বিবিংকা

বিবিংকা ফিলিপাইনের এক প্রকার রাইস কেক -এর শ্রেণীভুক্ত খাবার যা ঐতিহ্যগতভাবে কলা পাতায় মুড়ে পোড়ামাটির চুলায় ভাপিয়ে রান্না করা হয় এবং সাধারণত সকালের প্রাতরাশ হিসাবে খাওয়া হয়। বিশেষ করে বড়দিনের মরসুমে মেরিন্ডা (মাঝ বিকেলের সময়ে গৃহীত খাবার) হিসেবে এটি খাওয়ার প্রচলন আছে।

বিবিংকা শব্দটি সাধারনভাবে ফিলিপিনো ভাপা রাইস কেক বোঝাতেও ব্যবহার হয়। বিভিন্ন প্রকার বিবিংকায় বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার হয়। উদাহরণস্বরূপ, কাসাভা, ময়দা ( বিবিংকাং কাসাভা / বিবিংকাং কামোতেং কাহয় এই দুই প্রকার বিবিংকাতে ব্যবহৃত হয়), আঠালো চাল (বিবিংকাং মালাগকিট -এ ব্যবহার হয়)। এছাড়াও সাধারন ময়দা দিয়ে তৈরি রাইসকেকও বিবিংকা নামে অভিহিত হয়।[]

উৎপত্তি

[সম্পাদনা]
বিবিংকা গালাপং নোনতা ডিমের টুকরো দিয়ে গ্রেট করা নারকেল এবং কেসং পুটি (কারাবাও পনির) দিয়ে রান্না করা হয়

ফিলিপাইন এবং ইন্দোনেশিয়া দেশ থেকে বিবিংকা খাবারটির উৎপত্তি। বিশেষ করে যে ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব অঞ্চল থেকে বিবিংকা-এর উদ্ভব বলে জানা যায়।[][]

কিছু লেখক নামের মিলের কারণে গোয়ান ডেজার্ট বেবিঙ্কা (বা বিবিক) এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় বিবিঙ্কার মধ্যে সংযোগের সূত্র টেনেছেন। তারা বিশ্বাস করেন যে হয়তো পর্তুগিজ অভিযাত্রী বা বনিকরা এই খাবারটি গোয়া থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রবর্তন করেছিলেন। কিন্তু ফিলিপাইনের যেসকল অঞ্চলে বিবিংকা সবচেয়ে বেশি প্রচলিত তা কখনই পর্তুগালের উপনিবেশ অঞ্চলের অন্তর্গত ছিল না। এছাড়াও এই দুই খাবার প্রকৃতিগতভাবে খুবই ভিন্ন। গোয়ান ডেজার্ট বেবিংকা হল ফিলিপিনো স্যাপিন-সাপিন এবং ইন্দোনেশিয়ান কুই ল্যাপিসের অনুরূপ। এটি একধরণের বিভিন্ন স্তরযুক্ত নারকেল পুডিং। এদিকে ফিলিপিনো বিবিংকা হল একটি ভাপানো আঠালো চালের রাইসকেক। দুটি খাবারের মধ্যে মিল এই যে বেবিঙ্কা এবং বিবিঙ্কা উভয় খাবারেই নারকেল দুধ ব্যবহার হয় এবং উভয়ই কেকেরই উপরের ও নীচের অংশে তাপ দিয়ে ভাপিয়ে রান্না হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চাল দিয়ে খাবারগুলি অনেক বেশি বৈচিত্র্যময়। চাল একটি প্রাচীন অস্ট্রোনেশিয়ান প্রধান ফসল বলে বিবেচিত।[][]

প্রস্তুতি

[সম্পাদনা]
বালিওয়াগে ঐতিহ্যগতভাবে প্রস্তুত বিবিংকা

বিবিংকার ঐতিহ্যবাহী রন্ধনপ্রনালী অনুসারে আঠালো চালকে একটি বিশেষ বয়ামে সারা রাত জলে ভিজিয়ে রাখতে হয় এবং তাতে বুবোড বা তুবা পাম ওয়াইন নামক বন্য খামির যোগ করা হয়। ভেজানো এবং গাঁজন করা চাল বেটে একটি মসৃণ এবং সান্দ্র পিটালি তৈরি করা হয় যাকে গলপং বলা হয়। চাল বাটার জন্য একটি পেষণযন্ত্র বা গিলিংগাং বাটো ব্যবহার করে। এর ফলে প্রস্তুত খাবারটিতে সামান্য টক বা গাঁজানো স্বাদ আসে।[] বিবিংকার ঐতিহ্যগত প্রস্তুতির সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। আধুনিক রন্ধন প্রনালীতে কখনও কখনও গালাপংয়ের জায়গায় নিয়মিত চালের আটা বা জাপানি মোচিকো আটা ব্যবহার করা হয়। ব্যবহৃত অন্যান্য উপাদানগুলিও সময়ের সাথে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত করা হয়েছে, তবে সবচেয়ে সাধারণ গৌণ উপাদান হিসাবে ডিম এবং দুধ ব্যবহার করা হয়।[][]

বিবিংকা রান্না করার সময়, একটি অগভীর টেরা কোটা বাটিতে একটি কলা পাতা স্থাপন করা হয়। তারপর বাটিটি আগে থেকে গরম করা কয়লার উপরে রাখা হয় এবং চালের আটা এবং জলের মিশ্রণটি কলার পাতায় এমনভাবে ঢেলে দেওয়া হয় যাতে এটি সরাসরি বাটিতে ছিটকে না যায়। তারপর টুকরো করে কাটা লবণযুক্ত ডিম এবং পনির ঢেলে রাখা ব্যাটারের উপরে যোগ করা হয়। এছাড়াও টপিং(খাবার সজ্জিত করার জন্য ব্যবহৃত উপাদান) হিসাবে পিনিপিগ (অপরিপক্ব ধানের দানা), চকলেট, ফল সংরক্ষণ করে তৈরি জ্যাম এবং আনারসও দেওয়া পারে। একটি একক বিবিংকাতে একটি দুটি বা ততোধিক টপিংয়ের মিশ্রণও থাকতে পারে। এইভাবে প্রস্তুত বিবিংকাকে বিশেষ বিবিংকা নামে উল্লেখ করা হয়।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Sweet and Sticky Pinoy Treats: Our Top 10 Kakanin"। www.spot.ph। জুন ২২, ২০১০। অক্টোবর ৮, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ৬, ২০১১ 
  2. Jerry Pinto (২০০৬)। Reflected in Water: Writings on Goa। Penguin Books India। পৃষ্ঠা 253–254। আইএসবিএন 9780143100812 
  3. Alan Davidson (২০১৪)। The Oxford Companion to Food। OUP Oxford। পৃষ্ঠা 684আইএসবিএন 9780191040726 
  4. The same process of soaking the rice, when extended for longer periods, results in traditional rice vinegars and rice wines (tapay).
  5. Gene Gonzalez (২০১৭)। The Little Kakanin Book। Anvil Publishing, Incorporated। আইএসবিএন 9789712731921 [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. Lilles, Cecile Lopez (সেপ্টেম্বর ৭, ২০০৬)। "Reclaiming the vanishing tradition of Filipino 'merienda'"PhilStar Global। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ৮, ২০১৮ 
  7. Jun Belen (ডিসেম্বর ২০, ২০১০)। "Feeling Sentimental and How to Make Bibingka (Christmas Rice Cakes)"। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ৬, ২০১১