ভারত-পাকিস্তান নৌযুদ্ধ-১৯৭১ | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৭১ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অংশ | |||||||||
| |||||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||||
![]() পক্ষ: ![]() ![]() ![]() ![]() |
![]() পক্ষ: ![]() | ||||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||||
ভাইস এডমিরাল মুজাফফর হাসান রেয়ার এডমিরাল আব্দুল রশিদ রেয়ার এডমিরাল মোঃ শরিফ ![]() রেয়ার এডমিরাল লেসলি মানগাবিন ![]() কমান্ডার প্যাট্রিক জে. সিম্পসন |
এডমিরাল এস এম নান্দা ভাইস এডমিরাল এস এন কোহলি ভাইস এডমিরাল এন কৃষ্ণাণ এডমিরাল ভ্লাদিমির ক্রোগ্লিইয়াকব | ||||||||
জড়িত ইউনিট | |||||||||
শক্তি | |||||||||
১টি ক্রুজার ৫টি ডেস্ট্রয়ার ২টি ফ্রাইগেট ৪টি সাবমেরিন (৩টি Daphné class and ১টি Tench class) ৬টি মিডগেট সাবমেরিন ৪টি মাইন সুইপার ১টি ট্যাংকার কমপক্ষে ১টি ইন্দোনেশিয়ান নৌ জাহাজ [৯] যুক্তরাষ্ট্রের ৭তম নৌবহর ১ টি ব্রিটিশ কেরিয়ার বেটল গ্রুপ [৮] |
১টি এয়ারক্রাফট কেরিয়ার ২টি ক্রুজার ৩ টি ডেস্ট্রয়ার ১৪ টি ফ্রাইগেট ৫টি ASW ফ্রাইগেট ৬ টি মিসাইল শিপ ২টি ট্যাংকার ১ টি মেরামতকারী জাহাজ ২টি Landing ships (Polnochy) ২ দল সোভিয়েত ক্রুজার এবং ডেস্ট্রয়ার ১ টি সোভিয়েত সাবমেরিন [৬] ১ টি সোভিয়েত পারমাণবিক সাবমেরিন[১০][১১] | ||||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||||
যুদ্ধে ১৯০০ জন মারা যায় †
|
যুদ্ধে ১৯৪ জন মারা যায় † ১ টি ফ্রাইগেট ১ টি এয়ার ক্রাফট (Alize 203)[১৮][১৯] |
১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান নৌযুদ্ধ হচ্ছে ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে ভারতীয় নৌবাহিনী এবং পাকিস্তানি নৌবাহিনীর মধ্য সংগঠিত যুদ্ধ। এই যুদ্ধটি ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অবিচেছদ্য অংশ। যখন ভারতীয় সৈন্য বাহিনী এবং বিমান বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের স্থল সীমা অবরুদ্ধ করে রাখে তখন ভারতীয় নৌবাহিনী জলসীমা থেকে চাপ প্রয়োগ করার জন্য নৌযুদ্ধ শুরু করে। পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় নৌবাহিনীর অভিযান সফল হওয়ার ফলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ শুরু করার পূর্বে. ভারতীয় নৌবাহিনী পশ্চিম পাকিস্তানে দুটি বড় মাপের অপারেশন, অপারেশন ট্রাইন্ড এবং অপারেশন পাইথন পরিচালনা করে।
১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ স্থল সীমানা ভিত্তিক যুদ্ধ হওয়ায় ভারতীয় নৌবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেনি।পাকিস্তানের করাচি থেকে ২০০ মাইল (৩০০ কি. মি.) দক্ষিণে অবস্থিত ভারতের দ্বারকায় নৌবাহিনীর রাডার স্টেশনে ৭ সেপ্টম্বর পাকিস্তানি নৌ বহর একটি অভিযান পরিচালনা করে। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল অপারেশন দ্বারকা। অপারেশনটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কমান্ডার এস এম আনোয়ার। এই অপারেশনের কারণে ভারতীয় নৌবাহিনীকে দ্রুত আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ফলে ভারতীয় নৌবাহিনীর বাজেট ₹৩৫০ মিলিয়ন থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ₹১.৫ বিলিয়নে। সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আনা সাবমেরিন এবং ৬ টি ও এস এ মিসাইল শিপ ভারতীয় নৌবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করে তুলে।
পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় নৌ কমান্ড ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ শরীফ (পরে চার-তারকা এডমিরাল) তার প্রথম ফ্লাগ অফিসার কমান্ডিং পরিচালনা করেন। অ্যাডমিরাল শরিফ প্রশাসনিকভাবে পূর্বাঞ্চলীয় নৌ কমান্ড পরিচালনা করতেন এবং অপারেশনগুলোর নেতৃত্ব দিতেন। তার নেতৃত্বে এস এস জি (এন), পাকিস্তান মেরিনস ও সিল টিম সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এবং তার নেতৃত্বে পূর্বাঞ্চলে গুপ্ত এবং প্রকাশ্য উভয় ধরনের অপারেশন চালানো হত ।
একটি সুপ্রতিষ্ঠিত প্রশাসনিক নৌ কমান্ড থাকার কারণে পাকিস্তান যুদ্ধরত ফোর্সেস ' জি এইস কিউ ' এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা জন্য শক্তিশালী নৌবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা প্রত্যাখ্যান করেন। ভারতীয় নৌবাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করার মত পর্যাপ্ত জাহাজ পাকিস্তানের কোন অংশের ছিলনা। এবং পাকিস্তানি এয়ার ফোর্স এসব জাহাজগুলোকে ভারতীয় এয়ার ফোর্স এবং ভারতীয় নেভ্যাল এয়ার আর্মের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে অক্ষম ছিল।উপরন্তু, পাকিস্তান নৌবাহিনীর প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল মুজাফফর হাসান নৌবাহিনীর সকল শক্তি পশ্চিম পাকিস্তানে প্রয়োগ করতে আদেশ দেন। ফলে পাকিস্তান নৌবাহিনীর অধিকাংশ যুদ্ধ জাহাজ পশ্চিম পাকিস্তানে মোতায়েন করা হয়। তখন অ্যাডমিরাল শরীফের ব্যক্তিগত অনুরোধে পূর্ব পাকিস্তানে ' পিএনএস সিলেট ' নামক একটি মাত্র ডেস্ট্রয়ার বরাদ্দ করা হয় ।
যেহেতু যুদ্ধ চলাকালে পূর্ব পাকিস্তানের নৌ বন্দর অরক্ষিত তাই পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় সেনারা নৌবাহিনী ছাড়াই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় যা ছিল অপ্রতিরোধ্য ভারতীয় বাহিনীকে প্রতিরোধের একটি ব্যার্থ চেষ্টা মাত্র। যখন যুদ্ধ শুরু হয় তখন নৌবাহিনী বন্দরে থাকার পরিকল্পনা করে।[২০]
পাকিস্তান নৌবাহিনী প্রচন্ডভাবে তার গানবোট স্কোয়াড্রনের উপর নির্ভরশীল ছিল ।[২১] পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় নৌ কমান্ড, ফ্লাগ অফিসার কমান্ডিং (এফ ও সি ) রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ শরীফের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে ছিল যিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজীর ডান হাত হিসেবে পরিচিত ছিল। পাকিস্তান নৌবাহিনীর ৪টি গানবোট ছিল(পি এন এস যশোর, রাজশাহী, কুমিল্লা ও সিলেট)। গানবোটগুলো ২৯ জন নাবিক সহ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০ নট(৩৭ কিমি) গতিবেগে ছুটতে পারত। পাকিস্তান নৌবাহিনীতে ব্রাউন ওয়াটার নেভী হিসাবে পরিচিত গানবোটগুলো বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র,ভারী মেশিনগান সহ সুসজ্জ্বিত ছিল। বোটগুলো টহল এবং অপারেশনের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত ছিল। কিন্তু বোটগুলো আশাহতভাবে গতানুগতিক যুদ্ধের ময়দানের বাহিরে ছিল।[২২]
এপ্রিলের প্রথম দিকে, অপারেশন সার্চলাইটকে সাহায্য করার জন্য পাকিস্তানি নৌবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে নৌ-অপারেশন শুরু করে। রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ শরীফ এসব মিশনের সমন্ব্য় করতেন। ২৬ এপ্রিল পাকিস্তান নৌবাহিনী সফল ভাবে অপারেশন বরিশাল সম্পূর্ণ করে কিন্তু তা ছিল ক্ষণস্থায়ী ।
ভয়াবহ গেরিলা আক্রমণ এবং অপারেশন জ্যাকপট পাকিস্তান নৌবাহিনীর কর্মক্ষমতা মারাত্মকভাবে হ্রাস করে । যুদ্ধ শুরু হওয়ায় আগে সব নৌ গানবোট চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্তান করছিল। এয়ার অপারেশন শুরু হওয়ার পর আই এ এফ এয়ারক্রাফট গানবোট রাজশাহীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, ৪ ডিসেম্বর গানবোট কুমিল্লাকে ডুবিয়ে দেয়, ৫ই ডিসেম্বর খুলনাতে দুটি টহল জাহাজকে ডুবিয়ে দেয়।৬ ই ডিসেম্বর পি এন এস সিলেট এবং ৯ ডিসেম্বর বালাগাট ভারতীয় এয়ারক্রাফটের আক্রমণে ধ্বংস হয়। ১১ ডিসেম্বর পি এন এস যশোর ধ্বংস হয় এবং পি এন এস রাজশাহীকে আবার মেরামত করে ঠিক করা হয়। ১৬ ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ করার আগে, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার শিকদার হায়াতের নেতৃত্বে থাকা পি এন এস রাজশাহী ভারতীয় অবরোধকে কৌশলে এড়িয়ে মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যায়।
ভারতীয় নৌবাহিনী গোপনে নৌ অপারেশন শুরু করে এবং সেগুলো সফলভাবে সম্পন্ন হত। ভারতীয় নৌবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় নৌ কমান্ড অপারেশনগুলোর সমন্বয়,পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন করত। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে, ভারতীয় নৌবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় নৌ কমান্ড বঙ্গোপসাগরে কার্যকরভাবে একটি নৌবাহিনীর অবরোধ করে যা পূর্বাঞ্চলীয় পাকিস্তান নৌবাহিনীকে এবং আটটি বিদেশী বাণিজ্য জাহাজকে চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থান করতে বাধ্য করে।পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যুদ্ধরত হাইকমান্ড, জি এইচ কিউ, পাকিস্তান নৌবাহিনীকে সাবমেরিন পি এন গাজীকে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করা এবং পূর্ব পাকিস্তান উপকূল জুড়ে এর অপারেশন পরিধি বাড়ানোর জন্য চাপ দেয় । কিন্তু কাছাকাছি মেরামত ও লজিস্টিক সাহায্য না থাকায় দূরবর্তী এলাকায় লম্বা অভিযান পরিচালনা ছিল খুবই কঠিন ব্যাপার। তখন পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র নৌ বন্দর চট্টগ্রামে সাবমেরিন মেরামত করার কোন ব্যবস্থাই ছিলনা। যার কারণে সিনিয়র সেনাবাহিনী এবং নৌ-অফিসারদের প্রস্তাবে গাজীর কমান্ডার এবং অন্যান্য অফিসাররা আপত্তি পোষন করে।
কমান্ডিং অফিসার রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ শরীফের আহবান সত্ত্বেও পাকিস্তানের পূর্ব অংশে, পাকিস্তান নৌবাহিনী যুদ্ধজাহাজের একটি স্কোয়াড্রন কখনই বজায় রাখেনি । যার ফলে মেরামত ও লজিস্টিক সুবিধা চট্টগ্রামে উন্নতমানের ছিল না।ভারতীয় নৌবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় নৌ কমান্ড কার্যত পূর্বাঞ্চল থেকে কোন বিরোধিতার মুখোমুখি হয়নি। এয়ার ক্রাফট বিকর্যান্ট, তার সহযোগী নৌ জাহাজ ই এন এস গুল্ডার, ই এন এস ঘাড়িয়াল, ই এন এস মাগার এবং সাবমেরিন ই এন এস কান্ডারী তাদের অপারেশন স্বাধীনভাবে পরিচালনা করে।
৪ ডিসেম্বর ১৯৭১, এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার আইএনএস বিকর্যান্ট( আর ১১), তার হকার সী হক এয়ার ক্রাফট মোতায়েন করে পূর্ব পাকিস্তানে আকাশ অভিযান পরিচালনা করতে অবদান রাখেন।এয়ার ক্রাফটটি সফলতার সাথে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সহ পূর্ব পাকিস্তানের অনেক উপকূলীয় শহরে আক্রমণ করে। ক্রমাগত আক্রমণের ফলে পাকিস্তান বিমান বাহিনী প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে পেলে।
যেহেতু নৌ কমান্ড পি এন এস গাজীর অফিসারদের আপত্তিকে অগ্রাহ্য করে তাই ক্ষতিগ্রস্ত সাবমেরিন পি এন এস গাজীকে যুদ্ধে ব্যবহার করে পাকিস্তান নৌবাহিনী হুমকি্র পাল্টা জবাব দেয়।কমান্ডার জাফর মুহম্মদ খানের নেতৃত্বে পিএনএস গাজীকে ভারতীয় এয়ার ক্যারিয়ার ভিকর্যান্টকে শনাক্ত করার জন্য বরাদ্দ করা হয়। পিএনস গাজীকে ভারতীয় নৌ বাহিনীর বিমানবাহী রণতরী বিক্রান্তকে ডোবানোন জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় যাতে বঙ্গোপোসাগরে ভারতের নৌনিয়ন্ত্রণ কমানো যায়৷ ভারতীয় নৌবাহিনীর রণকৌশলে বিভ্রান্ত পাক নৌসেনা বিশাখাপত্তনম বন্দরে বিক্রান্তের খোঁজে (বিক্রান্ত তখন আন্দামানের কাছে ছিল)আসলে ভারতীয় নৌবাহিনীর ডেপ্থ চার্জে পিএনএস গাজী নামক ডুবোজাহাজ বঙ্গোপসাগরে ডুবে যায় এবং পূর্বক্ষেত্রে নৌ অবরোধ পাকস্বপ্ন সলিলসমাধি লাভ করে৷
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; GlobalSecurity
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; orbat.com
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি