বিলাদ আশ-শাম بِـلَاد الـشَّـام | |||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
রাশিদুন, উমাইয়া এবং আব্বাসিয়া খিলাফতের প্রদেশ | |||||||||||
৬৩৬–৯৪০ | |||||||||||
রাজধানী | দামেস্ক | ||||||||||
ঐতিহাসিক যুগ | মধ্যযুগ | ||||||||||
৬৩৬ | |||||||||||
৬৫৬–৬৬১ | |||||||||||
• তুলুনিদ নিয়ন্ত্রণ | ৮৭৮–৯০৪ | ||||||||||
৯৪০ | |||||||||||
|
বিলাদ আশ-শাম (আরবি: بلاد الشام, বাংলা: শাম দেশ) ছিল রাশিদুন, উমাইয়া ও পরবর্তীতে আব্বাসীয় খিলাফতের সময়কার একটি প্রদেশ। সপ্তম শতাব্দীর মধ্যভাগে ইয়ারমুকের যুদ্ধের পর এটি মুসলিমদের হস্তগত হয়। পূর্বে এই অঞ্চল বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
রাশিদুন আমলের বিজয় অভিযানের সময় এই অঞ্চলে প্রধানত স্থানীয় আরামায়িকভাষী মনোফিসিট কৃষিজীবী খ্রিষ্টান (মারডাইটস ও বাইজেন্টাইন মেলকাইটস খ্রিষ্টানদের মত), গাসানীয় ও নাবাতীয় আরব এবং কিছু সংখ্যক সংখ্যালঘু ইহুদি, সামারিটান ও ইসমায়েলি ইটুরিয়ান বসবাস করত।
মুসলিম বিজয়ের পরবর্তী ২০ বছর সিরিয়া বনু উমাইয়া গোত্রের সাহাবি মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান কর্তৃক শাসিত হয়। তিনি এই প্রদেশে তার পারিবারিক ক্ষমতার ভিত্তি গড়ে তোলেন। তিনি প্রথম ফিতনার সময় বিজয়ী হন এবং উমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেন। উমাইয়া শাসনামলে আশ-শাম পাঁচটি জান্দ বা সামরিক জেলায় বিভক্ত করা হয়। এগুলো হল জান্দ দামেস্ক, জান্দ হিমস, জান্দ ফিলাস্তিন ও জান্দ আল-উরদুন। পরবর্তীতে জান্দ হিমসের অংশ থেকে জান্দ কিননাসরিন গঠন করা হয়। উমাইয়া খিলাফতের অধীনে দামেস্ক ইসলামী খিলাফতের রাজধানী হয়ে উঠে এবং সিরিয়া খিলাফতের মূল প্রদেশে পরিণত হয়। সিরিয়ান সেনাবাহিনী আহল আশ-শাম উমাইয়া শাসনের মূল স্তম্ভ গঠন করে।
আব্বাসীয় খিলাফতের অধীনে সিরিয়া কম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। ৭৫০ সালে আব্বাসীয়রা উমাইয়াদের উত্তরসূরি হয়। আব্বাসীয়রা প্রথমে রাজধানী ইরাকের কুফা এবং পরবর্তীতে বাগদাদ ও সামারায় স্থানান্তরিত করে। এগুলো এসময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশে পরিণত হয়। আব্বাসীয় আমলে ক্ষমতায় আরোহণ করা ইরানি ও তুর্কি শক্তিগুলোর সাথে আরব সিরিয়ানরা একই কাতারে চলে আসে। একে সাংস্কৃতিক দিক থেকে আন্দোলন বলে ধরা যায়। হারুনুর রশিদের (শাসন ৭৮৬ – ৮০৯) সময় প্রদেশের উত্তর অংশ নতুন জান্দ গঠনের জন্য বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং একে আল-আওয়াসিম (আরবি: اَلْـعَـوَاصِـم) নাম দেয়া হয়।[১][২] এটি বাইজেন্টাইন আক্রমণ প্রতিরোধ করার দ্বিতীয় রেখা হিসেবে কাজ করে। এই অঞ্চলটি মূল যুদ্ধক্ষেত্রের পেছনে ছিল।
৮৭৮ থেকে ৯০৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সিরিয়া মিশরের তুলুনি শাসনের অধীন ছিল। এর কিছুকাল পরই আব্বাসীয়রা এই অঞ্চলে পুনরায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। ৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই আধিপত্য বজায় ছিল। এসময় প্রদেশটি উত্তরে আলেপ্পো আমিরাতের হামদানি রাজবংশ ও দক্ষিণে মিশরে আধিপত্য স্থাপনকারী ইখশিদি রাজবংশের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। ৯৬০ এর দশকে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা বাইজেন্টাইন সম্রাট দ্বিতীয় নিকেফোরস ফোকাস দখল করে নেন এবং আলেপ্পো বাইজেন্টাইন করদ রাজ্যে পরিণত হয়। ৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে বিজয় হওয়ার পর দক্ষিণ অংশ ফাতেমীয় খিলাফতের অধীন হয়ে পড়ে। মামলুকরা উত্তর ও দক্ষিণ অংশে বিভক্ত হয়ে পড়া সিরিয়া ১৩ শতকে জয় করে।
শব্দগত দিক থেকে “বাম হাতের ভূমি” বোঝানো হয়। হেজাজ থেকে পূর্ব দিকে মুখ করে দাঁড়ালে এই অঞ্চল বামদিকে পড়ে বিধায় এমন নাম হয়েছে। অনুরূপভাবে ইয়েমেন দ্বারা “ডান হাতের ভূমি” বোঝানো হয়।[৩][৪] আরবি শিন – হামজা – মিম ش ء م ধ্বনি থেকে এর উদ্ভব। তবে এর সাথে নবী নূহ (আ) এর ছেলে সামের কোনো সম্পর্ক নেই, এর উদ্ভব ভিন্ন ধ্বনি থেকে হয়েছে।
বিলাদ আশ-শাম সমগ্র শাম বা বৃহত্তর সিরিয়া অঞ্চল বোঝাতে ব্যবহৃত করা যায়। এই অঞ্চলকে কখনো কখনো দীর্ঘদিন ধরে আঞ্চলিক কেন্দ্র দামেস্ক শাসিত এলাকা হিসেবে দেখা হয়। বস্তুত আরবি শব্দ আশ-শাম الشام দামেস্ক বোঝাতে ব্যবহার করা যায়। শাম বর্তমানে কয়েকটি রাষ্ট্রে বিস্তৃত রয়েছে। বর্তমানের সিরিয়া, লেবানন, জর্দান ও পূর্ণ ফিলিস্তিন ভূখণ্ড প্রাচীন মুলকে শামের অন্তর্ভুক্ত ছিল।