গণহত্যা | |
---|---|
স্থান | বুরুঙ্গা, সিলেট, বাংলাদেশ |
স্থানাংক | ২৪°৪০′২৩″ উত্তর ৯১°৪৪′৪৬″ পূর্ব / ২৪.৬৭৩° উত্তর ৯১.৭৪৬° পূর্ব |
তারিখ | ২৬শে মে ১৯৭১ দুপুর ১২ টা (ইউটিসি+০৬:০০) |
লক্ষ্য | বাঙ্গালী হিন্দু গ্রামবাসী |
হামলার ধরন | বার্স্ট ফায়ার, গণহত্যা, হত্যাকাণ্ড |
ব্যবহৃত অস্ত্র | লাইট মেশিনগান |
নিহত | ৭১–৯৪ |
হামলাকারী দল | পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, রাজাকার |
বুরুঙ্গা গণহত্যা হচ্ছে ২৬শে মে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বারা সিলেট জেলার তৎকালীন বালাগঞ্জ উপজেলার (বর্তমান ওসমানী নগর), বুরুঙ্গা এবং তার আশপাশের গ্রামের হিন্দু জনগণের উপর সংগঠিত একটি হত্যাকাণ্ড, যা বুরুঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে সংগঠিত হয়।[১][২][৩][৪][৫]
বর্তমান বাংলাদেশের সিলেট জেলার ওসমানীনগরে বুরুঙ্গা গ্রামটি অবস্থিত। ২৫শে মে দুপুরবেলা, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আসার খবরে বুরুঙ্গা এবং তার আশপাশের গ্রামের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিকাল ৪ টায় তার স্থানীয় চেয়ারম্যান ইনজাদ আলীর সাথে দেখা করে। সাক্ষাৎ শেষে, বুরুঙ্গা এবং তার আশপাশের গ্রামে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করা হয় যে ২৬শে মে, বুরুঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে একটি শান্তি কমিটি গঠন করা হবে এবং 'পিস কার্ড' বিতরণ করা হবে।
ভয় স্বত্বেও, বুরুঙ্গা এবং তার আশপাশের গ্রামের লোকজন বুরুঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এসে সকাল ৮টা থেকে জমা হতে থাকে। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক হাজারেরও অধিক মানুষ এসে সমবেত হয়। সকাল ৯টার দিকে, সহচর আব্দুল আহাদ চৌধুরী এবং ডঃ আব্দুল খালেক, ক্যাপ্টেন নূর উদ্দিনের তত্বাবধানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে জীপে করে বিদ্যালয় মাঠে এসে পৌঁছে। তাদের হাতের তালিকা দেখে তারা উপস্থিতির হিসাব নেয় এবং খুশী হয়। ইতোমধ্যে, অন্য একটি দল গ্রামের ঘরেঘরে যায় এবং পুরুষদের বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উপস্থিত হতে আদেশ দেয়। সকাল ১০টার দিকে, তারা হিন্দু এবং মুসলিম জনতাকে পৃথক পৃথকভাবে দলবদ্ধ করে। হিন্দুদের অফিস কক্ষে একত্র করা হয় এবং মুসলিমদের বিদ্যালয়ের অন্য একটি শ্রেণীকক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে কালেমা পাঠ করতে এবং পাকিস্তানের জাতীয় সংগীত গাইতে বলা হয় এবং অতঃপর বেশীরভাগ লোককে ছেড়ে দেয়া হয়। বাকি মুসলিমদের বলা হয় চারগাছি দড়ি দিয়ে হিন্দুদের বেঁধে দিতে। কিছু হিন্দু ভয়ে চিৎকার করতে শুরু করে। এরই মধ্যে, একজন বন্দী হিন্দু, শ্রীনিবাস চক্রবর্তী একটি জানালা খুলতে সমর্থ হন। প্রীতি রঞ্জন চৌধুরী, বুরুঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, রানু মালাকার, একজন হিন্দু যুবকসহ বন্দীদের সাথে ছিলেন, জানালা দিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের উপর গুলি চালায়, কিন্তু তারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
দুপুরের দিকে, বিদ্যালয় ভবন থেকে হিন্দুদের বাহিরে মাঠে নিয়ে আসা হয় এবং তাদের নব্বই জনকে তিনটি সারিতে দাঁড় করানো হয়। ক্যাপ্টেন নূর উদ্দিনের নির্দেশে তিনটি লাইট মেশিনগান থেকে তাদের বার্স্ট ফায়ার করা হয়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তখন তাদের মৃতদেহের উপর কেরোসিন ঢেলে দিয়ে তাতে আগুন জ্বেলে দেয়। রাম রঞ্জন ভট্টাচার্য, সিলেট জজ কোর্টের একজন নামকরা এবং প্রভাবশালী উকিল, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দ্বারা আটক হন, অতঃপর তাকে যেতে দেয়া হয়। তিনি তার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াতে না দাঁড়াতে, তাকে পিছন থেকে গুলি করা হয়। তিনি তৎক্ষণাৎ মারা যান। হত্যাকাণ্ডের পর, আব্দুল আহাদ চৌধুরী এবং ডঃ আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে আট থেকে দশ জন দোসরের একটি দল গ্রামে লুটপাট চালায় এবং নারীদের উত্ত্যক্ত করে। পরের দিন, পাকিস্তানি হানাদাররা আবার বুরুঙ্গায় আসে। চেয়ারম্যান ইনজাদ আলীর সহযোগিতায় তারা কিছু শ্রমিক ভাড়া নেয় এবং বুরুঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে একটি গর্তে দগ্ধ এবং অর্ধদগ্ধ অবশিষ্ট হিন্দু মৃতদেহগুলোকে কবর দেয়। শ্রীনিবাস চক্রবর্তী, জিতেন্দ্র বাইদ্যা এবং অধির মালাকার সহ খুব কম লোকই, অনেকগুলো বুলেটে আহত হবার পরও এই হত্যাকাণ্ডে বেঁচে যায়।
মৃতের সঠিক সংখ্যা গণনা করা যায়নি, যদিও ৭১ থেকে ৯৪ জনের হিসাব করা হয়। বেঁচে যাওয়া শ্রীনিবাস চক্রবর্তীর মতে, ৯৪ জন লোককে হত্যা করা হয়েছিল।
১৯৮৪ সালে, বাংলাদেশ সরকার গণহত্যার এই স্থানটিকে ইটের দেয়ালে পরিবেষ্টন করে দেয়। পরবর্তীতে, এই নৃশংস হামলায় নিহতদের স্মৃতি রক্ষার্থে একটি স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা হয়।