বিষ্ণুচরণ ঘোষ | |
---|---|
জন্ম | লাহোর, পঞ্জাব, ব্রিটিশ ভারত | ২৪ জুন ১৯০৩
মৃত্যু | ৯ জুলাই ১৯৭০ | (বয়স ৬৭)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | ব্যায়ামবীর |
সন্তান | বিশ্বনাথ ঘোষ |
পিতা-মাতা | ভগবতী ঘোষ |
বিষ্ণুচরণ ঘোষ (২৪ জুন ১৯০৩ - ৯ জুলাই ১৯৭০) ছিলেন একজন ভারতীয় ব্যায়ামবিদ। তিনি হঠযোগকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের কাছে সাফল্যের সাথে তুলে ধরার ক্ষেত্রে এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছিলেন।
ব্যয়ামাচার্য বিষ্ণুচরণ ঘোষ ব্রিটিশ ভারতের লাহোরে (বর্তমান পাকিস্তান) ১৯০৩ সালের ২৪শে জুন জন্মগ্রহণ করেন। আট ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। বয়স ১০ মাস হতেই, তার মা মারা যান।[১] বাল্যাবস্থা থেকেই তিনি খুব দুর্বল ছিলেন। কিন্তু ১৪ বৎসর বয়স থেকেই তার স্বাস্থ্যোদ্ধার হতে থাকে। তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা বিখ্যাত পরমহংস যোগানন্দ প্রতিষ্ঠিত রাঁচি স্কুল ফর বয়েজ এ উনি ভর্তি হয়েছিলেন।
রাঁচি থেকে গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিষয়ক অধিকর্তা আর.এন.গুহ ঠাকুরতার ( পুরো নাম রাজেন্দ্র নারায়ণ গুহঠাকুরতা যদিও উনি রাজেন গুহ ঠাকুরতা নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন) কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেন এবং এর ফলও পাওয়া যায় হাতেনাতে। মাত্র তিন মাসে ওনার ৬৮ পাউন্ড দৈহিক ওজনের উপর আরও ৩২ পাউন্ড ওজন বৃদ্ধি পায় এবং বুকের ছাতিও নয় ইঞ্চি বৃদ্ধি পায়।
বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস করতেন যে ভার উত্তোলন ও বডি বিল্ডিং এর সাথে কেউ যদি হঠ যোগ করেন তবে তার শরীর এবং মন দুইয়েরই উন্নতি সাধন হবে। এই তত্ত্ব তাকে ভারতের ‘ফিজিক্যাল কালচার’ আন্দোলনের প্রথম সারিতে নিয়ে আসে এবং তিনি যে তত্ত্বের অবতারণা করেছিলেন তার প্রত্যক্ষ প্রমাণও তিনি সবার সামনে তুলে ধরেন: বুকের উপর দিয়ে চলন্ত গাড়ি চলে যাওয়া, ১২ ফুট উপর থেকে পেটের উপড়ে ব্যক্তির ঝাঁপ, লোহার দন্ডকে একটি কুণ্ডলে পরিণত করা ইত্যাদি।
আইন পড়ার সময় বিষ্ণুচরণ তারই এক কলেজের বন্ধু, সেনগুপ্তের সাথে মিলে ‘Muscle Control and Barbell Exercise’ নামে একটি বই লিখে ফেলেছিলেন যেখানে মাংসপেশীকে কীভাবে আরও সুগঠিত ও সুঠাম বানানো যায় এবং তার উপর নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করা যায়, সেই পদ্ধতিগুলির আলোচনা করেন। পরবর্তীকালে বিষ্ণুচরণ নিজেই কলকাতায় ঘোষ কলেজ অব যোগা অ্যান্ড ফিজিক্যাল কালচার প্রতিষ্ঠিত করেন যেখানে উনি বিভিন্ন প্রকার শারীরিক কসরত শেখানোর পাশাপাশি ৮৪টি হঠ যোগ ভঙ্গির উদ্ভাবন করেন।
বহু বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ওনার কাছ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে দেশ তথা গুরু বিষ্ণুচরণ ঘোষের নাম উজ্জ্বল করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য ছাত্ররা হলেন মনতোষ রায়(প্রথম ভারতীয় মিস্টার ইউনিভার্স), বুদ্ধ ঘোষ, বিক্রম চৌধুরি।
বিষ্ণুচরণ ভারতীয় অলিম্পিক কমিটিতেও দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। তিনি জাপানে যোগের প্রচলন করেছিলেন এবং আমেরিকাতেও যোগের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।
ব্যয়ামাচার্য বিষ্ণুচরণ ঘোষের ১৯৭০ সালের ৯ই জুলাই ৬৭ বৎসর বয়সে কলকাতায় মারা যান।
বিষ্ণুচরণ ঘোষের সুযোগ্য পুত্র বিশ্বনাথ ঘোষও একজন ব্যয়ামবিদ ও যোগবিদ ছিলেন যিনি জাপান, আমেরিকাতে প্রদর্শনী করে এসেছেন। বিষ্ণুচরণ ঘোষের মৃত্যুর পর তার প্রতিষ্ঠিত স্কুলটির দায়িত্ব তার পুত্র নিয়েছিলেন। বর্তমানে পরিবারের সেই ধারা বহন করছেন বিষ্ণুচরণের নাতনি মুক্তমালা। ইনিও তার বাবা এবং ঠাকুরদার মত বিশ্বব্যাপী হঠযোগের উপকারিতা প্রচার করে চলেছেন।