সড়ক ব্যবস্থা ভারতের পরিবহনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ -এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], ভারতের সড়ক ব্যবস্থার বিস্তার ৬৩,৩১,৭৯১ কিলোমিটার (৩৯,৩৪,৩৯৩ মাইল)-এর বেশি, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বের দ্বিতীয় সড়ক ব্যবস্থা।[২] ভারতের সড়ক ব্যবস্থার পরিমাণগত ঘনত্ব ১.৯৪ কিমি প্রতি বর্গ কিলোমিটার, যা হংকঙের অনুরূপ এবং যুক্তরাষ্ট্র (০.৭১), চীন (০.৫৪), ব্রাজিল (০.২৩) ও রাশিয়ার (০.০৯) চেয়ে অনেক বেশি।[৩] ভারতে হাজার ব্যক্তি পিছু ৫.১৩ কিমি (৩.১৯ মাইল) সড়ক রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কম (২০.৫ কিমি অথবা ১২.৭ মাইল) কিন্তু চীনের চেয়ে বেশি (৩.৬ কিমি অথবা ২.২ মাইল)। ভারতের সড়ক ব্যবস্থা পণ্য ট্র্যাফিকের ৭১% এবং যাত্রী ট্র্যাফিকের ৮৫% বহন করে।[৪]
১৯৯০-এর দশক থেকে ভারতের সড়ক অবকাঠামোর আধুনিকীকরণের বিভিন্ন মহৎ প্রক্রিয়া চলছে।[৫] ৩১ মার্চ ২০২০ -এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], ভারতের সড়কের ৭০.০০% পাকা। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ -এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], ভারতে ৩৫,০০০ কিমি (২২,০০০ মাইল) দীর্ঘ চার বা তার বেশি লেনবিশিষ্ট মহাসড়ক সম্পন্ন হয়েছিল, যা দেশের বিভিন্ন উৎপাদন, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছিল।[৩] সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রক সূত্রের খবর, মার্চ ২০২১-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], ভারতে মোট ১,৫১,০১৯ কিমি (৯৩,৮৩৯ মাইল) দীর্ঘ জাতীয় সড়ক ও এক্সপ্রেসওয়ে এবং ১,৮৬,৫২৮ কিমি (১,১৫,৯০৩ মাইল) দীর্ঘ রাজ্য সড়ক রয়েছে। প্রধান প্রকল্পগুলোকে ভারত সরকারের ভারতমালা উদ্যোগের অধীনে বাস্তবায়িত করা হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি নির্মাতা ও মহাসড়ক পরিচালকেরাও প্রধান প্রকল্প বাস্তবায়িত করছে।[৬][৭]
যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর জন্য ভারতের সড়ক ব্যবস্থা বিভিন্ন সরকারি সংস্থার অধীনে রয়েছে। নিচের সারণিতে ৩১ মার্চ ২০২০ -এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ] ধরন অনুযায়ী ভারতের সড়ক ব্যবস্থার দৈর্ঘ্য ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তালিকা দেওয়া হয়েছে।[৩]
ধরন | কর্তৃপক্ষ | দৈর্ঘ্য (কিমি) | শতকরা দৈর্ঘ্য |
---|---|---|---|
জাতীয় সড়ক | সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রক | ১,৫১,০০০[৩] | ২.১৯% |
রাজ্য সড়ক | সংশ্লিষ্ট রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট (পিডব্লিউডি) | ১,৮৬,৫২৮ | ৩.০০% |
জেলা সড়ক | সংশ্লিষ্ট রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট (পিডব্লিউডি) | ৬,৩২,১৫৪ | ১০.১৭% |
গ্রাম সড়ক | পঞ্চায়েত ও গ্রাম সড়ক যোজনা | ৪৫,৩৫,৫১১ | ৭২.৯৭% |
পৌর সড়ক | পৌরসভা ও পৌর নিগম | ৫,৪৪,৬৮৩ | ৮.৭৬% |
প্রকল্প সড়ক | সংশ্লিষ্ট রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিভিন্ন দপ্তর স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়া ন্যাশনাল মিনারেল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন |
৩,৫৪,৯২১ | ৫.৭০% |
মোট সড়ক | মোট সড়ক | ৬৪০৪৭৯৭ | ১০০% |
এক্সপ্রেসওয়েসমূহ ভারতের সর্বোচ্চ শ্রেণির সড়ক। ভারতে, এক্সপ্রেসওয়েসমূহ হল প্রবেশাধিকার-নিয়ন্ত্রিত মহাসড়ক, যেখানে প্রবেশ ও প্রস্থান র্যাম্প ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রিত হয়, যা এক্সপ্রেসওয়ের নকশায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়, অপর দিকে জাতীয় সড়কসমূহ হল ভূমিগত সড়ক। কিছু সড়ক প্রবেশাধিকার-নিয়ন্ত্রিত এক্সপ্রেসওয়ে নয়, তবে এখনও তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে এক্সপ্রেসওয়ে বলা হয়, যেমন বিজু এক্সপ্রেসওয়ে ও রায়পুর–বিলাসপুর এক্সপ্রেসওয়ে।
ভারতের গ্রীনফিল্ড এক্সপ্রেসওয়েসমূহকে ৮-লেনের প্রাথমিক নির্মাণের সাথে ১২-লেন প্রশস্ত এক্সপ্রেসওয়ে হিসাবে নকশা করা হয়েছে। ৪-লেনের ভবিষ্যত সম্প্রসারণের জন্য জমি এক্সপ্রেসওয়েগুলির মধ্যে সংরক্ষিত আছে। গ্রীনফিল্ড এক্সপ্রেসওয়েসমূহ জনবসতিপূর্ণ এলাকাসমূহকে এড়াতে ও নতুন অঞ্চলে উন্নয়ন ঘটানোর জন্য এবং জমি অধিগ্রহণের খরচ ও নির্মাণের সময়সীমা কমাতে নতুন সারিবদ্ধকরণ মাধ্যমে নকশা করা হয়েছে। দিল্লি–মুম্বাই এক্সপ্রেসওয়ে প্রাথমিক ৮-লেন নির্মাণের সঙ্গে একটি নতুন ১২-লেন অভিগমনেরর একটি দুর্দান্ত উদাহরণ।
এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের সিংহভাগই আসে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে। উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র হল একমাত্র রাজ্য যারা ডেডিকেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশনের মাধ্যমে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে বিনিয়োগ করেছে।[৮]
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রকের অধীনে পরিচালিত ন্যাশনাল এক্সপ্রেসওয়ে অথরিটি অব ইন্ডিয়া (এনইএআই) এক্সপ্রেসওয়েসমূহ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে।[৯] ভারত সরকারের জাতীয় মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের লক্ষ্য হল দেশের বর্তমান এক্সপ্রেসওয়ে নেটওয়ার্ক প্রসারিত করা এবং বিদ্যমান জাতীয় সড়কসমূহ ছাড়াও ২০২২ সালের মধ্যে অতিরিক্ত ১৮,৬৩৭ কিলোমিটার গ্রিনফিল্ড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা।[১০]
ভারতমালা হল কেন্দ্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা এবং ভারত সরকারের অর্থায়নে গঠিত একটি সড়ক ও মহাসড়ক প্রকল্প,[১১] যা পরবর্তী পাঁচ বছরে ৮৩,৬৭৭ কিমি[১২] নতুন মহাসড়ক নির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে ২০১৮ সালে শুরু হয়েছিল।[১৩] ভারতমালা প্রকল্পের প্রথম ধাপে ২০২১-২২ সালের মধ্যে ₹৫.৩৫ লক্ষ কোটির আনুমানিক ব্যয়ে ৩৪,৮০০ কিলোমিটার মহাসড়ক (এনএইচডিপি-এর অধীনে অবশিষ্ট প্রকল্পগুলি সহ) নির্মাণ কাজ জড়িত রয়েছে।[১৪]ভারতের জাতীয় সড়ক বলতে বোঝায় সড়ক ও স্থল পরিবহন অধীনস্থ বড় সড়কের অন্তর্জাল৷ এগুলি ভারতীয় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ বা এনএইচএআই দ্বারা নির্মিত ও সংরক্ষিত হয়৷ এছাড়াও ন্যাশনাল হাইওয়ে এন্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন বা এনএআচআইডিসিএল এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির পাবলিক ওয়ার্ক ডিপার্টমেণ্ট বা পিডাব্লিউডিও এর বরাত পেয়ে থাকেন৷
ভারতের অধিকাংশ জাতীয় সড়ক নির্মাণ, উন্নয়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত যোগাযোগস্থল সংক্রান্ত এজেন্সিটি হল ভারতের জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ বা এনএইচএআই। এই সংস্থাটি ভারত সরকারের সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। জাতীয় সড়কের অন্তর্জাল বৃদ্ধি এবং তা সুগম্য করতে জাতীয় সড়ক উন্নয়ন পরিকল্পনা যথেষ্ট অবদান রাখেন। এনএইচএআই জাতীয় সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ এবং শুল্ক সংগ্রহের ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব মডেলে কাজ করে থাকে।
ভারতে জাতীয় সড়কগুলি মূলত ভূ-সমতলিক, আবার এক্সপ্রেস ছবিগুলি কন্ট্রোলড অ্যাক্সেস হাইওয়ে, যা র্যিম্পের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়।
ভারতে ৬,৩২,১৫৪ কিমি (৩,৯২,৮০২ মাইল) দীর্ঘ জেলা সড়ক রয়েছে যার ১৪.৮০% পাকা।[৩]
ভারতের সড়ক ব্যবস্থার এক বড় অংশ হচ্ছে গ্রাম সড়ক। মার্চ ২০২০-এর হিসাব অনুযায়ী মোট সড়কের ৭২.৯৭% গ্রাম সড়ক এবং এর মধ্যে ৩১% কাঁচা সড়ক।[৩]
ভারতের গ্রাম সড়কের উন্নয়ন এবং বিচ্ছিন্ন গ্রাম বসতির মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য ডিসেম্বর ২০০০-এ প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা চালু করা হয়েছিল। এই প্রকল্পে আশা করা হয়েছিল যে এই গ্রাম সড়কগুলো গ্রাম পঞ্চায়েত দ্বারা তৈরি এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। ভারতের কিছু প্রান্তে সরকার এক স্থানীয় সামাজিক বিনিয়োগ প্রকল্প হিসাবে পরিচালনা করার চেষ্টা করা হয়েছে।[১৫]
ভারতের অন্যান্য প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা এবং তার সহপ্রকল্প "ভারত নির্মাণ" গ্রাম সড়ক নির্মাণ প্রকল্পগুলোকে বেসরকারিকৃত করেছে এবং ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। এই প্রচেষ্টার লক্ষ্য হচ্ছে ভারতের গ্রামীণ ও বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী ওয়েদারপ্রুফ একক লেন আস্ফাল্ট সড়ক নির্মাণ করা। এইসব প্রকল্পের এক বড় অংশ বিশ্ব ব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে আসছে।[১৬]
দৈর্ঘ্য ২০০১ |
দৈর্ঘ্য ২০১১ |
দৈর্ঘ্য ২০২১ | |
---|---|---|---|
মোট গ্রাম সড়ক | ২৭ লাখ | ৩১ লাখ | ৪৫ লাখ |
রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি এমন পাকা সড়ক | ৫ লাখ | ||
কাঁচা গ্রাম সড়ক | ২২ লাখ | ১৯ লাখ | |
রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে এমন পাকা সড়ক | ৭,২৮,৮৭১ | ||
নতুন গ্রাম সড়ক | ৩,২২,৯০০ | ৮২,৭৪৩ | ১৫,০০,০০০ |
ভারতের অন্তঃনগর যানের বেগ বিশ্বের সর্বনিম্ন অন্তঃনগর যানের বেগের মধ্যে অন্যতম। ওলা ক্যাবের এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দিল্লির গড় ট্র্যাফিক বেগ ২৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (১৬ মাইল প্রতি ঘণ্টা)।[১৮] এছাড়া চেন্নাইয়ের গড় ট্র্যাফিক বেগ ১৮.৯ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (১১.৭ মাইল প্রতি ঘণ্টা), মুম্বইয়ের ২০.৭ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (১২.৯ মাইল প্রতি ঘণ্টা), কলকাতার ১৯.২ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (১১.৯ মাইল প্রতি ঘণ্টা), হায়দ্রাবাদের ১৮.৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (১১.৫ মাইল প্রতি ঘণ্টা) এবং বেঙ্গালুরুর ১৭.২ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (১০.৭ মাইল প্রতি ঘণ্টা)।[১৮]