বিলহণ ছিলেন খ্রিস্টীয় একাদশ শতাব্দীর এক কাশ্মীরী কবি। তিনি তাঁর প্রণয়কাব্য চৌরপঞ্চাশিকা-র জন্য বিখ্যাত।
কিংবদন্তি অনুসারে, ছন্দ শিক্ষা করতে রাজ্যে এসে বিলহণ রাজা মদনাভিরামের কন্যা রাজকন্যা যামিনীপূর্ণতিলকার প্রেমে পড়েছিলেন। তাঁদের প্রেম ছিল গোপন। সেই প্রেমের কথা জানাজানি হলে বিলহনকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। বিচারের প্রতীক্ষায় থাকাকালীন তিনি চৌরপঞ্চাশিকা নামক পঞ্চাশ স্তবকের একটি প্রণয়কাব্য রচনা করেন। সেই সময় তিনি জানতেন না যে তাঁকে নির্বাসিত করা হবে না প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। বিলহণের কী শাস্তি হয়েছিল তা জানাও যায় না। তবে তাঁর কবিতা মুখে মুখে সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছিল। এই কবিতার অনেকগুলি পাঠান্তর রয়েছে, তার মধ্যে দক্ষিণ ভারতের পাঠান্তরগুলি মিলনান্তক। কাশ্মীরী পাঠান্তরে বিলহণের পরিণতি নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। ১৮৪৮ সালে চৌরপঞ্চাশিকা ফরাসি ভাষায় অনূদিত হয়। এটিই ছিল এই কাব্যের প্রথম ইউরোপীয় অনুবাদ।[১] এরপর এটি আরও কয়েকবার অনূদিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য অনুবাদগুলির মধ্যে স্যার এডউইন আর্নল্ড[২](লন্ডন, ১৮৯৬) ও এডওয়ার্ড পোইস ম্যাথারস[৩] (অক্সফোর্ড, ১৯১৯, শিরোনাম ব্ল্যাক মেরিগোল্ডস) কৃত অনুবাদ দু’টির নাম করা যায়। শেষোক্ত অনুবাদটি থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি সংকলিত হয়েছে জন স্টেইনবেকের ক্যানারি রো উপন্যাসে।
ভাগ্যান্বেষণে স্বদেশ ত্যাগ করে বিলহণ মথুরা, কনৌজ, প্রয়াগ, বারাণসী, সোমনাথ, কল্যাণ ও রামেশ্বর ভ্রমণ করেন। কিন্তু কোথাও তিনি ভাগ্য ফেরাতে সক্ষম হননি।[৪] শেষে কল্যাণ হয়ে ফেরার পথে পশ্চিম চালুক্য সাম্রাজ্যের রাজা ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্য তাঁকে “বিদ্যাপতি” সম্মানে ভূষিত করেন। বিলহণ তাঁর পৃষ্ঠপোষকের সম্মানে বিক্রমাঙ্কদেবচরিতম্ নামে একটি মহাকাব্য রচনা করেন।[৫]