ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | উইলিয়াম ম্যাল্ডন বিল উডফুল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | ম্যাল্ডন, ভিক্টোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া | ২২ আগস্ট ১৮৯৭|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ১১ আগস্ট ১৯৬৫ টুইড হেডস, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া | (বয়স ৬৭)|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ডাকনাম | দি আনবোল্যাবল, জিব্রাল্টারের রক, ওর্মকিলার, ওল্ড স্টিডফাস্ট | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উচ্চতা | ১.৮০ মিটার (৫ ফুট ১১ ইঞ্চি) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান, অধিনায়ক | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ১২৩) | ১২ জুন ১৯২৬ বনাম ইংল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ২২ আগস্ট ১৯৩৪ বনাম ইংল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯২২ - ১৯৩৪ | ভিক্টোরিয়া | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ |
উইলিয়াম ম্যাল্ডন বিল উডফুল, ওবিই (ইংরেজি: William Maldon Bill Woodfull; জন্ম: ২২ আগস্ট, ১৮৯৭ - মৃত্যু: ১১ আগস্ট, ১৯৬৫) ভিক্টোরিয়ার ম্যাল্ডন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯২০-এর দশক থেকে ১৯৩০-এর দশক পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন তিনি। এছাড়াও, অস্ট্রেলিয়া ও ভিক্টোরিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন ‘ওর্মকিলার’ ডাকনামে পরিচিত বিল উডফুল। তবে তিনি তার ব্যক্তিত্ব ও নৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ১৯৩২-৩৩ মৌসুমের বডিলাইন সিরিজে ভূমিকা রেখে স্মরণীয় হয়ে আছেন যা অ্যাংলো-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ক্রিকেট সম্পর্ক স্থিমিত পর্যায়ের দিকে চলে গিয়েছিল।
বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক উডফুল খেলোয়াড়দের মাঝে তার ধৈর্যশীলতা ও উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে রক্ষণাত্মক কৌশল অবলম্বন করতেন। দলের কঠিন পরিস্থিতিতে বেশ শান্ত, বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন। নিজ রাজ্যদলসহ অস্ট্রেলিয়া দলের ইতিহাসে অন্যতম সফলতম ভিক্টোরীয় বিল পন্সফোর্ডের সাথে উদ্বোধনী জুটি গড়েছিলেন।
কিশোর বয়সেই ক্রিকেটের দিকে ঝুঁকে পড়েন তিনি। কিন্তু যৌবনেই নিজেকে পরিচিতি ঘটিয়েছেন। ১৯ বছর বয়সে মেলবোর্নের জেলা প্রতিযোগিতায় তার অভিষেক ঘটে। কিন্তু কান্ট্রি টাউনে স্কুল শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পাবার প্রেক্ষিতে তার ক্রীড়াশৈলী ব্যাহত হয়। ১৯২১ সালে মেলবোর্নে ফিরে আসেন ও রাজ্যদল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষমতা দেখান। ২৪ বছর বয়সে ১৯২১-২২ মৌসুমে ভিক্টোরিয়া দলের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন তিনি। দ্বিতীয় খেলায় শতকের দেখা পান। ফলে, পরের মৌসুমে তাকে ব্যাটিং উদ্বোধনে নামানো হয় যা বাদ-বাকী খেলোয়াড়ী জীবনে একই অবস্থানে থাকেন। তার প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের প্রথম চার মৌসুমে ৬৫ গড়ে প্রায় তিন সহস্রাধিক রান তুলেছেন। ১৯২৪-২৫ মৌসুম শেষে চার ইনিংসে ৫২২ রান সংগ্রহ করেন। তন্মধ্যে তার সেঞ্চুরি ছিল তিনটি।
১৯২৫-২৬ মৌসুমে ২৩৬সহ তিন সেঞ্চুরি করলে ১৯২৬ সালে ইংল্যান্ড সফরের জন্য মনোনীত হন উডফুল। এ সফরে দলের অন্যতম সর্বশেষ খেলোয়াড় হিসেবে মনোনীত হয়ে তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষিক্ত হন। ঐ টেস্টের দুই ইনিংসেই দ্বি-শতক ও শতক হাঁকান। প্রত্যেক টেস্টেই অংশ নেন ও দুই সেঞ্চুরি করেন। এ সফরে আট সেঞ্চুরি করেন ও গড়ে অস্ট্রেলীয়দের মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করেন। এরফলে, উইজডেন কর্তৃক তাকে বর্ষসেরা পাঁচজন ক্রিকেটারের একজনরূপে ঘোষণা করা হয়।
অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসার পর পন্সফোর্ডের সাথে জুটি গড়ে। ১৯২৬-২৭ মৌসুমের শেফিল্ড শিল্ডে তারা ৩৭৫ রানে উদ্বোধনী জুটি গড়ে রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেন ও দলগত ১১০৭ রানের বিশ্বরেকর্ড গড়তে সহায়তা করেন। ঐ মৌসুমে উডফুলের ব্যাটিং গড় ছিল ৬৯.০০। পরের গ্রীষ্মে পন্সফোর্ড ও তার গড় ১২৫ অতিক্রম করে। প্রতিপক্ষের বোলারগণ নাস্তানুবাদ হয় ও ভিক্টোরিয়াকে খুব সহজেই শেফিল্ড শিল্ড জয় করতে সহায়তা করেন। ১৯২৮-২৯ মৌসুমে নিজ দেশে অনুষ্ঠিত অ্যাশেজ সিরিজে জ্যাক রাইডারের নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়া দলে তিনি সহঃ অধিনায়ক মনোনীত হন।[১] প্রথম টেস্টে উডফুল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করলেও নতুন রেকর্ড গড়ে পরাজিত হয় তার দল। ইংল্যান্ড খুব সহজেই ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করলেও শেষ চার টেস্টে তিনটিতে সেঞ্চুরি করেন। এছাড়াও প্রস্তুতিমূলক খেলায় ইংরেজদের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে নিজস্ব সর্বোচ্চ অপরাজিত ২৭৫* তোলেন। পরের মৌসুমে হাতের আঘাতের কারণে উডফুলের অগ্রসরে বিপত্তি ঘটে।
১৯৩০ সালে জ্যাক রাইডার বাদ পড়লে উডফুল অধিনায়কের দায়িত্ব পান। এরফলে ইংল্যান্ড সফরে দূর্বলতম দল নিয়ে যাত্রা করেন।[২] এটি অস্ট্রেলিয়া ত্যাগকারী সর্বকনিষ্ঠ দল ছিল এবং ইংল্যান্ড সফরে ১৫ সদস্যের মাত্র ৪জনের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল।[৩] ফলশ্রুতিতে ধারাভাষ্যকারগণ দলটিকে ‘উডফুলের কিন্ডারগার্টেন’ নামে অভিহিত করে।[৪] প্রথম টেস্টে হারার পর উডফুল সেঞ্চুরি করলে সিরিজে সমতা আনেন এবং পঞ্চম টেস্ট জয় করে অ্যাশেজ করায়ত্ব করেন। এ সফরে ছয়টি প্রথম-শ্রেণীর সেঞ্চুরি করেন। ১৯৩০-৩১ মৌসুমে পন্সফোর্ডের সাথে তার জুটি ভেঙ্গে যায় ও আর্চি জ্যাকসনের সাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নতুন জুটি গড়েন। কিন্তু, সিরিজে তিনি মাত্র ৩৪.০০ গড়ে ২০৪ রান তুললেও অস্ট্রেলিয়া ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় পায়। পরের মৌসুমে তিনি নিজেকে মেলে ধরেন। ঐ মৌসুমে তিনি নিজের সেরা টেস্ট সিরিজ খেলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭০.১৭ গড়ে ৪২১ রানসহ নিজস্ব সর্বোচ্চ টেস্ট রান ১৬১ করেন। অস্ট্রেলিয়া পাঁচ টেস্টের সবগুলোতেই জয় পেয়েছিল।
১৯৩২-৩৩ মৌসুমে সফরকারী ইংল্যান্ডের ভূমিকায় ব্যাপক বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে। ডগলাস জারদিনের নেতৃত্বাধীন সফরকারী দল অস্ট্রেলিয়ার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন-আপ ধ্বংসকল্পে পূর্ব-পরিকল্পনামাফিক শরীরের ঊর্ধ্বাংশ ও মাথা লক্ষ্য করে বোলিং করে যা ‘বডিলাইন কৌশল’ নামে পরবর্তীকালে পরিচিতি পায়। অস্ট্রেলীয় জনগণ ও ক্রিকেট সম্প্রদায় এ কৌশল অবলম্বনকে নিন্দা জানাতে থাকলেও উডফুল তা জনসমক্ষে প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়া শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। পরের খেলা শুরুর পূর্ব পর্যন্ত তাকে অধিনায়কত্ব প্রদানের কথা অস্ট্রেলিয়ান বোর্ড অব কন্ট্রোল প্রকাশ করেনি। অ্যাডিলেড ওভালের তৃতীয় টেস্টে এ বিতর্ক তুঙ্গে পৌঁছে। বুকে আঘাত লেগে পড়ে গেলে দাঙ্গা বেঁধে যায়। উডফুল আউট হলে ইংরেজ ম্যানেজার প্লাম ওয়ার্নার ব্যক্তিগতভাবে তাকে সমবেদনা জানাতে যান। এর প্রত্যুত্তরে উডফুল জানান যে,
আমি আপনাকে আর দেখতে চাই না, মি. ওয়ার্নার। এখানে দু’টি দল রয়েছে। একটি দল ক্রিকেট খেলছে, অন্যটি খেলছে না।[৫][৬][৭][৮][৯]
তার এ মন্তব্য গণমাধ্যমে ফাঁস হয়ে গেলে ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়।[৫] তৃতীয় টেস্ট চলাকালে দলীয় সঙ্গী বার্ট ওল্ডফিল্ডের মাথার খুলিতে আঘাত পেলে বডিলাইন ক্রীড়ার বিষয়ে অস্ট্রেলীয় বোর্ড আনুষ্ঠানিকভাবে ইংরেজ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করে।[১০][১১] এরফলে বাণিজ্য বন্ধসহ সফর বাতিলের উদ্যোগ চলতে থাকে। ইংল্যান্ড ৪-১ ব্যবধানে জয়ী হলেও উডফুল সমর্থকদের কাছে সমর্থন পান। এ সিরিজে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক ২০ ঘণ্টাধিক ব্যাটিং করেন যা তার যে-কোন সঙ্গীদের তুলনায় বেশি। বডিলাইন সিরিজের পুণরাবৃত্তি ঘটবে না প্রতিশ্রুতি পেয়ে ১৯৩৪ সালে দলকে নিয়ে ইংল্যান্ড সফর করেন। সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয়ী হয় অস্ট্রেলিয়া দল। এরফলে একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে দুইবার অ্যাশেজ পুণরুদ্ধার করতে পেরেছেন তিনি।
১৯৩৪ সালে ইংল্যান্ড সফরের পর খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর নেন। তার পরিবার দাবী করে যে, বডিলাইন বিতর্কের প্রেক্ষিতে ক্রিকেট থেকে তার মনোযোগ নষ্ট হয়েছে। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ক্রিকেটে অবদান রাখায় তাকে নাইটহুড পদবী দিতে প্রস্তাব দিলে তিনি তা নাকচ করেন। তিনি মন্তব্য করেন যে, ক্রিকেটের চেয়ে তিনি শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। পরবর্তীকালে গণিতের শিক্ষক হিসেবে উডফুল মেলবোর্ন হাই স্কুলে প্রধানশিক্ষক হয়েছিলেন।
পূর্বসূরী জ্যাক রাইডার |
অস্ট্রেলীয় টেস্ট ক্রিকেট অধিনায়ক ১৯৩০-১৯৩৪ |
উত্তরসূরী ভিক রিচার্ডসন |