ব্রতচারী আন্দোলন হচ্ছে ১৯৩২ সালে গুরুসদয় দত্ত কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি আধ্যাত্মিক ও সামাজিক উন্নয়নের আন্দোলন। ১৯৩২ সালে এই আন্দোলনের সূচনা হয়। ব্রিটিশ ভারতের বাঙালি নাগরিকদের মধ্যে দেশপ্রেম, বাঙালি জাতীয় চেতনা ও নাগরিকত্ববোধ তৈরী করা ছিল এ আন্দোলনের মূল লক্ষ্য।
গুরুসদয় দত্ত কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বাংলার ব্রতচারী সমিতির মাধ্যমে এই আন্দোলনের কার্যক্রম প্রচারিত হত। সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছিল কলকাতার ১২ নং লাউডন স্ট্রিটে। অবিভক্ত বাংলার অনেক এলাকায় এই সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৩৪ সালে ফরিদপুর ব্রতচারী সমিতির মূখপত্র হিসেবে ব্রতচারী বার্ত্তা নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। বাংলার ব্রতচারী সমিতির উদ্যোগে ১৯৩৬ সালে বাংলার শক্তি নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল। ইউরোপে এ আন্দোলন জনপ্রিয়তা পায়। ইংরেজ সরকারেরও এ আন্দোলনের প্রতি সপ্রশংস সমর্থন ছিল।[১]
ব্রতচারী আন্দোলনে ভুক্তির জন্য প্রথমে তিনটি উক্তি স্বীকার করে নিতে হত। উক্তিগুলো হলোঃ
অতঃপর পঞ্চব্রত, ব্রতচারীর প্রতিজ্ঞা, ব্রতচারীর ষোলপণ, ষোল পণের অতিরিক্ত এক পণ, ব্রতচারীর সতের মানা (নিষেধাজ্ঞা), ব্রতচারী বৃত্ত ইত্যাদি আবৃত্তি করে এই আন্দোলনের অন্তর্ভুক্ত হতে হত। [২]
ব্রতচারী আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল বাঙ্গালী ব্রতচারীদেরকে জ্ঞান, শ্রম, সত্য, ঐক্য ও আনন্দের সাথে জীবনযাপনের পথপ্রদর্শন করা। ব্রতচারীদের সত্যনিষ্ঠা, সংযম, অধ্যবসায় ও আত্মনির্ভরতা ছিল এ আন্দোলনের অন্যতম বৈশিষ্ট। ঐক্যবদ্ধভাবে লোকনৃত্য ও লোকসঙ্গীত চর্চার মাধ্যমে মানসিক ও আত্মিক বিকাশ লাভ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা ছিল এ আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য।[১] বিশ্ব মানব হওয়ার লক্ষ্যে শাশ্বত বাঙ্গালী হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে এ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা গুরুসদয় দত্ত লেখেন[৩]-
“ | ষোল আনা বাঙ্গালি হ’ বিশ্ব মানব হবি যদি শাশ্বত বাঙ্গালি হ’ |
” |