ব্লু এডমিরাল Blue admiral | |
---|---|
ডানা বন্ধ অবস্থায় | |
ডানা খোলা অবস্থায় | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | Arthropoda |
শ্রেণী: | Insecta |
বর্গ: | Lepidoptera |
পরিবার: | Nymphalidae |
গোত্র: | Nymphalini |
গণ: | Kaniska (Moore, 1899) |
প্রজাতি: | K. canace |
দ্বিপদী নাম | |
Kaniska canace (Linnaeus, 1763) | |
প্রতিশব্দ | |
|
ব্লু এডমিরাল(বৈজ্ঞানিক নাম: Kaniska canace(Linnaeus)) নিমফ্যালিডি গোত্র ও নিমফ্যালিনি উপ-গোত্রের অন্তর্ভুক্ত প্রজাতি।
ব্লু এডমিরাল প্রসারিত অবস্থায় ডানার আকার ৬০-৭৫ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের হয়।[৩]
এখনও পর্যন্ত ব্লু এডমিরাল প্রজাপতিদের ১৪টি উপপ্রজাতি চিহ্নিত করা গেছে।[২]
ভারত (জম্মু ও কাশ্মীর থেকে অরুণাচল প্রদেশ, উত্তর-পূর্ব ভারত ও দক্ষিণ ভারতের পার্বত্য অঞ্চল) শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান, জাপান, কোরিয়া ইত্যাদি অঞ্চলে এদের পাওয়া যায়।[২]
প্রজাপতির দেহাংশের পরিচয় বিষদ জানার জন্য প্রজাপতির দেহ এবং ডানার অংশের নির্দেশিকা দেখুন:-
ডানার উপরিতল : স্ত্রী-পুরুষ উভয় প্রকারেই ডানার উপরিতল ঘন আকাশি নীল বা বেগুনি নীল ও কালোর মিশ্রণ| উভয় ডানাতেই আড়াআড়ি বা তির্যকভাবে অবস্থিত আঁকাবাঁকা একটি নীলচে-সাদা ও চওড়া পোস্ট-ডিসকাল বন্ধনী বর্তমান।
সামনের ডানা : সামনের ডানায় কোস্টা থেকে উৎপন্ন ছোট লম্বাটে ও সাদা একটি শীর্ষদেশীয় (apical) ছোপ এবং তার খানিক ভিতরের দিকে কোস্টার সামান্য নিচ থেকে উৎপন্ন একটি চওড়া, লম্বাটে ও তির্যক নীলচে-সাদা প্রি-এপিক্যাল পটি দেখা যায়। উক্ত প্রি-এপিক্যাল পটি-টির একদম নিচ থেকেই শুরু হয়ে ডরসাম পর্যন্ত বিস্তৃত পোস্ট-ডিসকাল বন্ধনীটির ভিতরের কিনারা শুরুরদিকে ও মধ্যভাগে ঢেউ খেলানো, কিন্তু নিম্নভাগে (১ নং ও ১ B নং শিরাতে) সোজা। বন্ধনীর মধ্য দিয়ে অতিক্রম করা কালো শিরাগুলি স্পষ্টত দৃশ্যমান| ডানার শীর্ষভাগ প্রায় চারকোনা ও সাদা আঁশের ছিটাযুক্ত। কোস্টার মধ্যভাগও ঘনভাবে সাদা আঁশে ছাওয়া। ঢেউখেলানো শীর্ষ প্রান্তের উপরের দিকে অস্পষ্ট লালচে দাগ ছোখে পড়ে। টারমেন্ কাস্তের ন্যায় বাঁকানো (falcate) ও নিম্নপ্রান্তে উত্তল (convex)। টরনাস গোলাকৃতি ও ডরসামের বাইরের অর্ধ ভীষণভাবে অবতল (concave)। অনেক নমুনাতে সেল-এর মধ্যে দু-তিনটি ছোট অস্পষ্ট কালচে ছোপ লক্ষ্য করা যায় এবং সেল -এর প্রান্ত বরাবর ডিস্কো-সেলুলার অংশ চওড়াভাবে ঘন কালচে নীল। সাব-টার্মিনাল ও টার্মিনাল নীলচে সাদা রৈখিক দাগগুলি অস্পষ্ট ও বিচ্ছিন্নভাবে সারিবদ্ধ।
পিছনের ডানা : পিছনের ডানায় কোস্টার সামান্য নিচ থেকে ডরসাম পর্যন্ত বিস্তৃত পোস্ট-ডিসকাল বন্ধনীটি সামনের ডানার পোস্ট-ডিসকাল বন্ধনী অপেক্ষা অধিকতর তির্যক ও চওড়া এবং বন্ধনীর বহিঃপ্রান্তরেখা বরাবর প্রতিটি শিরামধ্যে (inter space) একটি করে কালো বিন্দু সারিবদ্ধভাবে বিদ্যমান। সাব-টার্মিনাল ও টার্মিনাল নীলচে সাদা রৈখিক দাগগুলি সামনের ডানা অপেক্ষা বেশি স্পষ্ট ও কম বিচ্ছিন্নভাবে সারিবদ্ধ। ৪ নং শিরা ও টার্মেনের সংযোগস্থলে একটি ছোট লেজ বর্তমান এবং উক্ত লেজের নিচের অংশে টার্মেন ১বি শিরা পর্যন্ত অবতল (concave)। ডরসাম ফ্যাকাশে কালচে বেগুনি।
ডানার নিম্নতল : স্ত্রী -পুরুষ উভয় প্রকারেই দানার নিম্নতল ঘন ও হালকাভাবে কালচে বাদামি এবং ঘন কালো চওড়া সাব-বেসাল পটি বা বন্ধনিযুক্ত। ডানার ঘন কালো অংশ সাদা বা হালকা বাদামী শিরার দাগে চিত্রিত।
সামনের ডানা : সাব-বেসাল ও ডিসকাল অংশ জুড়ে অবস্থিত ঘন কালো চওড়া পটিটি কোস্টা থেকে প্রায় ডরসাম অবধি বিস্তৃত ও বাইরের প্রান্তে কালো রেখা দ্বারা সীমায়িত (bordered)| উক্ত পটিটির মধ্যভাগ অধিক চওড়া ও বাইরের দিকে কৌণিক আকৃতিতে অভিক্ষিপ্ত (projected)। কোস্টা গোড়া (base) থেকে মধ্যভাগ পর্যন্ত কতকগুলি কালচে ও বাদামী ছোট দাগের সারিতে সজ্জিত। ডিসকাল অংশ সরুভাবে ও শীর্ষভাগ (epical zone) চওড়াভাবে হালকা ফ্যাকাশে বাদামী এবং কমবেশি স্পষ্ট কালচে ছোট দাগ-ছোপে চিত্রিত। টার্মেন চাওড়াভাবে কালো| পোস্ট-ডিসকাল অংশে অস্পষ্ট কালো বিন্দুর একটি অবতল ভাবে বাঁকানো সারি চোখে পরে।
পিছনের ডানা : পিছনের ডানা সামনের ডানার অনুরূপ বর্ণ, দাগ-ছোপ ও পটিযুক্ত। ডানার দুই-তৃতীয়ংশই কালো ও সাদা বা হালকা বাদামী শিরার দাগে চিত্রিত। সেল-এর বহিঃপ্রান্তে ছোট সাদা একটি বিন্দু চোখে পরে ও পোস্ট-ডিসকাল অংশে অস্পষ্ট কালো বিন্দুর সারিটি উত্তল ভাবে বাঁকা।
শুঙ্গ সাদায় কালোয় ডোরাকাটা ও উপরিভাগ কালো এবং শীর্ষবিন্দু কমলা হলুদ। মাথা ও বক্ষদেশ (thorux) কালচে নীল, উদর কালো এবং পাল্পী ও বক্ষদেশের নিম্নভাগে হালকা নীলচে লম্বা লোম দেখা যায়।
দ্রুত উড়ানসম্পন্ন ও অতি চঞ্চল প্রকৃতির এই প্রজাতি প্রায় সর্বদাই জলের উৎসের কাছাকাছি জায়গায় বসবাস করে এবং পাহাড়ি নদী বা ঝর্ণার খাত অথবা তার পাশে অবস্থিত জঙ্গল পথ বরাবর সরলরৈখিক গতিপথে দ্রুত একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়া আসা করে। পাহাড়ি বা পার্বত্য বনভূমি এদের বিশেষ পছন্দের বাসস্থান। জঙ্গল ঘেরা পাহাড়ি পথে, মাটির ভিজে ছোপে, গাছের ডাল বা পাতায় ও খুব পাকা ফলে রসপানরত অবস্থায় প্রায়শই এদের বসে থাকতে দেখা যায়। এই প্রজাতি অতিমাত্রায় স্থানিক (territorial) ও পুরুষ প্রকার অত্যন্ত কলহপ্রবণ। নিজেদের পছন্দের বাসভূমিতে অন্য প্রজাতিভুক্ত প্রজাপতি হাজির হলে এরা তাদের তাড়া করে। স্থানিক অভ্যাসের কারণে, এদের সাধারণত একটি প্রিয় ও বিশেষ পছন্দের বিশ্রামস্থল থাকে যেখানে এরা বারবার ফিরে আসে; এমনকি দিনের পর দিন একই জায়গায় বিচরণ করতে দেখা যায়। মাঝেমাঝে ইহারা ফুলে অবস্থান করে এবং ডানা অর্ধেক বা পুরো মেলা অবস্থায় মাটিতে, পাহাড়ের দেয়ালে বা পাথরে বসে এদের রোদ পোহানো (busking) মাঝেমধ্যেই চোখে পরে। হিমালয়ের ৫০০ থেকে ৩০০০ মিটার ও দক্ষিণ ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে ১০০০ থেকে ১২০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত প্রায় সারা বছরই (মার্চ থেকে ডিসেম্বর) এদের দর্শন পাওয়া যায়।[৩][৫]