প্রতিযোগিতা | ২০১৪ ফিফা বিশ্বকাপ সেমি-ফাইনাল | ||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
| |||||||
তারিখ | ৮ জুলাই ২০১৪ | ||||||
ম্যাচসেরা | ![]() | ||||||
রেফারি | মার্কো রোদ্রিগেস (মেক্সিকো) | ||||||
দর্শক সংখ্যা | ৫৮,১৪১ | ||||||
আবহাওয়া | পরিষ্কার ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৭২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) আর্দ্রতা ৫১%[১] |
ব্রাজিল বনাম জার্মানি, ৮ জুলাই ২০১৪ বেলো হরিজন্তে, এস্তাদিও মিনেইরাওতে ২০১৪ ফিফা বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালে একে অন্যের বিপক্ষে মুখোমুখি হয়। ব্রাজিলের বিপক্ষে জার্মানির ৭-১ বিজয় ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে অসাধারণ ফলাফলগুলির একটি হিসাবে গণ্য করা হয়।[২][৩]
জার্মানির ৭-১ গোলের জয় যেকোন ফিফা বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে যে কোন দলের জয়গুলির মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়। এই ম্যাচে জার্মানি বিশ্বকাপের ইতিহাসে দলগত ভাবে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড করে, তাদের ২২৩ গোল ব্রাজিলের ২২১ গোলের রেকর্ড অতিক্রম করে যায়। এই ম্যাচে জার্মানির পক্ষে দ্বিতীয় ও নিজের ১৬ তম গোল করে ব্রাজিলের রোনালদোর করা এককভাবেই বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতার পূর্বের রেকর্ডটি ভাঙ্গেন মিরোস্লাভ ক্লোসা।[৪] এই ম্যাচ হারে ব্রাজিল নিজেদের মাটিতে টানা ৬৪ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড শেষ করে, তারা সর্বশেষ ১৯৭৫ সালে নিজের মাটিতে কোপা আমেরিকার ম্যাচে পেরুর কাছে ১-৩ ব্যবধানে হেরেছিল এবং ১৯২০ সালে উরুগুয়ের কাছে তাদের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারার রেকর্ড এদিন ছাড়িয়ে যায়,যার ফলে এটিকে একটি জাতীয় অপমান হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।[৫]
এই ফলাফল ফুটবল বিশ্বকে বিস্মিত করে, বিশেষ করে ব্রাজিলকে, যারা স্বাগতিক দল হিসাবে টুর্নামেন্টে সেরা দলের বিবেচনায় এগিয়ে ছিল।[৬] খেলা পরবর্তীকালে সংবাদপত্র দ্বারা এই ম্যাচটি মিনেইরাওজো হিসাবে অবিহিত করা হয়, যা ১৯৫০ সালে নিজেদের মাটিতে উরুগুয়ের কাছে ব্রাজিলের অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে যাওয়াকে নির্দেশ করে।[৭]
উভয় দল কিছু আক্রমণ করার মধ্য দিয়ে খেলা শুরু করে, ব্রাজিল প্রথম আক্রমণের সুযোগ তৈরি করে। ৩য় মিনিটে মার্সেলোর শর্ট গোলপোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায় ও ৭ম মিনিটে সামি খেদিরার শর্ট ব্রাজিলের রক্ষণভাগে আটকে যায়। ১১ মিনিটে জার্মানি প্রথম গোল করে কর্নার থেকে। টমাস মুলার ব্রাজিলের পেনাল্টি বক্সে ব্রাজিলের খেলোয়াড় দ্বারা মার্কবিহীন ছিলেল, ফলে তিনি টনি ক্রুসের কর্নার কিক থেকে ফাঁকায় বল পেয়ে তা সরাসরি ব্রাজিলের জালে পাঠিয়ে দেন। এর পর ব্রাজিল কয়েকটি দ্রুত আক্রমণ করলেও তা কাজে আসে নি। পরবর্তী ১০ মিনিটে কোন গোল না হলেও, ২৩ মিনিটে জার্মানির খেলোড়ারদের সম্মিলিত আক্রমণ থেকে গোল করেন মিরোস্লাভ ক্লোসা। মিরোস্লাভ ক্লোসার প্রথম শর্ট গোলরক্ষক পিরিয়ে দিলেও দ্বিতীয় শর্টে বল জালে পাঠান ক্লোসা। এই গোলের মাধ্যমে মিরোস্লাভ ক্লোসা ১৬টি গোল নিয়ে এককভাবেই বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা হন।[৮][৯][১০]
এরপর দুই মিনিটের ব্যবধানে ২টি গোল করেন টনি ক্রুজ, ২৪ ও ২৬ মিনিটে। ২৪ মিনিটে তিনি ব্রাজিলের বক্সে মার্কবিহীন থাকা অবস্থায় ফিলিপ লামের বাড়িয়ে দেয়া ক্রস থেকে গোল করেন, । তিন মিনিট পর ২৯ মিনিটে মেসুত ওজিলের দেয়া পাসে গোল করেন সামি খেদিরা। ততক্ষণে ব্রাজিলীয় সমর্থকের মাঝে নীরবতা নেমে আসে। প্রথমার্ধে জার্মানির সব গোল ৩০ মিনিটের পূর্বেই হয়, এরমধ্যে ছয় মিনিটের ব্যবধানে চারটি গোল হয়। ব্রাজিল প্রথমার্ধে টার্গেটে কোন শট করে নি। ব্রাজিলের অনেক সমর্থক ততক্ষনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।[৮][৯][১০][১১]
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ব্রাজিল পাউলিনিয়ো এবং রামিরেসকে হাক ও ফের্নান্দিনিয়োর বদলি হিসাবে নামায়। অস্কার, পাউলিনিয়ো এবং ফ্রেড গোল করার চেষ্টা করলেও জার্মানির গোলরক্ষক ম্যানুএল নয়ার সেসব চেষ্টাগুলি ব্যর্থ করে দেন। তবে, ৬০তম মিনিটে জার্মানি আবার গোল করার চেষ্টা চালায়, এর মধ্যে টমাস মুলারের দুটি চেষ্টা সেজার ব্যর্থ করে দেন। ৬৯ মিনিটে জার্মানি আবার গোল করে - লামের দেয়া পাস থেকে শুর্লে গোল করেন। শুর্লে এখানেই শেষ করেন নি; ৭৯ মিনিটে মুলারের একটি ক্রস গ্রহণ করেন এবং গোল পোস্টে জোরে একটি শর্ট করেন, যা গোল পোস্টের বারে লেগে গোল হয়ে যায়। এতে জার্মানি ৭-০ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে যায়। শেষ দিকে, ওজিল একটি সুযোগ পায় কিন্তু তিনি তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন। ম্যাচের একদম শেষে কিছু আগে ব্রাজিলেও পক্ষে একমাত্র গোল করেন অস্কার কিন্তু ততক্ষণে ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ হার নিশ্চিত হয়ে যায় (আগেরটি ছিল ১৯২০ সালে উরুগুয়ের কাছে ৬-০)। এই হারে ব্রাজিল নিজেদের মাটিতে টানা ৬৪ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড শেষ করে। খেলা শেষে ব্রাজিলীয় খেলোয়াড়রা অশ্রুসিক্ত চোখে মাঠ ত্যাগ করে।[৮][৯][১০][১২][১৩]
ক্রুস খেলায় ৩টি শট, ২টি গোল, ৯৩% সঠিক পাস দেয়া, ১ গোলে সহায়তা এবং ২টি সম্ভাবনা তৈরির জন্য ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন।[১৪][১৫]
ব্রাজিল ![]() | ১–৭ | ![]() |
---|---|---|
অস্কার ![]() |
প্রতিবেদন | মুলার ![]() ক্লোজে ![]() ক্রুস ![]() খেদিরা ![]() শুর্লে ![]() |
![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ব্রাজিল
|
![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() জার্মানি
|
|
![]() |
|
ম্যাচসেরা:
সহকারী রেফারিগণ:
|
ম্যাচের নিয়ম:
|
ব্রাজিল | জার্মানি | |
---|---|---|
গোল করেছে | ১ | ৭ |
মোট শট | ১৮ | ১৪ |
টার্গেটের উপর শট | ৮ | ১০ |
বল দখল | ৫২% | ৪৮% |
কর্নার কিক | ৭ | ৫ |
সংঘটিত ফাউল | ১১ | ১৪ |
অফসাইড | ৪ | ০ |
হলুদ কার্ড | ১ | ০ |
লাল কার্ড | ০ | ০ |
ব্রাজিল ম্যানেজার লুইস ফিলিপ স্কলারি একে "ব্রাজিলীয় জাতীয় ফুটবল দলের নিকৃষ্টতম পরাজয়" বলে আখ্যায়িত করেন এবং পরাজয়ে সকল দায় স্বীকার করেন।[১৬][১৭] ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ডেভিড লুইজ এবং গোলরক্ষক হুলিও সিজার দুজনেই ব্রাজিলের সাধারণ জনগণের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন।[১৮][১৯] জার্মানির ম্যানেজার জোয়াকিম লো বলেন যে তার দলের "একটি পরিষ্কার, স্থির খেলার কৌশল ছিল" যার জন্য পুরো দল শান্ত ছিল এবং তিনি বুঝতে পারেন যে ব্রাজিল "ভেঙে পড়ছে। এবং তারা এর সুযোগ নেয়।"[২০][২১][২২] সাংবাদিক মিগুয়েল ডেলানে এই ম্যাচটিকে "মিনেইরাজো" (Mineirazo) বলে আখ্যায়িত করেন।[২৩]. টনি ক্রুজ, একজন জার্মান খেলোয়াড় এবং গোলদাতা বলেন "যদিও এটি একটি ভাল খেলা ছিল, তবুও এটি আমাদের শ্রেষ্ঠ খেলা ছিল না"।[২৪]
ব্রাজিলের প্রধানমন্ত্রী, দিলমা রউসেফ, ম্যাচটির বিষয়ে টুইটারে এক বার্তায় বলেন, "সকল ব্রাজিলীয়দের মত, আমিও এই পরাজয়ের ফলে গভীরভাবে শোকাহত"।[২৫]
রিও ডি জেনিরোর একটি ফ্যান-পার্টি'তে গণ-ডাকাতি এবং সাও পাওলোর রাস্তায় খেলা শেষ হবার আগেই ব্রাজিলীয় পতাকায় ফ্যানেদের আগুন জ্বালানোর খবর পাওয়া যায়।[২৬] সাও পাওলো জুড়েই বেশকিছু সংখ্যক বাস পোড়ানো হয় এবং একটি ইলেকট্রনিকস এর দোকান লুট করা হয়।[২৭][২৮]
এই ঘটনার ফলে রিও ডি জেনিরোতে কমপক্ষে একজন নিহত হয়েছে বলে জানা যায়।[২৯]
উইকিমিডিয়া কমন্সে ব্রাজিল বনাম জার্মানির মধ্যে ২০১৪ ফিফা বিশ্বকাপ সেমি-ফাইনাল সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।
টেমপ্লেট:Brazil national football team matches টেমপ্লেট:Germany national football team matches