এই নিবন্ধটির রচনা সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। কারণ ব্যাকরণ, রচনাশৈলী, বানান বা বর্ণনাভঙ্গিগত সমস্যা রয়েছে। |
ভূ-তাপীয় উত্তাপন (ইংরেজি geothermal heating) হল ভূ-তাপীয় শক্তি সরাসরি ব্যবহার করার মাধ্যমে তাপন। পুরাপ্রসত্র যুগ থেকে মানুষ এই ভূ-তাপীয় উত্তাপ ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে আসছে। ২০০৪ সালে প্রায় সত্তরটি দেশ ভূতাপীয় তাপনের মোট ২৭০ পিটাজুল-এর প্রত্যক্ষ ব্যবহার করেছে। ২০০৭ সালের হিসাবে, বিশ্বে প্রাথমিক বিদ্যুত ব্যবহারের ০.০৭% চাহিদা পূরণের জন্য সারা বিশ্বজুড়ে ২৮ জি.ডব্লিউ. ভূ-তাপীয় ক্ষমতা স্থাপন করা হয়েছে।[১] কোনও শক্তি রূপান্তরের প্রয়োজন হয় না ব'লে এতে তাপীয় দক্ষতা বেশি। কিন্তু শীতকালে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাপের প্রয়োজন থাকে ব'লে এর ক্ষমতা ফ্যাক্টর কম হতে থাকে (প্রায় ২০%)।
পৃথিবী গ্রহ হিসাবে তার প্রকৃত গঠন-কালে খনিজ পদার্থের তেজস্ক্রিয় ক্ষয় এবং সৌর শক্তির শোষণ থেকে পাওয়া তাপকে তার অভ্যন্তরে ধরে রেখেছে। পৃথিবীর অভ্যন্তরে ধরে রাখা সেই তাপ থেকে উদ্ভূত হয় ভূ-তাপীয় শক্তি। [২] বেশিরভাগ উচ্চ তাপমাত্রার ভূ-তাপীয় উত্তাপ টেকটোনিক পাতের সীমানা অঞ্চলে পৃথিবীর উপরিতলের কাছাকাছি অংশে আগ্নেয়গিরির ক্রিয়াকলাপে গড়ে ওঠা ফাটল দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। প্রয়োগ-ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রার চেয়েও উচ্চতর তাপমাত্রায় ঐ সব অঞ্চলের স্থলজ ও ভূগর্ভস্থ জল পাওয়া যেতে পারে। যাইহোক এমনকি ঠান্ডা স্থানেও গড় বার্ষিক বায়ু তাপমাত্রায়, ৬ মিটার (২০ ফু) গভীরে নিরবচ্ছিন্নভাব ঐ তাপ থাকতে পারে[৩] এবং তাকে একটি তাপ পাম্প দিয়ে উত্তোলন করা যেতেও পারে।
দেশ | উৎপাদন পিজে/বছর |
ক্ষমতা জিডব্লিউ |
ক্ষমতা ফ্যাক্টর |
প্রধান ব্যবহার |
---|---|---|---|---|
চীন | ৪৫.৩৮ | ৩.৬৯ | ৩৯% | স্নান |
সুইডেন | ৪৩.২ | ৪.২ | ৩৩% | তাপ পাম্প |
আমেরিকা | ৩১.২৪ | ৭.৮২ | ১৩% | তাপ পাম্প |
তুরস্ক | ২৪.৮৪ | ১.৫ | ৫৩% | জেলা গরম |
আইসল্যান্ড | ২৪.৫ | ১.৮৪ | ৪২% | জেলা গরম |
জাপান | ১০.৩ | ০.৮২ | ৪০% | স্নান (অনসেন) |
হাঙ্গেরি | ৭.৯৪ | ০.৬৯ | ৩৬% | স্পা/গ্রিনহাউস |
ইতালি | ৭.৫৫ | ০.৬১ | ৩৯% | স্পা/স্পেস হিটিং |
নিউজিল্যান্ড | ৭.০৯ | ০.৩১ | ৭৩% | শিল্প ব্যবহার |
৬৩ অন্যান্য | ৭১ | ৬.৮ | ||
মোট | ২৭৩ | ২৮ | ৩১% | স্পেস হিটিং |
সস্তায় ভূ-তাপীয় উত্তাপের জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার রয়েছে। ২০০৪ সালে অর্ধেকেরও বেশি সরাসরি ভূ-তাপীয় উত্তাপ স্পেস হিটিং হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে এবং এক তৃতীয়াংশ ব্যবহৃত হয়েছে স্পা-র জন্য। [১] বাদ বাকি অংশটি ব্যবহৃত হয়েছে বিভিন্ন শিল্প প্রক্রিয়া, নিষ্কাশন, গার্হস্থ্য গরম জল এবং কৃষি প্রয়োগের জন্য। রেকজাভিক এবং আকুরেরি শহরে রাস্তা এবং ফুটপাথের নীচে ভূ-তাপীয় প্রকল্প থেকে পাওয়া গরম জলের নল দিয়ে তুষার গলানোর ব্যবস্থা আছে। ব্যবহার দেখা যাচ্ছে ভূ-তাপীয় নির্লবণীকরণ।
ভূ-তাপীয় ব্যবস্থাপনা গ্রহণের ফলে অর্থনীতিতেও বেশ বড়ো ধরনের উপকৃত হওয়ার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। তাই স্পেস উত্তাপক শক্তি পাওয়ার জন্য প্রায়ই একাধিক গৃহে এবং কখনও কখনও পুরো সম্প্রদায়ে বিতরণ করা হয়। রেকজাভিক, আইসল্যান্ড,[৫] বোইস, আইডাহো,[৬] এবং ক্ল্যামাথ ফলস, ওরেগন [৭] এর মতো জায়গাগুলিতে দীর্ঘ সময় ধরে এই প্রকৌশলটি বিশ্বজুড়ে জেলা উত্তাপক নামে চর্চা করা হয়েছে। [৮]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম দিকের উল্লেখযোগ্য অংশ সহ বিশ্বের কিছু অংশ অপেক্ষাকৃত অগভীর ভূ-তাপীয় সম্পদের অধীনে রয়েছে।[৯] আইসল্যান্ড, জাপানের কিছু অংশ এবং বিশ্বের অন্যান্য ভূ-তাপীয় স্থানগুলিতেও একই রকম পরিস্থিতি রয়েছে। এই অঞ্চলগুলিতে জল বা বাষ্প প্রাকৃতিক উষ্ম প্রস্রবণ থেকে ধরে নিয়ে সরাসরি রেডিয়েটার বা তাপ এক্সচেঞ্জারগুলিতে নল দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া যেতে পারে। বিকল্পভাবে এই তাপ ভূ-তাপীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প থেকে পাওয়া উপজাত বর্জ্য তাপ অথবা গভীর কূপ থেকে নিয়ে উষ্ম একুইফারে পাঠানো যেতে পারে। ভূ-তাপীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে সরসরি ভূতাপীয় উত্তাপক অনেক বেশি দক্ষ এবং এটির জন্য তাপমানের চাহিদা কম হওয়ার কারণে এটি একটি বৃহত্তর ভৌগোলিক পরিসরে কার্যকর। যদি অগভীর মাটি গরম কিন্তু শুকনো থাকে তবে বায়ু বা জলকে মাটির নল বা ডাউনহোল হিট এক্সচেঞ্জার-এর মধ্যে দিয়ে পাঠানো যেতে পারে এবং সেটি তখন ভূমির সাথে তাপ বিনিময়ক হিসাবে কাজ করে।
গভীর ভূ-তাপীয় সম্পদ থেকে পাওয়া ভূ-তাপীয় শক্তিকে ব্যবহার ক'রে বাষ্পীয় চাপ-এর সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতেও ব্যবহার করা হয়। আইসল্যান্ড ডিপ ড্রিলিং প্রকল্প ২,১০০ মি গভীরের ম্যাগমা ব্যবহার করে। এখানে ম্যাগমার একটি গর্তের উপরে সিমেন্ট দিয়ে একটি স্টিলকক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে এবং ম্যাগমার কাছে তাতে নীচের দিকে ছিদ্র করা রয়েছে। এই ব্যবস্থা গ্রহণ ক'রে আইডিডিপি-১ এ ম্যাগমা বাষ্পের উচ্চ তাপমাত্রা এবং চাপে ৩৬এম.ডব্লিউ.ডব্লিউ. ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুত উৎপাদন করা হচ্ছে। বিশ্বে এটিই প্রথম ম্যাগমা-সম্বৃদ্ধ ভূতাপীয় ব্যবস্থা।[১০]
যে জায়গাগুলিতে অগভীর মাটিও খুব শীতল হওয়ার কারণে সরাসরিই যথেষ্ট আরামপ্রদ সেখানেও শীতের বাতাসের চেয়ে (মাটি) উষ্ণতর হয়। অগভীর মাটির তাপীয় জাড্যতা গ্রীষ্মকালের সৌর শক্তিকে জমিয়ে রাখে এবং ভূভাগে তাপমাত্রার মরশুমি পরিবর্তণে ১০ মিটার গভীরতার নিচে সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যায়। প্রচলিত চুল্লির তুলনায় আরও দক্ষতায় ভূ-তাপীয় উত্তাপ পাম্পের সাহায্যে ঐ তাপ, ভূ-তাপীয় উত্তাপ সহ নিষ্কাষণ করা যায়।[৮] ভূ-তাপীয় উত্তাপ পাম্প বিশ্বের যে কোনও জায়গায় মূলত অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর।
তত্ত্ব অনুসারে, পৌর জলের নলের মতো বিদ্যমান পরিকাঠামো দিয়েও ভূ-তাপীয় শক্তিকে (সাধারণত শীতলীকৃত) আহরণ করা যায়।[১১]