বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা | |
---|---|
জন্ম | ৩১ জানুয়ারি, ১৯০৯ ঢাকা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি |
মৃত্যু | ২০ জুন, ১৯৬৯ |
অন্যান্য নাম | কলাগুরু |
পেশা | অভিনেতা চিত্রকার নৃত্যশিল্পী সংগীত পরিচালক কবি নাট্যকার সাহিত্যিক স্বাধীনতা সংগ্রামী কমিউনিস্ট বিপ্লবী |
কর্মজীবন | ১৯০৯-১৯৬৯ |
বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা (অসমীয়া: বিষ্ণুপ্রসাদ ৰাভা) ভারতের অসম রাজ্যের একজন কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, অভিনেতা, চিত্রকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বিপ্লবী ছিলেন। কাশীর হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদর্শন করা নটরা নৃত্যে মুগ্ধ হয়ে হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন বিষ্ণুপ্রসাদ রাভাকে কলাগুরু উপাধি দিয়েছিলেন।
১৯০৯ সনের ৩১ জানুয়ারী বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি ঢাকায় বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার জন্ম হয়েছিল। পিতার নাম গোপাল চন্দ্র মুসাহারি। বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা বড়ো জনগোষ্ঠির অন্তর্গত ছিলেন কিন্তু তিনি “রাভা” পরিবারে লালন পালন হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি রাভা উপাধী গ্রহণ করেছিলেন। ব্রিটিশ সেনার উচ্চ পদস্থ বিষয়া গোপাল মুসাহারীকে “রায়বাহাদুর” উপাধী দেওয়া হয়েছিল। দরং জেলার বাসিন্দা গোপাল মুসাহারী তেজপুরের বান রঙ্গমঞ্চের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা সেনা বিভাগের বিদ্যালয়ে প্রথম শিক্ষা আরম্ভ করেছিলেন। পিতার মৃত্যুর পর তিনি তেজপুরে আত্মীয়ের গৃহে বসবাস করেছিলেন। ১৯২৬ সনে তিনি তেজপুর সরকারি উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পূর্ণ করেছিলেন।
রংপুর কলেজে অধ্যয়ন চলাকালীন অবস্থায় তিনি মাধবচন্দ্র বেজবরুয়া দ্বারা পরিচালিত বাহী মুখপত্রের চিত্রলেখা বিভাগ পরিচালনা করেছিলেন ও “আবাহন” মুখপত্র সম্পাদনা করেছিলেন। ১৯৩৫ সনে তিনি জ্যোতিপ্রসাদ আগরয়ালার চলচ্চিত্র জয়মতীতে নৃত্য পরিচালনায় সহযোগীতা করেছিলেন।
১৯৪৫ সনে বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা বিপ্লবী কমিউনিস্ট দলের সংস্পর্শে আসেন। ১৯৪৬ সনে তিনি সিরাজ ছায়াছবির কাজে কলকাতা যাওয়ার পথে কমিউনিস্ট দলের নেতা সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে পরিচিত হন ও এই দলের সক্রিয় সদস্য হন। ১৯৪৮ সনে কমিউনিস্ট দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সন পর্যন্ত তিনি আত্মগোপন করে পালাতক অবস্থায় ছিলেন। ১৯৫২ সনে গোয়ালপারার ঘিলাগুরি অঞ্চল থেকে রাভাকে গ্রেপ্তার করা হয় ও এক বৎসরের জন্য কারাবাস দেওয়া হয়।
১৯৫৫ সনে বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা ভারতীয় কমিউনিস্ট দলে যোগদান করেছিলেন ও ১৯৫৭ সনে বরপেটা সমষ্টির প্রার্থী রুপে প্রতিদ্বন্দিতা করেছিলেন। নির্বাচনে রাভা পরাজিত হয়েছিলেন। ১৯৬২ সনের ভারত-চীনের যুদ্ধে রাভাকে চীনাপন্থী রুপে বিবেচিত করে ৯ মাসের জন্য কারাবাস হয়েছিল। ১৯৬৭ সনে তিনি তেজপুর বিধানসভার নির্দলীয় প্রার্থীরুপে প্রতিদ্বন্দিতা করে জয়লাভ করেছিলেন। ১৯৬৮ সনে তিনি কোকরাঝার সমষ্টি থেকে লোকসভার নির্দলীয় প্রার্থী রুপে প্রেতিদ্বন্দিতা করে পরাজিত হয়েছিলেন।
বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা ১৯৩৭ সনের ২৪ নভেম্বর যোরহাটের সুগায়িকা প্রিয়বালা বরুয়াকে বিবাহ করেছিলেন। বিবাহের কিছুদিন পর জ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রিয়বালা বরুয়ার মৃত্যু হয়েছিল। পত্নি বিয়োগের পর তিনি নিরুপমা দেবির সানিধ্যে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি নিরুপমা দেবির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিবাহ করেন নাই। ১৯৫১ সনে বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা নলবারি বেলশরের নবিনচন্দ্র মেধীর কন্যা কনকলতা মেধীকে বিবাহ করেন। তিনি দুইটি পুত্র সন্তান পৃথ্বীরাজ রাভা (থুন থুন) ও হেমরাজ রাভা (মুন মুন) জন্ম দেন। ১৯৬২ সনে কনকলতা মেধীর মৃত্যুর পর বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা গোসাইগাও অঞ্চলের অন্তর্গত বিন্নাখাটা গ্রামের মোহিনিবালা বসুমতারীকে বিবাহ করেন। মোহিনিবালা রাভা একটি কন্যা ও একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন । পুত্র সন্তানের নাম মেন্ডেলা রাভা কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ কন্যা সন্তান জন্মের কিছুক্ষন পরে মারা যায়।
১৯৬৯ সনের ২০ জুন তারিখে রাত্রি ২-২৫ সময়ে বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা কর্কট রোগের ফলে মৃত্যুবরণ করেন।
বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা অসমীয়া সংস্কৃতির বিভিন্ন অংশের সাথে জড়িত ছিলেন। সংগীত, অভিনয়, চিত্রকলা ও নৃত্যের উপড়িও তিনি সংগীত ও চলচ্চিত্রের পরিচালক হিসেবে কাজ করেছিলেন।[১][২] তিনি রচনা করা গানকে বিষ্ণুরাভা সংগীত বলা হয়। তিনি যাত্রা পার্টির নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করিতেন। প্রথম অসমীয়া চলচ্চিত্র জয়মতী নির্মাণের সময় তিনি জ্যোতিপ্রসাদ আগরয়ালাকে নৃত্য পরিচালনায় সাহায্য করেছিলেন। তিনি এরা বাটর সুর, প্রতিধ্বনি ও সিরাজ ইত্যাদি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ফনী শর্মার সঙ্গে যুগ্মভাবে পরিচালনা করা অসমীয়া চলচ্চিত্র সিরাজ সফল চলচ্চিত্রের স্থান পেয়েছিল।
বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে ২০ জুন তারিখ অসমে রাভা দিবস রুপে পালন করা হয়। রাভার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভারত সরকার ৩১-০১-২০০৯ সনে একটি বিশেষ ডাক টিকেট উন্মোচন করেছিলেন।
বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার সোজন্যে অসম সরকার বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা পুরস্কার স্থাপন করেছেন। অসমের সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদান থাকা ব্যক্তিকে এই পুরস্কার দ্বারা সম্মানীত করা হয়।[৩][৪]
বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা স্মৃতি উদ্যান ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ভৈরবী মন্দিরের পাশে অবস্থিত। বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার স্মৃতিকল্পে হেমরাজ রাভা এই উদ্যানের কাজ আরম্ভ করেছিলেন। অবশ্য পরে উদ্যানের কাজের ভার অসমীয়া সরকার বহন করেছিলেন। এই উদ্যানের ভিতরে রাভার সমাধি অবস্থিত।