পেশা | |
---|---|
নাম | বৈজ্ঞানিক |
পেশার ধরন | পেশা |
প্রায়োগিক ক্ষেত্র | বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ব্যবহার |
বিবরণ | |
যোগ্যতা | বিজ্ঞান |
বিজ্ঞানী (বাংলা উচ্চারণ: [বিজ্ঞানী] () একজন )ব্যক্তি, যিনি পদ্ধতিগতভাবে নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে সম্পৃক্ত থেকে জ্ঞানরাজ্যে বিচরণ করেন। তিনি পৃথিবী সম্পর্কে বোঝার চেষ্টা করেন কিংবা অন্য যে কোন ধরনের বিষয়বস্তুর সাথে সংশ্লিষ্ট থেকে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন। যিনি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বনপূর্বক স্বীয় কাজে অগ্রসর হন, তিনি বিজ্ঞানী বা বৈজ্ঞানিক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকেন।[১] ব্যক্তি হিসেবে তিনি বিজ্ঞানের এক বা একাধিক শাখায় অভিজ্ঞ হতে পারেন।[২] একজন বিজ্ঞানী নির্দিষ্ট কোন কিছু পর্যবেক্ষণ করেন, প্রশ্ন করেন এবং ব্যাপক-বিস্তৃত পটভূমিতে গবেষণা কর্মের মাধ্যমে প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেন। বিজ্ঞানীরা বিশেষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে যথাযথ জ্ঞান আহরণপূর্বক প্রকৃতি এবং সমাজের নানা মৌলিক বিধি ও গবেষণালব্ধ সাধারণ সত্য আবিষ্কারের চেষ্টা করেন।
আজকের যুগে বিজ্ঞানী হিসাবে পেশাটি ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। তবে, কে বিজ্ঞানী এবং কে বিজ্ঞানী নয় তা নির্ধারণ করার জন্য কোনও আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া নেই। কোনো কোনো অর্থে যে কেউ বিজ্ঞানী হতে পারে। কিছু পেশায় তাদের অনুশীলনের জন্য আইনি প্রয়োজনীয়তা (যেমন লাইসেন্সিং) রয়েছে এবং কিছু বিজ্ঞানী স্বাধীন বিজ্ঞানী, অর্থাৎ তারা নিজেরাই বিজ্ঞান অনুশীলন করেন, কিন্তু বিজ্ঞান অনুশীলন করার জন্য কোনও পরিচিত লাইসেন্সিং প্রয়োজনীয়তা নেই।
আধুনিক সময়ে, অনেক পেশাদার বিজ্ঞানী একাডেমিক পরিবেশে প্রশিক্ষিত হয় (যেমন বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান), প্রধানত স্নাতক বিদ্যালয়ের স্তরে। সমাপ্তির পরে, তারা সাধারণত একটি একাডেমিক ডিগ্রি অর্জন করবে, সর্বোচ্চ ডিগ্রি হিসাবে ডক্টরেট যেমন ডক্টর অফ ফিলোসফি (PhD)।
তাদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার পরে, অনেক বিজ্ঞানী বিভিন্ন কাজের পরিবেশ এবং শর্তে ক্যারিয়ার অনুসরণ করেন। ২০১৭ সালে, ব্রিটিশ বৈজ্ঞানিক জার্নাল নেচার বিশ্বব্যাপী ৫,৭০০ এরও বেশি ডক্টরাল শিক্ষার্থীর একটি বৃহৎ-পরিসরের সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছিল, যেখানে তাদের অর্থনীতির কোন খাতে কাজ করতে চান তা জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। উত্তরদাতাদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি একাডেমিয়ায় ক্যারিয়ার অনুসরণ করতে চেয়েছিলেন, এবং কম সংখ্যকরা শিল্প, সরকার, এবং অলাভজনক পরিবেশে কাজ করতে চেয়েছিলেন। নোবেল পুরস্কার, যা ব্যাপকভাবে সম্মানিত একটি পুরস্কার হিসাবে বিবেচিত, প্রতিবছর তাদেরকে প্রদান করা হয় যারা চিকিৎসা, পদার্থবিদ্যা এবং রসায়নের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি অর্জন করেছেন। কিছু বিজ্ঞানীদের ইচ্ছা থাকে মানুষের স্বাস্থ্য, দেশ, বিশ্ব, প্রকৃতি বা শিল্পের (একাডেমিক বিজ্ঞানী এবং শিল্প বিজ্ঞানী) কল্যাণে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান প্রয়োগ করার। অন্যান্য ক্যারিয়ারের তুলনায় বিজ্ঞানীরা তাদের কাজের জন্য সরাসরি আর্থিক পুরস্কারের দ্বারা কম প্রেরণা পায়। এর ফলে, বৈজ্ঞানিক গবেষকরা প্রায়শই অনুরূপ পরিমাণ প্রশিক্ষণ এবং যোগ্যতার প্রয়োজনীয়তা সহ অন্যান্য অনেক পেশার তুলনায় নিম্ন গড় বেতন গ্রহণ করেন।
সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থা, বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জন্য বিজ্ঞানীরা কাজ করে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পড়াশোনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা শিক্ষাপ্রদান করে থাকেন। এছাড়াও, নতুনদের মাঝে বৈজ্ঞানিক চেতনাবোধ জাগ্রত ও নতুন বৈজ্ঞানিকরূপে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাদের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান বিতরণে প্রয়াসী হন।
বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় বিজ্ঞানীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ও সফলতা লাভ করে দেশবাসী তথা বিশ্ববাসীকে আধুনিক জীবনযাত্রায় উদ্বুদ্ধ করছেন। একজন পদার্থবিজ্ঞানী, রসায়নবিজ্ঞানী, জীববিজ্ঞানী, ভূতত্ত্ববিদ যথাক্রমে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান এবং শিলা নিয়ে গবেষণা কর্ম পরিচালনা করে থাকেন।
বিজ্ঞান হচ্ছে জীবিত এবং মৃত উভয় ধরনের বিষয়বস্তু নিয়ে শিক্ষালাভের ক্ষেত্রস্থল যা আমাদের চারপাশের পরিবেশে বিরাজমান। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তার বিষয়বস্তু বের করার উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট উপকরণসমূহ ব্যবহার করেন। যেমন : বস্তুটি ধাতব পদার্থ কিংবা অ-ধাতব পদার্থ কি-না তা প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সাহায্যে বের করে থাকেন।
ঐতিহাসিকভাবেই নারীকে গৃহপ্রকোষ্ঠে আবদ্ধ রাখা হয়েছে। পরিবার থেকেই তাদেরকে বিজ্ঞান চর্চায় অংশগ্রহণ কিংবা উদ্বুদ্ধ করা হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯২৩ সালে সমান অধিকার আইন আকারে গৃহীত হবার পর নারীদেরকে উল্লেখযোগ্য হারে বিজ্ঞান বিষয়ে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। কিন্ত বিজ্ঞানে অংশগ্রহণের হার প্রকৌশল বিদ্যার তুলনায় নিম্নমুখী। বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে ডক্টরেট গ্রহণের সংখ্যা ১৯৭০ সালে ৭% থেকে ১৯৮৫ সালে ৩৪%-এ দাড়ায়। তন্মধ্যে প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রীর সংখ্যা যেখানে ছিল ১৯৭৫ সালে ছিল মাত্র ৩৮৫ জন, সেখানে ১৯৮৫ সালে ১১০০০ ছাড়িয়ে যায়। শিক্ষাক্ষেত্রে আইনের মাধ্যমে নারীকে বিশেষায়িত করলেও এখনো এ পেশায় বেশ অসমতা বিরাজ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ১৯৮৯ সালে বিজ্ঞানী হিসেবে পুরুষের অংশগ্রহণ ছিল ৬৫% এবং মাত্র ৪০% নারী উচ্চ পদে আসীন ছিলেন। যেখানে পূর্ণাঙ্গকালীন একজন বিজ্ঞানীর বার্ষিক আয় $৪৮,০০০; সেখানে নারীর আয় ছিল $৪২,০০০।[৪]
আলবার্ট আইনস্টাইনকে বিংশ শতকের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিজ্ঞানী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আইজাক নিউটনকে আধুনিক বলবিদ্যার পথিকৃৎ বলা হয়। স্টিফেন হকিং, বিশ্বতত্ত্ব ও কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় অসামান্য অবদান রেখেছেন। এছাড়াও, লুই পাস্তুর, র্যনে দেকার্ত, থমাস ইয়াং, হারম্যান ভন হেলমোল্টজ,, গটফ্রিড লিবনিজ, জোসেফ ফোরিয়ার, জন ভন নিউম্যান, এলান টুরিং, আন্দ্রে শাখারভ, আলেক্সান্দার খিনচিন, আন্দ্রেই মার্কভ, নর্বাট ওয়াইনাস, গ্যালিলিও গ্যালিলি, অলিভার ওয়েন্ডেল হোমস, উইলিয়াম হার্ভে, সান্টিয়াগো র্যামন ওয়াই ক্যাজাল, ভিলহেল্ম কনরাড রন্টগেন, আলফ্রেড নোবেল,আরনেস্ট রাদারফোর্ড ,নিলস বোর, ইবনে সিনা ও আল রাযী প্রমুখ ব্যক্তিত্ব স্ব-স্ব ক্ষেত্রে মূল্যবান অবদান রেখে বিজ্ঞানী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন।
দেশভেদে বিজ্ঞানীদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে ভিন্ন। উদাহরণস্বরূপ, ভারতে প্রতি ১০,০০০ শ্রমিকের জন্য মাত্র চারজন পূর্ণ-সময়ের বিজ্ঞানী রয়েছেন। অপরদিকে, যুক্তরাজ্যে এর সংখ্যা ৭৯ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ৮৫ জন।
|
|
|
ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের মতে, ২০১৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রিধারী ৪৭ লক্ষ মানুষ সমস্ত শাখা এবং কর্মসংস্থান খাতে কাজ করেছেন। এই পরিসংখ্যানে মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের সংখ্যা দ্বিগুণ ছিল। এর মধ্যে ১৭% কাজ করেছেন একাডেমিয়ায়, অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় ও স্নাতক প্রতিষ্ঠানে, এবং পুরুষদের মধ্যে ৫৩% পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ৫% বিজ্ঞানী ফেডারেল সরকারের জন্য কাজ করেন এবং প্রায় ৩.৫% স্ব-নিযুক্ত ছিলেন। শেষ দুটি গ্রুপের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ ছিল পুরুষ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫৯% বিজ্ঞানী শিল্প বা ব্যবসায় নিযুক্ত ছিলেন এবং আরও ৬% অলাভজনক পদে কাজ করেছিলেন।
বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশল নিয়ে পরিসংখ্যান সাধারণত একে অপরের সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে তারা ইঙ্গিত দেয় যে মহিলারা পুরুষদের তুলনায় অনেক কম ক্ষেত্রে প্রবেশ করে, যদিও এই ব্যবধানটি সংকুচিত হচ্ছে। নারীদের প্রদত্ত বিজ্ঞান ও প্রকৌশল ডক্টরেটের সংখ্যা ১৯৭০ সালে মাত্র ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৯৮৫ সালে ৩৪ শতাংশে উন্নীত হয় এবং শুধুমাত্র প্রকৌশল ক্ষেত্রে মহিলাদের প্রদত্ত স্নাতক ডিগ্রির সংখ্যা ১৯৭৫ সালে মাত্র ৩৮৫ থেকে বেড়ে ১৯৮৫ সালে ১১,০০০ এরও বেশি হয়।
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; Whewell
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; Noorden2015
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি