বিবর্ধক কাচ হলো এক প্রকার উত্তল লেন্স, যেটি কোনো বস্তুর বিবর্ধিত প্রতিবিম্ব গঠন করে। কোনো একটি ফ্রেম বা ভিত্তিকাঠামোর সঙ্গে হ্যান্ডল বা হাত যুক্ত করে তার উপর লেন্সটি রাখা হয়। আলোকরশ্মির কেন্দ্রীভূতকরণে বিবর্ধক লেন্স ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় আগুন ধরানোর জন্য সৌররশ্মিগুলোকে বিবর্ধক কাচে কেন্দ্রীভূত করা হয়।
শিট ম্যাগনিফায়ার বা বিবর্ধক অনেকগুলো সরু আংটি আকৃতির লেন্স নিয়ে গঠিত। অনেকগুলো একক লেন্সের সমন্বয়ে এ ধরনের বিবর্ধক কাচ তৈরি করা হয়। তবে এটি তুলনামূলক পাতলা হয়ে থাকে। এ ধরনের লেন্স "ফ্রেনেলের লেন্স" নামেও পরিচিত।
বিবর্ধক কাচ গোয়েন্দাকাহিনীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যেমন - স্যার আর্থার কোনান ডয়েল রচিত শার্লক হোমসের গোয়েন্দাকাহিনীগুলোতে এর প্রচুর উল্লেখ পরিলক্ষিত হয়।
কয়েক সহস্রাব্দ ধরে মধ্যপ্রাচ্য ও ভূমধ্যসাগরীয় অববাহিকায় বিবর্ধক কাচ ব্যবহৃত হতো।[১] ৪২৪ খ্রিস্টপূর্বে অ্যারিস্তোফানেস রচিত "দি ক্লাউস" নাটকের একটি কৌতুকে এর ব্যবহার দেখা যায়। নাটকে দেখা যায়, একটি শুকনো কাঠে আগুন ধরানোর উদ্দেশ্যে এক ব্যক্তি ঔষধালয়ে বিবর্ধক কাচ ক্রয় করতে যান। রোমান লেখক প্লিনি দ্য এল্ডার রচিত একটি নাটকেও এর উল্লেখ রয়েছে। সেখানে তিনি একটি জলপূর্ণ কাচের ভূগোলকের কথা বলেছেন। টীকাকার সেনেকা এ প্রসঙ্গে বলেন, অনেক ছোট কিংবা অনুজ্জ্বল অক্ষরও এর সাহায্যে দেখা যেত। হাসান ইবনে আল-হাইসাম রচিত ১০২১ সালের আলোকবিজ্ঞানবিষয়ক পুস্তকে উত্তল লেন্স ব্যবহার করে বিবর্ধক কাচ প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। [২] দ্বাদশ শতাব্দীতে আরব দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিকদের অনেক বই লাতিন ভাষায় অনূদিত হওয়া শুরু হয়। এগুলোর মধ্যে আল-হাইসামের বইটিও ছিল।ঐ বই পড়ে বিজ্ঞানী রজার বেকন ত্রয়োদশ শতাব্দীর ইংল্যান্ডে বিবর্ধক কাচের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে ইতালিতে তদনুযায়ী চক্ষু-চশমা নির্মাণের কাজ শুরু হয়।[২]
বিবর্ধক কাচের বিবর্ধন যে বিষয়টির উপর নির্ভর করে সেটি হলো- ব্যবহারকারীর চোখ ও অভীষ্ট বস্তুর মধ্যে কোথায় বিবর্ধক কাচটি স্থাপন করা হয়েছে। কৌণিক বিবর্ধনের উপর বিবর্ধন কাচের ক্ষমতা নির্ভর করে (আলোকীয় ক্ষমতার উপর নির্ভর করে না)। ব্যবহারকারীর চোখের রেটিনায় বিবর্ধক কাচসহ ও কাচছাড়া গঠিত বিম্বের আকৃতির অনুপাত। কাচছাড়া বিম্বে গঠিত আকৃতির ক্ষেত্রে এটা ধরে নেওয়া হয়, ব্যবহারকারী বস্তুটিকে নিজের চোখের সর্বনিম্ন ততটুকু দূরত্বে লক্ষ্যবস্তু নিয়ে আসবে, যে দূরত্বে বস্তুটি অস্পষ্ট দেখায় না। একে বলা হয়, "কোনো বস্তু দেখার নিম্নবিন্দু।" বয়সের সাথে সাথে নিম্নবিন্দুর মানের পরিবর্তন হয়। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে নিম্নবিন্দুর মান ৫ সেন্টিমিটার , অপরপক্ষে পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে এর মান ১ বা ২ মিটার। বিবর্ধক তৈরির ক্ষেত্রে নিম্নবিন্দুর আদর্শ মান ০.২৫ মিটার।
লেন্সকে একটি চোখের সবচেয়ে নিকটবর্তী (সর্বনিম্ন যে অবস্থানে বা যে দূরত্বে লেন্সটি নিয়ে এলে বস্তু অস্পষ্ট দেখায় না) অবস্থানে নিয়ে এলে এবং এর পর চোখ ও লেন্স একসাথে সরিয়ে নিলে সবচেয়ে ভালো ফোকাস পাওয়া যায়। আর সবচেয়ে ভালো ফোকাস পাওয়া গেলেই সর্বোচ্চ বিবর্ধন ক্ষমতা পাওয়া যাবে। নিম্নোক্ত সূত্রের আলোকে বিবর্ধন কাচের বিবর্ধন ক্ষমতা নিম্নোক্ত সূত্রের আলোকে ব্যাখ্যা করা যায়: MP0 = (0.25 m)Φ + 1,
এখানে Φ হলো ডায়োট্রপ এককে আলোকীয় ক্ষমতা এবং ০.২৫ মিটার হলো অনুমিত লক্ষ্যবিন্দু।