ডব্লুডিএম-৪[১] | |||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
![]() জাতীয় রেল যাদুঘর, নতুন দিল্লিতে সংরক্ষিত লোকোমোটিভ | |||||||||||||||||||||||||||
| |||||||||||||||||||||||||||
| |||||||||||||||||||||||||||
| |||||||||||||||||||||||||||
|
ভারতীয় লোকোমোটিভ ক্লাস ডাব্লিউডিএম-৪ হল ডিজেল-ইলেকট্রিক লোকোমোটিভের একটি শ্রেণি যা ১৯৬২ সালে ভারতীয় রেলের জন্য জেনারেল মোটরস (জিএম-ইএমডি) দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। মডেলের নামটি দাঁড়ায় ব্রডগেজ (ডাব্লিউ), ডিজেল (ডি), মিশ্র ট্র্যাফিক ইঞ্জিন (এম), চতুর্থ প্রজন্ম (৪)। তারা ১৯৬২ সালে রেলসেবায় প্রবেশ করেছিল। ১৯৬১ এবং ১৯৬২ এর মধ্যে মোট ৭২টি ডাব্লিউডিএম -4 ইঞ্জিন নির্মিত হয়েছিল।
ডাব্লিউএপি-১ এর মতো আরও আধুনিক ধরনের লোকোমোটিভ এবং বিদ্যুতায়নের চালু করার পরেও ডাব্লিউডিএম-৪ ভারতীয় রেলের সবচেয়ে দ্রুততম লোকোমোটিভগুলির মধ্যে একটি ছিল যা ৩৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে যাত্রীবাহী ও মালবাহী সেবা দিয়ে আসছিলো। কয়েকটি ডাব্লিউডিএম-৪ ইউনিট বাংলাদেশে রফতানি করা হয়েছিল। ২০২০ সালের জানুয়ারি অব্দি সমস্ত ৭২ টি লোকোমোটিভ রেল পরিষেবা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে, যার মধ্যে দুটি ইউনিট সংরক্ষণ করা হয়েছে।
ডাব্লিউডিএম-৪ এর ইতিহাস শুরু হয়েছিল ১৯৬০ এর দশকের গোড়ার দিকে কর্নাইল সিং জ্বালানী কমিটির সুপারিশের পরে ভারতীয় রেল থেকে বাষ্পীয় লোকোমোটিভগুলি অপসারণের লক্ষ্য নিয়ে।[২] ফলে, এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য রোড সুইচার ক্যাব সহ কমপক্ষে ২,৬০০ হর্সপাওয়ারের (১,৯০০ কিলোওয়াট) প্রচুর সিও-সিও ডিজেল লোকোমোটিভ তৈরি করা দরকার পরেছিলো। এভাবে ভারতীয় রেল বিভিন্ন ডিজেল-বৈদ্যুতিক লোকোমোটিভের নকশার দিকে তাকাতে শুরু করে।
প্রাথমিকভাবে, ভারতীয় রেল নতুন স্পেসিফিকেশনে লোকোমোটিভ তৈরির জন্য দরপত্র আহ্বান করেছিল। নিম্নলিখিত প্রতিক্রিয়া প্রাপ্ত হয়েছিল:
প্রতিটি সংস্থা তাদের প্রোটোটাইপ জমা দেয় এবং ভারতীয় রেল এই প্রোটোটাইপগুলি যথাক্রমে ডাব্লিউডিএম-৪ শ্রেণি এবং ডাব্লিউডিএম-২ শ্রেণি হিসাবে মনোনীত করে।[৫] ভারতীয় রেল কেন ডাব্লিউডিএম-৪ হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তা এখনও জানা যায়নি, কারণ যখন তাদের আদেশ দেওয়া হয়েছিল তখন পূর্বে কোনও ডাব্লিউডিএম-৩ শ্রেণি বিদ্যমান ছিল না। প্রযুক্তিগতভাবে জেনারেল মোটরসের ডাব্লিউডিএম-৪ লোকোমোটিভ অ্যালকোর ডাব্লিউডিএম-২ এর চেয়ে উন্নত ছিল, তবে ভারতীয় রেলপথ একটি প্রযুক্তি স্থানান্তর চুক্তি চেয়েছিলো যা এই লোকোমোটিভগুলিকে ভারতে উদ্ভাবিতভাবে তৈরি করতে পারত। যেহেতু জেনারেল মোটরস প্রযুক্তি স্থানান্তর চুক্তিতে সম্মত হয়নি, তাই অ্যালকো প্রোটোটাইপটি উৎপাদনের জন্য নির্বাচন করা হয়।
তবে ডাব্লিউডিএম-৪ আসার আগেও ১৯৫৭ সালে অ্যালকো থেকে আরেক ধরনের ডিজেল লোকোমোটিভ আমদানি করা হয়েছিল। এই লোকোমোটিভগুলোকে ডাব্লিউডিএম-১ হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়।[৬] তবে ডাব্লিউডিএম-১ গণউৎপাদনের জন্য নির্বাচিত হয়নি, কারণ এদের মাত্র একটি ফরোয়ার্ড ক্যাব রয়েছে যার ফলে এদের জন্য প্রচুর টার্নটেবিলের প্রয়োজন ছিলো। [৭]
ডাব্লিউডিএম-৪ লোকোমোটিভগুলি মালবাহী ও যাত্রীবাহী উভয় ধরনের ট্রেন চালাতে সক্ষম ছিল, তবে সেগুলি প্রাথমিকভাবে যাত্রীসেবাতে ব্যবহৃত হত। ডাব্লিউডিএম-৪ হল ভারতের প্রথম ইএমডি লোকোমোটিভ এবং এটি জিটি-১৬ এর একটি মডেল। [৮] ডাব্লিউএপি-৩ শ্রেণির লোকোমোটিভ আসার আগ পর্যন্ত এগুলি ছিল ভারতের সবচেয়ে দ্রুততম লোকোমোটিভ।
কিছু ট্রেনের জন্য দুটি ডাব্লিউডিএম-৪ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হতো, কারণ তারা সাধারণত মাত্র ৯টি কোচ টানতে পারে। ১৮ কোচের রাজধানী এক্সপ্রেস ট্রেনগুলির জন্য, এটি ছিল একটি সাধারণ ঘটনা। ডাব্লিউডিএম-৪ হিমগিরি এক্সপ্রেস এবং দুন এক্সপ্রেসসহ বেশ কয়েকটি উচ্চ-মানের এক্সপ্রেস ট্রেন চালিয়েছে। ডাব্লিউডিএম -৪ পণ্যবাহী ট্রেনে খুব কমই চলাচল করত এবং প্রাথমিকভাবে মুঘলসরাইতে (এমজিএস) নিয়োগ করা হয়েছিল। নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোকোমোটিভ মেইনলাইন এবং বিভাগীয় দায়িত্ব উভয়তে ব্যবহৃত হতো।
৭২টি ডাব্লিউডিএম-৪ ইঞ্জিনগুলির মধ্যে কেবল ২টি সরকারীভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রথম লোকোমোটিভ #১৮০০১, জাতীয় রেল যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে, এবং #১৮০৮৬ লখনউ ডিজেল লোকোমোটিভ শেডে রাখা হয়েছে। #১৮০০৪, #১৮০২২, #১৮০৯৮ এবং #১৮১০৭ ইরকন ইন্টারন্যাশনাল কিনে নিয়েছিলো এবং নির্মাণ কাজের জন্য বাংলাদেশে প্রেরণ করেছিল, কিন্তু লোকোগুলোর বয়সের কারণে তা প্রত্যাহার করা হয়েছিল।