বিদ্যা বালান | |
---|---|
জন্ম | বম্বে, মহারাষ্ট্র, ভারত | ১ জানুয়ারি ১৯৭৮
জাতীয়তা | ভারতীয় |
শিক্ষা | স্নাতোকোত্তর |
মাতৃশিক্ষায়তন | মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা |
|
কর্মজীবন | ১৯৯৫, ২০০৩–বর্তমান |
আদি নিবাস | কেরালা |
দাম্পত্য সঙ্গী | সিদ্ধার্থ রায় কাপুর (বি. ২০১২) |
পিতা-মাতা |
|
আত্মীয় | প্রিয়ামণি (মামাতো বোন) |
পুরস্কার | পদ্মশ্রী (২০১৪) |
বিদ্যা বালন ([ʋɪd̪jaː baːlən]; জন্ম: জানুয়ারি ১, ১৯৭৮) একজন ভারতীয় মডেল ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। তিনি বলিউড চলচ্চিত্রে কর্মজীবন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বাংলা, তামিল, মালয়ালম এবং হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। অভিনয় জীবনে তিনি এ যাবৎ বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেছেন, যার মধ্যে একটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, পাঁচটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এবং পাঁচটি স্ক্রিন পুরস্কার অর্ন্তভুক্ত রয়েছে। ২০১৪ সালে ভারত সরকার কর্তৃক তাঁকে দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত করা হয়।
তরুণ বয়সেই চলচ্চিত্রের সাথে তাঁর সম্পৃক্ততা ঘটে এবং ১৯৯৫ সালে হাম পাঁচ হিন্দি সিটকমের মাধ্যমে প্রথম অভিনয়ে আসেন। তিনি মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন এবং চলচ্চিত্রে কর্মজীবন শুরু করার পূর্বে ভিন্ন-ভিন্ন পেশায় ব্যর্থ হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে বিভিন্ন টেলিভিশন বিজ্ঞাপন ও মিউজিক ভিডিওতে কাজ করার পর ২০০৩ সালে তিনি ভাল থেকো স্বাধীন বাংলা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ২০০৫ সালে প্রণয় ধর্মী নাট্য চলচ্চিত্র পরিণীতা'য় ললিতা চরিত্রে অভিনয় ছিল তাঁর প্রথম হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় এবং পরবর্তী বছর ২০০৬ সালে রম্য-নাট্যধর্মী লাগে রাহো মুন্না ভাই চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন যা বক্স অফিসে সাফল্য অর্জন করে।
এই সাফল্যের পর তিনি প্রণয় ধর্মী রম্য হেই বেবি (২০০৭) ও কিসমত কানেকশন (২০০৮) চলচ্চিত্রে কাজ করেন, যার ফলে তিনি নেতিবাচক সমালোচনা লাভ করেন। ২০০৯ সালে বিদ্যার কর্মজীবনের সর্বাধিক সাফল্যের সূচনা ঘটে পা নাট্য চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। এরপর ২০১০ সালের ব্ল্যাক কমেডি ইশ্কিয়া, ২০১১ সালের অর্ধ-জীবনীমূলক থ্রিলার নো ওয়ান কিলড জেসিকা, জীবনীমূলক চলচ্চিত্র দ্য ডার্টি পিকচার এবং ২০১২ সালের থ্রিলারধর্মী কাহানী চলচ্চিত্রে তিনি সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন। এ সকল চরিত্রসমূহ তাঁকে হিন্দি চলচ্চিত্রের নেতৃত্বস্থানীয় অভিনেত্রী হিসেবে পরিণত করে। পরে তিনি কাহানির অনুবর্তী পর্ব কাহানি ২: দুর্গা রানী সিং ছবিতে অভিনয় করেন। ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে সফল না হলেও বিদ্যার অভিনয় প্রশংসিত হয়। ২০১৭ সালে তিনি রেডিও জকি চরিত্রে ব্যবসায়িক সফলতা অর্জনকারী রম্য-নাট্য তুমহারি সুলু চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন।
বিদ্যা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি মানব। হিতৈষী কার্যকলাপে জড়িত রয়েছেন এবং নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য সহায়ক হিসেবে অবদান রেখেছেন। প্রাথমিকভাবে তাঁর ভারী শরীর এবং প্রশ্নসাপেক্ষ পোশাক নির্বাচনের কারণে তাঁকে বিভিন্ন সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তিনি ২০১২ সালে চলচ্চিত্র প্রযোজক সিদ্ধার্থ রায় কাপুরকে বিয়ে করেন। ২০১৭ সালে তিনি ভারতীয় কেন্দ্রীয় চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডের সদস্য হন।
বিদ্যা বালান ১ জানুয়ারি ১৯৭৮ সালে ভারতের কেরালার পালক্কাদ জেলার পুথামকুরুসি, পুথুর[১][২] শহরে জন্ম গ্ৰহণ করেন। তাঁর পিতা-মাতা তামিল বংশোদ্ভুত;[৩] পিতা পি আর বালান ডিজিক্যাবল প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী সহ-সভাপতি[৪] এবং মাতা স্বরসতী বালান গৃহিণী।[৫][৬] বিদ্যার ভাষ্যমতে তার পিতা-মাতা বাড়িতে মালয়ালম এবং তামিল ভাষা ব্যবহার করতেন।[৭] তার কনিষ্ঠ বোন প্রিয়া বালান বিজ্ঞাপন ক্ষেত্রে কাজ করছেন।[৫] অভিনেত্রী প্রিয়ামণি তার খুড়তুতো বোন।[৮][৯]
বিদ্যা মুম্বইয়ের চেম্বুর উপ-শহরে বেড়ে উঠেন এবং সেন্ট এন্থনি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন।[১০][১১] তরুণ বয়স থেকেই অভিনেত্রী শাবানা আজমী ও মাধুরী দিক্ষিতের দ্বারা প্রভাবিত হবার কারণে চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহী ছিলেন তিনি।[১২][১৩] ষোল বছর বয়সে, তিনি একতা কাপুর পরিচালিত হাম পাঁচ সাইটকমের প্রথম মৌসুমে রাধিকা নামে এক তরুণীর চরিত্রে অভিনয় করেন।[১৪][১৫] এই ধারাবাহিকের সাফল্যের পর তিনি চলচ্চিত্র পেশায় মনোযোগী হতে চান বলে অনুরাগ বসু নির্দেশিত টেলিভিশন সোপ অপেরার আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দেন।[১৬] বিদ্যার পিতা-মাতা তাঁর এ সিদ্ধান্তে সম্মত থাকলেও তাঁরা প্রথমে পড়াশুনা শেষ করার বিষয়ে উৎসাহ দিতেন,[১২] তাই তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক বর্ষে অধ্যয়ন শুরু করেন এবং পরবর্তীতে মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে স্নাতোকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।[১৭][১৮]
স্নাতক অধ্যয়নকালে বিদ্যা মালয়ালম ভাষার চক্রম চলচ্চিত্রে মোহনলালের বিপরীতে প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেন এবং কালক্রমে আরও বারোটি মালয়ালম চলচ্চিত্রে অভিনয়ের চুক্তি সই করেন।[১২] নির্মাণ জটিলতার কারণে চক্রম চলচ্চিত্রের নির্মাণ কাজ স্থগিত হয়ে যায়।[২০] মোহনলাল অভিনীত চলচ্চিত্রের স্থগিতকরণ মালয়ালম চলচ্চিত্রে একটি অপ্রচলিত ঘটনা ছিল এবং প্রযোজক এ প্রকল্পে “মন্দ ভাগ্য” বয়ে আনায় কারণ হিসেবে বিদ্যাকে দোষারোপ করেন।[১২] তাঁকে অলুক্ষণে বিবেচনা করে এরপর চুক্তিবদ্ধ সমস্ত চলচ্চিত্রে অন্য অভিনেত্রীদের বিদ্যার স্থলাভিষিক্ত করেন।[১২] পরবর্তীতে তিনি তামিল চলচ্চিত্রের প্রতি দৃষ্টি দেন। ২০০১ সালে, প্রধান নারী চরিত্র হিসেবে এন. লিঙ্গুস্বামী পরিচালিত রান (২০০২) চলচ্চিত্রে কাজ করেন। যদিও চলচ্চিত্রের প্রথম শুটিং সম্পন্ন হবার পরই অনানুষ্ঠানিকভাবে বাদ পড়েন তিনি এবং তার পরিবর্তে মীরা জেসমিন এতে কাজ শুরু করেন।[২১] তিনি ছদ্মবেশে চুক্তিবদ্ধ হন সেক্স কমেডির জন্য, এটি একটি চলচ্চিত্র ধরন যা তিনি পরবর্তীতে ত্যাগ করেন।[১২] এরপর তিনি তৃতীয় তামিল চলচ্চিত্র মানাসিলামে (২০০৩) চুক্তিবদ্ধ হন কিন্তু পরিচালক অসন্তুষ্ট হয়ে তাঁর পরিবর্তে তৃষা কৃষাণকে পুনঃস্থাপিত করেন।[২২] কালারি বিক্রামান, আরেকটি মালয়ালম চলচ্চিত্র যার কাজ তিনি ২০০৩ সালে সম্পন্ন করলেও প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে এটি ব্যর্থ হয়।[২৩]
চলচ্চিত্র কর্মজীবনের শুরুতে একাধিক ব্যর্থতার পর, বিদ্যা আনুমানিক ষোলটি টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে এবং ইউফোরিয়া ও সুভা মুদ্গলের মিউজিক ভিডিওতে মডেল হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন; যার অধিকাংশই পরিচালনা করেন প্রদীপ সরকার।[১৬][২৪] ২০০৩ সালে তিনি গৌতম হালদার পরিচালিত ভাল থেকো বাংলা চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হন। এটি ছিল তার অভিনীত প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র।[২৫] ছবিতে তিনি আনন্দী নামে এক জাতিস্মর তরুণী চরিত্রে অভিনয় করেন এবং তিনি তার অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য আনন্দলোক পুরস্কার লাভ করেন।[২৬]
২০০৫ সালে, প্রদীপ সরকার পরিচালিত সঙ্গীত নাট্য পরিণীতা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটান বিদ্যা। এই চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করার পূর্বে তাকে ছয় মাসবাপী দীর্ঘ মহড়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।[২০][২৭] চলচ্চিত্রটি বাঙালি লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়। ছবিতে আদর্শবাদী নারী ললিতা (বিদ্যা) ও পূঁজিবাদী ব্যবসায়ী পুত্র সঙ্গীতঙ্গ শেখরের (সাইফ আলী খান) মধ্যকার সম্পর্কের গল্প বর্ণিত হয়।[২৮] এ চলচ্চিত্রে বিদ্যার অভিনয় সমালোচকদের সন্তুষ্ট করে;[১৫] ভ্যারাইটি সাময়িকীর ডিরেক এলে লিখেন, "তামিল বংশোদ্ভূত অভিনেত্রী বালানের ললিতা চরিত্রটি মন ও আত্মার প্রতিচ্ছবি।"[২৯] পরিণীতার জন্য বছরের শেষে আয়োজিত ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অনুষ্ঠানে তিনি শ্রেষ্ঠ নারী অভিষেক পুরস্কার লাভ করেন এবং শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে মনোনয়োন লাভ করেন।[৩০] পরবর্তী বছর বিদ্যাকে রাজকুমার হিরানী পরিচালিত লাগে রাহো মুন্না ভাই রম্য চলচ্চিত্রে সঞ্জয় দত্তের বিপরীতে দেখা যায়। চলচ্চিত্রে তিনি জাহ্নবি নামে এক রেডিও জকির চরিত্রে অভিনয় করেন। এই চরিত্রে পারদর্শী হতে তিনি এক বেতার দম্পতির সাথে সাক্ষাত করেন এবং কিছুকাল তাদের কাজ পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে এ বিষয়ে পারদর্শীতা অর্জন করেন।[৩১] পরবর্তীতে তার অভিনয় সমাদৃত হয়[৩২] এবং চলচ্চিত্রটি ব্লকবাস্টার হিটের পাশাপাশি প্রায় ১.১৯ বিলিয়ন (ইউএস$ ১৮ মিলিয়ন) রুপীর ব্যবসা করে।[১৯]
২০০৭ সালে, বিদ্যা মণি রত্নম পরিচালিত অর্ধ-জীবনীমূলক গুরু চলচ্চিত্রে মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত নারী হিসেবে একটি পার্শ্ব চরিত্রে উপস্থিত হন। প্রধান চরিত্রসমূহে মিঠুন চক্রবর্তী, অভিষেক বচ্চন, ঐশ্বরিয়া রায় এবং আর. মাধবন অভিনীত চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে সাফল্য অর্জন করে।[৩৩] যদিও, চলচ্চিত্র সমালোচক খালিদ মোহাম্মদ ও রাজা সেন উল্লেখ করেন, "ক্ষুদ্র চরিত্রে" তার "প্রতিভার অপচয় ঘটেছে"।[৩৪][৩৫] তার পরবর্তী মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র নিখিল আদভানী পরিচালিত প্রণয়ধর্মী রম্য সালাম-ই-ইশ্ক: অ্যা ট্রিবিউট টু লাভ, যেখানে তিনি জন আব্রাহামের বিপরীতে অভিনয় করেছেন। এই চলচ্চিত্রে, ছয়টি ভিন্ন প্রেম কাহিনী দেখানো হয়েছে, বিদ্যা যেখানে তেহজীব হুসাইন নামে একজন টেলিভিশন প্রতিবেদকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। চলচ্চিত্রটি সমালোচকীয় ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যর্থ হলেও,[৩৩] বিদ্যা ইতিবাচক পর্যালোচনা অর্জন করেন। রেডিফ.কম-এর সুকন্যা বর্মা চলচ্চিত্রে বিদ্যার অভিনয় বিষয়ে মন্তব্য করেন।[৩৬]
বিদ্যা পরবর্তীতে বিধু বিনোদ চোপড়া পরিচালিত একলব্য: দ্য রয়্যাল গার্ড উৎকণ্ঠা থ্রিলার চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে উপস্থিত হন; অমিতাভ বচ্চন, বোমান ইরানি, শর্মিলা ঠাকুর, সাইফ আলী খান এবং সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে। বাণিজ্যিকভাবে ব্যর্থ চলচ্চিত্রটি ইতিবাচক সমালোচনা অর্জনের পাশাপাশি ৮০তম একাডেমি পুরস্কারের জন্য অস্কারে ভারতের আনুষ্ঠানিক ভুক্তি হিসেবে নির্বাচিত হয়।[৩৭] পরবর্তীতে তিনি ইশা সাইনি নামে একজন অবিবাহিত মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেন অক্ষয় কুমার, রিতেশ দেশমুখ এবং ফারদিন খানের সঙ্গে সাজিদ খান পরিচালিত কমেডি নাট্যধর্মী হেই বেবি চলচ্চিত্রে। চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে সাফল্য অর্জন করেলেও[৩৩] সমালোচকদের কাছ থেকে নেতিবাচক পর্যালোচনা পায়। সিএনএন-আইবিএন-এর রাজীব মাসান্দ চলচ্চিত্রে বিদ্যার সাজ-সজ্জা এবং পোশাক নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেন।[৩৮][৩৯]
২০০৭ সালে, বিদ্যার পঞ্চম এবং শেষ চলচ্চিত্র ছিল প্রিয়দর্শন পরিচালিত মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলার ভুল ভুলাইয়া, যা মালয়ালম মনিচিত্রথাজু (১৯৯৩) চলচ্চিত্রের পুনর্নির্মাণ। বিদ্যা এই চলচ্চিত্রে অবন্তি চতুর্বেদী (মূল মালয়ালম চলচ্চিত্রে শোভনা অভিনীত একটি চরিত্র) নামে এক বিচ্ছিন্ন ব্যাধি আক্রান্ত নারী চরিত্রে উপস্থিত হয়েছিলেন।[৪০] সহ-চরিত্রে ছিলেন অক্ষয় কুমার ও অমীশা পটেল এবং ভুল ভুলাইয়া বাণিজ্যিক সাফল্যের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী ৮৩০ মিলিয়ন (ইউএস$১৩ মিলিয়ন) রূপীর ব্যবসা করে।[৩৩] সমালোচকরা চলচ্চিত্রে সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য রাখলেও বিদ্যার অভিনয়ের প্রশংসা করেন। হিন্দুস্থান টাইমসের খালিদ মোহাম্মদ এবং বলিউড হাঙ্গামার তারান আদর্শ বিদ্যার ভূমিকা প্রসঙ্গে প্রশংসাসূচক বাক্য লিখেছেন।[৪১][৪২] এই চরিত্র বিদ্যাকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে তার দ্বিতীয় ফিল্মফেয়ার মনোনয়োন এনে দেয়।[৩০]
২০০৮ সালে, হাল্লা বোল সামাজিক চলচ্চিত্রে বিদ্যা অজয় দেবগন ও পঙ্কজ কাপুরের বিপরীতে একটি পার্শ্ব চরিত্রে উপস্থিত হন। চলচ্চিত্রটি সক্রিয়বাদী সফদার হাশমির জীবনী অবলম্বনে নির্মিত, যিনি ১৯৮৯ সালে একটি পথ নাট্যে (হাল্লা বোল) সঞ্চালন করার সময় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী কর্তৃক খুন হন।[৪৩] চলচ্চিত্রটি সামালোচকদের কর্তৃক ব্যর্থ ঘোষিত হয়।[৪৪] পরবর্তী বছরে তিনি আজিজ মির্জা পরিচালিত প্রণয়ধর্মী রম্য কিসমত কানেকশন চলচ্চিত্রে শহীদ কাপুরের বিপরীতে উপস্থিত হন। বক্স অফিসে ব্যর্থতার পাশাপাশি[৪৫] বিদ্যার অভিনয় নেতিবাচক সমালোচনা লাভ করে। বিদ্যার চুলের ছাঁট, পোশাক এবং সাজ-সজ্জা প্রসঙ্গে সমালোচক সোনিয়া চোপড়া বিরুপ মন্তব্য প্রকাশ করেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, [বিদ্যার] তার চরিত্রটি যেনো লাগে রাহো মুন্না ভাই চলচ্চিত্রে কৃত চরিত্রের পুনরাবৃত্তি।[৪৬]
২০০৯ সালে বিদ্যা আর. বালকি পরিচালিত পা নাট্য চলচ্চিত্রে একটি ১২-বছর বয়সী শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলের স্ত্রীরোগবিশারদ মায়ের চরিত্রে উপস্থিত হন। তার ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন এবং অভিষেক বচ্চন নাম চরিত্রে। বাণিজ্যিক সাফল্যের পাশাপাশি এই চলচ্চিত্র তার কর্মজীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সহায়ক হয়।[৪৭][৪৮] সুকন্যা বর্মা তার অভিনয় শৈলী ডিম্পল কাপাডিয়ার সঙ্গে তুলনা করে মন্তব্য করেন;[৪৯] অন্যদিকে দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার নিখাত কাজমী বলিউড মায়ের চরিত্র্রে বিদ্যার সাফল্যের কথা উল্লেখ করেন।[৫০] এই চরিত্রের জন্য তিনি বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেন যার মধ্যে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার ও স্ক্রিন পুরস্কার অর্ন্তভূক্ত।[৩০]
বিদ্যা পা চলচ্চিত্রের সাফল্য বিশাল ভরদ্বাজ-প্রযোজিত ইশকিয়া (২০১০) চলচ্চিত্রে ধরে রাখেন, যা অভিষেক চৌবে পরিচালিত একটি ব্ল্যাক কমেডি চলচ্চিত্র; যেখানে তার সহ-অভিনেতা ছিলেন নাসিরুদ্দিন শাহ্, আরশাদ ওয়ার্সী, এবং সালমান শহীদ। চলচ্চিত্রে বিদ্যা কৃষ্ণা বর্মা নামে একজন যৌন ধান্দাবাজ মহিলার চরিত্রে অভিনয় করেন। বিদ্যা তার চরিত্রটি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, চলচ্চিত্রে নারীর প্রচলিত প্রতিকৃতিরূপের প্রস্থান ঘটেছে।[৫১] তার অভিনয়ের অংশের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য তিনি সে স্থানীয় উত্তর-প্রদেশ-উপভাষায় কথা বলার পেশাদারী প্রশিক্ষণ নেন।[৫২] এ সকল বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি তার অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়; এনডিটিভি-এর অনুপমা চোপড়া বিবৃতি দিয়েছেন যে, "বিদ্যা বালানের ধূমায়িত রূপ পর্দা জ্বালিয়ে দিতে পারে এমনকি তার চোখ বিয়োগান্তক মুহূর্তের সংকেত দেয়। তিনি প্রমাণ করেন যে, তিনি বিশৃঙ্খলা বলিউডের বার্বি পুতুলদের চেয়ে অনেক এগিয়ে এবং যা চামড়া প্রদর্শনের পাশাপাশি যৌনক্ষুধার খোরাক।"[৫৩] এই চলচ্চিত্রে তার কাজের জন্য বিদ্যা শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কার, পর্দায় পরপর দ্বিতীয়বারের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর স্ক্রিন পুরস্কার, এবং শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য ফিল্মফেয়ার মনোনয়ন অর্জন করেন।[৫৪]
রাণী মুখার্জীর সাথে রাজ কুমার গুপ্ত পরিচালিত অর্ধ-জীবনীমূলক চলচ্চিত্র নো ওয়ান কিলড জেসিকা ছিল ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বিদ্যার প্রথম চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি জেসিকা লাল হত্যা মামলার উপর ভিত্তি করে নির্মিত। যেখানে তার ভূমিকার জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সময়, বিদ্যা গুপ্তের জেদের ওপর লালের সঙ্গে সাক্ষাত করেন নি।[৫৫] চলচ্চিত্রটি সমালোচকদের নিকট থেকে বিপরীত পর্যালোচনা লাভ করে, কিন্তু বিদ্যার কর্মক্ষমতা বিশেষ প্রশংসিত হয়েছিল। দ্য হিন্দু বিদ্যার ক্ষমতা সম্পর্কে মন্তব্য করে, "তার আবেগ নিয়ন্ত্রণে মহিমান্বিত",[৫৬] এবং রেডিফ.কম এর সাভেরা সোমেশ্বর বলেন, "তার দ্বিধাগ্রস্ত শরীরের ভাষা, তার বিশ্বাস, তার অসহায়ত্ব, তার ক্রোধ, তার দুঃখ এবং তার কৃতজ্ঞতা সব সুন্দরভাবে উপস্থিত হয়েছে।"[৫৭] চলচ্চিত্রটি ₹৪৯০ মিলিয়ন (ইউএস$ ৫.৯৯ মিলিয়ন) রূপী আয় করে এবং পুরুষ নেতৃত্বের অভাবে থাকা সত্ত্বেও বাণিজ্যিক সাফল্য অর্জনের দৃষ্টান্ত রেখেছে।[৫৮] চলচ্চিত্রটির জন্য বিদ্যা শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার মনোনয়ন পান।[৫৯] মার্চ ২০১১ সালে, বিদ্যার চলচ্চিত্র বলিউড অ্যান্ড বিয়ন্ড উৎসবের অংশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়।[৬০] সেই বছরেই, বিদ্যার অতিথি উপস্থিতি ঘটে সন্তোষ সিভান পরিচালিত উরুমি মালায়ালম ভাষার ফ্যান্টাসি চলচ্চিত্রে।[৬১]
বিদ্যার পরবর্তী চলচ্চিত্র ছিল একতা কাপুর প্রযোজিত দ্য ডার্টি পিকচার, যা বিতর্কিত ভারতীয় অভিনেত্রী সিল্ক স্মিতার জীবন-মৃত্যুর উপর ভিত্তি করে নির্মিত একটি জীবনীমূলক চলচ্চি্ত্র।[৬২] বিদ্যা এখানে সিল্ক চরিত্রে উপস্থিত হন, যিনি ছিলেন—বিদ্যার ভাষায়—"তার টীটপনার জন্য পরিচিত।"[৬৩] তিনি "সাহসী" ভাবে তার চরিত্র বর্ণনা করেছেন, যার জন্য "অনেক মানসিক প্রস্তুতির প্রয়োজন," ছিল এবং এর জন্য তিনি ১২ কিলোগ্রাম (২৬ পা) ওজন বাড়িয়েছিলেন।[৬৪] চলচ্চিত্র প্রধান সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে, এবং বিদ্যা অনেক সমালোচকের কাছ থেকে তখন পর্যন্ত তার সর্বোত্তম কর্মসঞ্চালনের জন্য সর্বসম্মত প্রশংসা পেয়েছিলেন।[৬৫][৬৬][৬৭] খালিদ মোহাম্মদ বলেন, "তিনি অসাধারণ: সাহসিকতাপূর্ণ, ধারাবাহিকভাবে চরিত্রের এবং তার অন্ধকার দিক প্রকাশে সাহসী।"[৬৮] তার পরিচালক মিলান লুথারিয়া তাকে "সেক্স সিম্বল" শিরোনামের সমসাময়িক দাবিদার হিসেবে বর্ণিত করেন এবং শ্রীদেবী ও বৈজয়ন্তীমালার মত সাবেক অভিনেত্রীদের সঙ্গে তুলনা করেন।[৬৯] চলচ্চিত্রটিকে অবশেষে ব্লকবাস্টার হিট ঘোষণা করা হয়, যা বিশ্বব্যাপী ₹ ১.১৪ বিলিয়ন (ইউএস$ ১৩.৯৩ মিলিয়ন) আয় করে।[১৯] বিদ্যা এই চলচ্চিত্রে জন্য তার দ্বিতীয় ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, একটানা তৃতীয়বারের মতো স্ক্রিন পুরস্কার, এবং প্রথমবারের মত শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।[৫৪][৭০]
বিদ্যা সুজয় ঘোষ পরিচালিত কাহানী (২০১২) চলচ্চিত্রের জন্য, বিদ্যা বাগচী হিসেবে অভিনয় করেন, যে চরিত্রটিতে একজন গর্ভবতী মহিলা তার স্বামীর সন্ধান করে। এই থ্রিলারপি, দুর্গাপূজা উৎসবের সময় কলকাতা শহরে চিত্রিত হয়েছিল, এবং সমালোচকদের দ্বারা ব্যাপক প্রশংসিতও হয়েছিল। তার অংশের সত্যতা প্রমাণ দিতে, বিদ্যা বিভিন্ন গর্ভবতী মহিলাদের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাদের জীবনাচার সম্পর্কে অধ্যয়ন করেন।[৭১] চলচ্চিত্রের প্রচারমূলক কার্যক্রমের সময় তিনি একটি নকল বেবি বাম্ব পরিধান করার মধ্য দিয়ে মিডিয়ার মনোযোগ আকর্ষণ করেন।[৭২][৭৩] বিদ্যা কাহানী চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্যও প্রশংসা লাভ করেন। সুভাষ কে. ঝা বিদ্যার চরিত্র চিত্রায়ন সম্পর্কে মন্তব্য করেন; টেলিগ্রাফের প্রিতম ডি. গুপ্তও প্রশংসনীয় মন্তব্য রাখেন।[৭৪][৭৫] কাহানি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই প্রধান বাণিজ্যিক সাফল্য অর্জনের পাশাপাশি বক্স অফিসে ₹ ১.০৪ বিলিয়ন (ইউএস$ ১২.৭১ মিলিয়ন) এর অধিক আয় করে।[৭৬] বিদ্যা পরপর চতুর্থ বারের মতো শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর স্ক্রিন পুরস্কার এবং শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন।[৭৭][৭৮]
২০১৩ কান চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারক সদস্যের দায়িত্ব সম্পূর্ণ করার পর, বিদ্যা একটি পাঞ্জাবি নারী চরিত্রে ইমরান হাশমীর বিপরীতে উপস্থিত হন রাজ কুমার গুপ্ত পরিচালিত ঘনচক্কর কমিক-থ্রিলার চলচ্চিত্রে।[৭৯][৮০] সমালোচকরা এই চলচ্চিত্র বিষয়ে উৎসাহী ছিলেন না এবং এটি বক্স অফিসে সামান্য আয় করে।[৮১] বিদ্যা পরবর্তীতে মহাভারত থ্রিডি অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রে দ্রৌপদী চরিত্রে কণ্ঠ দেন, যা একই নামে রচিত ভারতীয় মহাকাব্য অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে। [৮২]
রোমান্টিক কমেডি চলচ্চিত্র শাদী কে সাইড এফেক্টস ছিল ২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বিদ্যার প্রথম চলচ্চিত্র। সাকেত চৌধুরী পরিচালিত চলচ্চিত্রে তার সহ-অভিনেতা হিসেবে ছিলেন ফারহান আখতার। চলচ্চিত্রটি একটি বিবাহিত দম্পতির প্রথম সন্তান জন্মগ্রহণের পর নানান ব্যাঙ্গাত্মক ঘটনার সম্মুখীন হবার গল্প বর্ণনা করে। সমালোচকরা চলচ্চিত্রটির বিরূপ সমালোচনা করলেও বিদ্যা ও আখতারের অভিনয়ের প্রশংসা করেন।[৮৩] এছাড়াও ২০১৪ সালে, বিদ্যা নো মোর কামজোর নামে নারী ক্ষমতায়নের উপর একটি বিশেষ টেলিভিশন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রয়িতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৮৪] সে বছর তার মুক্তিপ্রাপ্ত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ছিল ববি জাসুস, যেখানে তিনি একটি হায়দ্রাবাদি নারী চরিত্রে উপস্থিত হন যিনি ছিলেন একজন গোয়েন্দা অভিকাঙ্ক্ষী।[৮৫] হায়দ্রাবাদি উচ্চারণ আত্মস্থ করতে প্রশিক্ষকের কাছে ভাষা শিক্ষা নেন তিনি।[৮৬] যদিও শাদী কি সাইড এফেক্টস ও ববি জাসুস, দুইটি চলচ্চিত্রই আর্থিকভাবে ব্যর্থ হয়।[৮৭]
২০১৫ সালে, বিদ্যা মোহিত সুরি পরিচালিত হামারি আধুরি কাহানী চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, যা ছিল হাশমীর সঙ্গে তার তৃতীয় কাজ। মহেশ ভাট পরিকল্পিত, চলচ্চিত্রটি বসুধা নামে এক একক মায়ের গল্প বর্ণনা করে যার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে।[৮৮][৮৯] মিড ডে পত্রিকার প্রতিবেদক শুভা শেঠী প্রতিবেদন করেন, "বিদ্যা বালান, চেহারায় হাজার অনুভূতিমিশ্রিত একজন চমৎকার অভিনেত্রী, যিনি কী করতে সমর্থ তা তার শুরুর চলচ্চিত্রসমূহে আমরা দেখেছি। কিন্তু এখানে, ভিন্নরূপ।"[৯০] জুন ২০১৫ সালের হিসাবে, বিদ্যা আমেরিকান টেলিভিশন নেটওয়ার্কের একটি টক শো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রয়িতা হবার প্রতিশ্রুতি দেন।[৯১]
গণমাধ্যমসমূহ প্রায়ই বিদ্যা ও তাঁর সহ-অভিনেতাদের মধ্যেকার রোমান্টিক সম্পর্কের বিষয়ে অনুমান করে আসতো, যদিও বিদ্যা দৃঢ়ভাবে সেসকল প্রতিবেদন অগ্রাহ্য করতেন।[৯২][৯৩] ২০০৯ সালে, বিদ্যা যখন তার ওজন নিয়ে বিগত সম্পর্কের রাসায়নিক মন্তব্যের বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। তিনি বলেন, "যদি কারো আচরণ আপনার অবনতির কারণ হয়ে ওঠে, এটা আপনাকে ভাঙ্গতেও পারে। ফলে তারা ক্রমাগত আমার দোষ খুঁজে পেতে শুরু করে। এক পর্যায়ে, এটা সম্পর্ক থেকে দূরে সরে যেতে বাধ্য করে।"[৯৪] যদিও তিনি ব্যক্তিটির নাম প্রকাশ করেন নি, ট্যাবলয়েড এ প্রসঙ্গে এক প্রতিবেদন শহিদ কাপুরের (কিসমত কানেকশন চলচ্চিত্রে তার সহ-অতিনেতা) নাম প্রকাশ করে।[৯৫] যদিও কাপুর বিষয়টি অগ্রাহ্য করেন।[৯৬] মে ২০১২ সালের এক সাক্ষাতকারের সময়, বিদ্যা ঘোষণা দেন তিনি সিদ্ধার্থ রায় কাপুরের সঙ্গে ডেটিং করছেন, যিনি ছিলেন ইউটিভি মোশন পিকচার্সের সিইও।[৯৭] ১৪ ডিসেম্বর ২০১২ সালে, এই দম্পতি মুম্বইয়ের বান্দ্রায় একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানে বিয়ে করেন।[৯৮]
বিদ্যা কর্ণাটক সঙ্গীত প্রশিক্ষণ নেন এবং আংশিকভাবে ভরতনাট্যম ও কত্থক নৃত্য শিক্ষা নেন।[৯৯] তার ধর্মীয় মনোভাব সম্পর্কে বিদ্যা বলেন, "আমি একজন বিশ্বাসী ব্যক্তি এবং সর্বদা [স্রষ্টার সঙ্গে] আলাপচারিতায় থাকি কিন্তু গতানুগতিক, আনুষ্ঠানিক দৃষ্টিতে অতি ধার্মিক নই।"[১২] তিনি একজন নিরামিষাশী এবং ২০১১ ও ২০১২ সালে পিইটিএ নির্বাচিত "ইন্ডিয়া’স হটেস্ট ভেজিটেরিয়ান" হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।[১০০][১০১] তাঁর ওজন হ্রাস-বৃদ্ধির ঘটনা বছর জুড়ে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর একটি আলোচিত বিষয়।[১০২][১০৩][১০৪]
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি, বিদ্যা মানবহিতৈষী কার্যক্রম প্রসার এবং বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সহায়ক হিসেবে কাজ করেছেন। মার্চ ২০১১ সালে, তিনি ভারতে ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের আর্থ আওয়ার প্রচারাভিযানে সমর্থন জানান।[১০৫] তিনি ভারতে পুষ্টির জন্য কলকাতা ভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান চাইল্ড ইন নিড ইনিস্টিটিউটে (সিআইএনআই) প্রচারাভিযান চালান।[১০৬] সেপ্টেম্বর ২০১২ সালে, বিদ্যা উত্তর প্রদেশের মির্জাপুর অঞ্চলের একটি গ্রামে ভ্রমণ করেন, যেখানে তিনি শিশুদের শিক্ষা এবং নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য একটি প্রচারাভিযান সঞ্চালন করেন।[১০৭] বিদ্যা ২০১২ সালে, নারী ক্ষমতায়নে তার পদক্ষেপের জন্য কলকাতা চেম্বার অব কমার্স কর্তৃক দ্য প্রভা ক্ষিতন পুরস্কার লাভ করেন; যেখানে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ পুরস্কার বিজয়ী।[১০৮] বিদ্যা এছাড়াও ভারত সরকার কর্তৃক স্বাস্থ্যরক্ষা-বিষয়ক অবস্থার উন্নয়নের জন্য ব্র্যান্ড দূত হিসেবে নিযুক্ত হন।[১০৯] আগস্ট ২০১৩ সালে, তিনি নিউ ইয়র্ক সিটিতে অনুষ্ঠিত ভারত দিবস প্যারেডে গ্র্যান্ড মার্শাল হিসেবে ভূমিকা রাখেন।[১১০] সে বছরের সেপ্টেম্বরে, তিনি উত্তর প্রদেশের থানাপুর গ্রামের স্বল্প প্রাধিকারপ্রাপ্ত শিশুদের জন্য প্রযুক্তি-ভিত্তিক একটি শিক্ষন প্লাটফর্ম চালু করেন।[১১১] ২০১৫ সালের বিশ্ব নারী দিবসে, বিদ্যা ভারতের নারীদের সমস্যা বিষয়ে হিন্দুস্থান টাইমসে কলাম লিখেন।[১১২]
পরিণীতা এবং লাগে রাহো মুন্না ভাই চলচ্চিত্রের সাফল্যের পরবর্তীতে, বিদ্যার অভিনীত চলচ্চিত্রের চরিত্রসমূহ সমালোচনামূলক বিশ্লেষনের বিষয় হয়ে উঠেছে।[১১৩] ভির সঙ্গভী উল্লেখ করেন, হেই বেবি ও কিসমত কানেকশন চলচ্চিত্র দুইটি ছিল "অদ্ভুত চলচ্চিত্র [...] যেখানে তিনি (বিদ্যা) যা নন তাই প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন।"[১২] বিদ্যা তাঁর কর্মজীবনের এই সতন্ত্র অবস্থার বর্ণনা করেন "পরিশ্রমেই সাফল্য ঘটে" বলে।[১১৪] তার চলচ্চিত্র নির্বাচন সমালোচিত হওয়ায়, বিদ্যা প্রচলিত রীতি অনুযায়ী চরিত্র নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেন।[১১৫] গণমাধ্যমে সদস্যরা পরবর্তীকালে তার পছন্দ "সাহসী" হিসেবে উল্লেখ করেন।[১১৬][১১৭]
হেই বেবি ও কিসমত কানেকশন চলচ্চিত্রে তার অভিনীত চরিত্রের "প্রশ্নসাপেক্ষ পোশাক ভাণ্ডার" গণমাধ্যমের মনোযোগ আকর্ষণ করে। একাধিক প্রকাশনা তাঁকে "বাজে পোশাকের অভিনেত্রী" হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে এবং তাঁর ভারী শারীরিক গঠনের কারণে পাশ্চাত্য পোশাকের অসামঞ্জস্যতা নিয়েও মন্তব্য করে।[১১৮][১১৯][১২০] পরবর্তীতে পাবলিক অনুষ্ঠানসমূহে শাড়ি পরিধানের জন্য তিনি গণমাধ্যমে প্রশংসিত হন; ডিজাইনার নীহারিকা খান বর্ণনা করেন, "বিদ্যার সৌন্দর্য তার শরীরের বাঁকে-বাঁকে। বিদ্যার স্বস্তি তার ইন্দ্রিয়সুখাবহে এবং এ কারণেই শাড়িই তার পছন্দ।" বিদ্যা পরিচিত "যৌনতার ইংরেজিকরণ" এবং "খাঁটি ভারতীয় যৌনতার" প্রতিচ্ছবি হিসেবে।[১২১]
পা, ইশকিয়া, নো ওয়ান কিলড জেসিকা, দ্য ডার্টি পিকচার এবং কাহানি চলচ্চিত্রে শক্তিশালী নারী প্রধান চরিত্র অভিনয় করার পর, বিদ্যা বলিউডে নায়িকাদের গদবাঁধা প্রতিকৃতির ভাঙ্গনে আন্দোলনে জন্য দিয়েছেন।[১২২][১২৩] তার শেষ দুটি প্রধান বাণিজ্যিক সাফল্যের একটি হল "ফিমেল হিরো" নাম অর্জন।[৬৫][১২৪] এবং ফার্স্ট পোস্টের কল্পনা নায়ার উল্লেখ করেন যে এই দুটি চলচ্চিত্রে বিদ্যা তার চরিত্র অগ্রণী ভূমিকা রাখেন যা সাধারণত ত্রিশউদ্ধো অভিনেত্রীদের দেওয়া হয়।[১২৫]
বিদ্যা পরপর দুই বছর (২০১০–১১) রিডিফ.কম কর্তৃক তাদের বাৎসরিক "বলিউডের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী" হিসেবে শীর্ষ সারিতে অবস্থান নিয়েছিলেন।[১১৬][১২৬] এছাড়াও ২০০৫, ২০০৫, ২০০৯ এবং ২০১২ সালের তালিকায় তিনি বৈশিষ্টায়িত হয়েছিলেন।[১২৭][১২৮][১২৯][১৩০] ২০১০ সালে, তিনি ফিল্মফেয়ার-এর "উইমেন উই লাভ" তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন।[১৩১] ২০১২ সালে, ভেয়ার্ব পত্রিকা তাকে ভারতের "ইয়ং পাওয়ার উইমেন" হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।[১৩২] ২০১৪ সালে, বিদ্যা বিনোদন শিল্পে তার অবদানের জন্য পদ্ম শ্রী পদকে ভূষিত হন, যা ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক।[১৩৩] পরবর্তী বছর, রাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি সম্মানসূচক ডক্টর অব আর্টস গ্রহণ করেন; এছাড়াও এ বিশ্ববিদ্যালয়ে দারিদ্রপীড়িত মেয়েদের জন্য তার নামকরণে একটি বৃত্তি কর্মসূচী চালু করা হয়।[১৩৪] বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যাঞ্চেলর, হরবীন অরোরা বলেন, "আইকনিক অভিনেত্রীদের মধ্যে, বিদ্যা সব দিক থেকে অগ্রগণ্য। তার চলচ্চিত্র ভারতীয়তা এবং শক্তিশালী নারী ভ্রাতৃত্ববোধের প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম।"[১৩৫]
বিদ্যার চলচ্চিত্র পুরস্কারের মধ্যে দ্য ডার্টি পিকচার (২০১১) চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য একটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার,[৭০] এবং পাঁচটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার: পরিণীতা (২০০৫) চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ নারী অভিষেক,[৩০] পা (২০০৯), দ্য ডার্টি পিকচার (২০১১),[৫৪] ও কাহানী (২০১২),[৭৮] চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী,[৩০] এবং ইশ্কিয়া (২০১০) চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য সমালোচক পুরস্কার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।[৫৪]