ভাবনগর রাজ্য भावनगर | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
ব্রিটিশ ভারতের দেশীয় রাজ্য | |||||||
১৭২৩–১৯৪৮ | |||||||
![]() সৌরাষ্ট্রে ভাবনগরের অবস্থান | |||||||
রাজধানী | ভাবনগর | ||||||
আয়তন | |||||||
• ১৮৯১ | ৭,৬৬৯ বর্গকিলোমিটার (২,৯৬১ বর্গমাইল) | ||||||
জনসংখ্যা | |||||||
• ১৮৯১ | ৪৬৪৬৭১ | ||||||
ইতিহাস | |||||||
• প্রতিষ্ঠিত | ১৭২৩ | ||||||
১৯৪৮ | |||||||
| |||||||
![]() |
ভাবনগর ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতীয় উপমহাদেশের একটি দেশীয় রাজ্য ছিল। রাজ্যটি বর্তমান স্বাধীন ভারতের গুজরাতের সৌরাষ্ট্রে উপদ্বীপে ভাবনগর জেলায় অবস্থিত, তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের কাথিওয়ার এজেন্সির অংশ ছিল।[১] এই রাজ্যে গোহিল রাজবংশের শাসন থাকায় রাজ্যটি গোহিলওয়ার নামেও পরিচিত ছিল।[২] ২৯৬১ বর্গ মাইলের আয়তনের রাজ্যটিতে ১৯৪১ সালে ৬,১৮,৪২৯ জন বাস করতেন। ১৯৪৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, ভাবনগরের সর্বশেষ শাসক সম্মিলিত ভারতের ইউনিয়নে যোগ দেন।[৩]
ভাবনগরের মূল শাসকরা প্রাচীন ভারতের মারোয়ার অঞ্চলের গোহিল রাজপুত বংশের সূর্যবংশী গোত্রের সদস্য। গোত্রটি মারোয়ার অঞ্চলে অন্যান্য গোত্রের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বে লিপ্ত ছিল। ১২৬০-এর দিকে গোহিলরা এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা কমাতে মারোয়ার হতে গুজরাতে সৈকত তটের নিকটে গমন করে সেজাকপুর, উর্মলা ও সিহর শহরের গোড়াপত্তন করে।[৪]
১৭২২ -১৭২৩ সালে খান্তাজি কাদানী ও পিলাজী গায়কওয়াদের সেনাবাহিনী সিহর আক্রমণ করার চেষ্টা করেন কিন্তু মহারাজা ভবসিনহজি গোহিল তাদের প্রতিহত করেন, তাড়িয়ে দেন। যুদ্ধের পরে ভবসিনহজি বুঝতে পেরেছিলেন যে সিহরের অবস্থানের কারণে বারবার শত্ররা আক্রমণ করছে। ১৭২৩ সালে তিনি সিহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ভাদভা গ্রামের কাছে নতুন শহর স্থাপন করেন এবং নিজের নামে এই শহরের নাম 'ভাবনগর' রাখেন। সামুদ্রিক বাণিজ্যের কৌশলগত সম্ভাবনার কারণে ভাবনগরের অবস্থান বেশ সাবধানতার সাথে নির্বাচন করা হয়েছিল। স্বভাবতই, ভাবনগর শহরটি রাজ্যের রাজধানী হয়ে ওঠে। ব্রিটিশ শাসন শুরুর পর ১৮০৭ সালে ভাবনগর ব্রিটিশদের আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয়েছিল।[২][৫]
ভাবনগরের পুরানো শহরটি একটি দুর্গপ্রাকার শহর ছিল, দূর্গের ফাটকগুলি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক শহরগুলিে যাত্রাপথের সাথে যুক্ত ছিল। প্রায় দুই শতাব্দীরও বেশি সময়ের জন্য মোজাম্বিক, জানজিবার, সিঙ্গাপুর এবং পারস্য উপসাগরের সাথে পণ্য বাণিজ্যের প্রধান বন্দর শহর ছিল।
রাজা ভবসিনহজি সামুদ্রিক বাণিজ্য থেকে আসা রাজস্ব ভাবনগরের উন্নয়ন নিশ্চিত করেছিলেন, যেমনটি নিকটবর্তী রাজ্য সুরাট ও কাম্বে করেছিল। সুরাট দুর্গ জানজিরার সিদিস রাজদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। রাজা ভবসিনহজি ভাবনগর বন্দর হতে ১.২৫ শতাংশ রাজস্ব সিদিসদের দেয়ার চুক্তি করেছিলেন। ১৮৫৬ সালে ব্রিটিশরা সুরাট দখল করার পর তিনি ব্রিটিশদের সাথেও একইরকম একটি চুক্তি করেছিলেন। ভবসিনহজি'র শাসনামলে ভাবনগর একটি ছোট গোষ্টিগ্রাম হতে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল। নতুন নতুন অঞ্চল যুক্ত করা ও সামুদ্রিক বাণিজ্যের কারণে ভাবনগর রাষ্ট্রের প্রসার ঘটেছিল। ভবসিনহজি'র উত্তরসূরীরা রাজ্যের উন্নয়নে সামুদ্রিক বাণিজ্যকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। রাজা ভবসিনহজি'র পৌত্র বখতসিনহজি গোহিল রাজ্য সম্প্রসারণে সফল ছিলেন। তার শাসনামলে তিনি কোলি ও কাথিদের ভূমি অধিকার করেন, নবাব শাহেব আহমেদ খানের কাছ থেকে রাজুকা লাভ করেন এবং ঘোঘা তালুক ভাবনগরের সাথে একীভুত করেন। ১৭৯৩ সালে বখতসিনহজি চিতল ও তালাজা'র দুর্গ দখল করেন এবং পরে মহুবা,কুন্ডলা, ত্রাপাজ, উর্মলা ও বোতাড় দখল করলে ভাবনগরের আরও সম্প্রসারণ ঘটে। ভাবনগর বন্দর রাজ্যের প্রধান বন্দর হলেও মহুবা ও ঘোঘা গুরুত্বপূর্ণ বন্দরে পরিণত হয়। সামুদ্রিক বাণিজ্যের কারণে ভাবনগর তার কাছাকাছি অন্যান্য রাজ্য হতে সমৃদ্ধ ছিল।
১৯ শতকের শেষদিকে ভাবনগর রাজ্য রেলওয়ে গঠন ও স্থাপন করা হয়েছিল। ব্রিটিশ ইম্পেরিয়াল গেজেটের বর্ণনা অনুযায়ী ভাবনগর ছিল প্রথম রাজ্য, যেটি ব্রিটিশ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তা ছাড়া নিজস্ব অর্থায়নে রেলপথ স্থাপন করেছিল। জনাব পিলি নামের একজন ব্রিটিশ রাজনৈতিক প্রতিনিধি ভাবনগর রাজ্য সম্পর্কে রাজাকে নিম্নোক্ত মন্তব্য করেছিলেনঃ
(ইংরেজি)
«With flourishing finances and much good work in progress. Of financial matters I need say little; you have no debts, and your treasury is full.[৬]» |
(বাংলা)
«আর্থিক সংস্থান বিকাশমান এবং অনেকগুলি ভাল কাজ চলমান। আর্থিক বিষয়ে আমার কিছুটা বলা দরকার। আপনাদের কোন ঋণ নেই এবং আপনাদের কোষাগার পূর্ণ» |
১৮৭০ ও ১৮৭৮-এর মধ্যবর্তী সময়ে মুকুটপ্রার্থী রাজপুত্র তখতসিনহজি নাবালক থাকায় রাজ্যের ক্ষমতা ব্রিটিশ সরকারের সাথে যৌথ প্রশাসনের অধীনে ছিল। এই সময়ে ভাবনগর রাজ্যের প্রশাসন, রাজস্ব আদায়, বিচার বিভাগ, ডাক ও টেলিগ্রাফ পরিষেবা এবং অর্থনৈতিক নীতি ক্ষেত্রে কিছু উল্লেখযোগ্য সংস্কার করা হয়েছিল। বন্দরগুলি আধুনিকীকরণ করা হয়েছিল। বোম্বে সিভিল সার্ভিসের ই এইচ পার্সিভাল এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গৌরীশঙ্কর উদয়শঙ্কর এই সংস্কারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
১৯১১ সালে, ভাবনগরের মহারাণী নন্দকানভর্বকে ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যে মহিলাদের জন্য সর্বোচ্চ রাজকীয় পুরস্কার 'অর্ডার অফ ক্রাউন অফ ইন্ডিয়া' প্রদান করা হয়।
১৯৪৭ সালে সদ্য স্বাধীন ভারতের উপপ্রধানমন্ত্রী বল্লবভাই পাটেল ৫৬৫টি দেশীয় রাজ্যকে ভারতের সাথে একীভূত করা প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। এই প্রক্রিয়ায় ১৯৪৮ সালে ভাবনগরের সর্বশেষ মহারাজা কৃষ্ণকুমারসিনহজি ভবসিনহজি নিজ রাজ্যের প্রশাসন ভারতীয় ইউনিয়নের হাতে ছেড়ে দেন এবং নিখিল ভারতের সাথে নিজ রাজ্য যুক্ত করেন। ভারতীয় ইউনিয়নে যোগ দেয়ার পর ভাবনগরের পূর্ববর্তী রাজপরিবার জনসাধারণের কল্যাণে সক্রীয় থাকার পাশাপাশি হোটেল, রিয়েল এস্টেট, কৃষি এবং জাহাজ ভাঙা) ব্যবসায় সক্রিয় আছেন। ভাবনগরের শহর ও গ্রামীণ জনপদে এখনো তাদের সম্মান করা হয়।[৭]
নাম | রাজত্বকাল | উপাধি |
---|---|---|
রতনজি দ্বিতীয় (মৃত্যু ১৭০৩) | ১৬৬০ - ১৭০৩ | ঠাকুর সাহেব |
ভবসিনহজি রতনজি (১৬৮৩ - ১৭৬৪) | ১৭০৩ - ১৭৬৪ | ঠাকুর সাহেব |
আখেরাজজি দ্বিতীয় ভবসিনহজি (১৭১৪ - ১৭৭২) | ১৭৬৪ - ১৭৭২ | ঠাকুর সাহেব |
বখতসিনহজি আখেরাজজি (১৭৪৮ - ১৮১৬) | ১৭৭২ - ১৮১৬ | ঠাকুর সাহেব |
ওয়াজেসিনহজি অয়াখাতসিনহজি (১৭৮০ - ১৮৫২) | ১৮১৬ - ১৮৫২ | ঠাকুর সাহেব |
আখেরাজজি তৃতীয় ভবসিনহজি (১৮১৭ - ১৮৫৪) | ১৮৫২ - ১৮৫৪ | ঠাকুর সাহেব |
জশবন্তসিনহজি ভবসিনহজি (১৮২৭ - ১৮৭০) | ১৮৫৪ - ১১ এপ্রিল, ১৮৭০ | ঠাকুর সাহেব |
তখতসিনহজি জশবন্তসিনহজি (১৮৫৮ - ১৮৯৬) | ১১ এপ্রিল, ১৮৭০ - ২৯ জানুয়ারি, ১৮৯৬ | ঠাকুর সাহেব |
ভবসিনহজি দ্বিতীয় তখতসিনহজি (১৮৯৬ - ১৯১৯) | ২৯ জানুয়ারি, ১৮৯৬ - ১ জানুয়ারি, ১৯১৮ | ঠাকুর সাহেব |
১ জানুয়ারি, ১৯১৮ - ১৭ জুলাই, ১৯১৯ | মহারাজা রাও | |
কৃষ্ণকুমারসিনহজি ভবসিনহজি (১৯১২ - ১৯৬৫) | ১৭ জুলাই, ১৯১৯ - ১৫ আগস্ট, ১৯৪৭ | মহারাজা রাও |
বীরভদ্রসিনহজি কৃষ্ণকুমারসিনহজি গোহিল (১৯৩২ - ১৯৯৪)[ক] | ১ এপ্রিল, ১৯৬৫ - ২৬ জুলাই, ১৯৯৪ | মহারাজা রাও |
বিজয়রাজসিনহজি বীরভদ্রসিনহজি গোহিল (১৯৬৮ -)[ক] | ২৬ জুলাই, ১৯৯৪ - | মহারাজা রাও |