ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | উইলিয়াম ভোস | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | অ্যানেসলি উডহাউজ, নটিংহ্যামশায়ার, ইংল্যান্ড | ৮ আগস্ট ১৯০৯|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ৬ জুন ১৯৮৪ লেন্টন, নটিংহাম, নটিংহ্যামশায়ার, ইংল্যান্ড | (বয়স ৭৪)|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | বামহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ২৫৩) | ১১ জানুয়ারি ১৯৩০ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ৭ জানুয়ারি ১৯৪৭ বনাম অস্ট্রেলিয়া | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯২৭–১৯৫২ | নটিংহ্যামশায়ার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ক্রিকইনফো, ১ জানুয়ারি ২০১৮ |
উইলিয়াম ভোস (ইংরেজি: Bill Voce; জন্ম: ৮ আগস্ট, ১৯০৯ - মৃত্যু: ৬ জুন, ১৯৮৪) নটিংহ্যামশায়ারের অ্যানেসলি উডহাউজ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন।[১] ১৯৩০ থেকে ১৯৪৭ সময়কালে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে নটিংহ্যামশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন বিল ভোস। দলে তিনি মূলতঃ বামহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও ডানহাতে কার্যকরী ব্যাটিং উপস্থাপন করতেন তিনি। তন্মধ্যে, ১৯৩২-৩৩ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজে বিতর্কিত বডিলাইন সফরে ইংল্যান্ডের পক্ষে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রেখেছেন।
নটিংহামের কয়লা খনিসমৃদ্ধ জেলায় এক শ্রমজীবি পরিবারের সন্তান তিনি। ১৯২৭ সালে নটিংহ্যামশায়ারের সদস্যরূপে গ্লুচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো খেলতে নামেন। কয়েকটি খেলার পরই শক্তিধর ও বিভিন্ন বোলিং আক্রমণ পরিচালনায় পারদর্শী নটিংহ্যামশায়ারের পক্ষে নিজের স্থান পাকাপোক্ত করে নেন। এ সময়ে ভোসকে ধ্রুপদী বামহাতি স্পিনাররূপে আখ্যায়িত করা হতো। কিছু সমালোচক তাকে কলিন ব্লাইদের যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে বিবেচনা করতে থাকেন। কিন্তু পরের বছর দ্রুতগতিসম্পন্ন পেসের দিকে ধাবিত হলে তাকে ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তবে, ১৯২৯ সালে পূর্বের অবস্থানে ফিরে যান। পোতানো উইকেটেও বেশ কয়েকটি খেলায় সফলতা পান। তন্মধ্যে, নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে খেলায় ৪৩ রান দিয়ে চৌদ্দটি উইকেট পেয়েছিলেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের জন্য ইংল্যান্ড দলের সদস্যরূপে নির্বাচিত হন। ১১ জানুয়ারি, ১৯৩০ তারিখে বার্বাডোসের ব্রিজটাউনে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তার টেস্ট অভিষেক ঘটে। তবে, বেশ শক্ত উইকেটে দ্রুত গতির বোলিং করতে তাকে উজ্জ্বীবিত করে। তিনি আশাতীত সফলতা লাভ করেন। ফলশ্রুতিতে ইংল্যান্ডে ফিরে ভেজা পিচ বাদে দ্রুতগতিতে বোলিংয়ের অভ্যাস গড়ে তোলেন।
১৯৩০ সালে পেস বোলার হিসেবে তেমন সফলতা না পেলেও পরবর্তী গ্রীষ্মকালে ইংল্যান্ড সফরে আসা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেন। এ সফরে ডন ব্র্যাডম্যান বেশ সাবলীল ভঙ্গীমায় ইংরেজ বোলিং আক্রমণ মোকাবেলা করে রান তুলতে সক্ষমতা দেখান।
ফলশ্রুতিতে, ভোস ভবিষ্যতের ইংরেজ অধিনায়ক ডগলাস জারদিন ও নটিংহ্যামশায়ারের অধিনায়ক আর্থার কারের সাথে আলোচনায় বসেন ও ব্র্যাডম্যান তথা অস্ট্রেলীয়দেরকে পরাজিত করার হীন কৌশল গ্রহণে অগ্রসর হন। সতীর্থ নটিংহ্যামশায়ারের ফাস্ট বোলার হ্যারল্ড লারউডকে নিয়ে জারদিনের পরামর্শক্রমে দ্রুতগতিসম্পন্ন বলগুলোকে ব্যাটসম্যানদের শরীর লক্ষ্য করে ফেলার কার্যকরী অপকৌশলটি গ্রহণ করেন যাতে লেগ সাইডে অবস্থানরত ফিল্ডারদের কাছে বল তালুবন্দী হবে।
পরবর্তী দুই বছর ভোস ও লারউড নটিংহ্যামশায়ারের পক্ষে লেগ থিওরিকে পরিমার্জিত করে অনুশীলন করতে থাকেন। এরফলে প্রতিপক্ষীয় ব্যাটসম্যানদেরকে বেশ সমস্যায় ফেলে দেয়। তবে, লারউডের তুলনা তিনি কিছুটা ধীরে বোলিং করতেন। বামহাতে উইকেট লক্ষ্য করে নিজের উচ্চতার তুলনায় বাউন্স মারতেন। ফলে ব্যাটসম্যানেরা তার মুখোমুখি হলে রক্ষা পেতো না। ১৯৩১ সালে ১৯.২৯ গড়ে ১২৩ ও ১৯৩২ সালে ১৬.৮৭ গড়ে ১৩৬ উইকেট লাভ করেন। ফলশ্রুতিতে, ১৯৩৩ সালে উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটারের মর্যাদা লাভ করেন বিল ভোস।
তার বোলিং এতোটাই ভালো ছিল যে, তিনি টেস্টে তার স্থান ফিরে পান ও লারউডকে সঙ্গে নিয়ে ১৯৩২-৩৩ মৌসুমে জারদিনের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। বোলারদ্বয় জারদিনের কৌশল বাস্তবায়নে তৎপর হন। ফাস্ট ও শর্ট বোলিং করে অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদেরকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখেন। ভোস বেশ কয়েকটি আঘাত হানেন। অস্ট্রেলীয় গণমাধ্যমে তাদের এ কৌশলকে ব্যঙ্গ করে বডিলাইন কৌশল নামে আখ্যায়িত করে। এরফলে দলগুলোসহ দেশ দুটোর মাঝে তিক্ততাপূর্ণ সম্পর্কের উদ্ভব ঘটে।
বডিলাইন সিরিজের পর ভোসের বোলিং অনেকাংশেই দূর্বল হয়ে পড়ে। তবে, মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে আবির্ভূত হন। ১৯৩৩ সালে ৩৫-এর অধিক গড়ে ১,০২০ রান তুলেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে দশম উইকেটে শতরানের জুটি গড়ে সর্বকালের সেরাদের তালিকায় পঞ্চম স্থানে অবস্থান করছেন। বডিলাইনের ফলে রাজনৈতিক পর্যায়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ১৯৩৪ সালে আট উইকেট দখলের পরও তাকে আর কোন টেস্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
১৯৩৫ মৌসুমের শুরুতে এমসিসিকে দলে অন্তর্ভুক্ত না করার জন্য তিনি স্বয়ং অনুরোধ করেন। তবে কাউন্টি ক্রিকেটে অংশ নিয়ে ১৯৩৫ ও ১৯৩৬ সালে দেড় শতাধিক উইকেটের সন্ধান পান তিনি। এ বছর শেষে নিজেকে প্রস্তুত করলে গাবি অ্যালেনের নেতৃত্বাধীন দলের সদস্যরূপে গণ্য হন। অফ-সাইডে বোলিং করলে শুরুতে মনক্ষুণ্ণ হবার কারণ হয়ে দাঁড়ান। তবে, গাব্বার প্রথম টেস্টে খুবই সুন্দর বোলিং প্রদর্শন করেন। উপযুক্ত পিচে ৬/৪১ লাভ করেন। তন্মধ্যে, এক পর্যায়ে তিনি ৪/১৬ পেয়েছিলেন। বৃষ্টির পর পঞ্চম দিনে ইংল্যান্ড ৩২২ রানে জয় পায়। দ্বিতীয় টেস্টে বৃষ্টির কবলে পড়লে আবারও সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন। খেলায় তিনি ৭/৭৬ পেয়েছিলেন। একপর্যায়ে চার বলে তিনজন অস্ট্রেলীয় তার শিকারে পরিণত হয়েছিল। সফরের প্রথম দুই টেস্টে সতেরো উইকেট পান। কিন্তু পিঠের আঘাতের কবলে পড়লে শেষ তিন টেস্টে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারেননি। সিরিজে ২৬ উইকেট নিয়ে শীর্ষ বোলারে পরিণত হন।
১৯৩৭ সালে মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে গুরুতরভাবে আঘাত পান। দুই বছর পর সুস্থ হলেও আবারও অসুস্থ হন ও দশকের শুরুতে প্রদর্শিত ক্রীড়াশৈলীর সমমান প্রদর্শনে সক্ষম হননি। কোন মৌসুমেই শতাধিক উইকেট পাননি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। যুদ্ধ শেষ হবার পর ১৯৪৬ সালে ৩৭ বছর বয়সে ভোস সীমিত আকারে ক্রিকেটে অংশ নিতে থাকেন। তবে, টেস্টের পূর্বে অনুশীলনীমূলক খেলায় অংশ নিয়ে চমৎকার সাফল্য পান। ফলশ্রুতিতে, ১৯৪৬-৪৭ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে তৃতীয়বার অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য মনোনীত হন। দুধ ও মধুতে পরিপূর্ণ অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করে প্রায় দুই স্টোন ওজন বৃদ্ধিতে সমর্থ হন।[২] তবে, তার ধ্রুপদী বোলিং ভঙ্গীমা একই থাকে। বয়স তাকে কাবু করতে পারেনি।
প্রথম টেস্টে ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান ২৮ রানে কট হলেও আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের ফলে তাকে নিরাশ হতে হয়। এ সফরে তিনি কোন টেস্ট উইকেট লাভে ব্যর্থ হন। ১৯৪৭ সালে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন। এরপর তিনি ক্রিকেট থেকে অবসরের কথা ঘোষণা করেন ও কাউন্টি কোচ হন। তবে, নটিংহ্যামশায়ারের বোলিং আক্রমণ বিভাগের দূর্বলতার কারণে তাকে আরও পাঁচটি খেলায় অংশ নিতে হয়েছিল।
১৯৫২ সালে সর্বশেষ খেলায় অংশ নেন। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে সাতাশ টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। ১৩.৩৯ গড়ে ৩০৮ রান ও ২৭.৮৮ গড়ে ৯৮ উইকেট পেয়েছেন। তিনবার অস্ট্রেলিয়া গমন করার সৌভাগ্য হয় তার। তবে, নিজদেশে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হতে পারেননি।
৬ জুন, ১৯৮৪ তারিখে ৭৪ বছর বয়সে নটিংহামের লেন্টন এলাকায় তার দেহাবসান ঘটে। বডিলাইন সিরিজের বিষয়ে আলাপ করলেও ব্যক্তিগতভাবে তিনি বডিলাইনকে ভুল হিসেবে আখ্যায়িত করে গেছেন।