বিলম্বিত উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার গবেষণা সাময়িকী এক ধরনের সাবস্ক্রিপশন-ভিত্তিক সাময়িকী, যা প্রথমবার প্রকাশিত হওয়ার নির্দিষ্ট সময় পর থেকে বিনামূল্যে অনলাইনে উপলব্ধ হয়ে যায়।
কোনো নিবন্ধ প্রকাশিত হওয়ার পর এটি উন্মুক্ত হওয়ার জন্য কয়েক মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত বা আরো বেশি সময় লাগতে পারে। ২০১৩ সালে পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ৭৭.৮% বিলম্বিত উন্মুক্ত-প্রবেশাধিকার সাময়িকী প্রকাশের ১২ মাসের মধ্যেই উন্মুক্ত হয়ে যায়। ৮৫.৪%-এর ক্ষেত্রে এই সময়ের পরিমাণ ২৪ মাস বা তার চেয়ে কম।[১][২] এই সময় অতিবাহিত হওয়ার আগেই এতে প্রবেশাধিকার পেতে গ্রাহককে সাময়িকীটি সাবস্ক্রাইব করতে হবে অথবা নিবন্ধটি ক্রয় করতে হবে। আর লেখক উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার আজ্ঞায় আবদ্ধ থাকলে কোন কোন বিলম্বিত উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার সাময়িকী তাদের প্রকাশনা উন্মুক্ত সংগ্রহস্থলে জমা দিয়ে থাকে।
বিলম্বে উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার প্রদানের উদ্দেশ্য হল প্রথমে অবিলম্বে প্রবেশাধিকার প্রয়োজন এমন গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থের বিনিময়ে প্রবেশাধিকার দিয়ে প্রকাশনার খরচ নির্বাহ করা এবং পরবর্তীতে সকল ব্যবহারকারীকেই প্রবেশাধিকার প্রদান করা। অতিরিক্ত ব্যবহারকারীদের কাছে ইলেকট্রনিক সাময়িকী বিতরণের খরচ মুদ্রিত প্রকাশনা বিতরণের তুলনায় খুবই কম। তাই, সাবস্ক্রাইবকৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিতরণ করার পর এই প্রকাশনা বৃহত্তর জনসংখ্যার কাছে বিপণন করতে প্রকাশকদের খুব একটা বাড়তি খরচ করতে হয় না।
বিলম্বিত প্রবেশাধিকারের পেছনে অনুমিত কারণগুলো হল: (১) সক্রিয় গবেষকরা প্রাতিষ্ঠানিক সাবস্ক্রিপশন বা লাইসেন্সের মাধ্যমে প্রবেশাধিকার পান। (২) সাবস্ক্রিপশনের খরচ বহন করতে সমর্থ নয় এমন প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা আন্তঃগ্রন্থাগার ঋণ বা সরাসরি ক্রয় করার মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনীয় নিবন্ধগুলোতে প্রবেশাধিকার পেতে পারেন। (৩) আর যেসব প্রতিষ্ঠান সাবস্ক্রিপশনের খরচ বহন করতে সক্ষম নয়, সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এবং অন্যদের সাধারণত গবেষকদের মতো দ্রুত নিবন্ধগুলোতে প্রবেশাধিকারের দরকার হয় না। তবে, এই অনুমানগুলো সঠিক কিনা তা নিশ্চিত নয়।
অনেক গবেষণা সাময়িকীই বিলম্বিত প্রবেশাধিকার পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। ২০১৩ সালে পরিচালিত এক সমীক্ষায় বিলম্বিত উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার বিশিষ্ট ৪৯২টি সাময়িকীর ১,১০,০০০ এরও বেশি নিবন্ধের দিকে নজর রাখা হয়। এর ফলাফলে উঠে আসে যে, বিলম্বিত উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার সাময়িকীর নিবন্ধগুলোর ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর গতানুগতিক অ-উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার সাময়িকীর দ্বিগুণ (এবং সোনালী উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার সাময়িকীর চেয়ে তিনগুণ) বেশি।[১][৩]
বিলম্বিত উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার অনেকের জন্য গবেষণা নিবন্ধে প্রবেশের সুযোগ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু উন্মুক্ত হওয়ার পূর্বেই প্রবেশাধিকার পেতে সাবস্ক্রাইবকারী সংস্থাগুলোর অর্থ প্রদান অব্যাহত রাখতে হচ্ছে। উন্মুক্ত হতে প্রয়োজনীয় সময়ের ভিন্নতা এবং উন্মুক্ত প্রবেশাধিকারকে তাৎক্ষণিক প্রবেশাধিকারের ব্যবস্থা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করার কারণে "বিলম্বিত উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার" সাময়িকীগুলোকে উন্মুক্ত সাময়িকী হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায় না। উদাহরণস্বরূপ: মলিকুলার বায়োলজি অব দ্য সেল এক মাস পরই উন্মুক্ত হয়ে যায়;[৪] অন্যদিকে জার্নাল অফ দ্য ফিজিকাল সোসাইটি অব জাপান[৫] উন্মুক্ত হতে ৬ বছর সময় লাগে। এ কারণে বিলম্বিত প্রবেশাধিকার সাময়িকীগুলোকে উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার সাময়িকীর তালিকাগুলোতে (যেমন: ডিরেক্টরি অব ওপেন অ্যাক্সেস জার্নাল্স – ডিওএজে) অন্তর্ভুক্ত করা হয় না।[৬] ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে জার্নাল অব এক্সপেরিমেন্টাল মেডিসিন ঘোষণা করেছে যে, তারা এখন থেকে বিলম্বিত উন্মুক্ত প্রবেশাধিকারের জন্য নিবন্ধ প্রসেসিং চার্জ গ্রহণ করবে।[৭][৮]