অনুগ্রহ করে এই নিবন্ধ বা অনুচ্ছেদটি সম্প্রসারণ করে এর উন্নতিতে সহায়তা করুন। অতিরিক্ত তথ্যের জন্য আলাপ পাতা দেখতে পারেন।
|
একটি বিদ্যুৎ ব্যবস্থা হলো বৈদ্যুতিক শক্তি সরবরাহ, পরিবহন এবং ব্যবহারের জন্য বৈদ্যুতিক উপাদান দিয়ে তৈরি একটি নেটওয়ার্ক৷ বিদ্যুৎ ব্যবস্থার একটি উদাহরণ হলো "বৈদ্যুতিক গ্রিড" যেটি বিস্তৃত আকারের জায়গায় বিদ্যুৎ প্রদান করে। একটি বৈদ্যুতিক গ্রিড শক্তি ব্যবস্থাকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়; যথা: বৈদ্যুতিক জেনারেটর যা বিদ্যুৎ সরবরাহ করে, বিদ্যুৎশক্তি সঞ্চালন ব্যবস্থা যা বিদ্যুৎ পরিবহন করে এবং বিদ্যুৎশক্তি সরবরাহ ব্যবস্থা যা কাছের ঘর বাড়ি ও শিল্প কারখানায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়। বিভিন্ন শিল্প কারখানা, হাসপাতাল, বাণিজ্যিক দালান ও বাড়িতে ছোট বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা থাকে। এই পদ্ধতিগুলোর বেশিরভাগই থ্রি-ফেজ বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল―যা বর্তমান বিশ্বে বৃহৎ পরিসরে বিদ্যুৎ শক্তি সঞ্চালন এবং বণ্টনের জন্য আদর্শ হিসেবে পরিচিত। বিশেষায়িত শক্তি ব্যবস্থাসমূহ যা থ্রি-ফেজ বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল নয় এমন ব্যবস্থাসমূহ উড়োজাহাজ, বৈদ্যুতিক রেল, সমুদ্রে মাছ ধরার নৌকা, সাবমেরিন এবং মোটর গাড়িতে দেখা যায়।
১৯৮১সালে, দুইজন তড়িৎকর্মী ইংল্যান্ডের গোডালমিংয়ে বিশ্বের প্রথম বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নির্মাণ করে। এটিতে মূলত শক্তি প্রদান করতো দুটি জলচালিত টার্বাইন যা ২৫০ ভোল্টের সাতটি সিমেন্স আর্ক বাতি ও ৪০ ভোল্টের ৩৪টি ভাস্বরদীপ জ্বালানোর জন্য বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে সক্ষম ছিল।[১] বাতিগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ সবিরাম ছিল এবং ১৮৮২ সালে টমাস এডিসন ও তাঁর কোম্পানি, দ্যা এডিসন ইলেক্ট্রিক লাইট কোম্পানি, নিউ ইয়র্ক শহরের পার্ল স্ট্রিটে প্রথম বাষ্প-চালিত পাওয়ার স্টেশন নির্মাণ করেন। এই পার্ল স্ট্রিট স্টেশনটি ৫৯ জন ক্রেতার জন্য ৩,০০০টি বাতিতে বিদ্যুৎ প্রদান করতো।[২][৩] এই পাওয়ার স্টেশন একমুখী তড়িৎ প্রবাহ উৎপন্ন করতো ও একক ভোল্টেজে কাজ করতো। সরাসরি বিদ্যুৎ শক্তিকে উচ্চ ভোল্টেজে পরিবর্তন করা সহজ নয় যার কারণে দূরবর্তী স্থানে স্থানান্তর করার ক্ষেত্রে শক্তির অপচয় কমানো যায় না। এজন্য, উৎপাদনকেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ ৮০০ মিটার দূরে বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব হতো।
একই বছর লন্ডনে, লুসিয়েন গলার্ড এবং জন ডিক্সন গিবস "সেকেন্ডারি জেনারেটর" প্রদর্শন করেন, যেটি বাস্তব বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় ব্যবহার করার মতো প্রথম ট্রান্সফরমার ছিল।[৪] গলার্ড এবং গিবসের এই ট্রান্সফরমারের বাস্তবিক অংশ প্রদর্শন করা হয় ১৮৮৪ সালে তুরিনে, যেখানে এই ট্রান্সফরমার ব্যবহার করে রেলওয়ের ৪০ কিলোমিটার (২৫ মাইল) বিদ্যুৎ প্রদান করা হয়েছিল।[৫] এই ব্যবস্থার সফলতার পাশাপাশি, ঐ দুজন এই ব্যবস্থাপনায় কিছু ভুলও ধরেছিলেন।
১৮৮৫ সালে, গাঞ্জ এন্ড কো. এর অট্ট ব্লাথি গলার্ড এবং গিবসের জেনারেটরে একটি বদ্ধ লোহার খণ্ড যুক্ত করেন। একই বছরে, ব্লাথি এবং সেই কোম্পানির আরও দুই জন ইঞ্জিনিয়ার জিবিডি ব্যবস্থা নির্মাণ করেন। এটি তৈরি করতে তাঁরা ১৮৮৩ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী আর. কেনেডির প্রস্তাবিত সমান্তরাল এসি পরিবরহনকে ব্যবহার করেন। এই ব্যবস্থাকে বুদাপেস্টের ন্যাশনাল জেনারেল এক্সিবিশনে ১৮৮৫ সালে উপস্থাপন করা হয়।
১৮৮৮ সালের মাঝে, বৈদ্যুতিক শক্তি শিল্পের উন্নতি হয়, এবং পাওয়ার কোম্পানিগুলো হাজারো বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা নির্মাণ করেছিল (সরাসরি এবং বিকল্প বিদ্যুৎ) যুক্তরাষ্ট্রে এবং ইউরোপে। ১৮৯১ সালে কলোরাডোর তেল্লুরিডে ওয়েস্টিংহাউজ বৃহৎ শক্তি ব্যবস্থার নকশা করে যা ছিল ১০০ অর্শ্বক্ষমতার (৭৫ কিলোওয়াট)।
উনিশ শতক পর্যন্তও শক্তি ব্যবস্থার উন্নয়ন জারি থাকে। ১৯৩৬ সালে প্রথম পারদের বাল্ব দ্বারা উচ্চ বিভবের একমুখী বিদ্যুৎ লাইন (এইচভিডিসি) নির্মাণ করা হয়, যেটি ছিল নিউ ইয়র্কের স্কেনেকটাডি ও মেকানিকভিলের মাঝে।[৬] ১৯২৮ সালে সাধারণ বৈদ্যুতিক ব্যবহারের উপযোগী প্রথম সলিড স্টেট ধাতুর ডায়োড তৈরি করে আর্নস্ট প্রেসার জার্মানির টেকাডেতে। এটিতে অ্যালুমিনিয়াম প্লেটের উপর সেলেনিয়ামের স্তর ব্যবহার করা হয়েছিল। ১৯৫৭ সালে, একটি সাধারণ বিদ্যুৎ গবেষক দল একটি সলিড স্টেট পি-এন-পি-এন সুইচ যন্ত্র নির্মাণ করে যেটিকে ১৯৫৮ সালের পূর্বেই সফলভাবে বাজারজাত করা হয়, এটি বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব ঘটিয়ে দেয়। ১৯৫৭ সালে সিমেন্স একটি সলিড স্টেট রেক্টিফায়ার তৈরি করে।
বৈদ্যুতিক শক্তি দুটি রাশি থেকে উৎপন্ন: তড়িৎ প্রবাহ এবং তড়িৎ বিভব। এই দুটি রাশি সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে (এসি শক্তি) আবার স্থির মাত্রায় থাকতে পারে (ডিসি শক্তি)।
বেশিরভাগ রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার, পাম্প এবং শিল্প কারখানার মেশিন এসি শক্তি দিয়ে চলে; অপরদিকে, বেশিরভাগ কম্পিউটার ও ডিজিটাল উপাদান ডিসি শক্তি ব্যবহার করে। বিভিন্ন ভোল্টেজের মাঝে পরিবর্তনে এসি পাওয়ার সুবিধাজনক এবং বর্তনীহীন যন্ত্রপাতিও এটিকে ব্যবহার করতে পারে। ডিসি পাওয়ারকে উচ্চ ভোল্টেজের মাধ্যমে দূরবর্তী স্থানে প্রেরণে অনেক বেশি সাশ্রয়ী।
এসি শক্তির ভোল্টেজকে সহজে স্থানান্তর করার দুটি কারণ রয়েছে: প্রথমত, উচ্চ ভোল্টেজের মাধ্যমে খুব কম শক্তির অপচয়ে শক্তিকে দূরবর্তী স্থানে স্থানান্তর করা যায়। দ্বিতীয়ত, উচ্চ ভোল্টেজ উৎপন্ন করতে পারে এমন টার্বাইন অনেক বেশি সাশ্রয়ী।
সকল শক্তি ব্যবস্থারই এক বা একাধিক শক্তি উৎস থাকে। কিছু শক্তি ব্যবস্থার জন্য, শক্তির উৎস বাহ্যিক হয়, তবে অন্যান্যদের জন্য, এটি শক্তি ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হয়। সরাসরি বিদ্যুৎ শক্তি ব্যাটারি,জ্বালানি কোষ বা সৌর কোষ দ্বারা সরবরাহ করা হয়। বিকল্প বিদ্যুৎ শক্তি রটার দ্বারা উৎপন্ন হয় যেটি টার্বো জেনারেটর নামক যন্ত্রের চৌম্বক ক্ষেত্রে ঘুর্নায়মান থাকে। একটি টার্বাইনের রটারকে ঘুরানোর জন্য বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে। যেমন, জীবাশ্ম জ্বালানি (কয়লা, তেল এবং গ্যাস) বা নিউক্লিয়ার শক্তি, জলবিদ্যুৎ এবং বায়ু (বায়ু শক্তি) দ্বারা।
রটার ঘুর্ণনের গতি ও জেনারেটরের মেরুর উপর বিদ্যুৎ উৎপন্নের পরিমাণ নির্ভর করে।
শক্তি ব্যবস্থা লোডে শক্তি স্থানান্তর কর এবং এই লোডগুলো হলো ঘরের জিনিসপত্র থেকে শিল্পকারখানার যন্ত্রপাতি পর্যন্ত। বেশিরভাগ লোডই নির্দিষ্ট ভোল্টেজে কাজ করে, বিকল্প বিদ্যুৎ যন্ত্রের জন্য নির্দিষ্ট কম্পাঙ্ক প্রয়োজন হয়। আবাসিক এলাকার আসবাবপত্র সাধারণত একক-দশায় ৫০ বা ৬০ হার্জে কাজ করে যাদের ভোল্টেজ হয় ১১০ এবং ২৬০ ভোল্টের মাঝে (জাতীয় এককের উপর ভিত্তি করে)। প্রত্যেক বৈদ্যুতিক জিনিসের ওয়াট নির্দেশনা রয়েছে যা ঐ যন্ত্রটি কতো শক্তি গ্রহণ করে তা নির্দেশ করে।সব কাজের জন্যই শক্তি প্রয়োজন।
কন্ডাক্টর জেনারেটর থেকে লোডে শক্তি স্থানান্তর করে। যেকোনো গ্রিডে কন্ডাক্টরকে বিদ্যুৎশক্তি সঞ্চালন ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করা যায়, যেটি উচ্চ ভোল্টেজের বিশাল পরিমাণ শক্তি পরিবহন করে (সাধারণত ৬৯ কিলোভাইটের অধিক) উৎপাদন কেন্দ্র থেকে লোড কেন্দ্রে। আবার এটিকে সরবরাহ ব্যবস্থারও অন্তর্ভুক্ত করা যায় কারণ এটি লোড কেন্দ্র থেকে বাড়ি বা শিল্পকারখানায় কম পরিমাণ শক্তি নিম্ন ভোল্টেজে সরবরাহ করে (সাধারণত ৬৯ কিলোভাইটের কম)।
খরচ ও অন্যান্য চাহিদার উপর ভিত্তি করে কন্ডাক্টর নির্বাচন করা হয়। অ্যালুমিনিয়াম থেকে তামার কম রেজিস্টিভিটির কারণে এটিকে বেশিরভাগ বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় ব্যবহার করা হয়। যদিও, অ্যালুমিনিয়াম একই পরিমাণ বিদ্যুৎ বহন করতে পারে কম খরচে ও পরিবহন তারের কন্ডাক্টর হিসেবে এই ধাতুই প্রধানত ব্যবহার করা হয়।
বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় ক্ষতি ও আঘাত এড়ানোর জন্য নানা সুরক্ষা যন্ত্র থাকে। একটি প্রয়োজনীয় সুরক্ষা যন্ত্র হলো ফিউজ। যখন ফিউজ দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ থেকে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় তখন ফিউজের ভেতরের পদার্থ গলে যায়। এতে করে বর্তনীটি অপূর্ণ হয়ে যায় ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। বর্তনীজনিত কোন ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ফিউজ হলো একটি আদর্শ পন্থা, কোন ব্যবস্থার দুর্বল অংশে এটি যুক্ত করা যেতে পারে। যদিও ফিউজের দুটি সমস্যা রয়েছে: প্রথমত, তাদের কাজ শেষ হলে তাদেরকে পরিবর্তন করতে হয়, একই ফিউজ পুনরায় ব্যবহার করা যায় না। এটি একটি অসুবিধার কারণ হতে পারে যদি ফিউজটি দূরে কোন জায়গায় থাকে বা অতিরিক্ত কোন ফিউজ হাতের নাগালে না থাকে। আর দ্বিতীয়ত, বেশিরভাগ বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় ফিউজ সুরক্ষা উপযুক্ত নয়।
প্রথম সমস্যাটি সমাধান করা যায় সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করে - যেটি বিদ্যুৎ প্রবাহ বিচ্ছিন্ন করার পর পুনরায় ব্যবহার করা যায়।
শক্তি ব্যবস্থার একটি প্রধান অসুবিধা হলো মোট ব্যবহৃত শক্তি ও অপচয় আর মোট উৎপন্ন শক্তির পরিমাণ সবসময় সমান হতে হয়। যদি ব্যবহৃত শক্তির থেকে বেশি শক্তি উৎপন্ন হয় তবে পুনরাবৃত্তির হার বৃদ্ধি পাবে ও বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দিবে।
সাধারণ উপাদানের পাশাপাশি, নকশা ও কার্যকারিতার উপর ভিত্তি করে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাগুলো বিভিন্ন রকম হয়। এই অংশে কিছু সাধারণ বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার ধরন ও তাদের কার্যক্রমকে বর্ণনা করা হয়েছে।
আবাসিক এলাকায় সাধারণত নিম্ন ভোল্টেজের পরিবহন লাইন বা তার থেকে বিদ্যুৎ দেয়া হয়। এগুলো ১১০ এবং ২৬০ ভোল্ট (ফেজ থেকে ভূমি) ভোল্টেজের মাঝে কাজ করে, জাতীয় এককের উপর ভিত্তি করে।
বাণিজ্যিক বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা (যেমন শপিং সেন্টার বা উচুঁ দালানগুলোতে) আবাসিক এলাকার বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা থেকে আকারে বড় হয়।