![]() বড় বড় বিট লবণের টুকরা | |
অন্যান্য নাম | কালা নমক |
---|---|
অঞ্চল বা রাষ্ট্র | দক্ষিণ এশিয়া হিমালয় অঞ্চল |
বিট লবণ বা বিট নুন; (হিন্দি: काला नमक, নেপালি: बिरे नुन,মারাঠি: काळं मीठ; গুজরাতি: સંચળ, তামিল: இந்துப்பு, মালয়ালম: ഇന്തുപ്പ്,উর্দু: نمک کالا) এক প্রকারের চুল্লীতে শুষ্ক ভাজা খনিজ লবণ। সাধারণত এই খনিজ লবণটি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপালের হিমালয় এর আশপাশের লবণসমৃদ্ধ মাটির নিচ থেকে পাথর আকারে উত্তোলন করা হয়।[১][২]
মশলা হিসেবে ব্যবহৃত এই বস্তুটিতে অন্যান্য বিভিন্ন উপাদানের সাথে মূলত সোডিয়াম ক্লোরাইড আছে, যার থেকে এর রঙ এসেছে। গন্ধটি মূলত এর সালফার উপাদানগুলির কারণে হয়। এই খনিজের মধ্যে গ্রেগাইটের উপস্থিতির কারণে (Fe3S4, ফেরাস (II,III) সালফাইড), গোটা অবস্থায় এটির রং বাদামী গোলাপী থেকে গাঢ় বেগুনী স্বচ্ছ স্ফটিকের মত থাকে। যখন গুঁড়িয়ে ধুলার মত করা হয়, এর রঙ বেগুনি থেকে গোলাপী পর্যন্ত হয়।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বিট লবণ বা কালা নমকের প্রশংসা করা হয়েছে এবং একে এর বিশেষ চিকিৎসা গুণাবলী থাকার কারণে ঔষধিতে ব্যবহৃত হয়েছে।[৩][৪]
বিট লবণ উৎপাদনের কাঁচামালটি মূলত, হিমালয় লবণের শ্রেণীর খনি থেকে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক হ্যালাইট হিসেবে, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের কিছু নির্দিষ্ট জায়গা থেকে পাওয়া যায়,[১][২] অথবা, এর আবাদ করা হয় উত্তর ভারতের সম্ভার লবণ হ্রদ বা দিদওয়ানা এবং নেপালের মুস্তাঙ জেলায়।[৫]
প্রকৃতিতে, লবণটি তার তুলনামূলক রঙহীনরূপে পাওয়া যায়। এটিকে বিজারণ রাসায়নিক প্রক্রিয়া মাধ্যমে গাঢ় রঙের বিট নুনে পরিণত করে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির উপযোগী করা হয়। এর ফলে প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত কাঁচা লবণের কিছু সোডিয়াম সালফেট তীব্র গন্ধযুক্ত সোডিয়াম সালফাইড এবং হাইড্রোজেন সালফাইডে রূপান্তরিত হয়।[৬] এর জন্য কাঠকয়লাসহ একটি সিরামিক ঘড়ায় বন্ধ করা কাঁচা নুনকে কোনও চুল্লিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে পোড়ানো হয়। এর সঙ্গে অল্প পরিমাণে থাকে হারাদ বীজ, আমলকী, বাহেরা, বাবুল বাকল বা ন্যাট্রোন।[৫][৬] আগুনে লবণ গলে যায়, রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে, এরপর লবণকে ঠাণ্ডা করা হয়। বিক্রির আগে একে বেশ কিছুদিন বন্ধ করে রেখে দেওয়া হয়।[১][৭] এই পদ্ধতিতে উত্তর ভারতে হরিয়ানার হিসার জেলায় অনেক জায়গায় বিট লবণ প্রস্তুত করা হয়।[৬] লবণের স্ফটিকগুলি কালো রঙের হয়, কিন্তু সূক্ষ্ম গুঁড়াতে পরিণত করলে গোলাপী রঙের হয়।
যদিও প্রাকৃতিক লবণে প্রয়োজনীয় মিশ্রণগুলি দিয়ে বিট লবণ উৎপাদন করা যায়, এটি এখন সাধারণত কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়। সাধারণত সোডিয়াম ক্লোরাইডে কম পরিমাণে সোডিয়াম সালফেট, সোডিয়াম বাইসালফেট এবং ফেরিক সালফেট মিশ্রিত করে এটি করা হয়। এরপর এটিকে চুল্লিতে কাঠকয়লা দিয়ে রাসায়নিকভাবে বিজারিত করা হয়। সোডিয়াম ক্লোরাইড, ৫-১০% সোডিয়াম কার্বোনেট, সোডিয়াম সালফেট এবং কিছু চিনির বিজারিত তাপীয় পদ্ধতির মাধ্যমে অনুরূপ পণ্য তৈরি করা সম্ভব।[৬]
বিট লবণ মূলত সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং অল্প সোডিয়াম সালফেট,[৮][৯] সোডিয়াম বাইসালফেট, সোডিয়াম বিসালফাইট, সোডিয়াম সালফাইড, আয়রন সালফাইড এবং হাইড্রোজেন সালফাইডের অপদ্রব্য দিয়ে তৈরি।
সোডিয়াম ক্লোরাইড থেকে এর নোনতা স্বাদটি আসে, আয়রন সালফাইড থেকে তার গাঢ় বেগুনি রঙটি আসে, এবং সমস্ত সালফার মিশ্রণগুলি বিট লবণের সুস্বাদের পাশাপাশি একটি অতি বৈশিষ্ট্যসূচক গন্ধ দেয়। এর বিশেষ গন্ধের জন্য হাইড্রোজেন সালফাইড মূলত দায়ী। আম্লিক বাইসালফেট / বাইসালফাইটগুলি একটি হালকা টক স্বাদ দেয়।[২] যদিও বেশি পরিমাণে হাইড্রোজেন সালফাইড বিষাক্ত, খাদ্যে ব্যবহৃত বিট লবণের উপস্থিতির পরিমাণ কম এবং তাই স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব নগণ্য।[২] পচা ডিম এবং নষ্ট দুধের গন্ধের অন্যতম উপাদান হাইড্রোজেন সালফাইডও।[১০]
বাংলাদেশ, নেপাল, ভারত এবং পাকিস্তানের দক্ষিণ এশীয় খাবারে বিট লবণ মশলা হিসাবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বিভিন্ন ফল ভর্তা,চাট, চাটনি, সালাদ, সব ধরনের ফল, রায়তা এবং অনেকগুলি মজাদার বাংলাদেশী ,পাকিস্তানী এবং ভারতীয় খাবারে এই লবণ দেওয়া হয়। চাট মশলা, যেটি একটি ভারতীয় মশলার মিশ্রণ, তার বিশেষ সালফারযুক্ত শক্ত-সিদ্ধ ডিমের গন্ধের জন্য বিট লবণের উপর নির্ভরশীল। যারা বিট লবণে অভ্যস্ত নয়, তারা প্রায়ই এর গন্ধকে পচা ডিমের গন্ধের মতো বলে।[৩] ডিমের স্বাদ নকল করে এমন কিছু খাবারে বিট লবণের উপস্থিতি নিরামিষীদের প্রশংসা পেয়েছে।[১১] আয়ুর্বেদে বিট লবণকে শীতল মশলা বলা হয় এবং একটি বিরচক এবং হজম সহায়ক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।[১][৮][৯][১২] এটি অপান এবং অম্বল উপশম করে বলেও মনে করা হয়। জম্মুতে এটি গলগন্ড নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।[১২] এই লবণটি হিস্টিরিয়া চিকিৎসার জন্যও ব্যবহৃত হয় এবং অন্যান্য খনিজ এবং উদ্ভিদের উপাদানগুলির সাথে এটি সংযুক্ত করে দন্ত মঞ্জন তৈরি করা হয়।[১]