বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির অধিকার হল মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রাসঙ্গিক নথিপত্রে বর্ণীত অন্যতম অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকার। এটি স্বীকৃতি দেয় যে সকলেরই সংস্কৃতিতে অবাধে অংশ নেয়ার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অবাধে অংশ নেয়ার (অংশগ্রহণ এবং উপকার ভোগ করার) অধিকার রয়েছে।
বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির অধিকার মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার অনুচ্ছেদ ২৭-এ প্রকাশ করা হয়েছে:
“ | (১) প্রত্যেকেরই স্বাধীনভাবে সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক জীবনযাপনে অংশগ্রহণ করা, শিল্প উপভোগ করা এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির লক্ষ্যে এবং এর উন্নতিকল্পে সকলের সাথে ছড়িয়ে দেয়ার অধিকার রয়েছে।
(২) প্রত্যেকেরই স্বাধীনভাবে নৈতিক এবং ভৌত (বাস্তবিক কিংবা বস্তুগত অর্থে) আগ্রহ সংরক্ষণের অধিকার রয়েছে যা যেকোনো বৈজ্ঞানিক, সাহিত্য বিষয়ক অথবা শৈল্পিক সৃষ্টি থেকে উদ্ভূত হয়েছে সে সৃষ্টির স্রষ্টা সে নিজে। |
” |
অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তির অনুচ্ছেদ ১৫-তেও বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির অধিকারের কথা উল্লেখ রয়েছে:
“ | (১) রাষ্ট্রসমূহ বর্তমান চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যেকের যেসকল অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়:
(২) বর্তমান চুক্তিপত্র অনুসারে রাষ্ট্রীয় দলগুলো কর্তৃক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে এসকল অধিকার পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন ও সংরক্ষণ করা, এবং বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির উন্নয়ন ও প্রসার করা। (৩) রাষ্ট্রীয় দলগুলো বর্তমান চুক্তিপত্র অনুসারে বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ডের অপরিহার্য স্বাধীনতার দায়িত্বভার বহন করবে। (৪) রাষ্ট্রীয় দলগুলো বর্তমান চুক্তিপত্র অনুসারে বৈজ্ঞানিক এবং সাংস্কৃতিক খাতে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ এবং সহায়তার উন্নয়ন ও উৎসাহ থেকে প্রাপ্ত সুবিধা বা উপকার বা লাভকে স্বীকার করবে। |
” |
বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির অধিকারকে প্রায়ই ভেঙে উপসেট অধিকার হিসাবে বিভক্ত করা হয়। যেমন— "সাংস্কৃতিক জীবনে অংশ নেওয়ার অধিকার" বা "সাংস্কৃতিক অংশগ্রহণের অধিকার" বা "সংস্কৃতির অধিকার", এবং "বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি এবং তার থেকে উপকার পাওয়ার অধিকার" বা "বিজ্ঞান থেকে উপকৃত হওয়ার অধিকার" বা "বিজ্ঞানের অধিকার" বা "বিজ্ঞানে ছড়িয়ে দেয়ার অধিকার"।
"সাংস্কৃতিক অধিকার" পদটি কমপক্ষে তিনটি অর্থে ব্যবহৃত হতে পারে। এটি প্রায়শই অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তির অনুচ্ছেদ ১৫ দ্বারা সুরক্ষিত ধারণাটি বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যা সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলিকে তাদের ভাষা, ধর্ম, শিল্প এবং জীবনযাত্রার চর্চা আর সংরক্ষণের অধিকার দেয়। বিকল্পভাবে, "সাংস্কৃতিক অধিকার" পদটি সংখ্যালঘুদের অধিকার এবং বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির অধিকার উভয়ই ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে অনুচ্ছেদ ২৭ এ সর্বজনীন ঘোষণার উল্লেখ রয়েছে। আরও বিস্তারিতভাবে, "সাংস্কৃতিক অধিকার" একটি বৃহত্তর শ্রেণীর অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকারকে বোঝাতে ব্যবহার করা যেতে পারে, যা বিজ্ঞান এবং সংস্কৃতির অধিকারের পাশাপাশি শিক্ষার অধিকার এবং অন্যান্য অধিকার যেমন, লেখকের সৃষ্টিকর্মের সংরক্ষণ করা।
"বিজ্ঞানের অধিকার" বলতে বিজ্ঞানে অংশগ্রহণের (কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে) অধিকার এবং বিজ্ঞানের শাখায় প্রবেশের অধিকার ("উপকার" বা "অগ্রগতি" বা "অগ্রগতি") উভয়ই অন্তর্ভুক্ত হবে।
মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে প্রাপ্ত সমস্ত মানবাধিকারের বিস্তৃত নীতিগুলিকে নির্দিষ্ট রাষ্ট্রীয় বাধ্যবাধকতায় অনুবাদ করার জন্য ব্যাখ্যার প্রয়োজন। এটি জাতিসংঘের কার্যক্রমগুলির মাধ্যমে এবং জাতীয় আদালতসমূহে নির্ধারিত হয়। প্রক্রিয়াটিতে মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ এবং মানবাধিকার কর্মীদের দৃঢ় প্রভাব রয়েছে।
অনুচ্ছেদ ২৭এ প্রাপ্ত অধিকারসমূহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে তুলনামূলক প্রাথমিক পর্যায়ে রয়ে গেছে। অপরদিকে, অন্যান্য মানবাধিকার যেমন— স্বাস্থ্য অধিকার বা শিক্ষার অধিকার যা ইতোমধ্যে আরও বিস্তৃতভাবে বিস্তৃতকরণ ও মামলা মোকদ্দমার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।[১] লেখালেখির অধিকারটিয যেভাবেই হোক খুব জোরালো আইনি বিকাশ থেকে লাভবান হয়েছে।
বিজ্ঞানের অধিকার প্রয়োগের জন্য সাধারণ বৈশ্বিক মানদণ্ড, চার বছরব্যাপী বৈশ্বিক পরামর্শের পরে ১৩ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে প্যারিসে প্রায় ১৯৫টি সরকারের সম্মিলনে সর্বসম্মতিক্রমে বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক গবেষকগণের সুপারিশে একটি জাতিসংঘ চুক্তির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছিল।[২]
এই ক্ষেত্রে বিশেষত সক্রিয় কিছু লেখকের মধ্যে রয়েছে: সামান্থা বেসন, অড্রে আর চ্যাপম্যান, ইয়োভন ডন্ডারস, লরেন্স হেলফার, লিয়া শেভার, উইলিয়াম স্কাবাস, জেসিকা উইন্ডহাম এবং পিটার ইউ।
আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্স পেশাদার বিজ্ঞানীদের অধিকার এবং দায়িত্বের উপর বিশেষভাবে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির অধিকার সম্পর্কিত ওকালতি করায় সক্রিয়। [৩]
অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পর্কিত কমিটি অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তিতে (আইসিইএসসিআর) এ প্রদর্শিত বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির অধিকারের অংশের ব্যাখ্যা করে দুটি সাধারণ মন্তব্য জারি করেছে। সাধারণ মন্তব্য ১৭ এবং সাধারণ মন্তব্য ২১। সাংস্কৃতিক অধিকারের ক্ষেত্রের বিশেষ প্রতিবেদক, ফরিদা শহীদ, ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির অধিকারের কথা প্রকাশ করেন।[৪]
২০১৭ সালে ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনে, বিজ্ঞানের অধিকার সম্পর্কিত সাধারণ বৈশ্বিক আদর্শ সম্পর্কে ১৯৫টি রাষ্ট্র সর্বসম্মতিতে একমত হয়েছিল বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক গবেষকদের একটি সুপারিশে, যা কিনা বিজ্ঞানের অধিকারকে ব্যাখ্যা করে মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণায় যেভাবে ব্যাখ্যা দেয়া আছে তদনুসারে।
২০০০ সালে মানবাধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের উপ-কমিশন প্রস্তাব দিয়েছিল যে, বৌদ্ধিক সম্পত্তি অধিকার সম্পর্কিত বাণিজ্য-সংক্রান্ত দিকগুলি সম্পর্কিত চুক্তি বিজ্ঞানের অধিকার লঙ্ঘন করতে পারে সুতরাং তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারে। [৫]