ভারতে সমকামিতা বৈধ।[১] সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সমকামিতার প্রতি ভারতীয়দের মনোভাবে কিছু পরিবর্তন লক্ষিত হয়েছে। বিশেষত, ভারতের সংবাদমাধ্যম[২][৩][৪] ও বলিউডে [৫] সমকামিতার প্রদর্শন ও আলোচনার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯ সালের ২ জুলাই, দিল্লি হাইকোর্টের একটি রায়ে স্পষ্টত জানানো হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সম্মতিক্রমে সমকামিতার আচরণ অপরাধের আওতায় পড়ে না। এই রায়ে আরো বলা হয়েছে যে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকার রক্ষা নীতির পরিপন্থী।[৬] ২০১৩ সালে পুনরায় সমকামিতাকে অবৈধ ঘোষণা করে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ।[৭] ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সমকামিতাকে অপ্রাকৃতিক বলেছে। [৮][৯] কিন্তু আবার তাদের আমলেই সমকামিতা আইনগতভাবে বৈধতা পায়।[১০]
ভারতে প্রথা ও রীতিনীতির ক্ষেত্রে ধর্মের ভূমিকা অপরিসীম। ভারতের বৃহত্তম ধর্ম হিন্দুধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থগুলিতে সমকামিতার সুস্পষ্ট উল্লেখ না থাকলেও, ধর্মগ্রন্থের কোনো কোনো ব্যাখ্যাকে সমকামিতার বিরোধী মনে করা হয়।[১১] তবে ভারতের প্রধান ধর্মবিশ্বাসে সমকামিতার অবস্থান কোথায়, তা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে দ্বিমত আছে। কেউ কেউ মনে করেন প্রাচীন হিন্দু সমাজে সমকামিতা শুধু প্রাসঙ্গিকই ছিল না, বরং তা গ্রহণীয়ও ছিল।[১২]
ভারতে সমকামিতার উপর থেকে অপরাধ আরোপত্ব অপনয়নে যেসকল সংস্থা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমর্থন করে সেগুলি হল ন্যাজ ফাউন্ডেশন (ভারত), জাতীয় এইডস নিয়ন্ত্রক সংস্থা,[১৩] ভারতের আইন কমিশন,[১৪] ভারতের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রক,[১৫] জাতীয় মানবাধিকার কমিশন,[১৬] ও ভারতের পরিকল্পনা কমিশন।[১৭] এই সকল সংস্থা স্ত্রী সমকামী (লেসবিয়ান), পুরুষ সমকামী (গে), উভকামী ও রূপান্তরকামী মানুষদের প্রতি সহিষ্ণুতা ও সামাজিক ঐক্যের কথা বলে। অন্যদিকে ভারত সেই সকল দেশের একটি যার অন্যতম সামাজিক বৈষিষ্ট্য হলেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা।
১৮৬০ সালে ভারতে ব্রিটিশ শাসনামলে সমকামকে প্রথম আইনগতভাবে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। ১৯৪৭ এ ভারত স্বাধীন হলে এই আইন বলবৎ ও কার্যকর থাকে। এই আইনের অর্থাৎ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় বলা হয়েছিল যে সমকাম এক প্রকার অপ্রাকৃতিক যৌনসঙ্গম এবং এ কারণে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই আইনে নারী সমকাম সম্পর্কে কোনো ভাষ্য নেই। আইনটিতে বস্তুতঃ পুরুষে-পুরুষে পায়ূমৈথুনকে নিষিদ্ধ এবং দণ্ডযোগ্য অপরাধ গণ্য করা হয়েছিল। মলদ্বারে কত অংশ প্রবিষ্ট হলে তা পায়ূমৈথুন হিসেবে গণ্য হবে তাও এ আইনে বিবৃত ছিল। অপরাধটি ছিল জামিন অযোগ্য। আদালতে প্রমাণিত হলে সমকামের সর্বোচ্চ সাজা ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ২০০৯ সালে দিল্লী হাই কোর্ট সমকামকে বৈধতা দেয় এই যুক্তিতে যে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে অভিন্ন লিঙ্গের দু’জন পুরুষের (বা নারীর) মৈথুন নিষিদ্ধ করা সমকামীদের বিরূদ্ধে ভারতের সংবিধানের স্বীকৃত নাগরিকের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। সুতরাং সংবিধানের ভাষ্য মোতাবেক অভিন্ন লিঙ্গের দু’জন পুরুষের (বা নারীর) মৈথুন কোনো অপরাধ নয়। দিল্লী হাই কোর্টের আদেশে রাজ্য নির্বিশেষে সমগ্র ভারতে সমকামকে বৈধ ঘোষণার করার কথা বলা হয়।[১৮] সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা গ্রুপগুলোকে হয়রানি করার খবর পাওয়া গিয়েছিল।[১৯]
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে ভারতের সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয় যে ভারত সরকার সমকামকে বৈধ করার বিরুদ্ধে কারণ সমকাম ভারতের সমাজে অনৈতিক কাজ হিসেবে বিবেচিত।[২০] অবশ্য ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ কেন্দ্রীয় সরকার এমত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, সমকামকে বৈধ ঘোষণা করে হলে কোনো আইনগত ব্যত্যয় হবে না।[২১] কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট ২০১৩ সালের ১১ ডিসেম্বর হাই কোর্টের সিদ্ধান্ত এই বলে বাতিল করে দেয় যে এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করবে ভারতের সংসদ।[২২][২৩][২৪]
২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সুপ্রিম কোর্ট স্বীয় সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন গ্রহণ করে।[২৫] ১০ জানুয়ারি ২০১৮ সুপ্রিম কোর্ট ভারতীয় দণ্ড বিধির ৩৭৭ ধারার বিধানাবলী পুন:পরীক্ষার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।[২৬]
৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ভারতের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের পৌরহিত্যে গঠিত পাঁচ[২৭] সদস্য বিশিষ্ট সুপ্রিম কোর্টের কন্সটিটিউনাল বেঞ্চ এই রায় প্রদান করে যে অপ্রাকৃতিক যৌনসঙ্গমের আইনটি পুরুষ ও নারীসমকামী এবং ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য প্রযোজ্য হবে না; তবে তা পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এবং অপ্রকাশ্যে হতে হবে।[২৮] এর ফলে সমকামীদের মধ্যে পায়ূসঙ্গম ও সমরূপ যৌনাচার আইনি বৈধতা লাভ করলো। সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তকে ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী বলে অভিহিত করা হয়েছে।[২৯]
ভারত আয়তনে বিরাট একটি রাষ্ট্র এবং নানা জাতিগোষ্ঠীর সমবায়ে গঠিত। পরিব্যাপ্ত ভারতের সমাজে সমকাম অনৈতিক কর্ম হিসেবে বিবেচিত। সমকামকে ঘৃণ্য দৃষ্টিতে দেখা হয়। সমকামকে সমর্থন করে বা সমকামের বিষয়ে নির্লিপ্ত নাগরিকের সংখ্যা নগণ্য। সমকামীরা চিহ্নিত হয়ে পড়লে সমাজ তাদের হেয় দৃষ্টিতে দেখে। ভারতে সমকাম বিরোধিতা বা হোমোফোবিয়া প্রকট। একবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে: পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে সমকাম ও সমকামিদের নিয়ে আলোচনা স্থান লাভ করছে।
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)(First edition)|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)ভারত বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |