বিটা-ল্যাক্টাম অ্যান্টিবায়োটিক (ইংরেজি: Beta-lactam antibiotic/β-Lactam antibiotic) হচ্ছে একটি অধিক ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক গ্রুপ। বিটা ল্যাক্টাম অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর তৈরিতে বাধাপ্রদান করে। ব্যাকটেরিয়া বিটা ল্যাক্টাম অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে বিটা ল্যাক্টামেজ এনজাইম তৈরি করে যা এই বিটা ল্যাক্টাম রিং'কে আক্রমণ করে।
বিটা ল্যাক্টাম অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ ও প্রতিষেধক (Prophylaxis) হিসেবে দায়ী ব্যাকটেরিয়ার জন্য নির্দেশিত। প্রথমত, বিটা ল্যাক্টাম অ্যান্টিবায়োটিক মূলত গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সক্রিয়, বর্তমানে অবশ্য বিস্তৃত পরিসরের (broad-spectrum) বিটা ল্যাক্টাম অ্যান্টিবায়োটিকগুলোও গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে তাদের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করেছে।
বিটা ল্যাক্টাম আন্টিবায়োটিকগুলো হলো ব্যাকটেরিসাইডাল (bacteriocidal,ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসকারী) এবং ব্যাকটেরিয়ার পেপ্টাইডোগ্লাইকেন প্রাচীর গঠনে বাধাপ্রদান করে। পেপ্টাইডোগ্লাইকেন প্রাচীর ব্যাকটেরিয়ার দৃঢ়তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে গ্রাম-পজিটিভ ব্যাকটেরিয়ার উপর। ট্রান্সপেপ্টাইডেশন স্তরটি পেনিসিলিন বাইন্ডিং প্রোটিন নামক ট্রান্সপেপ্টাইডেজ এনজাইম দ্বারা তরান্বিত হয়ে থাকে। বিটা ল্যাক্টাম আন্টিবায়োটিকগুলো কেবল বিভাজক্ষম ব্যাকটেরিয়াকেই ধ্বংস করে না সাথে সাথে সায়ানোব্যাকটেরিয়া সহ সায়ানেলে বিভক্ত, ফটোসিন্থেটিক অরগানেলসে বিভক্ত গ্লুকোফাইটস ও ব্রায়োফাইটের ক্লোরোপ্লাষ্টকেও বাধাগ্রস্ত করে। অপরদিকে, তাদের ভাস্কুলার প্লান্টের প্লাস্টিডের উপর কোনো প্রভাব নেই। এন্ডোসিমবায়োটিক সূত্র সমর্থন করে ভূমিস্থ গাছের প্লাস্টিড বিভক্তি নির্দেশ করে।[১] বিটা ল্যাক্টাম আন্টিবায়োটিকগুলো ডি-এলানাইল-ডি-এলানিন এর সদৃশ (analogues, আনালগ) টার্মিনাল এমাইনো এসিড জায়মান (nascent) পেপ্টাইডগ্লাইকেনের ন্যাম/ন্যাগ প্রিকোরসর পেপ্টাইডের সাবইউনিট (NAM/NAG-peptide subunits)। বিটা ল্যাক্টাম এন্টিবায়োটিকের ও ডি-এলানাইল-ডি-এলানিনের গাঠনিক সাদৃশ্যতার কারণে এন্টিবায়োটিক পেনিসিলিন বাইন্ডিং প্রোটিনের (পিবিপি) এক্টিভ সাইটের সাথে যুক্ত হওয়াকে সহজতর করে। বিটা ল্যাক্টাম নিউক্লিয়াস অণুটি/মউলিকিউলটি অপরিবর্তনীয়ভাবে পিবিপি'র একটিভ সাইটের (এক্রাইলেট) Ser403 অংশের সাথে সংযুক্ত হয়। এক অপরিবর্তনীয় বন্ধন শেষে জায়মান টান্সপেপ্টাইডের ট্রান্সপেপ্টাইডেশন প্রক্রিয়াটি বন্ধ করে ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর উৎপাদনকে নষ্ট করে দেয়।
সাধারণ অবস্থায়, পেপ্টাইডোগ্লাইকেন প্রিকোরসর ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর পুনর্গঠনের নির্দেশ করে। ফলশ্রুতিতে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে অটোলাইটিক সেল ওয়াল হাইড্রোলেজ সক্রিয়তার সূত্রপাত ঘটে। বিটা ল্যাক্টাম কর্তৃক পেপ্টাইডোগ্লাইকেন প্রিকোরসর উৎপাদন হতে পারে না, যেটা পেপ্টাইডোগ্লাইকেন অটোলাইটিক হাইড্রোলেজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিপাক করে ফেলে। ফলে বিটা ল্যাক্টাম এন্টিবায়োটিকের ব্যাকটেরিসাইডাল ক্রিয়া আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
সংজ্ঞানুসারে, সকল বিটা-ল্যাক্টাম আন্টিবায়োটিকগুলোর বিটা ল্যাক্টাম রিং আছে। তাদের কার্যকারিতা নির্ভর করে তারা কতটুকু অখণ্ড অবস্থায় পিবিপি পর্যন্ত পৌছাতে পারে তার উপর। বিটা ল্যাক্টাম আন্টিবায়োটিকগুলোর প্রতি দুইভাবে ব্যাকটেরিয়ার প্রতিরোধ গড়ে তোলে -
রিংএর গঠন অনুসারে বিটা ল্যাক্টামগুলোর নামকরণ করা হয়। যেমন -
সেমিসিনথেটিক পেনিসিলিনগুলো পেনিসিলিন নিউক্লিয়াস ৬ -এপিএ (৬ – এমাইনো পেনিসিলানোয়িক এসিড) থেকেই সূচনা ঘঠে।
এন্টি এনারোবিক সমৃদ্ধ মধ্যম পরিসর।
বিস্তৃত পরিসরের।
এন্টি সিউডোমোনাস সমৃদ্ধ বিস্তৃত পরিসর।
অধিকতর বিস্তৃত পরিসরের যা গ্রাম পজিটিভ ও বিটা ল্যাক্টামেজ স্থিত।
সর্বাধিক বিস্তৃত পরিসরে বিটা ল্যাক্টাম এন্টিবায়োটিকগুলো হচ্ছে -
বিটা-ল্যাক্টামের মতই, মনোব্যাক্টামের সাথে কোনো রিং নিউক্লিয়াস সংযুক্ত থাকে না। অতঃপর, তাতে ক্রস সেন্সিটিভিটি প্রতিক্রিয়া হয় না।
যদিও তারা অত্যন্ত কম সংখ্যক ব্যাকটেরিয়া বিরোধী, তারা বিটা ল্যাক্টাম রিং ধারণ করে। তাদের একমাত্র লক্ষ্য হলো বিটা ল্যাক্টাম এন্টিবায়োটিক নিষ্প্রভ করে এমন উৎসেচক বিটা ল্যাক্টামেজের সহিত স্থায়ী বন্ধন সৃষ্টির মাধ্যমে বিটা ল্যাক্টাম এন্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়া। যেমন -
বিটা ল্যাক্টাম এন্টিবায়োটিকের সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াসমূহের মধ্যে ডায়ারিয়া, বমি বমি ভাব, ফুস্কূড়ি (র্যাশ), ত্বকপীড়ক (Urticaria), সুপার ইনফেকশন (সাথে ক্যান্ডিডিয়াসিস)।[৩] বিরল ঔষধ প্রতিক্রিয়ার সাথে বমি বমি ভাব, জ্বর, ইরিথেমা, ত্বকের প্রদাহ ডার্মাটাইটিস, এনজিওডেমা, সিউডোমেম্ব্রনাস কোলাইটিস।[৩] বিটা ল্যাক্টাম এন্টিবায়োটিকের পেরেন্টেরাল ইঞ্জেকশনের ক্ষেত্রে ব্যথা ও প্রদাহ একটি সাধারণ ঘটনা।