বিস্তার হল একটি গতির সময়কালের চলকের একক সময়ের পরিবর্তনের একটি পরিমাপ (যেমন কম্পাঙ্ক বা স্থানিক সময়কাল)। বিস্তারের বিভিন্ন সংজ্ঞা রয়েছে (নিচে দেখুন), যেগুলি সমস্ত চলকের পরিবর্তনের চরম মানের মধ্যে পার্থক্যের পরিমাণ। প্রাচীন গ্রন্থগুলোতে, পর্যাবৃত্ত গতির দশা কে কখনও কখনও বিস্তার বলা হয়।[১]
শিখর থেকে শিখর বিস্তার (পিক থেকে পিক পর্যন্ত, ছোট করে লেখা হয় পি-পি - p–p) শিখর (সর্বোচ্চ বিস্তার মান) এবং সর্বনিম্ন (সর্বনিম্ন বিস্তার মান, যেটি ঋণাত্মক হতে পারে) মানের মধ্যে পরিবর্তন। উপযুক্ত বর্তনীতে (সার্কিট), বৈদ্যুতিক দোলনের শিখর থেকে শিখর বিস্তার, মাপন যন্ত্র (মিটার) দ্বারা অথবা একটি অসিলোস্কোপে তরঙ্গরূপ দেখে পরিমাপ করা যায়। অসিলোস্কোপে শিখর থেকে শিখর বিস্তার মাপা একটি সহজ পদ্ধতি, তরঙ্গের শিখরগুলি সূক্ষ্ম জালিকার পশ্চাৎপটে সহজে শনাক্ত করা যায় এবং পরিমাপ করা হয়। এটি বিস্তার নির্দিষ্টকরণের একটি সাধারণ উপায়, তবে কখনও কখনও বিস্তার পরিমাপের অন্যান্য ব্যবস্থা আরও উপযুক্ত।
শ্রুতি ব্যবস্থা পরিমাপ, টেলিযোগাযোগ এবং অন্যান্য জায়গায়, যেখানে পরিমাপনীয় হল একটি বৈদ্যুতিক সিগন্যাল, যেটি একটি নির্ধারিত মানের উপরে এবং নিচে পর্যায়ক্রমে পরিবর্তিত হতে থাকে, কিন্তু সাইন তরঙ্গ নয়, সেখানে সর্বোচ্চ বিস্তারের মান ব্যবহার করা হয়। নির্ধারিত মানটি শূন্য হলে, শিখর মানটি সিগন্যালের সর্বোচ্চ পরম মান; যদি নির্ধারিত মানটি কোনও গড় মান হয় (একমুখী উপাদান), শিখর বিস্তার সেই নির্ধারিত মান থেকে পার্থক্যের সর্বোচ্চ পরম মান।
অর্ধ বিস্তারের অর্থ শিখর থেকে শিখর বিস্তারেরর অর্ধেক।[২] কিছু বিজ্ঞানী[৩] অর্ধ-বিস্তার বলতে বিস্তার বা শিখর বিস্তার ব্যবহার করেন।
জ্যোতির্বিজ্ঞানে এটি কক্ষপথের হিসাবের সময় সর্বাধিক ব্যবহৃত পরিমাপ। বহির্গ্রহের সন্ধানে কাছাকাছি তারার ছোট রেডিয়াল বেগের অর্ধ বিস্তারের পরিমাপ খুব গুরুত্বপূর্ণ (ডপলার বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্র দেখুন).[৪]
বর্গমূল গড় বর্গ (আরএমএস) বিস্তার বিশেষত তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশলে ব্যবহৃত হয়: আরএমএস কে সংজ্ঞায়িত করা হয় এই হিসাবে- স্থির অবস্থা থেকে সময়ের সাথে সাথে তরঙ্গের লেখচিত্রে উল্লম্ব দূরত্বের বর্গগুলি যোগ করে, তার গড় মান বার করে, তার বর্গমূল মান;[৫] অর্থাৎ পরিবর্তী তড়িৎ তরঙ্গের আরএমএস মান (যেখানে কোন ডিসি উপাদান নেই)।
জটিল তরঙ্গের জন্য, বিশেষ করে শব্দের মত অ-পুনরাবৃত সিগন্যালে, সাধারণত আরএমএস বিস্তার ব্যবহৃত হয়, কারণ এটি একই সঙ্গে অনিশ্চিত অথচ তাৎপর্যপূর্ণ। উদাহরণ স্বরূপ, একটি ধ্বনিতাত্বিক বা তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণ বা বৈদ্যুতিক সিগন্যাল দ্বারা প্রেরিত গড় ক্ষমতা) আরএমএস বিস্তারের বর্গের সমানুপাতিক (এবং সাধারণভাবে, শীর্ষ বিস্তারের বর্গের সমানুপাতিক নয়)।[৬]
পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহের বৈদ্যুতিক ক্ষমতা হিসাব করতে, সর্বগ্রাহ্য অনুশীলন হল সাইন তরঙ্গের আরএমএস মান উল্লেখ করা। বর্গমূল-গড়-বর্গ বিভবের (ভোল্টেজ) একটি বৈশিষ্ট্য হল সেটি প্রদত্ত রোধের (রেজিস্টেন্স) মধ্যে একমুখী বিদ্যুৎ প্রবাহের মত একই উত্তাপ উৎপাদন করে।
শিখর থেকে শিখর মান ব্যবহার করা হয়, উদাহরণস্বরূপ, শক্তি সরবরাহের জন্য রেকটিফায়ার নির্বাচন করার সময়; বা সর্বাধিক বিভব হিসাব করার সময়, যে বিভব অন্তরকটি (ইনসুলেটর) অবশ্যই সহ্য করতে পারবে। যদিও কিছু সাধারণ ভোল্টমিটার আরএমএস বিস্তারের জন্য ক্রমাঙ্কিত করা হয়, তবুও সেটি একটি একমুখী তরঙ্গরূপের গড় মানে সাড়া দেয়। অনেকগুলি ডিজিটাল ভোল্টমিটার এবং সমস্ত মুভিং কয়েল মিটার এই বিভাগে পড়ে। আরএমএস ক্রমাঙ্কন কেবল সাইন তরঙ্গ মাপার জন্য সঠিক,- যেহেতু শীর্ষ, গড় এবং আরএমএস মানের মধ্যে অনুপাত তরঙ্গরূপের উপর নির্ভরশীল। যে তরঙ্গের পরিমাপ করা হবে তার আকারটি যদি একটি সাইন তরঙ্গ থেকে একেবারেই আলাদা হয়, আরএমএস এবং গড় মানের সম্পর্কের মধ্যে পরিবর্তন হয়ে যায়। আরএমএস এর প্রতি সাড়া দেওয়া সঠিক মিটারগুলি রেডিও কম্পাঙ্ক পরিমাপে ব্যবহৃত হয়। যেখানে তড়িৎপ্রবাহের পরিমাপ করার জন্য যন্ত্রটি একটি একটি রোধের মধ্যে উত্তাপের প্রভাব পরিমাপ করে। মাইক্রোপ্রসেসর নিয়ন্ত্রিত মিটারের উদ্ভাবনের ফলে তরঙ্গরূপের স্যাম্পলিংকে (অবিচ্ছিন্ন সংকেতকে বিচ্ছিন্ন সময় সংকেতে পরিবর্তন) কাজে লাগিয়ে সঠিক আরএমএস পরিমাপকে প্রচলিত করে তোলা গেছে।
সাধারণভাবে, শীর্ষ বিস্তারের ব্যবহার কেবলমাত্র সাইন তরঙ্গ, একটি বর্গাকার তরঙ্গ, বা একটি ত্রিভুজাকার তরঙ্গের মতো প্রতিসম পর্যায়ক্রমিক তরঙ্গের জন্য সহজ এবং দ্ব্যর্থহীন। অপ্রতিসম তরঙ্গের জন্য (উদাহরণস্বরূপ, পর্যায়ক্রমিক স্পন্দনগুলি একই দিকে), শিখর বিস্তর অনিশ্চিত হয়ে যায়। এর কারণ সর্বোচ্চ ধনাত্মক সংকেতটি গড়ের সাপেক্ষে পরিমাপ করা হয়েছে, নাকি সর্বোচ্চ ঋণাত্মক সংকেতটি গড়ের সাপেক্ষে পরিমাপ করা হয়েছে, অথবা সর্বাধিক ধনাত্মক সংকেতটি সর্বাধিক ঋণাত্মক সংকেতের তুলনায় পরিমাপ করা হয়েছে (শিখর থেকে শিখর বিস্তার), তার উপর নির্ভর করে মান পৃথক হয় এবং তার পরে তাকে দুই দিয়ে ভাগ। বৈদ্যুতিক প্রকৌশলে, এই অস্পষ্টতার স্বাভাবিক সমাধানটি হল একটি সংজ্ঞায়িত নির্দিষ্ট বিভব থেকে বিস্তার পরিমাপ করা হয় (যেমন ভূসম্পর্ক বা ০ ভোল্ট)। কঠোরভাবে বলতে গেলে, একে আর বিস্তার বলা যায় না, কারণ পরিমাপের মধ্যে একটি ধ্রুবক (একমুখী উপাদান) অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
টেলিযোগযোগের ক্ষেত্রে, স্পন্দন বিস্তার হল একটি স্পন্দনের চলরাশিগুলির বিস্তার, যেমন বিভব স্তর, তড়িৎ প্রবাহের স্তর, ক্ষেত্র শক্তি, বা ক্ষমতার স্তরের বিস্তার।
স্পন্দন বিস্তার একটি নির্দিষ্ট উল্লেখের সাপেক্ষে পরিমাপ করা হয় এবং তাই গড়, তাৎক্ষণিক, শিখর, বা বর্গমূল-গড়-বর্গ এর মতো উল্লেখ থাকা উচিত উচিত।
কম্পাঙ্ক - এবং দশা - মড্যুলেশন করা তরঙ্গরূপের চূড়ান্ত রূপরেখার ক্ষেত্রেও স্পন্দন বিস্তার প্রযোজ্য।[৭]