ব্লেড হল কোনো যন্ত্র, অস্ত্র বা মেশিনের একটি অংশ যার একটি পাশকে এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে তা দ্বারা বিভিন্ন জিনিস বা তলকে কাটা, কুচি করা, ফুটো করা অথবা আচড় দেয়া যায়। ব্লেড পাথরের টুকরো বা ফলক, ধাতু (যেমন: ইস্পাত), চিনামাটিসহ বিভিন্ন পদার্থ দ্বারা তৈরি হতে পারে। ব্লেড মানবসম্প্রদায়ের অন্যতম প্রাচীন একটি যন্ত্র যা এখনো লড়াই, খাদ্য প্রস্তুতকরণ এবং আরো অনেক উদ্দেশ্যে এখনো ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
রান্নার সময় প্রধানত খাদ্য উপাদান কাটা, কুচি করা ও ছিদ্র করতে ছুরি ব্যবহার করা হয়।[১]
অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারকালে, প্রতিপক্ষকে কাটতে, বিদ্ধ করতে ব্লেডকে নিক্ষেপ করে বা হাতে রেখে আচড় দেয়ার মাধ্যমে ব্যবহার করা যেতে পারে।[২][৩] এর কাজ হল স্নায়ু, পেশী বা পেশী বন্ধনীর তন্তু, রক্তবাহী ধমনীকে ছিন্ন করা যাতে শত্রুপক্ষ পঙ্গু হয় বা মারা যায়। প্রধান রক্তবাহী ধমনীকে ছিন্ন করলে প্রচুর পরিমাণে রক্তপাত ঘটে, যার ফলে সাধারণত মৃত্যু ঘটিত হয়। ছোট ছোট খন্ডসমুহ ব্লেডের মতো আচরণ করে বিধায়, শ্রাপ্নেল ক্ষতের সৃষ্টি করে।
ব্লেডকে কোনো তলের ভেতর দিয়ে না চালিয়ে, তলের উপর ঘষে কালি তোলার কাজও করা যায়।
একটি সাধারণ ব্লেডের দুটি তল থাকে, যে তল দুটি একটি প্রান্তে মিলিত হয়। ঐ প্রান্তটি আদর্শগতভাবে বাকানো হওয়া উচিত নয় কিন্তু সাধারণত সকল ব্লেডের প্রান্তই কিছু না কিছু বাকানো থাকে। যা কিছুটা বর্ধিত করে বা ইলেকট্রন অণুবীক্ষণযন্ত্র দ্বারা দেখা যায়। হাতল বা ব্লেডের পেছন থেকে চাপ দেওয়ার মাধ্যমে ব্লেডের উপর বলপ্রয়োগ করা হয়। হাতল অথবা ব্লেডের পেছনের দিক ব্লেডের তীক্ষ্ণ প্রান্তের অপেক্ষা বড় ক্ষেত্রফলের হয়ে থাকে। ঐ তীক্ষ্ণ প্রান্তে প্রয়োগকৃত সকল বল কেন্দ্রীভূত হয়ে ঐ জায়গায় চাপ বাড়িয়ে দেয়। এই উচ্চচাপের কারণেই একটি ব্লেড কোনো বস্তুর অণুর বন্ধন সমুহ ভেঙে বস্তুটিকে কেটে ফেলতে পারে। তাই ব্লেডটির শক্ত হবার প্রয়োজন হয় যাতে বস্তুটির অণু বা তন্তুর বন্ধন সমুহ ভাঙার আগে ব্লেডটি ভেঙে না যায়।
যে কোণে ব্লেডের তল দুটি মিলিত হয় তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেহেতু যত বড় কোণে তল দুটি মিলিত হবে ব্লেড তত ভোতা হবে এবং একই সাথে ব্লেডের প্রান্ত তত শক্ত হবে। ব্লেডের প্রান্ত শক্ত হলে ফাটলের দ্বারা ব্লেডটি ভোতা হবার বা বিকৃত হয়ে যাবার সম্ভাবনা কমে যায়।
ব্লেডের আকৃতিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি পুরু ব্লেড আরেকটি একই নকশার পাতলা ব্লেড থেকে ভারী, শক্ত ও কঠিনতর হয় এবং একই সাথে কোনো কিছু কাটা বা ভেদ করাকে আরো কষ্টসাধ্য করে তোলে। হাড় ছাড়ানোর ছুরি নমনীয় হবার জন্য পাতলা হয় তেমনি খুদাই করার ছুরি পুরু হয় যাতে তা শক্ত হতে পারে; আবার খঞ্জর পাতলা আকৃতির হয়ে থাকে যাতে তা বেশি ধারালো হয়। একইভাবে ক্যাম্পিং এর ছুরি বেশি ধকল সহ্য করার মতো পুরু হহতে হয়। একটি শক্তপোক্ত বাকানো ব্লেডকে (যেমন:তলোয়ার) প্রতিপক্ষের কাছে থেকেই সহজে চালনা করা যায় যেমনটা অপেক্ষাকৃত সোজা আকৃতির তরবারির বেলায় করা যাবে না। কুঠারের ব্লেড বাকানো থাকলে তা গাছকে কাটার সময় কম জায়গা নিয়ে আঘাত করবে, যার ফলে ঐ জায়গায় অনেক বেশি বল কেন্দ্রীভূত হবে। তেমনি একটি সোজা আকৃতির কুঠার অপেক্ষাকৃত বেশি জায়গা নিয়ে আঘাত করায় তা কম বল প্রয়োগ করতে পারবে।কাঠ কাটার গদা উত্তল আকৃতির হয় যাতে তা কাঠের ভেতর আটকে না যায়। খপেশ, খড়গ বা কুকরি বাকানো হয় এবং ব্লেডের শেষ প্রান্ত অতিরিক্ত ওজন থাকে যার ফলে ব্লেডের সবচেয়ে দ্রুতগামী অংশে বল কেন্দ্রীভূত হয় এবং সর্বোপরি ভেদ করার ক্ষমতা বেড়ে যায়। অপরদিকে তরোয়াল অনেক পাতলা যার ফলে এটি দ্রুততার সাথে কাটতে পারে ও একই কারণে এর কাটার ক্ষমতাও কমে যায়।
খাঁজকাটা ব্লেড, যেমন করাত বা পাউরুটির ছুরির ব্লেড, প্রয়োগকৃত বলকে খাজের অগ্রভাগে কেন্দ্রীভূত করে যাতে নরম বা তন্তুময় বস্তুসমুহ খাজে খাজে অনেকগুলো ছোট ছোট ভাগে ভাগ হয়ে যায় এবং চাপও বৃদ্ধি পায়। যদি কোনো ছুরি এমনকি পাইরুটির ছুরিও যদি কোনো ব্রেডের উপর চেপে বসানো হয়, তাহলে রুটিটি শুধুমাত্র থেতলে যাবে কারণ রুটি নরম হওয়ায় স্থিতিস্থাপকতা কম কিন্তু অধিক নমনীয়। কিন্তু যদি পাইরুটির ছুরিকে পাইরুটির উপর কম বল প্রয়োগ করে আনুভুমিকভাবে চালনা করা হয় তবে প্রত্যেকটি খাজ পাইরুটিকে অনেক কম বিকৃত করে কেটে ফেলতে পারে। ছুরির খাজ বেশিরভাগ সময় প্রতিসম হয় যার ফলে ব্লেডকে সামনে পেছনে উভয়দিকে চালিয়ে কোনো বস্তুকে কর্তন করা যায়। একটি উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম হল "ভেফের খাজ", যাতে ব্যবহারকারীর থেকে দুরের দিকে ব্লেড চালনা করলে সর্বোচ্চ ভেদ করা সম্ভব হয়। কাঠ এবং ধাতু উভয়ের জন্য করাতের ব্লেড সম্পূর্ণ অপ্রতিসম হয়ে থাকে যাতে ব্লেড শুধুমাত্র একদিকে চালনা করলে কাঙ্ক্ষিত বস্তু কাটা যায়। (করাত কোনো বস্তুকে কাটার সময় ঐ কাটার সরু জায়গায় বস্তুটিকে গুড়ো করতে থাকে। অর্থাৎ করাত দিয়ে কোনো বস্তুকে কাটলে তা ঐ বস্তুর ক্ষয় ঘটায় এবং করাতের খাজগুলো ঐসব গুড়োকে বের করে আনতেও সাহায্য করে।)
'ফুলার' হল ব্লেডের চ্যাপ্টা দিকে উলম্বভাবে থাকা খাজবিশেষ যা ব্লেডের উপর চাপ দিয়ে বা পরবর্তিতে ভেঙে/কেটে তৈরী করা হয়। ব্লেডে উপস্থিত পদার্থ এইভাবে কমিয়ে ফেলায় যদিও ব্লেড দুর্বল হয়ে পড়ে কিন্তু তা ব্লেডকে, তার দৃঢ়তা না কমিয়েই হালকা করতে পারে। I-বীম তৈরীর ক্ষেত্রেও একই নীতি অনুসরণ করা হয়। অধিকাংশ ছুরিতে 'ফুলার' এতই ছোট থাকে যে তা ব্লেড থেকে খুব কম পদার্থ অপসারণ করে যার ফলে ব্লেডের ওজনের পরিবর্তনও খুব কম হয় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলো বাহ্যিক হয়ে থাকে।
ব্লেডকে সাধারণত মজবুত ও শক্তিপোক্ত পদার্থ দ্বারা তৈরি করা হয় এবং কোনো কঠিন বস্তুকে কাটতে হলে ব্লেডকে ঐ বস্তু অপেক্ষা আরো কঠিনতর পদার্থ দ্বারা তৈরি করা হয়ে থাকে। ব্লেড পর্যাপ্ত পরিমানে মজবুত না হলে তা দ্বারা কোনো কিছু কাটা সম্ভব হয় না বা জলদি নষ্ট হয়ে যায় কারণ এর সাথে ব্লেডের ক্ষয়ের সম্পর্ক রয়েছে। তাছাড়া, ব্লেডকে যথেষ্ট পরিমানে দৃঢ় হতে হবে যাতে তা যথেষ্ট পরিমানে ওজন ও আঘাত সহ্য করতে পারে এবং স্বাভাবিকভাবেই, ব্লেড যত কঠিনতর হয় ততই কোনো জিনিস কাটা সহজতর হয়ে উঠে। উদাহারণস্বরূপ, ইস্পাতের কুঠার কাঠ থেকে অনেক শক্ত হয় এবং গাছ কাটার সময় সৃষ্ট প্রতিক্রিয়া বলের মোকাবেলায় যথেষ্ট মজবুত। তেমনিভাবে রান্নাঘরে ব্যবহৃত চিনামাটির ছুরি ইস্পাত অপেক্ষা অনমনীয় কিন্তু খুবই ভঙ্গুর। এটি হাত থেকে পড়ে গেলেই ভেঙে পড়তে পারে। তাই ব্লেড তৈরীর সময় ব্লেডটি কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হবে, কোন পদার্থ দ্বারা তৈরী করা হবে এবং কোন পদ্ধতিতে (যেমনঃ হিট ট্রিটমেন্ট) তৈরী করা হবে তা মাথায় রাখতে হয়। যেহেতু তা ব্লেডের ভঙ্গুরতা এবং দৃঢ়তার উপর প্রভাব ফেলে। একইভাবে ব্লেডের তীক্ষ্ণতা এবং স্থায়িত্বের মধ্যেও ভারসাম্য রাখতে হয়। 'ডিফারেন্সিয়াল হার্ডনিং' অন্যতম একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে সকল বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে ব্লেড তৈরী করা যায়। এই পদ্ধতিতে এমন একটি ফলক তৈরী করা যায় যা একই সাথে তীক্ষ্ণ এবং মজবুত।[৪]