ব্রুস লেয়ার্ড

ব্রুস লেয়ার্ড
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
ব্রুস ম্যালকম লেয়ার্ড
জন্ম (1950-11-21) ২১ নভেম্বর ১৯৫০ (বয়স ৭৪)
মাউন্ট ললি, পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রেলিয়া
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরন
ভূমিকাব্যাটসম্যান
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৩০৬)
১ ডিসেম্বর ১৯৭৯ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
শেষ টেস্ট১৪ অক্টোবর ১৯৮২ বনাম পাকিস্তান
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ৫৭)
২৭ নভেম্বর ১৯৭৯ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
শেষ ওডিআই৮ অক্টোবর ১৯৮২ বনাম পাকিস্তান
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৭৩ - ১৯৮৪ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই
ম্যাচ সংখ্যা ২১ ২৩
রানের সংখ্যা ১৩৪১ ৫৯৪
ব্যাটিং গড় ৩৫.২৮ ২৯.৭০
১০০/৫০ ০/১১ ১/২
সর্বোচ্চ রান ৯২ ১১৭*
বল করেছে ১৮
উইকেট
বোলিং গড়
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট -
সেরা বোলিং
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১৬/- ৫/-
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ব্রুস ম্যালকম লেয়ার্ড (ইংরেজি: Bruce Laird; জন্ম: ২১ নভেম্বর, ১৯৫০) পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার মাউন্ট ললি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী সাবেক ও প্রথিতযশা অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৪ সময়কাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়াও, বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন ব্রুস লেয়ার্ড।

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া দলের প্রতিনিধিত্ব করেন ব্রুস লেয়ার্ড। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

[সম্পাদনা]

১৯৭২-৭৩ মৌসুম থেকে ১৯৮৩-৮৪ মৌসুম পর্যন্ত ব্রুস লেয়ার্ডের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল।

শেফিল্ড শিল্ড প্রতিযোগিতায় নিজ রাজ্যদল ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৩ সালে ২২ বছর বয়সে অভিষেক ঘটে তার। অ্যালেন থমসনঅ্যালান হার্স্টের ন্যায় ভিক্টোরিয়ার শক্তিধর বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে রুখে দাঁড়াতে ব্যাটিং উদ্বোধনে নামেন তিনি। তবে, উভয়ে ইনিংসেই অল্প রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। ৩ ও ১৬ রান তুলেন। তাসত্ত্বেও, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেটে জয় পায় ও এক পর্যায়ে ১৯৭২-৭৩ মৌসুমে শিল্ডের শিরোপা জয় করে।

১৯৭৩-৭৪ মৌসুমে প্রথমে একাদশের পক্ষে খেলার তেমন সুযোগে না পেলেও ১৯৭৪-৭৫ মৌসুমে ব্যাটিং উদ্বোধনে নিয়মিতভাবে খেলতেন। নিজস্ব চতুর্থ প্রথম-শ্রেণীর খেলায় নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে প্রথমে সেঞ্চুরি করেন। তখন থেকেই তাকে ভবিষ্যতের টেস্ট খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করা হতো।[] প্রথম উইকেট জুটিতে ওয়ালি এডওয়ার্ডসের সাথে ২০৩ রান করেন। ব্যক্তিগতভাবে করেন ১১৭। কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে নিজস্ব দ্বিতীয় শতরান করেন। ১২৭ রান তুলে রান আউটের শিকার হন। আট খেলায় ৭০৩ রান তুলে বিখ্যাত ক্রিকেটার গ্রেগ চ্যাপেলের সাথে তালিকায় যৌথভাবে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকে পরিণত হন। ৪৬.৮৬ গড়ে দুই শতক ও চারটি অর্ধ-শতক করে এ রানগুলো সংগ্রহ করেছিলেন তিনি।[]

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

[সম্পাদনা]

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ২১ টেস্ট ও ২৩টি একদিনের আন্তর্জাতিকে (ওডিআই) অংশগ্রহণ করেছেন ব্রুস লেয়ার্ড। ১ ডিসেম্বর, ১৯৭৯ তারিখে ব্রিসবেনে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ১৪ অক্টোবর, ১৯৮২ তারিখে লাহোরে স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

ঘরোয়া ক্রিকেটে সুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৫ সালে অ্যাশেজ সিরিজ খেলতে ইংল্যান্ড ও কানাডা গমনের জন্যে অস্ট্রেলিয়ার সদস্যরূপে মনোনীত হন। কানাডায় একটি খেলায় ব্রুস লেয়ার্ড ৮০ রান করেন।[] এ সফরে তিনি কোন টেস্ট খেলার জন্যে সুযোগ পাননি। তবে, কাউন্টি দলগুলোর বিপক্ষে নয়টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেন। ৩২.৫৩ গড়ে ৪৮৮ রান তুলেন। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ করেন ১২৭। তিনটি কাউন্টি খেলায় ২০৭ রান সংগ্রহের পরও দূর্ভাগ্যবশতঃ প্রথম টেস্টে তাকে রাখা হয়নি। দল নির্বাচকমণ্ডলী প্রথম কাউন্টি খেলায় কেন্টের বিপক্ষে ১৫৬ রান তোলা অ্যালান টার্নাররিক ম্যাককস্কারকে রাখে। এ সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রতীয়মান করতে এজবাস্টনে সফরকারীরা ইনিংস ও ৮৫ রানের জয় তুলে নেয়। প্রথম ইনিংসে দলটি মাত্র ৩৫৯ রান তুললেও ইংল্যান্ড দুইবার ১০১ ও ১৭৩ রানে জয় পায়।[] এরপর হোভে সাসেক্সের বিপক্ষে উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করে ম্যাককস্কার দলে নিজের স্থান পাকাপোক্ত করে নেন।[] সিরিজের বাদ-বাকী টেস্টগুলো ড্রয়ে পরিণত হলে অস্ট্রেলিয়া ১-০ ব্যবধানে অ্যাশেজ জয় করে।

পরবর্তী মৌসুমে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ায় ব্রুস লেয়ার্ড নিরাশ করেন। তিনি শিল্ডের আট খেলায় অংশ নিলেও মাত্র একটি শতরান করে ২৮.০৭ গড়ে রান তুলেন। তার দলের অন্য খেলোয়াড়ও ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। কোন খেলোয়াড়ই একের অধিক সেঞ্চুরি পাননি। তবে, দলে শীর্ষস্থানীয় ফাস্ট বোলার মিক ম্যালনডেনিস লিলি দলকে চার খেলায় জয় এনে দিয়েছিলেন। ১৯৭৬-৭৭ মৌসুমের গ্রীষ্মে অস্ট্রেলিয়া দলের সদস্য হবার সমূহ সম্ভাবনা থাকলেও ইয়ান ডেভিসের কাছে এ স্থানটি হাতছাড়া হয়ে যায় ব্রুস লেয়ার্ডের।[] তবে, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার শিল্ডের শিরোপা বিজয়ী তিনি প্রভূতঃ ভূমিকা রেখেছিলেন।[]

বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটে অংশগ্রহণ

[সম্পাদনা]

১৯৭৭ সালে অস্ট্রেলীয় ধনকুবের ক্যারি প্যাকারের পরিচালনায় বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেট খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন।[] ঐ প্রতিযোগিতায় ১৩টি সুপারটেস্টে তিনি তারকা খেলোয়াড় ছিলেন।

১৯৭৭-৭৮ মৌসুমের চারটি সুপারটেস্টে অংশ নিয়ে দুইটিতে শতরান করেন। অ্যাডিলেডের ফুটবল পার্কে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩য় সুপারটেস্টে প্রথম শতরানের সন্ধান পান। ১০৬ রান তুলে অসিদেরকে ২২০ রানের জয় এনে দেন।[] এরপর সিডনির আরএএস শোগ্রাউন্ডে বিশ্ব একাদশের বিপক্ষে প্রথম সুপারটেস্টের প্রথম ইনিংসে আবারো ১০৬ রান তুলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ছয় রান তুলতে সক্ষম হন। ঐ খেলায় অস্ট্রেলীয়রা ৪ উইকেটে হেরে যায়।

১৯৭৮-৭৯ মৌসুমে বিশ্ব সিরিজের দ্বিতীয় আসরে তেমন সুবিধে করতে পারেননি ব্রুস লেয়ার্ড। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে চারটি সুপারটেস্টের প্রত্যেকটিতে অংশ নিলেও শতরানের সন্ধান পাননি। তাসত্ত্বেও, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ডব্লিউএসসি’র সদস্যরূপে মনোনীত হন। সেখানে পাঁচটি সুপারটেস্টের প্রত্যেকটিতেই অংশ নেন। ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর কুইন্স পার্ক ওভালে একটি সেঞ্চুরি করেন। ১২২ রান তুলে অস্ট্রেলিয়াকে জয় এনে দেন।[১০] এ সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে ড্রয়ে পরিণত হয়।

আনুষ্ঠানিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন

[সম্পাদনা]

ক্রিকেট কর্তৃপক্ষদের সাথে ক্যারি প্যাকারের চুক্তিতে উপনীত হবার পর বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটে অংশগ্রহণকারী অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারগণ তাদের নিজ রাজ্য দলে প্রত্যাবর্তন করেন ও তারা পুনরায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার উপযোগী হন। বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটে ব্রুস লেয়ার্ড বেশ ভালো খেলেন। ফলশ্রুতিতে, ১৯৭৯ সালে বেশ সহজেই নিজদেশে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন ও ব্রিসবেন টেস্টে অংশ নেন।[১১] ড্র হওয়া ঐ খেলায় তিনি ৯২ ও ৭২ রান তুলেন। অ্যালান বর্ডার, কিম হিউজরডনি হগ বাদে বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকেই ভালো খেলেছিলেন।[১২] দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ৬৯ রান সংগ্রহ করেন। তাসত্ত্বেও, অস্ট্রেলিয়া দল দশ উইকেটে পরাজিত হয়।[১৩]

তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে আরও একটি অর্ধ-শতক করলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪০৮ রানে জয়ী হয়। ঐ দলের বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেট খেলোয়াড়বিহীন আলভিন কালীচরণ জয়সূচক সেঞ্চুরি করেন। এ টেস্ট সিরিজটি প্যাকারের সুপারটেস্ট সিরিজের আদলে ইংল্যান্ডকে নিয়ে তিন দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টে অংশ নেন। তৃতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৭৪ রান করেন। তবে, তিন খেলার প্রত্যেকটিতেই অস্ট্রেলিয়া দল বিজয়ী হয়েছিল। টেস্ট সিরিজের পাশাপাশি ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল প্রথম বিশ্ব সিরিজ কাপে অংশ নেয়। বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটের আদলে প্রতিযোগিতাটি সম্পন্ন হয়। ত্রি-দেশীয় ঐ প্রতিযোগিতায় তৃতীয় দল হিসেবে ইংল্যান্ড অংশগ্রহণ করে। ২৭ নভেম্বর, ১৯৭৯ তারিখে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওডিআইয়ে ২০ বলে ৩৮ রান করে অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটের জয় এনে দেন। এ প্রতিযোগিতায় এটিই তার সর্বোচ্চ রান ছিল। তবে, অস্ট্রেলিয়া দল চূড়ান্ত খেলায় অংশগ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়।[১৪]

পাকিস্তান গমন

[সম্পাদনা]

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় টেস্ট খেলার পরপরই ফেব্রুয়ারি, ১৯৮০ সালে পাকিস্তান সফরে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের ব্যস্ততম সময় কাটে। গ্রেগ চ্যাপেল দলকে নেতৃত্ব দেন। করাচীতে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে গ্রাহাম ইয়ালপের সাথে ব্রুস লেয়ার্ড জুটি গড়েন। পাকিস্তান দলে সাতজন সাবেক বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটে অংশগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। ঐ খেলায় পাকিস্তান দল ৭ উইকেটে জয় পায়। করাচী টেস্টে ব্রুস লেয়ার্ড ব্যক্তিগত ৫০০ রান সংগ্রহ করেন।

১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় টেস্টে পাকিস্তান দল ড্রয়ের মানসে উইকেট প্রস্তুত করে। তবে, অস্ট্রেলীয়রা ২১১ ওভার ব্যাটিং করে ৬১৭ রান তুলে। গ্রেগ চ্যাপেল দ্বি-শতকের ইনিংস খেললেও তিনি চতুর্থ বলে শূন্য রানে ফেরৎ যান।[১৫] লাহোরের তৃতীয় টেস্টে ব্যাটিং উদ্বোধনে নেমে জুলিয়েন ওয়াইনারের সাথে ৯৩ ও অ্যালান বর্ডারের সাড়ে ছয় ঘণ্টা ক্রিজে অবস্থান করে ১৫০ রান তুলেন।

ইংল্যান্ড গমন

[সম্পাদনা]

পাকিস্তান সফর শেষে অস্ট্রেলিয়া দল ১৯৮০ সালে লর্ডসে দ্বিতীয় শতবার্ষিকী টেস্ট খেলার জন্যে ইংল্যান্ড গমন করে। তবে, ১৯৭৭ সালে মেলবোর্নের প্রথম শতবার্ষিকী টেস্টের ন্যায় চিত্তাকর্ষক ছিল না। তবে, জিওফ্রে বয়কটের অপরাজিত ১২৮ রানের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়। শেষদিনে ৩৭০ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় অগ্রসর হয়ে তিন উইকেট হারিয়ে সফরকারী দল ২৪৪ রান তুলতে সক্ষম হয়েছিল।

বেশ কয়েক বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পর দূরে সড়ে আসতে বাধ্য হন তিনি। শিল্ড ক্রিকেটে নিয়মিতভাবে খেলার চেষ্টা চালান। ১৯৮০-৮১ মৌসুমে ৬ খেলায় অংশ নেন তিনি। তরুণ ক্রিকেটার গ্রেইম উডের সাথে ব্যাটিং উদ্বোধনে নামতেন। তার সাথেই শতবার্ষিকী টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ঐ মৌসুমে লেয়ার্ডের ২০৯ রানের বিপরীতে উডের সংগ্রহ ছিল ৫৪২। তাসত্ত্বেও, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া শিল্ডের শিরোপা জয়ে সমর্থ হয়। এ ধরনের দূর্বল ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের কারণে টেস্ট দলের বাইরে চলে যান ও দলীয় সঙ্গী তার স্থলাভিষিক্ত হন।[১৬] সুযোগ কাজে লাগিয়ে ধারাবাহিকভাবে ২৫ টেস্ট খেলেন গ্রেইম উড ও ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন। এছাড়াও, সমগ্র টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনে নয়টি শতরানের ইনিংস খেলেন। নিউজিল্যান্ড, ভারত ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯৮১ সালে তিনটি সিরিজ খেলা থেকে বঞ্চিত হন।

১৯৮১-৮২ মৌসুমের শিল্ডের খেলায় সুন্দর খেলা প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ নিজ দেশে সফরকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট খেলার জন্য আহুত হন। অপরাজিত ১১০ রান সংগ্রহসহ উডের সাথে উত্তরোত্তর সফলতম জুটি গড়ার কারণে অধিনায়ক গ্রেগ চ্যাপেলের সুনজরে পড়েন তিনি।

লেয়ার্ড পরবর্তী বারো টেস্টে উডের সাথে শীর্ষসারিতে জুটি গড়েন। তিন টেস্টের সিরিজের পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম উইকেটে গড়ে ৬৫ রান করে তুলেন। তন্মধ্যে, ১০৯ রানের সেরা জুটি ছিল। ওয়াকা গ্রাউন্ডে ঐ গ্রীষ্মের প্রথম টেস্টে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার সাতজন খেলোয়াড়ের অন্যতম ছিলেন। বাদ-বাকীরা ছিলেন - কিম হিউজ, রড মার্শ, ব্রুস ইয়ার্ডলি, ডেনিস লিলিটেরি অল্ডারম্যান[১৭]

১৯৮১-৮২ মৌসুমের বিশ্ব সিরিজ কাপে ব্রুস লেয়ার্ড তার একমাত্র আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি হাঁকান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অপরাজিত ১১৭ রান করেছিলেন তিনি। টেস্ট অঙ্গনে লেয়ার্ড ও উড গড়ে ৪৩.১০ রানের জুটি গড়েন। দুইটি শতরান ও ছয়টি অর্ধ-শতকের জুটি ছিল। তাসত্ত্বেও, দল নির্বাচকমণ্ডলী পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেননি ও পরিবর্তনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন।

পাকিস্তান সফরে দলের তৃতীয় সদস্যরূপে ব্রুস লেয়ার্ডের অন্তর্ভূক্তি ঘটে।[১৮] তবে, ১৯৮২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া দল ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশের শিকার হলে দল থেকে বাদ পড়েন। এরপর আর তাকে দলে রাখা হয়নি।

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ২১টি টেস্টে অংশ নিলেও কোন সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করতে পারেননি তিনি। তবে, স্বীকৃতিবিহীন সুপারটেস্টে তিনবার তিন অঙ্কের কোঠা স্পর্শ করেছিলেন। অন্য যে-কোন উদ্বোধনী অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সর্বাধিক রান করলেও কোন টেস্ট সেঞ্চুরির সন্ধান পাননি।[১৯] ১০০০ বা ততোধিক রান সংগ্রহকারী খেলোয়াড়দের মধ্যে তার ব্যাটিং গড় সর্বোচ্চ।[২০] বিশ বা ততোধিক ইনিংসে ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে এ রেকর্ডটি প্রযোজ্য।[২১]

অক্টোবর, ১৯৮২ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ওডিআই খেলায় অংশ নিতে থাকেন। শেষ খেলাটি পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেন। তবে, ৯১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলা সত্ত্বেও তার দল জয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছিল।

অস্ট্রেলিয়া দল থেকে বাদ পড়লেও শিল্ডের খেলায় চমৎকার খেলা অব্যাহত রাখেন তিনি। ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে ৪০.৬৬ গড়ে ৬১০ রান তুলেন। চূড়ান্ত খেলায় নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে জয় পেয়ে শিরোপা জয় করে তার দল। এরপর ম্যাকডোনাল্ডস কাপে একই দলের বিপক্ষে চার উইকেটে জয় পেয়ে ডাবল লাভের অধিকারী হয় ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া।

১৯৮৩-৮৪ মৌসুমের অধিকাংশ সময় পাঁচ নম্বর অবস্থানে থেকে ব্যাটিংয়ে নামেন ব্রুস লেয়ার্ড। ৪৮.৮৫ গড়ে ৬৮৪ রান তুলেন। পার্থে শিল্ডের খেলায় সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া দলকে নেতৃত্ব দেন। আরও একটি শিল্ডের শিরোপা লাভের মধ্য দিয়ে ব্রুস লেয়ার্ডের খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। ১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে চূড়ান্ত খেলায় ৬৩ ও ৫৪ রান তুলে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়াকে চার উইকেটে জয় এনে দেন।[২২]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Test team beginning to take shape"The Canberra Times49, (13,913)। Australian Capital Territory, Australia। ১৫ নভেম্বর ১৯৭৪। পৃষ্ঠা 16। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ – National Library of Australia-এর মাধ্যমে। 
  2. "Cricket Archive – First Class Matches played by Bruce Laird"(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  3. "Chappell is confident after tour"The Canberra Times49, (14,078)। Australian Capital Territory, Australia। ২৯ মে ১৯৭৫। পৃষ্ঠা 1 (SPORTING SECTION)। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ – National Library of Australia-এর মাধ্যমে। 
  4. "Australia in England 1975 Matches"। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। (সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  5. "Sussex v Australians 1975"(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  6. "Batting worries Test selectors"The Canberra Times51, (14,553)। Australian Capital Territory, Australia। ৯ ডিসেম্বর ১৯৭৬। পৃষ্ঠা 36। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ – National Library of Australia-এর মাধ্যমে। 
  7. "Western Australia wins Shield"The Canberra Times51, (14,610)। Australian Capital Territory, Australia। ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৭। পৃষ্ঠা 18। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ – National Library of Australia-এর মাধ্যমে। 
  8. "Benaud, Chappell administrators"The Canberra Times52, (14,886)। Australian Capital Territory, Australia। ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭। পৃষ্ঠা 28। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ – National Library of Australia-এর মাধ্যমে। 
  9. "AUSTRALIANS 497 AHEAD IN ADELAIDE"The Canberra Times52, (14,974)। Australian Capital Territory, Australia। ৩ জানুয়ারি ১৯৭৮। পৃষ্ঠা 1 (SPORTS SECTION)। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ – National Library of Australia-এর মাধ্যমে। 
  10. "WORLD SERIES CRICKET"The Canberra Times53, (15,882)। Australian Capital Territory, Australia। ১৮ মার্চ ১৯৭৯। পৃষ্ঠা 25। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ – National Library of Australia-এর মাধ্যমে। 
  11. "Eight WSC men in Test team"The Canberra Times54, (16,127)। Australian Capital Territory, Australia। ২০ নভেম্বর ১৯৭৯। পৃষ্ঠা 1। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ – National Library of Australia-এর মাধ্যমে। 
  12. "Cricket Archive – West Indies in Australia 1979/80 (1st Test)"(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  13. "FIRST TEST"The Canberra Times54, (16,139)। Australian Capital Territory, Australia। ২ ডিসেম্বর ১৯৭৯। পৃষ্ঠা 26। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ – National Library of Australia-এর মাধ্যমে। 
  14. "Cricket Archive – Benson and Hedges World Series Cup 1979/80"। ২৬ জুলাই ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। (সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  15. "Cricket Archive – Australia in Pakistan 1979/80 (2nd Test)"(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  16. "Bruce Laird hits century"The Canberra Times55, (16,497)। Australian Capital Territory, Australia। ২৫ নভেম্বর ১৯৮০। পৃষ্ঠা 20। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ – National Library of Australia-এর মাধ্যমে। 
  17. Australia vs Pakistan, November 1981, WACA Ground
  18. "Kim Hughes to lead Pakistan-tour team"The Canberra Times56, (16,981)। Australian Capital Territory, Australia। ২৬ মার্চ ১৯৮২। পৃষ্ঠা 22। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ – National Library of Australia-এর মাধ্যমে। 
  19. Cricinfo Statsguru
  20. Holme, Tristan (13 May 2009) The Weekly Five-Fer – Best Batsmen Without A Test Ton[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  21. Cricinfo Statsguru[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  22. "Sheffield Shield final Tempers boil as Thommo takes charge"The Canberra Times58, (17,697)। Australian Capital Territory, Australia। ১২ মার্চ ১৯৮৪। পৃষ্ঠা 20। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ – National Library of Australia-এর মাধ্যমে। 

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]