ব্যক্তিকে আক্রমণ বলতে এমন একটি আক্রমণাত্মক কৌশলকে বোঝায়, যেখানে বিতর্ক বা আলোচনা চলাকালীন কোনও ব্যক্তির মূল যুক্তি বা বক্তব্য খণ্ডন না করে ব্যক্তির চরিত্র, উদ্দেশ্য, অতীত আচরণ বা অন্য কোনও বৈশিষ্ট্যকে আক্রমণ করা হয়। একে লাতিন পরিভাষায় "ad hominem" (ইংরেজি উচ্চারণে অ্যাড হমিনেম) বলে, যার আক্ষরিক অর্থ "ব্যক্তির প্রতি"। যুক্তিবিজ্ঞানে এটিকে একটি যুক্তিদোষ হিসেবে গণ্য করা হয়, যার নাম ব্যক্তিবিরুদ্ধ যুক্তিদোষ (argumentum ad hominem)। এটি যুক্তিকে দুর্বল বা ভ্রান্ত করে তোলে।[১][২][৩] এর মাধ্যমে মূল সমস্যার সমাধান হয় না, বরং বিতর্ককে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
উদাহরণস্বরূপ:
ব্যক্তিবিরুদ্ধ আক্রমণ কৌশল প্রথম দেখা যায় প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকদের মধ্যে। সক্রেটিস এবং অ্যারিস্টটল-এর মতো দার্শনিকরা যুক্তির বিভিন্ন রূপ নিয়ে আলোচনা করেছেন, যার মধ্যে ব্যক্তিগত আক্রমণের ব্যবহারও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তারা এই ধরনের আক্রমণকে একটি যৌক্তিক ভুল বলে মনে করতেন, যা প্রকৃত যুক্তির বিকল্প নয়।[৪]
মধ্যযুগে এবং রেনেসাঁ যুগে দর্শন এবং ধর্মীয় আলোচনায় ব্যক্তিবিরুদ্ধ আক্রমণ কৌশল প্রায়শই ব্যবহৃত হতো। বিশেষ করে ধর্মীয় বিতর্ক এবং রাজনীতিতে এটি প্রচলিত ছিল।[৫][৬] রোমান ক্যাথলিক চার্চের বিরুদ্ধে বিপ্লবী মতবাদের প্রতিক্রিয়ায় ব্যক্তিবিরুদ্ধ আক্রমণ কৌশল ব্যবহার করে ব্যক্তি আক্রমণ করা হতো, যাতে তাদের বক্তব্য দুর্বল করে দেখানো যায়।[৭][৮]
আধুনিক সময়ে, বিশেষ করে রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিতর্কে ব্যক্তিবিরুদ্ধ আক্রমণ কৌশলের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি প্রায়শই গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহৃত হয়, যেখানে যুক্তির বিকল্প হিসাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ বা চরিত্র হরণ করা হয়। এর ফলে এটি একটি বিশিষ্ট যৌক্তিক ত্রুটী হিসেবে বিবেচিত হয় এবং শিক্ষার ক্ষেত্রেও এটি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়ে থাকে।
এ ধরনের আক্রমণ বিতর্ককে যুক্তির মূল বিষয়বস্তু থেকে সরিয়ে দেয় এবং বিতর্ককে ব্যক্তিগত স্তরে নিয়ে যায়। ফলে সমস্যা সমাধানের পথ বন্ধ হয়ে যায় এবং তা পারস্পরিক বিদ্বেষ বাড়াতে পারে। একে সফলভাবে ব্যবহার করার ফলে একটি শক্তিশালী যুক্তিও দুর্বল বলে প্রমাণিত হতে পারে, যদিও আসলে তা যুক্তিসঙ্গত।