ভাগরি (ভাঘরি, ওয়াঘরি বা বাঘরি) হল ভারতের রাজস্থান ও গুজরাত রাজ্যে এবং পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশে দেখতে পাওয়া একটি বিমুক্ত জাতি।[১]
ভারতে ব্রিটিশ রাজের সময়, ১৮৭১ সালের অপরাধী উপজাতি আইনের অধীনে "জামিন অযোগ্য অপরাধের পদ্ধতিগত কর্মে আসক্ত" উপজাতি হিসাবে ভাগরিদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল [২] ১৯৫২ সালে, তাদের "বিমুক্ত" করা হয়েছিল, যার অর্থ তাদের আর অপরাধী হিসাবে গণ্য করা হয়নি।[৩]
ভারতে, ভাগরিরা প্রধানত গুজরাত জেলায় বসবাস করে। অন্যান্য অনেক গুজরাতি হিন্দু সম্প্রদায়ের মতো, তারা এন্ডোগ্যামাস (যারা নির্দিষ্ঠ গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাহ করে) তবে তারা সম গোত্রে বিবাহ করে না। তাদের প্রধান গোষ্ঠী হল বদগুজার, বাঘেলা, সোলাঙ্কি, এবং গোদারা। তারা একটি ভূমিহীন সম্প্রদায়, যদিও কয়েকজনের কাছে ছোট ছোট জমি রয়েছে। ভাগরিরা গবাদি পশু পালনও করে এবং গবাদি পশুর ব্যবসাও করে। বিখ্যাত পুষ্কর গবাদি পশু মেলায় তারা গবাদি পশু বিক্রি করে। তাদের একটি কার্যকর জাতি পরিষদ আছে, যা একটি আপাত-বিচারক সংস্থা হিসেবে কাজ করে। এটি আন্তঃ-সম্প্রদায়িক বিরোধের মীমাংসা করে। বংশগতভাবে এটির নেতৃত্ব স্থির হয়, তাকে প্যাটেল বলা হয়। তারা একটি হিন্দু সম্প্রদায়, তাদের প্রধান উপজাতীয় দেবতা হল চরবায়ু মাতা (চন্ডিকা মাতা), শীতলা মাতা, হাদক মাতা এবং মেলদি মাতা। এছাড়াও, তারা পাবনি (মা কালী), মাতা শক্তি (রাজপুতের দেবী), রনভালি মাতা (মরুভূমির দেবী), খোডিয়ার মা, ভুতদি মা, বেসরাজি মাকে অনুসরণ করে। দেবীপূজক (ভাগরি) সম্প্রদায়ের অন্যান্য দেবীও রয়েছে; যেমন শিকারীদের জন্য জঙ্গলেনী দেবী, মাঝি এবং নাবিকদের জন্য বাহনবতী মাতা, ডাকিনীবিদ্যা এবং কালো জাদুর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য জোগনি মাতা। উপজাতির মধ্যে আরও অনেক দেবী আছে।
গুজরাতে, ভাগরি প্রধানত সবরকাণ্ঠা, বনসকাণ্ঠা, পাঁচমহল, খেড়া এবং আহমেদাবাদ জেলায় দেখতে পাওয়া যায়। তারা নিজেদের মধ্যে মারোয়াড়ি এবং বহিরাগতদের সাথে গুজরাতিতে কথা বলে। ভাগরিরা কয়েকটি উপ-বিভাগে বিভক্ত, তাদের মধ্যে প্রধান হল চুনারিয়া, তারা চাষী; এছাড়াও আছে দাঁতনিয়া, যারা নিমডাল দাঁতের ব্রাশ বিক্রি করে; ভেদু, যারা লাউ বিক্রি করে; সালাত, যারা পাথরের রাজমিস্ত্রি; এবং অবশিষ্ট গোষ্ঠী, যারা ভূমিহীন কৃষি শ্রমিক। তাদের ছোটখাটো উপ-বিভাগগুলি হল আম্বালিয়া, হালভাদিয়া, কবিথিয়া, খাখোদিয়া, তালসানিয়া, খারভি, কাজনিয়া, উঘরেজিয়া, মিঠাপাড়া, কালতানিয়া, খাবাদিয়া, কুমারখানিয়া, নাভাদিয়া, সুরেলা, ওগানিয়া, সোভাসিয়া, গোধাকিয়া, রাফুকিয়া, বুটিয়া, চেখালিয়া, গোরাভা, কুন্দিয়া, ভোচিয়া, সাথলিয়াসহ অন্যান্যরা। ভাগরিরা ভূমিহীন এবং কৃষি শ্রমের উপর নির্ভরশীল। তারা হাঁস-মুরগি, ভেড়া, ছাগল ও গবাদি পশু পালনের পাশাপাশি শাকসবজি বিক্রিও করে। গুজরাতে, ভাগরিরা হল হিন্দু, এবং তাদের প্রধান উপজাতীয় দেবতা হল বিহোত, নরসিংহবীর, কালিকা এবং মেলদি মাতা।[৪] সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপ-জাতি হল দন্তানি, দত্ত এবং দেবীপুজক। তারা গান্ধীনগরের বালভাতে থাকে। এই উপজাতি তাদের দেবীকে পশু বলি দেয়।
পাকিস্তানে ভাগরি প্রধানত উমরকোট এবং থার্পারকার জেলায় দেখা যায়। তারা ভূমিহীন, এবং স্থানীয়ভাবে শক্তিশালী সোধা রাজপুত সম্প্রদায়ের হাতে বৈষম্যের শিকার হয়।[৫]
সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে পাকিস্তানের অধিকাংশ তফসিলি জাতির মানুষ, যার মধ্যে ভাগরিও রয়েছে, তারা কার্যত ভূমিহীন। পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা গেছে যে থার্পারকার, উমরকোট, রহিম ইয়ার খান, এবং বাহাওয়ালপুর জেলার তফশিলি জাতি জনসংখ্যার শতকরা ৮৩ জনের এক টুকরো জমিও নেই। অবশিষ্ট ১৭ শতাংশের জমির মালিকানাও খুব কম কারণ এদের ৯০ শতাংশ তফশিলি জাতি জমির মালিকদের এক থেকে পাঁচ একরের মধ্যে খুব ছোট জমি রয়েছে। ভারতে বসবাসকারীদের মতো, পাকিস্তানের ভাগরিরাও হিন্দু। তারা সিন্ধি এবং তাদের নিজস্ব ভাষা, বাগরি,উভয় ভাষাতেই কথা বলে। বাগরি ভাষার কিছুটা রাজস্থানী ভাষার সাথে মিল আছে।[৬]