ভারতীয় উপমহাদেশে পোশাকের ইতিহাস

কাষায় পোশাক পরিহিত বুদ্ধ, ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে

ভারতীয় উপমহাদেশে পোশাকের ইতিহাস সিন্ধু সভ্যতা বা তার আগে থেকেও প্রাচীন। ভারতীয়রা মূলত স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত তুলা দিয়ে তৈরি পোশাক পরিধান করে থাকে। হরপ্পান যুগে ২৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের প্রথম দিকের ভারত এমন একটি স্থান যেখানে তুলা চাষ করা হত ও ব্যবহার করা হত।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] প্রাচীন ভারতীয় পোশাকের অবশিষ্টাংশ সিন্ধু সভ্যতার কাছাকাছি স্থান থেকে আবিষ্কৃত মূর্তি, পাথর কাটা ভাস্কর্য, গুহাচিত্র এবং মন্দির ও স্মৃতিস্তম্ভে প্রাপ্ত মানব শিল্পকলার মধ্যে পাওয়া যায়। এই ধর্মগ্রন্থগুলিতে পোশাক পরিহিত মানবমূর্তি দেখা যায়, যে পোশাকগুলি শরীরের চারপাশে আবৃত করে পরা হত। শাড়ি থেকে পাগড়ি এবং ধুতির দৃষ্টান্ত থেকে দেখা যায়, ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় পরিধানগুলি বেশিরভাগই শরীরের চারপাশে বিভিন্ন উপায়ে বেঁধে রাখা হত।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

সিন্ধু সভ্যতার সময়কাল

[সম্পাদনা]

সিন্ধু সভ্যতার বস্ত্রের প্রমাণ সংরক্ষিত বস্ত্র থেকে পাওয়া যায় না, কিন্তু মাটিতে তৈরি ছাপ এবং সংরক্ষিত ভাস্কর্য থেকে পাওয়া যায়। মূর্তিবিদ্যা থেকে পোশাকের একমাত্র প্রমাণ পাওয়া যায়, কিছু আবিষ্কৃত হরপ্পান মূর্তিগুলি সাধারণত বস্ত্রহীন ছিল।[] এই ছোট বর্ণনাগুলি থেকে জানা যায় যে সাধারণত পুরুষরা তাদের কোমরের উপর মোড়ানো একটি লম্বা কাপড় পরতেন এবং এটিকে পিছনে বেঁধে রাখতেন (ঠিক একটি আঁটসাঁটভাবে পরিধান করা ধুতির মতো)। কিছু সম্প্রদায়ের মধ্যে পাগড়িও প্রথাগত ছিল, যেমনটি কিছু পুরুষ মূর্তিতে পরিলক্ষিত হয়েছে। প্রমাণগুলি আরও দেখায়, যে উচ্চ শ্রেণীর সমাজে তাদের ঐশ্বর্য প্রদর্শনের জন্য বাম কাঁধের উপরে একটি দীর্ঘ পোশাক পরিধান করার প্রথা ছিল। তখনকার নারীদের স্বাভাবিক পোশাক ছিল হাঁটু পর্যন্ত একটি স্কার্ট, কোমরের অংশ খালি থাকত। সুতির তৈরি মাথার পোশাকও মহিলারা পরিধান করতেন।[] মহিলারা লম্বা স্কার্টও পরতেন, তাদের শরীরের উপরের অংশের জন্য আঁটসাঁট টিউনিক ও ট্রাউজার্সও ব্যবহার করতেন। দিল্লি ন্যাশনাল মিউজিয়ামে রাখা মাতৃদেবীর মূর্তি থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, যে মহিলারা একটি ছোট স্কার্ট ও ট্রাউজার সহ একটি ছোট টিউনিক পরিধান করতেন।[]

ধ্রুপদী সময়কাল

[সম্পাদনা]

প্রারম্ভিক ধ্রুপদী সময়কাল

[সম্পাদনা]

প্রারম্ভিক ধ্রুপদী যুগে বেশ কিছু খোদাই করা ভাস্কর্যে প্রাচীন ভারতীয়দের পোশাক পরিধানের যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে, যা শুধুমাত্র পোশাকের শৈলীই নয়, সেই সময়ের স্থাপত্য ও জীবনধারাকেও চিত্রিত করে। অমরাবতী, গান্ধার, মথুরা এবং অন্যান্য অনেক স্থানের বৌদ্ধ খোদাইগুলিতে জাতক কাহিনী থেকে নেওয়া ভাস্কর্য রয়েছে এবং খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতাব্দী থেকে গুপ্ত যুগের মধ্যবর্তী সময়ের রেওয়াজ প্রদর্শন করে।

মধ্যযুগীয় সময়কাল

[সম্পাদনা]

গুপ্ত-পরবর্তী সময় থেকে, অলচি বৌদ্ধবিহার, বাগান মন্দির, পাল ক্ষুদ্রাকৃতি চিত্রকর্ম, জৈন ক্ষুদ্রাকৃতি চিত্রকর্ম, ইলোরা গুহা চিত্রকর্ম এবং ভারতীয় ভাস্কর্যের মতো চিত্রকর্ম থেকে ভারতীয় পোশাকের প্রচুর প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রাচীন ভারতীয়দের ৮-১০ম শতকে কুর্তা ও শালওয়ারের মতো ঢিলেঢালা প্যান্ট পরিধানের প্রমাণ ফ্রান্সের প্যারিস শহরের বিবলিওথেক ন্যাশনালে সংরক্ষিত একটি হাতির দাঁতের দাবার সেটে হাতির দাঁতের ভাস্কর্যে চিত্রিত করা হয়েছে।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Keay, John, India, a History. New York: Grove Press, 2000.
  2. kenoyer, j.m. (১৯৯১)। "Ornament Styles of the Indus Valley Tradition : Evidence from Recent Excavations at Harappa, Pakistan"। Paléorient17 (17–2): 79–98। ডিওআই:10.3406/paleo.1991.4553 
  3. "Standing figure of the Mother Goddess C. 2700-2100 B.C."। ২০১৩-০৫-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 
  4. Flood, Finbarr Barry (২০১৫)। A Companion to Asian Art and Architecture। John Wiley & Sons। পৃষ্ঠা 377–379। আইএসবিএন 978-1119019534