঞ্চলিক পর্যায়ে হস্তান্তর করতে শুরু করে।দৈনিক কার্যাবলী সংক্রান্ত প্রশাসনিক ক্ষমতাগুলো ক্রমান্বয়ে স্থানীয়দের কাছে দেয়া হয়।
১৯৮২ সালে, ‘উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলকে বিভক্ত করা উচিত কিনা' প্রশ্নে একটি গণভোটের আয়োজন করা হয় যেখানে ওই অঞ্চলের প্রাপ্তবয়স্ক ভোটারদের ৫৩ শতাংশ ভোট প্রদান করে।এর মধ্যে, ৫৬.৪% ভোট 'হ্যাঁ' এর পক্ষে পড়ে।গণভোটে মেরু এলাকার ভোটারদের 'সংখ্যা ও সমর্থন অপেক্ষাকৃত বেশি ছিল।পূর্বের 'ইনুইট' জনগোষ্টীর মধ্যে স্বশাসনের ধারণাটি খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল।স্বশাসনই ছিল তাদের প্রথা-সংস্কৃতি ও স্থানীয় সমস্যা সমাধানের শ্রেষ্ঠ উপায়।
কানাডার কেন্দ্রীয় আইনসভা ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল আইনসভা – উভয়ই উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলকে বিভক্ত করার ব্যাপারে একমত হয়।ইনুইট ও পূর্বের অন্যান্য মেরু এলাকায় বসবাসকারীদের নিজ ভাগ্যনির্ধারণের পথে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।কিন্তু,এ ব্যাপারে কিছু সমস্যাও ছিল।উত্তর-পশ্চিমকে বিভক্ত করার আগে কয়েকটি সমস্যার সমাধান করার প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছিল।প্রথমত,অনিষ্পন্ন ভূমিস্বত্ব বিষয়ক সমস্যাগুলোর সন্তোষজনক মীমাংসা করা প্রয়োজন ছিল।দ্বিতীয়ত,সকল পক্ষ একটি নতুন সীমানা বা বাউন্ডারির ব্যাপারে একমত হওয়া প্রয়োজন ছিল।এবং সবশেষে, আঞ্চলিক সরকার ও স্থানীয় বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের ব্যাপারেও একটি চুক্তিতে আসার দরকার ছিল।দুই সরকার ও আদিবাসী সংগঠনগুলি এসমস্ত লক্ষ্য অর্জনে একসাথে কাজ করেছে।
১৯৯২ সালের নভেম্বর মাসে ইনুইট জনগোষ্ঠী নুনাভুট ভূমিস্বত্ব চুক্তি অনুমোদন করে।চুক্তিটিতে ১৯৯৩ সালের ২৫শে মে কানাডার প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষর করেন এবং চুক্তিটি ওই বছরের জুনেই কানাডার সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত হয়।এটি কানাডার ইতিহাসে বৃহত্তম আদিবাসী ভূমিস্বত্ব চুক্তি ছিল যা ৩৫০০০০ বর্গকিলোমিটার ভূমির উপর ইনুইটদের স্বত্তাধিকার নিশ্চিত করে।তাছাড়াও এই চুক্তিটির আওতায় কেন্দ্রীয় সরকার পরবর্তী ১৪ বছরে ইনুইট রাজধানীতে $১.১ বিলিয়ন ডলার পাঠায়।এই টাকা একটি স্ট্রাস্টে জমা আছে এবং এর সুদ দ্বারা স্থানীয় ব্যবসাগুলোতে অর্থায়ন,ছাত্রদের বৃত্তিসহ বিভিন্ন কাজ করা হয়। ইনুইটরা এ অঞ্চলের সম্পদের উপর আরোপিত করের একটি অংশ,শিকারের অধিকার ইত্যাদির পাশাপাশি ভূমি সংরক্ষণ ও পরিবেশরক্ষা এসব দায়িত্ব লাভ করেছে।'ভূমিস্বত্ব চুক্তিটি' পশ্চিমাঞ্চলের পূর্বদিকে একটি প্রশাসনিক অঞ্চল গঠনের উদ্দেশ্যে সংসদে একটি প্রস্তাব আনতে কানাডা সরকারকে দায়বদ্ধ করেছে।
ভূমিস্বত্ব চুক্তি নিয়ে আলোচনার সময় পূর্বদিকে নতুন একটি প্রশাসনিক অঞ্চল গঠন ও তার সীমানা নিয়েও আলোচনা হয়।১৯৯২ সালের মে মাসে এই প্রস্তাবে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে(NWT) একটি গণভোট হয়।এই ভোটে ৫৪ শতাংশ ভোটার প্রস্তাবিত সীমানা সমর্থন করে।এরপর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সরকার,কেন্দ্রীয় সরকার ও নুনাভুটের 'টুঙ্গাভিক ফেডারেশান' (ভূমিস্বত্বের ব্যাপারে ইনুইটদের প্রতিনিধি সংগঠন) আনুষ্ঠানিকভাবে 'নুনাভুট রাজনৈতিক চুক্তি' অনুমোদনের মাধ্যমে প্রস্তাবিত সীমানা সমর্থন করে।
সমীকরণটি পূর্ণতা পায় ১৯৯৩ সালের ১০ ই জুন – যখন 'নুনাভুট আইন' রাজকীয় অনুমোদন (রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের অনুমোদন) লাভ করে।আইনটি 'নুনাভুট' নামে একটি প্রশাসনিক অঞ্চল গঠন করে ও সেখানে একটি সরকারগঠনের রূপরেখা দেয়।নুনাভুট প্রশাসনিক অঞ্চল (আইনানুযায়ী) ১৯৯৯ সালের ১লা এপ্রিলে অস্তিত্ব লাভ করে।
১৮৯৬ সালে প্রসপেক্টররা(মূল্যবান পদার্থ অনুসন্ধানকারী) ইউকনে সোনার সন্ধান পায়।তারপর ক্লোনডিক গোল্ড রাশ (সোনা অনুসন্ধানে লোকের আগমন) শুরু হয় যাকে অনেকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম 'গোল্ড রাশ' বলেন।এসব অনুসন্ধানীদের আগমনে ইউকন শহরে বেড়ে ওঠে।১৮৯৮ সালের মধ্যে,ইউকনের ড'সন শহরটি উইনিপিগ শহরের পশ্চিমে সবচেয়ে বড় শহর হয়ে ওঠে যার জনসংখ্যা ছিল ৪০০০০।ফলশ্রুতিতে,কানাডা সরকার ১৮৯৮ সালে 'ইউকন অঞ্চল' নামে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি প্রশাসনিক অঞ্চল গঠন করে।এসময় সরকার ইউকনে কানাডার শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সেখানে ‘উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে অশ্বারোহী পুলিশ' পাঠায় এবং'ইউকন আইন' পাসের মাধ্যমে সেখানে একজন কমিশনার পাঠায়।১৮৯৮ সালের এই আইনটি,কমিশনারকে 'ইউকন পরিষদের' উপদেশ অনুযায়ী কাজ করতে বলে যে ব্যবস্থাটি উত্তর-পশ্চিমের সহকারী গভর্নর অনুসরণ করেন (তাই দায়িত্ব ছিল সেখানকার আইনসভার উপদেশ অনুযায়ী শাসনব্যবস্থা চালানো)।১৯০৮ সাল থেকে 'ইউকন পরিষদকে' নির্বাচিত একটি আইনসভায় পরিণত করা হয়।
সময়ের সাথে সাথে,ইউকনের 'আঞ্চলিক সরকার' ক্রমবর্ধমান দায়িত্ব পালন করতে থাকে।এ ব্যাপারে প্রাসঙ্গিক কয়েকটি ব্যাপার :
মেক্সিকোর সকল অঙ্গরাজ্য সম্পূর্ণরুপে স্বায়ত্তশাসিত এবং এসব রাজ্য একত্রে একটি ফেডারেশান (যুক্তরাষ্ট্রীয় পদ্ধতিতে গঠিত রাষ্ট্র) তৈরি করে।১৯২৪ সালে দেশের রাজধানী তৈরির উদ্দেশ্যে মেক্সিকো সিটি ও পার্শ্ববর্তী পৌরসভাগুলো সংযুক্ত করে 'কেন্দ্রীয় জেলাটি' গঠন করা হয়।এরপর এটি সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা শাসিত হতে থাকে এবং মেক্সিকোর রাষ্ট্রপতি এর কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা বা গভর্নর নিয়োগ দিতে থাকেন।যদিও কেন্দ্রীয় জেলার মধ্যে থাকা পৌরসভাগুলো স্বায়িত্বশাসিত ছিল,এগুলোর ক্ষমতা ছিল খুবই সীমিত। ১৯২৮ সালে সরকার এই পৌরসভাগুলোকে বাতিল করে কেন্দ্রশাসিত 'ডেলেগাসিওন'(delegación) ও একটি কেন্দ্রীয় বিভাগ (যাকে পরবর্তীতে মেক্সিকো সিটি নামকরণ করা হয়)তৈরি করে।১৯৭০ সালে,বিভাগটিকে ভেঙে চারটি 'ডেলেগেসিওন' তৈরি করা হয় ও সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় জেলাকে একত্রে 'মেক্সিকো সিটি' ঘোষণা করা হয়।[৫] যার ফলে,কেন্দ্রীয় জেলার পৌরসভাগুলো পরিণত হয় 'মেক্সিকো সিটির' পৌরসভায়।
১৯৮০ সালে, কেন্দ্রীয় জেলার অধিবাসীরা (মেক্সিকোর সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চল) স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানাতে শুরু করে,তারা দাবি জানায় এমন একটি স্বায়ত্তশাসিত ব্যবস্থার যেখানে সরকারপ্রধান সরাসরি নির্বাচিত হবেন এবং একটি আঞ্চলিক আইনসভা গঠন করা হবে।১৯৮৭ সালে,একটি সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি আইনসভা গঠন করা হয়।১৯৯৭ সালে সরাসরি ভোটে সরকারপ্রধান নির্বাচনের আগপর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার কোন কার্যনির্বাহী ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি।পরিশেষে,২০০০ সালে ডেলেগেসিওনগুলোতে সীমিত ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়।অধিবাসীরা বর্তমানে তাদের স্থানীয় সরকারপ্রধানকে (স্প্যানিশ -'jefes delegacionales') সরাসরি নির্বাচিত করতে পারে কিন্তু এসব ডেলেগেসিওনদের তেমন কোন প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই (এবং প্রতিনিধি পরিষদও নেই,যা মেক্সিকোর সব অঙ্গরাজ্যের পৌরসভাগুলোতে আছে)।
যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকার কেন্দ্রীয় জেলাকে স্বায়ত্তশাসনের ক্ষমতা দিয়েছে সেহেতু নীতিগতভাবে কেন্দ্র প্রয়োজনে এ ক্ষমতা বাতিল করতে পারে।এখনো কিছু ব্যাপারে মেক্সিকোর রাষ্ট্রপতিই শেষ সিদ্ধান্ত নেন (যেমন কিছু পদে শুধু তিনিই নিয়োগ দিতে পারেন),এছাড়া মেক্সিকোর কংগ্রেস (সংসদ) কেন্দ্রীয় জেলার বাজেট পর্যবেক্ষণ করে ও এর ঋণের সীমানির্ধারণ করে দেয়।[৬]
১৯৮০ সাল থেকেই কিছু বামপন্থী সংগঠন ও রাজনৈতিক দল কেন্দ্রীয় জেলাকে মেক্সিকোর বত্রিশতম অঙ্গরাজ্যে পরিণত করে সম্পূর্ণ প্রাদেশিক ক্ষমতা হস্তান্তর করার দাবি জানিয়ে আসছে।(নতুন এই রাজ্যটির জন্য যেসব নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে আছে - 'মেক্সিকো উপত্যকার রাজ্য' (মেক্সিকো নামক রাষ্ট্র থেকে রাজ্যটিকে পৃথক করার জন্য উপত্যকা কথাটি যোগ করা হয়েছে।এছাড়া আরেকটি নাম প্রস্তাব করা হয় – আনাহুয়াক রাজ্য)।
মেক্সিকোর সংবিধানের সাম্প্রতিক এক সংশোধনী অনুযায়ী,মেক্সিকো হল বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠী নিয়ে গঠিত একটি 'বহুসংস্কৃতির দেশ।[৭] আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলোকে সামাজিক,অর্থনৈতিক,সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক নানা সংগঠনের প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে ( 'আত্ম-নির্ভরশীলতা') যাতে করে তারা প্রথা বা রীতি অনুযায়ী নিজেদের প্রতিনিধি বাছাই করতে পারে (অবশ্য এসব ক্ষেত্রে নারীদের রাজনৈতিক ও সামাজিক সমান অধিকার নিশ্চিত করার বাধ্যবোধকতা রয়েছে)।তবে এসব আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত কোন ভূখণ্ড না থাকায়,তারা মেক্সিকোর অন্য নাগরিকদের মতই রাজ্য এবং স্থানীয় বিচারব্যবস্থার আওতাভুক্ত।আদিবাসীরা স্থানীয় পরিষদগুলোতে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে।কার্যত,তারা স্বায়ত্তশাসিত হলেও কেন্দ্রীয় সংবিধানে বর্ণিত এবং রাজ্যের আইনে উল্লেখিত দায়িত্ব ও অধিকারের বিষয়গুলো তাদের মেনে চলতে হয়।[৮]
১৯৮০র দশকের শেষের দিকে ফরাসী সরকার ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করে।প্রথমেই প্রশাসনিক অঞ্চল ও আঞ্চলিক আইনসভা গঠন করা হয়।এদের কাজ ছিল,বিভাগীয় পরিষদগুলোর সাথে সমন্বয় সাধন করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ (যেমন,স্কুল ও সড়ক) করা এবং নানা সামাজিক উন্নয়নে অর্থায়ন করা।আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ সম্পত্তির উপর অর্পিত কর ও অন্যান্য রাজস্ব সংগ্রহ করে।এছাড়া,তাদের ব্যয়ের একটা বড় অংশ সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে আসে। [৯]
কিছু সংগঠন আছে যারা সকল ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ দাবি করে,অথবা অক্সিটেনিয়া , আলস্যাচ বা ব্রিটানি এসব অঞ্চলের স্বাধীনতা দাবি করে।
১৯৭৮ সালে অনুমোদিত হওয়া স্পেনের সংবিধান নানা 'জাতিগোষ্ঠীর মানুষ' ও অঞ্চলের (যাদের নিয়ে 'স্পেন রাজ্য' গঠিত)স্বায়ত্তশাসন মঞ্জুর করে।(আরও দেখুন – স্পেনে স্বায়ত্তশাসন)
স্পেনের 'স্বায়ত্তশাসন পদ্ধতি' (স্প্যানিশ - Estado de las Autonomías)অনুযায়ী,স্পেন এমন একটি দেশ যেখানে দৃষ্টান্তমূলকভাবে (গত ত্রিশ বছরের মধ্যে) শান্তিপূর্ণভাবে ব্যাপক পরিসরে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটেছে।[১০] এখানে স্পেনকে 'অসাধারণভাবে বিকেন্দ্রিত দেশ'ও বলা হয় যেহেতু স্পেনে সরকারি খরচের মাত্র ১৮% ব্যয় করে থাকে কেন্দ্রীয় সরকার,৩৮% ব্যয় আঞ্চলিক সরকার, ১৩% ব্যয় স্থানীয় পরিষদগুলো এবং বাকি অর্থ ব্যয় হয় সামাজিক নিরাপত্তামূলক বিভিন্ন কাজে।[১১]
২০১০ সালে,স্পেনের সাংবিধানিক আদালত স্থানীয় কর্তৃপক্ষদেরকে গণভোট আয়োজনের অনুমতি দেয় (তবে তার ফলাফল বাস্তবায়নে সরকার বাধ্য থাকবে না) এবং তার ফলশ্রুতিতে অনেক পৌরসভা বিভিন্ন বিষয়ের উপর গণভোটের আয়োজন করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
২০১৩ সালের ১২ই ডিসেম্বর কাতালোনিয়ার সরকার 'আত্মনির্ভরতার'(স্বাধীনতা) উপর একটি গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দেয় (২০১৪ কাতালোনিয়া গণভোট)।স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকারের মতে, যে গণভোটের ফলাফল বাস্তবায়নে সরকার বাধ্য(বিশেষ করে বিচ্ছিন্নতাবাদের উপর) তা অসাংবিধানিক এবং এমন একটি গণভোট বৈধভাবে আয়োজন করা যায় না।[১২] স্পেনের আদালত গণভোটকে অবৈধ ঘোষণার পরেও কাতালোনিয়ার সরকার ২০১৭ সালের ১লা অক্টোবর একটি গণভোটের আয়োজন করে।এবং এরপর,কিছু নেতাকে 'রাষ্ট্রদ্রোহ' ও 'বিদ্রোহের' অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।আঞ্চলিক সরকারপ্রধান এসময় ব্রাসেলসে পালিয়ে যায়, স্পেন সরকার এখনো পর্যন্ত তাকে ফেরত আনতে পারেনি যেহেতু বেলজিয়ান আইন ও ইউরোপীয় গ্রেফতারি পরোয়ানা অনুসারে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়।[১৩] ২০১৭ সালের ২২শে ডিসেম্বর নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় কাতালোনিয়ায় যেখানে স্বাধীনতাকামী দলগুলো আইনসভায় সংখ্যাগরীষ্ঠতা লাভ করে।সংবিধানপন্থী দলগুলো এ ব্যাপারে হতাশা ও ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে।
যুক্তরাজ্যে গণভোটের সংখ্যাগরীষ্ঠতার ভিত্তিতে বিভিন্ন অঞ্চলে বিকেন্দ্রিত সরকার গঠিত হয়,১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বরে ওয়েলস ও স্কটল্যান্ডে এবং ১৯৯৮ সালের মে মাসে লন্ডনে আইনানুসারে বিকেন্দ্রীকরণ ঘটে।১৯৯৮ সালে ইংলিশ পার্লামেন্ট (ইংরেজ সংসদ) গঠনের একটি প্রচারণা শুরু হয় যার লক্ষ্য ইংরেজদের জন্য পৃথক একটি আইনসভা স্থাপন করা।
২০১৪ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর স্কটল্যান্ডে একটি গণভোটের আয়োজন করা হয় যেখানে নাগরিকদের জিজ্ঞাসা করা হয়,স্কটল্যান্ড একটি স্বাধীন দেশ হওয়া উচিত কিনা।[১৪] ৫৫% বনাম ৪৫% - ব্যবধানে স্কটল্যান্ডের অধিবাসীরা প্রস্তাবটি প্রত্যাখান করে।[১৫] ব্রিটেনের বৃহত্তম তিনটি রাজনৈতিক দলের নেতারা ২০১৪ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর এই অঙ্গীকার করেন যে, 'না ভোট' জয়যুক্ত হলে তারা স্কটল্যান্ডে আরো ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের এমন একটি ব্যবস্থা করবেন যা স্কটল্যান্ডে দ্রুততর,নিরাপদ ও ভালো পরিবর্তন বয়ে আনবে।[১৬] গণভোটে 'না' জয়যুক্ত হবার পর,অঙ্গীকার অনুযায়ী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন স্কটিশ সরকারের কাছে অতিরিক্ত কিছু ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের ঘোষণা দেন (বিকেন্দ্রীকরণের সম্ভাব্য পদ্ধতি পর্যালোচনার জন্য স্মিথ কমিশন তৈরি করা হয়)।[১৭] স্কটল্যান্ড আইন ২০১৬ পাসের মাধ্যমে বেশ কিছু ক্ষমতা বিকেন্দ্রিত করা হয়।[১৮] ২০১৬ সালের ২৩শে জুন ইউরোপীয় ইউনিয়নে যুক্তরাজ্যের সদস্যপদ বিষয়ক গণভোটের ফলাফলের পর অধিকতর ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের দাবি উঠেছে।[১৯][২০]
যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলোর সার্বভৌমত্ব রয়েছে।আদিবাসী ইন্ডিয়ানদের সাথে বৈধ সম্পর্কের বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের এক্তিয়ারে পড়ে।বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় সরকারের কাছে মার্কিন কংগ্রেসের (সংসদ) অনুমোদন অনুযায়ী ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়।কোন অঙ্গরাজ্যের ভেতরে অঞ্চলভিত্তিক বিভক্তি,পৌরসভা বা কাউন্টিতে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়টি সেই রাজ্যের নিজস্ব সংবিধান ও আইন দ্বারা নির্ধারিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট অফ কলম্বিয়া বা ডিসিতে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের একটি ধারণা পাওয়া যায়।কেন্দ্রীয় এই জেলাটি সব অঙ্গরাজ্য থেকে আলাদা এবং এর একটি নির্বাচিত সরকার রয়েছে।দৈনন্দিন কার্যাবলীসহ নানা দিক দিয়ে কেন্দ্রীয় জেলা ডিসি অনেকটা একটা রাজ্যের মতই কাজ করে, এর নিজস্ব আইন,আদালত,পৃথক মোটরযান বিভাগ,সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি রয়েছে।কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে এর ৫০টি অঙ্গরাজ্যকে বিশাল পরিসরে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে এবং এসব রাজ্যের বেশিরভাগ আইন কেন্দ্রীয় সরকারও বাতিল করতে পারে না।অন্যদিকে,ডিস্ট্রিক্ট অফ কলম্বিয়া (ডি.সি.) যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের (কেন্দ্রীয় সংসদ) একটি আইন দ্বারা গঠিত ও এর সরাসরি নিয়ন্ত্রণাধীন।কংগ্রেস,ডিসির আইনসভা দ্বারা অনুমোদিত যেকোন আইন বাতিল করতে পারে।এছাড়া,কংগ্রেস সংখ্যাগরীষ্ঠ ভোটের মাধ্যমে ডিসি সরকার পরিবর্তন বা একে সম্পূর্ণ অপসারিত করতে পারে।
সাল | রাষ্ট্র | সরকারব্যবস্থা | আঞ্চলিক বিভাগসমূহের নিবন্ধ | প্রধান আঞ্চলিক বিভাগসমূহ | অন্যান্য আঞ্চলিক বিভাগ |
---|---|---|---|---|---|
১৯৯৫ | আজারবাইজান | সংখ্যাগরীষ্ঠ দল নিযুক্ত রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রজাতন্ত্র | আজারবাইজানের প্রশাসনিক বিভাগ | ১০টি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল,৬৬ টি 'রেয়োন' ও ৭৭টি শহর | স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ: নাকশীভান স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র |
২০০৯ | বলিভিয়া | সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র | বলিভিয়ার বিভাগসমূহ | ৯টি বিভাগ | |
১৯৮০ | চিলি | প্রজাতন্ত্র | চিলির অঞ্চলসমূহ | ১৫টি অঞ্চল | |
১৯৪৯ | চীন | গণপ্রজাতন্ত্র | চীনের প্রশাসনিক বিভাগসমূহ | ২২টি প্রদেশ (২৩তম প্রদেশ হিসেবে তাইওয়ানকে দাবি করা হয়), ৫টি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবং ৪টি কেন্দ্রশাসিত পৌরসভা | ২টি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল: হং কং and ম্যাকাও |
১৯৯১ | কলম্বিয়া | প্রজাতন্ত্র | কলম্বিয়ার বিভাগসমূহ | ৩২ টি বিভাগ | ১টি রাজধানী জেলা, বোগোটা ডিসি যার কলম্বিয়ার অন্য বিভাগগুলোর মত স্বায়ত্তশাসন ও সুবিধা রয়েছে। |
১৯৯২ | চেক প্রজাতন্ত্র | প্রজাতন্ত্র | চেক প্রজাতন্ত্রের অঞ্চলসমূহ | ১৩টি অঞ্চল (ক্রাজে) | ১টি রাজধানী জেলা, প্রাগ, যার অন্য অঞ্চলগুলোর মতই স্বায়ত্তশাসন ও সুবিধা রয়েছে |
১৮৪৯ | ডেনমার্ক | সাংবিধানিক রাজতন্ত্র | ডেনমার্কের অঞ্চলসমূহ | ৫ টি অঞ্চল | ২টি স্বায়ত্তশাসিত ভূখণ্ড : গ্রীনল্যান্ড and ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জ |
১৯১৯ | ফিনল্যান্ড | প্রজাতন্ত্র | ফিনল্যান্ডের অঞ্চলসমূহ | ১৯টি অঞ্চল | আলান্ড দ্বীপপুঞ্জ |
১৯৫৮ | ফ্রান্স | প্রজাতন্ত্র | ফ্রান্সের অঞ্চলসমূহ | ১৮টি অঞ্চল | |
১৯৯১ | জর্জিয়া | প্রজাতন্ত্র | জর্জিয়ার (দেশ) প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ | ৯টি অঞ্চল (একটি কার্যত স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে : আবখাজিয়া (১৯৯৯), ১টি শহর এবং ২টি স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ (যাদের মধ্যে একটি স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে: দক্ষিণ ওসেটিয়া (২০০৬)) | আদজারা এবং দক্ষিণ ওসেটিয়া(টাসকিনভালি অঞ্চল) |
১৯৭৫ | গ্রীস | প্রজাতন্ত্র | গ্রীসের প্রশাসনিক বিভাগসমূহ | ১৩টি অঞ্চল | মাউন্ট এথোস |
১৯৫০ | ইন্দোনেশিয়া | প্রজাতন্ত্র | ইন্দোনেশিয়ার প্রদেশসমূহ | ৩৪ টি প্রদেশ যার মধ্যে পাঁচটিকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে | বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ প্রদেশ: আকেহ, জাকার্তা, ইয়োগিয়াকার্তার বিশেষ অঞ্চল (বিধি অনুসারে ইয়োগিয়াকার্তা প্রদেশ নয়),পাপুয়া প্রদেশ ও পশ্চিম পাপুয়া প্রদেশ |
১৯৪৬ | ইটালি | প্রজাতন্ত্র | ইটালির অঞ্চলসমূহ | ২০টি অঞ্চল যার মধ্যে, ৫টিতে বিশেষ মাত্রার স্বায়ত্তশাসন রয়েছে। | ২টি স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ |
১৯৪৭ | জাপান | সাংবিধানিক রাজতন্ত্র | জাপানের দাপ্তরিক এলাকাসমূহ | ৪৭ টি এলাকা | |
১৯৬৪ | কেনিয়া | রাষ্ট্রপতিশাসিত প্রজাতন্ত্র | কেনিয়ার বিভাগসমূহ | ৪৭টি জেলা নিয়ে গঠিত ৪৭টি বিভাগ যেখানে ২০১০ সালের সংবিধান অনুযায়ী ৪৭ জন নির্বাচিত গভর্নর থাকবেন[২১][২২] | |
১৯৯১ | মলদোভা | প্রজাতন্ত্র | মলডোভার প্রশাসনিক বিভাগসমূহ | ৩২টি জেলা ও ৩টি কেন্দ্রশাসিত পৌরসভা | ২টি প্রদেশ: গাগাউজিয়া এবং ট্রান্সনিস্ত্রিয়া,ট্রান্সনিস্ত্রিয়া কার্যত একটি স্বাধীন দেশ |
১৯৫৪ | নেদারল্যান্ডস | সাংবিধানিক রাজতন্ত্র | নেদারল্যান্ডসের প্রদেশসমূহ | ১২টি প্রদেশ ও ৩টি বিশেষ পৌরসভা | আরুবা, কুরাসাও and সেইন্ট মার্টিন |
১৯৮৬ | নিউজিল্যান্ড | কমনওয়েলথভুক্ত (যুক্তরাজ্যের রাজতন্ত্রের অধীনে) রাষ্ট্র | নিউজিল্যান্ডের অঞ্চলসমূহ | ১৬টি অঞ্চল | ২টি ভূখণ্ডের সাথে মুক্ত জোট: কুক দ্বীপপুঞ্জ এবং নিউই এবং ২টি নির্ভরশীল অঞ্চল: টোকলাউ আর রস অঞ্চল |
১৯৮৬ | নিকারাগুয়া | প্রজাতন্ত্র | নিগারাগুয়ার বিভাগসমূহ | ১৫টি বিভাগ | ২টি স্বায়িত্বশাসিত অঞ্চল: উত্তর আটলান্টিকের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবং দক্ষিণ আটলান্টিকের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল |
১৯৭৫ | পাপুয়া নিউ গিনি | কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্র | পাপুয়া নিউ গিনির প্রদেশসমূহ | ২০টি প্রদেশ | ১টি রাজধানী এলাকা: জাতীয় রাজধানী জেলা (পাপুয়া নিউ গিনি) এবং ১টি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল: বুগনভিল অঞ্চল |
১৯৯৩ | পেরু | প্রজাতন্ত্র | পেরুর অঞ্চলসমূহ | ২৫টি অঞ্চল | ১টি প্রদেশ লিমা প্রদেশ |
১৯৮৭ | ফিলিপাইন | প্রজাতন্ত্র | ফিলিপাইনের প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ | ১৭টি অঞ্চল (বার্ম সহ), ৮১টি প্রদেশ,১৪৪টি শহর,১৪৯১টি পৌরসভা এবং ৪২০২৮টি 'বারায়াংগেস' | মুসলিম মিনডানাও এর বাংসামোরো স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল |
১৯৭৬ | পর্তুগাল | প্রজাতন্ত্র | পর্তুগালের প্রশাসনিক বিভাগসমূহ | ৩০৮টি পৌরসভা | পর্তুগালের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল (এজোরেস স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবিং মাদেইরা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল) |
২০০৬ | সার্বিয়া | প্রজাতন্ত্র | সার্বিয়ার প্রশাসনিক বিভাগসমূহ | ১৩৮টি পৌরসভা ও ২৩টি শহর | ভজভোদিনা আর কসোভো এবং মেতোহিয়া(সার্বিয়া কসোভোর স্বাধীনতাকে স্বীকার করে না) |
১৯৭৮ | সলোমন দ্বীপপুঞ্জ | কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্র | সলোমন দ্বীপপুঞ্জের প্রদেশসমূহ | ৯টি প্রদেশ | ১টি রাজধানী এলাকা: হনিয়ারা |
১৯৯৬ | দক্ষিণ আফ্রিকা | প্রজাতন্ত্র | দক্ষিণ আফ্রিকার প্রদেশসমূহ | ৯টি প্রদেশ | |
১৯৪৮ | দক্ষিণ কোরিয়া | প্রজাতন্ত্র | দক্ষিণ কোরিয়ার প্রশাসনিক বিভাগসমূহ | ৮টি প্রদেশ এবিং ৬টি শহর | একটি বিশেষ শহর,একটি বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত শহর এবং একটি বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ |
১৯৭৮ | স্পেন | সাংবিধানিক রাজতন্ত্র | স্পেনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলসমূহ | ১৭টি স্বায়ত্তশাসিত জনগোষ্ঠী যাদের মধ্যে ২টির বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে (রাজস্ব সংগ্রহের ক্ষমতা) | ২টি স্বায়ত্তশাসিত শহর (সেউটা আর মেলিলা) |
১৯৮৭ | শ্রীলঙ্কা | প্রজাতন্ত্র | শ্রীলঙ্কার প্রদেশসমূহ | ৯টি প্রদেশ | |
১৯৯২ | তাজিকিস্তান | প্রজাতন্ত্র | তাজিকিস্তানের প্রদেশসমূহ | ২টি প্রদেশ,১টি স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ (গর্ণ-বাদাকশান) এবং সরাসরি কেন্দ্রশাসিত একটি স্থান(প্রজাতন্ত্রশাসিত জেলাসমূহ) | ১টি স্বায়ত্তশাসিত শহর |
১৯৭৭ | তানজানিয়া | প্রজাতন্ত্র | তানজানিয়ার অঞ্চলসমূহ | ৩০টি অঞ্চল | জ্যানজিবার |
১৯৭৬ | ত্রিনিদাদ ও টোবাগো | প্রজাতন্ত্র | ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর প্রশাসনিক বিভাগসমূহ | ৯টি অঞ্চল ও ৫টি পৌরসভা | টোবাগো |
১৯৯৬ | ইউক্রেন | প্রজাতন্ত্র | ইউক্রেনের প্রশাসনিক বিভাগসমূহ | ২৪ টি অব্লাস্ট (প্রদেশ) এবং একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র | ক্রিমিয়া |
১৯২২ | যুক্তরাজ্য | কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্র | যুক্তরাজ্যের রাজ্যসমূহ | ৪টি রাজ্য যার মধ্যে ৩টির বিকেন্দ্রিত সরকার রয়েছে | ব্রিটিশ দ্বীপের বাইরে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন ভূখণ্ড,ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের সাথে সংযুক্ত ভূখণ্ডসমূহ |
১৯৯১ | উজবেকিস্তান | প্রজাতন্ত্র | উজবেকিস্তানের প্রদেশসমূহ | ৯টি প্রদেশ ও একটি স্বাধীন শহর | কারাকালপাকস্তান |