বুকিট বাটোক শহরের উদ্যান সিঙ্গাপুরের বুকিট বাটোক শহরে গিলিনের সীমানায় অবস্থিত একটি উদ্যান। উদ্যানটি একটি অব্যবহৃত গ্রানাইট খনি থেকে তৈরি করা হয়েছিল। এর সাথে, চীনের গুইলিনে অবস্থিত একটি গ্রানাইট শিলার গাঠনিক সাদৃশ্য পাওয়া যায়। তাই এই উদ্যানটি চীনাদের মধ্যে লিটল গুইলিন বা জিয়াও গুইলিন নামেও পরিচিত।
প্রতিবেশী বুকিট বাটোক নেচার উদ্যানের সাথে বুকিট বাটোক শহরের উদ্যান এই অঞ্চলের ৭৭ হেক্টর জমি দখল করে আছে, যা বুকিট গম্বাক, হংক কাহ, ব্রিকওয়ার্কস এবং হিলভিউ অঞ্চলগুলো জুড়ে রয়েছে। গম্বাক নরাইট নামক এক ধরনের নরাইট বের করার জন্য উদ্যানটি একটি গ্রানাইট খনি ছিল। অঞ্চলটির নাম, বুকিত বাটোক, যার অর্থ "কাশির পাহাড়", খনন কার্যক্রমের শব্দ থেকে উদ্ভূত হয়েছিল।
যখন গ্রানাইট সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে থেকে বের হচ্ছিল এবং সেখানকার বাস্তুতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ে, তখন সরকার বুকিত বাটোকের খনিগুলো বন্ধ করে দেয় এবং পরিবর্তে ইন্দোনেশিয়া থেকে গ্রানাইট কেনার ব্যবস্থা করে। ফলস্বরূপ, খনিটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে এবং সময়ের সাথে সাথে বৃষ্টির জলে এটি পূর্ণ হয় এবং এটি একটি ছোট হ্রদে পরিণত হয়। ১৯৮৪ সালে, হাউজিং অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট বোর্ড (এইচডিবি) খনির খাদটি পূরণ করতে এবং এটির উপরে একটি রাস্তা তৈরি করতে চেয়েছিল। যাইহোক, দেখা গেল বিদ্যমান খনিতে গ্রানাইট উদ্ভেদ এবং সবুজ পাহাড়ের বিপরীত পটভূমিটা একটি মনোরম চেহারা দিয়েছে, হাউস ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (এইচডিবি) খনিটিকে একটি উদ্যানে রূপান্তরিত করে। তারা এর আশপাশ সুশোভিত করেছে এবং দেয়ালগুলোকে ধরে রাখার জন্য গ্রানাইট ব্লক স্থাপন করে, পাশাপাশি ফুটপাথ, লাইট এবং আসন যুক্ত করে। স্থানীয়রা এই উদ্যানটিকে "লিটল গুইলিন" বা "জিয়াও গুইলিন" বলে কারণ গ্রানাইট শিলাগুলোর গঠন চীনের গুয়াংজি প্রদেশের গুইলিন পাহাড়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
১৯৯৬ সালে, আরবান রিডেভেলপমেন্ট অথরিটি শহরের উদ্যান, নেচার উদ্যান, বুকিট তিমাহ নেচার রিজার্ভ এবং সুনগেই পান্ডান এই চারটি উদ্যানের সাথে সংযোগ করে দেয়। যা ইশুন ও বুকিট বাটোক ও এদের আশেপাশের অঞ্চলের আবাসিক এলাকার প্রকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে।[১]
উদ্যানটি বুকিট গম্বাকের বুকিট বাটোক ইস্ট অ্যাভিনিউ ৫ এ অবস্থিত এবং বুকিট গম্বাক এমআরটি স্টেশন থেকে পাঁচ মিনিটের পথ। ব্যায়াম এবং পদচারণা জন্য ব্যবহৃত হওয়ার পাশাপাশি উদ্যানটি চাইনিজ অপেরা, নৃত্য এবং সংগীত পরিবেশনার মঞ্চ হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। সিঙ্গাপুরের অন্য একটি দিক দেখতে ইচ্ছুক পর্যটকদের বিকল্প গন্তব্য হিসাবেও উদ্যানটি ভ্রমণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
সিঙ্গাপুরের নগর কিংবদন্তিরা বলেছেন যে উদ্যানটির খনিতে কাজ করার সময় বা হ্রদে ডুবে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের আত্মারা উদ্যানে ঘুরে বেড়ায়।
৪২-হেক্টর উদ্যানটিতে সূর্যালোক অথবা বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য দুটি গম্বুজ আকারের আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে।[১][২]
এই উদ্যানটি ৩ ভাগে বিভক্ত:
মাঝারি এবং ডান পাশের অংশটি রাস্তার ঠিক পিছনে অবস্থিত (বুকিট বাটোক ইস্ট এ্যাভিনিউ ৫)। এই অংশগুলো হ্রদের রক্ষণাবেক্ষণ প্রাচীর হিসাবে নির্মিত। বাম দিকের অংশটি অন্যান্য অংশের সাথে সংযুক্ত নয় এবং রাস্তার পাশ থেকে আসা যায়। মাঝারি এবং ডান দিকটি একটি ছোট পথ দ্বারা অভ্যন্তরীণভাবে সংযুক্ত এবং এই দুটি অংশেও রাস্তার পাশ থেকে আসা যায়।
এই উদ্যানটি যারা আলোকচিত্র তোলে, ছিপ দিয়ে মাছ ধরে, পিকনিক করে এবং যারা জগিং করে তাদের কাছে একটি প্রিয় জায়গা।
লিটল গুইলিন উদ্যানের একটা অংশ, বুকিট গম্বাক উদ্যান ট্রেল, যা জাতীয় উদ্যান বোর্ডের একটা স্কিমের মাধ্যমে প্রাক্তন সেমবাওয়াংক-হংক কাহ কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট কাউন্সিল এবং বুকিত গম্বাক কমিউনিটি ক্লাব যুব নির্বাহী কমিটির মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে তৈরি করা হয়েছিল। উদ্যানের মধ্যে বিভিন্ন জায়গার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে অবস্থিত নির্দেশিকা সাইনপোস্টগুলো ছিল। জাতীয় উদ্যান বোর্ডের মতে, এই পয়েন্টগুলো হ্রদ ও আশেপাশের একটা মনোরম দৃশ্য অন্তরীক্ষ চিত্রে দেখা যায়।[৩] ২০০৭ সালে, ভূমিধসের পরে জাতীয় উদ্যান বোর্ড স্থায়ীভাবে ট্রেইল বন্ধ করে দেয়।[৪]
উইকিমিডিয়া কমন্সে বুকিট বাটোক শহরের উদ্যান সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।