বৃক্কের অকার্যকারিতা বা শেষ দশার বৃক্কের রোগ হচ্ছে এক প্রকার শারীরিক অবস্থা যখন বৃক্ক স্বাভাবিক কার্যক্রমের শতকরা ১৫ ভাগের কম কাজ করে।[১] বৃক্কের অকার্যকারিতা দুই ধরনের হতে পারে: বৃক্কের প্রকট অকার্যকারিতা (অ্যাকিউট কিডনি ফেইলিওর) এবং বৃক্কের দীর্ঘস্থায়ী অকার্যকারিতা (ক্রনিক কিডনি ফেইলিওর)। প্রকট বা তীব্র মাত্রার অকার্যকারিতা সাধারণত খুব দ্রুত সংঘটিত হয় এবং তা নিরাময় করা সম্ভবও হতে পারে। অপরদিকে দীর্ঘস্থায়ী অকার্যকারিতা সাধারণত খুব ধীর গতিতে মারাত্মক রূপ নেয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আরোগ্য লাভ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।[২] বৃক্কের অকার্যকারিতার লক্ষণ-উপসর্গের মধ্যে রয়েছে পায়ে পানি জমা, ক্লান্ত অনুভব করা, বমি করা, খাবারে অরুচি হওয়া, এবং বিভ্রান্তি।[১] বৃক্কের দুই ধরনের অকার্যকারিতার ক্ষেত্রেই যে শারীরিক জটিলতাগুলো দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছে ইউরিমিয়া বা রক্তে ইউরিয়ার উপস্থিতি বেড়ে যাওয়া, রক্তে পটাশিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া, এবং ভলিউম ওভারলোড বা হৃদপিণ্ডে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া।[৩] পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী অকার্যকারিতার ক্ষেত্রে আরও যে জটিলতাগুলো দেখা যায় তার মধ্যে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, এবং রক্তশূন্যতা অন্তর্ভুক্ত।[৪][৫]
বৃক্কের প্রকট অকার্যকারিতার ক্ষেত্রে চিকিৎসার পদ্ধতি অকার্যকারিতার কারণ ও অবস্থার উপর নির্ভরশীল।[৬] দীর্ঘস্থায়ী অকার্যকারিতার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে হিমোডায়ালাইসিস, পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস, বা বৃক্ক প্রতিস্থাপন।[১] হিমোডায়ালাইসিস অন্যতম প্রচলিত একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে যন্ত্রের মাধ্যমে রক্তকে শরীরের বাইরে পরিশুদ্ধ করা হয়।[১] অপরদিকে পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিসের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট তরল তলপেটের গহ্বরে প্রবেশ করানো হয় ও পরবর্তীতে তা নিষ্কাশন করা হয় এবং সমগ্র প্রক্রিয়াটি দিনে বারবার পরিচালনা করা হয়।[১] আর বৃক্কের প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে একটি সুস্থ বৃক্ককে রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয় এবং পরবর্তীতে অনাক্রম্যতাদমনমূলক বা ইমিউনোসাপ্রেসিভ ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে শরীর যেনো প্রতিস্থাপিত বৃক্কটিকে প্রত্যাখান না করে সেই চেষ্টা করা হয়।[১] এছাড়াও কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী অকার্যকারিতার ক্ষেত্রে শারীরিক সক্রিয়তা বৃদ্ধি এবং সুনির্দিষ্ট খাদ্যাভাসের পরামর্শ প্রদান করা হয়।[১]
শ্রেণীবিন্যাস |
---|